নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট পরিবারের সাথে বিষণ্ণতা বা আত্মহত্যার কি কোন সরাসরি সম্পর্ক আছে?

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:৫৭

আমরা সবাই হয়তো গতকাল (বুধবার) রাতের ঢাকার এক ব্যবসায়ীর আত্মহত্যার ঘটনা জানি। এই বিষয়ে কিছু ভাবতে বা লিখতে না চাইলেও, একটু আগে অন্য আরেকজনের এই বিষয়ক চাঞ্চল্যকর একটি স্ট্যাটাস দেখে আমি এখানে এই লেখা লিখতে বসেছি।

কয়েকটি তথ্য-উপাত্ত দিয়ে শুরু করতে চাইঃ-

১) মহামারির সময় দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো জরিপে দেখা গেছে, ৮৪ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। চার ভাগের তিন ভাগ শিক্ষার্থী পড়ালেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এই প্রবণতা গ্রামে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। মানসিক অস্থিরতার কারণ খুঁজতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, একাকী অনুভব করা, করোনা সংক্রমণের ভয়, পারিবারিক কলহ, পরিবার থেকে বিয়ের চাপ, হীনমন্যতা ইত্যাদি। করোনাকালীন এর সবগুলোই বৃদ্ধি পেয়েছে।(https://www.dhakapost.com/health/68000)

২) দেশে মোট জনসংখ্যার প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং শিশু-কিশোরদের মধ্যে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ মানসিক রোগে ভুগছে। তবে এ বিশালসংখ্যক মানসিক রোগীদের চিকিৎসায় সাইকিয়াট্রিস্ট (মনোব্যাধির চিকিৎসক), সাইকোলজিস্টসহ (মনোবিজ্ঞানী) কর্মরত জনশক্তি অপ্রতুল। ১০ অক্টোবর ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি) কর্তৃক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। (https://www.dhakapost.com/health/68229)

৩) মানসিক রোগে কোনো জীবাণু খুঁজে পাওয়া যায় না। আর্থিক, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, মহামারি—নানা কারণে অসমতার শিকার হলে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সংকট দেখা দিতে পারে। তবে সেটা প্রকট হলে মানসিক রোগ হতে পারে। আমাদের সমাজে ধর্ম, বর্ণ, আর্থিক অবস্থা, শারীরিক অবস্থা—এসব নানা কিছু নিয়ে অসমতা ও বৈষম্য রয়েছে। দিন শেষে এগুলো আমাদের মানসিকভাবে আক্রান্ত করে, বিপর্যস্ত করে। মানসিক সমস্যা আর রোগ কিন্তু এক নয়। মানসিক স্বাস্থ্য যখন খারাপ হয়, তখন মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। সময়মতো মানসিক সমস্যার চিকিৎসা বা নিরাময় না হলে তা একসময় প্রকট হয়ে রোগে দেখা দেয়। (https://cutt.ly/sOTh6t2)

গতকাল মারা যাওয়া ভদ্রলোকের বিষয়ে পুলিশ মনে করছে তার দীর্ঘ দিনের একাকী জীবন, ক্যান্সারের সাথে লড়াই, ব্যবসায় লোকসান, এই সব কিছু থেকে তিনি চরম অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সেটিই তার আত্মহননের পথ বেছে নেবার কারণ হতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ।
পুলিশের বিবৃতিঃ- "ওনার অনেক ডিপ্রেশন ছিল। ওনার বিগত পাঁচ বছর যাবত ক্যান্সার ধরা পড়েছে। ওনার স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে অস্ট্রেলিয়া থাকে। উনি একাকী জীবন যাপন করতেন। উনি ব্যবসা করতেন কিন্তু অসুস্থতার কারণে ব্যবসাটা ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারেননি। উনি অনেক ব্যাবসায়িক লস করেছিলেন।"

একটু আগে, ফেসবুকে আমি ফলো করি ও সম্মান করি এমন এক শ্রদ্ধেয় সহীহ মুসলিম বড় ভাই লিখলেনঃ-
"ছোটবেলায় টিভিতে দেখতাম, পেপারে পড়তাম। পাঠ্যপুস্তকে মুখস্থ করতাম। "ছোট পরিবার, সুখী পরিবার।"- অ্যাবসোলুট মিথ্যা কথা। ছোট পরিবারগুলোর বাবা-মা এখন বুড়ো - সুখে নাই, সাথে ছেলে-মেয়ে নাই। তাদের নেওয়া একটা-দুটা বাচ্চা-কাচ্চারা এখন বিয়ে করে সংসার করছে - এরাও সুখে নাই। ভাই-বোন সাথে নাই। বাপ-মা সাথে নাই। বাচ্চা যে নিবে - পালবে কীভাবে - এই চিন্তাতেই সুখ নাই হয়ে গেছে। দারিদ্রের দুষ্টচক্রের চেয়ে এই দুষ্টচক্র অনেক ভয়ংকর। আপারা - বেশি করে বাচ্চা নেন। ভাইয়েরা, পারলে ডিভোর্সী, স্বামী মারা গেছে বা যে কোনো কারণে অবিবাহিত থেকে গেছে এমন নারীদের বিয়ে করুন। একাধিক বিয়ে করুন।"

