নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বসবাসযোগ্যতা, একমাত্র আবাসস্থল এবং বসবাসকারীদের দৃষ্টিভঙ্গি

১৫ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১২:১৫

ধরেন, একটা গ্রামে ১০০ জন মানুষ থাকে। গ্রামের ধারণ ক্ষমতাও ১০০ জনই। ১০০ জনই কর্মক্ষম।

১০০ জনের ৩০ জন সরকারি/রাষ্ট্রীয় চাকরিজীবি (পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, জজ, সচিব, ইত্যাদি)। ১০ জন বুদ্ধিজীবি (শিক্ষক, ডাক্তার, উকিল, ইঞ্জিনিয়ার, ইত্যাদি)। ২০ জন শ্রমিক (পরিবহন, শিল্প, নির্মাণ, প্রভৃতি খাতের শ্রমিক)। ১০ জন কৃষক (সরাসরি যারা খাদ্য উৎপাদনের সাথে জড়িত)। ২০ জন ব্যবসায়ী (যারা শুধু এদিকের মাল ওদিকে বিক্রি করে)। ১০ জন উৎপাদক (যারা ব্যবসায়ী, কিন্তু শিল্পউদ্যোক্তা; তাদের ব্যবসা থেকে পণ্য বা কাঁচামাল উৎপাদিত হয়)।

এখন গ্রামে জনসংখ্যা বাড়তে শুরু করলো। ধারণ ক্ষমতা, ভূমি, প্রাকৃতিক সম্পদ, উৎপাদিত খাদ্য ও অন্যান্য পণ্য, সবই কিন্তু ১০০ জনের জন্যই ঠিক ছিল। বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে কিছু জরুরি খাদ্য ও পণ্য আমদানি করা শুরু হলো। এদিকে গ্রাম থেকে যা কিছু রপ্তানি করা হতো, বাইরে সেসবের চাহিদা কমে গেলো, বা বদলে গেলো। ফলে গ্রামের আয় কমে গেলো, ব্যয় বেড়ে গেলো, ধারধর্ণা বেড়ে গেলো।

মানুষ বাড়তে থাকলো, বেড়ে যাওয়া মানুষের জীবিকার পছন্দের তালিকায় ছিল- সরকারি চাকরিজীবি, ব্যবসায়ী ও শ্রমিক; যার যেটা সামর্থ্যে কুলোয়। কৃষক কমতে থাকাতে খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিলো। বুদ্ধিজীবি কমে যাওয়াতে শিক্ষা, সংস্কৃতি, উদ্ভাবন, সভ্যতার অধপতন দেখা দিলো। উৎপাদক ও উদ্যোক্তা কমে যাওয়াতে গ্রামের অন্যান্য সবকিছুর জন্য বাইরের মুখাপেক্ষী হওয়া বাড়তে থাকলো।

তারপরেও মানুষের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ ও জনসংখ্যা কমানো নিয়ে সচেতনতা ও আগ্রহ দেখা গেলো না। গ্রামের প্রায় সবার মধ্যেই "জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ" বিষয়টা একটা ট্যাবু- নিষিদ্ধ বিষয়। সামাজিক বা ধর্মীয়ভাবে গ্রামের প্রায় শত ভাগ মানুষই সন্তান জন্মদানে কোন প্রকার উপদেশ, অনুরোধ ও হস্তক্ষেপে নারাজ।

এদিকে একসময় নতুন জন্ম নেওয়া গ্রামের মানুষগুলোর মধ্যে কাজের চাহিদা দেখা দিলো। গ্রামের আয়তন, সম্পদ, আয় কিছুই বাড়েনি, তাই কাজের প্রয়োজন ও সুযোগ কোনটাই বাড়েনি। দীর্ঘসময় ধরে, জটিল নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়ে, স্থায়ী ও বিশাল সুযোগসুবিধার সরকারি চাকরিতে ঢুকার জন্য সবার তীব্র আকাঙ্খা বাড়তে থাকলো। গ্রামের যা কিছু মোট আয়- সবই এই খাতে ঢেলে দেওয়া হতে লাগলো। অর্থাৎ পুরো গ্রামের মোট জনসংখ্যার সেবার জন্য যে কর্মীবাহিনী পোষা হচ্ছে, সেই কর্মীবাহিনীকে পোষার জন্যই পুরো গ্রামের আয়ের সিংহভাগ ঢেলে দেওয়া হচ্ছে। গ্রামের মানুষেরও এতে আপত্তি নেই; কারণ সবারই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ও লক্ষ্য হচ্ছে সেই চাকরি!