গতকাল রাতেই ঘটনার পরে সবাই যখন খবরটা শেয়ার দেওয়া শুরু করলো, আমি তখন থেকে যেই কয়টা প্রতিক্রিয়ার জন্য ভিতরে ভিতরে ভয় পাচ্ছিলাম, তার মধ্যে প্রধানতম ছিলো উপরের কারণটা।

কয়েক বছর আগে, ঢাকাতেই আরেক ফ্ল্যাটে কোন এক ভার্সিটি প্রফেসর ঠিক এভাবেই মারা গিয়েছিলো (আত্মহত্যা না সম্ভবত)। কিন্তু এই ঘটনার সাথে মিল হচ্ছে- তার স্ত্রীও কোন এক সন্তানকে দেখতে বিদেশে গিয়েছিলো। এই ক্ষেত্রেও এই লোকের সন্তানেরা দেশে-বিদেশে নানা স্থানে থাকেন; এবং তার স্ত্রীও তার এক সন্তানের কাছে ঘুরতে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলো। প্রশ্ন হচ্ছে, দুই ঘটনাতেই, সুযোগ এবং স্বাচ্ছল্য থাকা সত্ত্বেও, এই প্রাপ্তবয়স্ক লোক দুটি কেন "একাকী" নিজ ফ্ল্যাটে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?
এর জন্য কি তাদের স্ত্রীরা দায়ী? তাদের সন্তানেরা দায়ী? তাদের একাকীত্বই কি একমাত্র দায়ী?!

গতকালের ঘটনার ব্যবসায়ী সম্পর্কে মূলত যা জানা যায়, তার ব্যবসাতে অনেক খারাপ অবস্থা যাচ্ছিলো; ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিলেন বারবার। পাওনাদারদের পাওনা টাকা দেওয়ার জন্যেও অনেক ঝামেলা হচ্ছিলো। তার উপরে ৫ বছর ধরে ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে বেঁচে ছিলেন! আর কোভিডের কারণে ক্যান্সার রোগী ও বয়োজ্যেষ্ঠ হওয়াতে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে বেঁচে থাকাটাও অনেক মানসিক শক্তির দরকার!

এরকম একটা জটিল পরিস্থিতিতে- অধিক সন্তান থাকা কিংবা সন্তানেরা সবাই নিজের ঘরে থাকাটা- কিভাবে তাকে আত্মহত্যা করা থেকে ঠেকাতে, কিংবা কতটা তাকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে পারতো? আমাদের নাগরিকজীবন, আমাদের নগর সভ্যতা, আমাদের সমাজব্যবস্থাকে- সার্বিকভাবে কি আমরা সুস্থ মানসিকতাবোধসম্পন্ন রাখতে পেরেছি? যারা ঢাকার মত অবসবাসযোগ্য নগরে থাকেন কিংবা এই নগর থেকে পালিয়ে বেঁচেছেন- তারাই আমার প্রশ্নের সঠিক জবাব উপলব্ধি করবেন!

লেখা বেশি বড় না করে শুধু কয়েকটা প্রশ্ন উত্থাপন করে যাচ্ছি। আমরা কেন আমাদের অনাগত সন্তান বা আগত সন্তানদেরকে আলাদা মানুষ, পৃথক চাহিদাসম্পন্ন বিবেকসম্পন্ন জীব মনে করি না? এই ব্যাপার তো আমি শুধু বাংলাদেশের মত দেশেই দেখেছি! "রবীন্দ্রনাথের পিতামাতা এতগুলো বাচ্চা না নিলে একটা রবীন্দ্রনাথ বের হয়ে আসতো না"- এরকম উদ্ভট যুক্তি শুধু আমাদের মুখ/মগজ থেকেই বের হয়!