নিশ্চিন্ত পেশা হওয়ার কারণে প্রশাসনের কর্মচারীরা গ্রামের সামগ্রিক আয়-উন্নতির ব্যাপারে মাথা ঘামানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না একদমই। কিন্তু ১০০ জন থাকতে পারে এমন একটা গ্রামের- ১০০০০ জন মানুষের মধ্যে ১০০০ জনই যদি রাষ্ট্রের কর্মচারী হয়, তবে বাকি ৯০০০ জন কি কখনো গুরুত্ব পাবে? ৯০০০ জনের মধ্যে যারা কৃষক, তাদের উপর চাপ বাড়ছে, কিন্তু তাদের চাষের জমি ও উপযুক্ত পরিবেশ ধীরে ধীরে কমছে। ৯০০০ জনের মধ্যে যারা শিল্পউদ্যোক্তা, তাদের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা গ্রামেই কমে আসছে; কর্মসংস্থানের অভাবে গ্রামের মানুষই সেই পণ্য ও সেবা কিনতে পারছে না। ফলস্বরূপ উৎপাদকও নিজের উৎপাদনখাতে নতুন নিয়োগ করতে পারছে না। শ্রমিক শ্রেণী অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল, সামাজিকভাবে অপদস্ত, ও মানসিকভাবে আগ্রাসী হয়ে উঠছে। বুদ্ধিজীবি শ্রেণী হয় সরকারি চাকরিতে ঢুকার চেষ্টা করছে, কিংবা গ্রাম ছেড়ে বাইরে চলে যাচ্ছে- যেখানে ধারণক্ষমতার তুলনায় জনসংখ্যা কম ও সম্পদ বেশি।

গ্রামটাতে মানুষ বাড়ছে, চাহিদা বাড়ছে, দূষণ বাড়ছে, অপরাধ বাড়ছে, অস্থিরতা বাড়ছে, সংকট বাড়ছে, কিন্তু বিবেক-বুদ্ধি কমছে। এ এক অভূতপূর্ব গ্রাম।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৩:৪৩

সাসুম বলেছেন: জন্ম নিয়ন্ত্রণ হারাম কাজ। এই সব নাপাক কাজে উৎসাহ দেয়াও হারাম। নাস্তেক নাসারা দের এই সব কাজের কারনে আজ সমাজ ধর্ম গেল গেল করতেছে।

বাংগালি মোসলমান হিসেবে আমাদের সেই হাদিস মনে রাখা দরকার-
মুখ দিয়েছেন যিনি আহার দিবেন তিনি।

আমীন

২| ১৫ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৪:২১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: জনসংখ্যা সমস্যা না। সমস্যা হোল বহু মানুষ উপযুক্ত জীবনমুখী, উন্নয়নমুখী শিক্ষা অর্জন করতে পারছে না বা করার সুযোগ পাচ্ছে না ফলে সমাজের বোঝায় পরিনত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জাতিকে সঠিক পথে চালিত করার মত কোন নেতা নেই। চিন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিন কোরিয়া আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে।

৩| ১৫ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৫:৫৪

রিফাত হোসেন বলেছেন: জনসংখ্যা সমস্যা হলেও কিন্তু সমস্যা নয়। ভবিষ্যতের জন্য, পৃথিবীর সবকিছুর জন্য সমস্যা মনে হলেও হতে পারে। এত গেল নেতিবাচক উত্তর যা উপরে দিয়েছেন। একে আপনি ইতিবাচক হিসেবে নিতে গেলে দেখা যাবে যে, প্রযুক্তির উপর গুরুত্ব দিতে হবে। আপনার উপরের গবেষণা উপকরণে বুদ্ধিজীবি,কৃষি, ব্যবসায়ী সব গুলিয়ে রেখে শিক্ষা ও গবেষক কার্যক্রমকে জায়গা দিতে পারেন নাই অথবা সুযোগ দেন নি।

একটি সময় ছিল ঢাল-তলোয়াড় এর যুগ। গোলা-বারুদ এসে অটোম্যান সাম্রাজ্যকে যেভাে উপরে টেনে তুলল। ঠিক তেমনি ঐ সময়ের দেশ/রাজত্বের প্রভাবও ছিল। পরবর্তীতে পারমাণবিক যুগ নিয়ে কিছু বলার নাই। আপনি জানেন। ড্রোন যুগের পর পুরানো রাসায়নিক অস্ত্রকে টেকা দিয়ে আধুনিক জৈব অস্ত্র সম্ভাবনা, যা আমরা উপলব্ধি করছি। আর বর্তমানে সময়ের চলমান সাইবার হামলাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। যার প্রতিরক্ষা হিসেবে নিজস্ব নিরাপদ নেটওয়ার্ক এর চাহিদা রয়েছে।
gps একা একমাত্র উপকরণ নয় পথ চলার, এসেছে Galileo, GLONASS und Beidou.