ধরে নিলাম, এক ব্যক্তি অনেকগুলো বিয়ে করেছেন, সন্তান নিয়েছেন। কোন সন্তান সরকারি চাকরিজীবি- তার পোস্টিং সেই শহরেই নিশ্চিত করা যাবে? কোন সন্তান ডাক্তার- রোগী, পেশা, নিজ পরিবারকে সময় দেওয়ার বাইরে পিতাকে আলাদা সময় দেওয়া শতভাগ নিশ্চিত করা যাবে? কোন সন্তান ব্যবসায়ী- সেবা করার জন্য বেতনভুক্ত লোক রাখার সামর্থ্য থাকলেও সন্তানের সাথেই আলাদা করে সময় যাপন করা সবসময় সম্ভব হবে? প্রত্যেক সন্তানের আলাদা জটিল সংগ্রামময় জীবন তো অবশ্যই থাকবে! যেই সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও বাবা-মায়ের সাথে থাকতে থাকে- তাকে নিয়েও তো ঐ পিতামাতার দুশ্চিন্তার বা সমাজের কটুকথার শেষ হয় না! একূল-ওকূল-সব কিছু তো একসাথে পাওয়া সম্ভব না! সবকিছু একসাথে চাওয়াটাও তো মূর্খামি! যেই দরিদ্র কৃষক তার কুঁড়েঘরে ডজনখানেক পরিবারের সদস্য নিয়ে একবেলা খেয়ে অনাহারে রোগে ধুকে ধুকে জীবনযাপন করে, সে যা পায়, অন্যরা তা পাবেনা- এটাই তো স্বাভাবিক হওয়া উচিত!

জনসংখ্যাই জনসম্পদ- এই ধারণা থেকে বের হয়ে না আসতে পারলে আমাদের সমাজ, অর্থনীতি ও গোটা পরিবেশের উপর ভয়াবহ বিপর্যয় আসতে বাধ্য! রিজিকের মালিক আল্লাহ, আমাদের জীবনের মালিক আল্লাহ, সবকিছুর শুরু-শেষ আল্লাহ; কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। কিন্তু আমাদেরকে আল্লাহ বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতা দিয়েছেন, সবকিছু আমরা এভাবেই আল্লাহর উপর ছেড়ে দিতে পারি না। এরকম হলে খুনী খুন করেও বলার অধিকার রাখে- এই খুন আল্লাহ করিয়েছেন, আজরাইলকে পাঠিয়ে জান নিয়ে গিয়েছেন, আমি তো জাস্ট উছিলা!
আমি এরকম দূর্ঘটনার কোন এক বা একাধিক নির্দিষ্ট কারণ বা নির্দিষ্ট সমাধান নিয়ে কিছুই বলছি না বা বলবো না। জাস্ট, "বেশি বেশি বিয়ে করো", "বেশি বেশি সন্তান নাও", এরকম কাঠখোট্টা সমাধান শুনে চুপ থাকতে পারলাম না। ১০টা সন্তানের মধ্যে ৮টা দ্বারা নানারকমভাবে অর্থ-যশ-ক্ষমতা-প্রভাব-প্রতিপত্তি-মাথা গোঁজার ঠাই নিশ্চিত করার পরে, বাকি দুইটাকে কি ঘরে বয়স্ক-অসুস্থ-একাকী পিতামাতার মৃত্যু পর্যন্ত সেবা করতে দেওয়ার জন্য রেখে দেওয়ার চিন্তা করাটা কি কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের চিন্তা হতে পারে? কার ভাগ্য কাকে কোথায় নিয়ে যায়- সেসব কি আমরা মানুষ হিসেবে আগে থেকে নিশ্চিত করে বলতে পারি?! আর, দূরে যদি পাঠাতেই না চান, তাহলে আগে থেকে পরিকল্পনা নিয়ে সন্তানদেরকে সে অনুযায়ীই বড় করে তোলাটা উচিত নয় কি?

যেই দেশে মশার উপদ্রব থেকে বাঁচার জন্য কয়েল, বৈদ্যুতিক র‍্যাকেট, ক্যান্সার সৃষ্টিকারী মশা মারার কেমিক্যাল ছিটানো, মশারী- সব সমাধানের কথাই চিন্তা করা হয়, কিন্তু মশার বাম্পার ফলন হওয়া নোংরা-অপরিচ্ছন্ন চারপাশের পরিবেশকে পরিস্কার রাখার চেষ্টাই করা হয় না, সেই দেশের মানুষের সমস্যার সমাধানের দৃষ্টিভঙ্গী কিরকম হবে- সেটা আন্দাজ করাই যায়।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৩৪

গেঁয়ো ভূত বলেছেন: ভালোবাসার অভাবেই মানুষ মরে যেতে চায়, ভালোবাসা পেলে মানুষের বেঁচে থাকা অনেক সহজ হয় I

২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:০০

তানীম আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: হোক কলরব !

৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: আমি আমার পরিবারের কথা বলি-
আমরা ৫১বর্তী পরিবার। সবাই একসাথে থাকি। ভালো আছি। আনন্দে আছি।

৪| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:০২

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: অল্পতে তুষ্ট থাকলেই ভালো থাকা যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.