কৃষি ক্ষেত্রে ১ একরে যতটুকু উৎপাদন হত আগে তার থেকে চাহিদা বেশী, তাই বৈজ্ঞানিক গবেষণা সাপেক্ষে এর উৎপাদন কয়েকগুন করার প্রয়োজন পরবে। এখানে গবেষক একা এর যোগান দিতে পারবে না। কৃষকের চাষ করা শিখতে হবে সঠিকভাবে, feedback and update দিতে হবে। চাষ করা গবেষক এর কাজ নয়। দ্রুত বর্ধণশীল ফলন ও কিভাবে উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় দ্রুত ফলন আহরণ করা যায় বের করতে হবে। এতে প্রকৌশলীদের সহযোগীতা লাগবে, তারা উন্নত মডেল এর জন্য একা এটা করতে পারবে না এর জন্য গবেষক দরকার। গবেষকরা প্রকৌশলীদের সমর্থিত জ্ঞান সরবরাহ করবে এর মডেল উন্নয়নে গবেষণাগারে উদ্ভাবন করে মাঠ পর্যায়ে কৃষকের মাধ্যমে feedback পাবে।

জায়গা যেহেতু নাই, সেহেতু বহুতল ভবনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রকৌশলীদের সহায়তা নিতে হবে।
বহুতল ভবনেও যদি সমাধান না হয় তাহনে জনগনের একটি অংশকে চুক্তি সাপেক্ষে বাহিরের দেশে/গ্রামে/অঞ্চলে স্থানান্তরিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। সহজে করতে না পারলে পররাষ্ট্রনীতি উন্নতি করতে হবে। এতে ১০০% সম্ভাবনা অঞ্চল বাড়ানোর।
আর যুদ্ধ করার মত পরিস্থিতি পৃথিবীতে নাই, এতে উভয় পক্ষের ক্ষতি হবেই। যদি করে থাকে তাহলে সমানে সমানে লড়াই হলে কেউ জিতার কথা নয়। অসম হলে ভিন্ন কথা।

এসবের জন্য অর্থ দরকার। সবার কাজ দরকার। টাকা বা মূল অর্থকে run এ রাখতে হবে। এটাকে fake মনে হলেও আদতে fake নয়। হিটলার এই পদ্ধতি অনুসরণ করেছিল। সে সবার জন্য কাজের ব্যবস্থা করেছিল। অল্প হলেও খাদ্য, বেতন, থাকার জায়গা, সর্বপুরি নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করেছিল। এখানেই সে টেক্কা মেরে দেয়। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পরেও ঘুরে দাড়ানো একটি ইতিহাস বলা যায়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরেও ঘুরে দাড়ানো আরেক ইতিহাস বলা যায়। জাপান একা শুধু ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে দাড়ানো দেশ নয়। ভিয়েতনামও কম যায় না। অলস বসে থাকার সুযোগ নেই। এই বলে সমাজতন্ত্র মন্ত্র বলছি না। বাংলাদেশের বেকার অনেক। অনেকেই বলে বেকারত্বের হার কমিয়ে নিয়ে এসেছি। আসবে, এসেছে। কিন্তু ......**ত বলছে না বেকার বাংলাদেশে আর থাকবে না। সবার জন্য কাজের সুযোগ থাকবে। কিভাবে থাকবে, কি রকম থাকবে লেখতে গেলে কয়েক পোস্ট লেখা যাবে। বলেলেই হবে, মানুষকে করতেই হবে। আমি যদি বলি b.sc aggriculture করে কৃষক হই আসেন, অনেকই নাক সিটকাবে, এইসব মানেই হল অনেকের কাছে শুধু শিক্ষকতার পেশা অন্য কিছু নয়। এই হল বাংলাদেশের অবস্থা।

উপরে প্রযুক্তি, গবেষক, গবেষণা, International Relations and Diplomacy ইত্যাদি নিয়ে কপচালাম এগুলোর কেন্দ্র হল শিক্ষা। শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতি না করতে না পারলে প্রযুক্তি, গবেষণা, Diplomacy কিছুই কাজ আসবে না। এটাতে ঢালাওভাবে উন্নতি করতে পারলে, আপনার গ্রাম প্রথম থেকেই টিকে যেত। এখনো সুযোগ আছে, ধ্বংস হয়ে যায় নাই। ধীরে ধীরে আগাতে হবে তাহলে আগামী ৫০-১০০ বছর পর একটা সঠিক উন্নতি চোখে পড়ার মত হবে। ৫০-১০০ বছর বললাম প্রজন্ম হিসেব করে। চোখে পরার মত না হলেও অভ্যন্তরীন উন্নতি ১০-২০ বছরের মধ্যে উপলব্ধি করা যাবে।

পোস্ট করা হয় না অনেকদিন, তাই মন্তব্য দীর্ঘ করে ফেললাম। সামুর কাছে কৃতজ্ঞ যে আমার অনেক ধ্যান ধারণা পাল্টেছে। আশা করি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.