নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খুবই সাধারন একজন মানুষ । পড়া যার নেশা । পড়ার এবং জানার আশায় ----

মোহামমদ কামরুজজামান

মোহামমদ কামরুজজামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কমনওয়েলথ (ময়নামতি) যুদ্ধ সমাধি - যেখানে প্রকৃতির নির্মল ছায়ায় ঘুমিয়ে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৭৩৭ যোদ্ধা

২৭ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৭


ছবি - গুগল
সবুজ পাহাড়ে প্রকৃতির কোলে দাড়িয়ে আছে কমনওয়েলথ (ময়নামতি) ওয়্যার সিমেট্রি বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সমাধি ।প্রথমেই চোখে পড়বে সবুজ ঘাসের গালিচায় হরেক রংগের ফুল।গাছ-গাছালি ঘিরে সুনসান নিরবতা।এখানে শায়িত আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকরা।কুমিল্লা জেলায় কমনওয়েলথ (ময়নামতি) যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র অবস্থিত।১৯৪১-৪৫ সালে বার্মায় ( বর্তমানে মিয়ানমার ) সংঘটিত যুদ্ধে যে ৪৫ হাজার সৈনিক নিহত হন তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে বার্মা,আসাম এবং বাংলাদেশে মোট ৯ টি রণ সমাধিক্ষেত্র তৈরী করা হয়।বাংলাদেশে মোট ২ টি রণ সমাধিক্ষেত্র আছে।যার অন্যটি চিটাগাং শহরে অবস্থিত।

জানা যায় ,ময়ানামতি যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র মূলত: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ভারতীয় ও বৃটিশ সৈন্যদের কবরস্থান।সমাধিক্ষেত্রটি প্রতিষ্ঠা করেছেন কমনওয়েলথ ওয়্যার গ্রেভস কমিটি।সেসময় ময়নামতি একটি ছোট গ্রাম হলেও পরে সেনাবাহিনীর বড় ঘাটিতে পরিণত হয় এবং একটি হাসপাতাল ও তৈরী করা হয়।এ ছাড়া কুমিল্লা ছিল যুদ্ধ সরঞ্জাম এর সরবরাহের ক্ষেত্র।বিমান ঘাটি এবং ১৯৪৪ সালে ইম্ফলে স্থানান্তুর হওয়ার আগে বৃটিশ সেনাবাহিনীর চর্তুদশ সদর দফতর ছিল এখানে।

কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের উত্তরে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পশ্চিম পাশে বুড়িচং উপজেলায় এর অবস্থান।স্থানীয়দের কাছে এটি ইংরেজ কবরস্থান নামেই সমধিক পরিচিত।এ সমাধিক্ষেত্রটি দুটি স্তরে বিভক্ত ।মূল ফটক পেরিয়ে প্রবেশ করলে দেখা যায় দু'পাশে সাজানো সমাধি।সামনে সিড়ি বেয়ে কিছুটা উঠলে প্রার্থনা কক্ষ আর মাঝে শ্বেতপাথরের যিশুখৃষ্টের ক্রুসের চিহ্ন।তার উপরে অর্থ্যাৎ সমাধির পিছনের অংশে নিহত মুসলিম সৈনিকদের কবর।কুমিল্লার শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে সাড়ে চার একর উচু-নীচু টিলাভূমিতে এ সমাধিসৌধে ৭৩৮ জনকে সমাহিত করা হয়েছিল ।তবে ১৯৬২ সালে এক সমাহিত সৈনিকের দেহাবশেষ আত্মীয়-স্বজনরা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যায়।ফলে বর্তমানে এখানে ৭৩৭ টি সমাধিক্ষেত্র রয়েছে।

এখানে সবাই এটাকে ইংরেজ কবরস্থান বললেও প্রকৃতপক্ষে এখানে শায়িত আছেন মুসলিম,বৌদ্ধ,হিন্দু,ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মের সৈনিকরা।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কুমিল্লার ময়নামতিতে ছিল মিত্র বাহিনীর চিকিৎসা কেন্দ্র।যুদ্ধে আহত সৈনিকদের চিকিৎসা দিতে এখানে নিয়ে আসা হত।চিকিৎসাধীন অনেক সৈনিক মারা যাওয়া ছাড়াও ঢাকা,ফরিদপুর,সিরাজগঞ্জ,সৈয়দপুর প্রভৃতি স্থানে নিহত সৈনিকদের লাশও এখানে সমাহিত করা হয়।এখানে সমাহিত হওয়া ৭৩৭ জনের মধ্যে ১৪ জন সৈনিকের কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি।সমাধিতে সাধারন সৈনিক থেকে ব্রিগ্রেডিয়ার পদমর্যাদার অফিসারকেও সমাহিত করা হয়।

বছরে ২ ঈদের দিন ছাড়া সাপ্তাহিক ছয়দিন সকাল ৭ টা থেকে দুপুর ১২ টা এবং দুপুর ১ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সর্ব সাধারনের জন্য খোলা থাকে।১২ টা থেকে ১ টা বিরতি।

এখানে সমাহিত হওয়া ৭৩৭ জনে সৈনিকের মধ্যে বাহিনী অনুযায়ী - ৩ জন নাবিক,৫৬৭ জন সৈনিক এবং ১৬৬ জন বৈমানিক সমাহিত আছেন। ১৪ জন সৈনিকের পরিচয় জানা সম্ভব হ্য়নি।

সমাধিক্ষেত্রের ৭৩৭ জনে সৈনিকের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ৩৫৭ জন ,কানাডার ১২ জন,অস্ট্রেলিয়ার ১২ জন ,নিউজিল্যান্ডের ৪ জন,
দক্ষিন আফ্রিকার ১ জন ,বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের ১৭৮ জন,জিম্বাবুয়ের ৩ জন,পূর্ব আফ্রিকার ৫৬ জন ,পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬ জন,বার্মার ১ জন এবং জাপানের ২৪ জন যুদ্ধ বন্দীর কবর রয়েছে।তাছাড়া ১ জন বেসামরিক ব্যক্তিকেও এখানে সমাহিত করা হয়।
প্রতিটি সমাধিতে নিহত সৈনিকের নাম,বয়স,পদবীসহ মৃত্যুর তারিখ ও জাতীয়তা লেখা রয়েছে।সমাধিক্ষেত্রটির চারদিকে প্রতিরক্ষা বেড়া রয়েছে।প্রতিটি সমাধির পাশে নানরকম ফুল ও পাতাহার গাছের দ্বারা সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে।ময়নামতি যুদ্ধ সমাধিতে শুধু মিত্রবাহিনীর সৈনিকদের সমাহিত করা হয়েছে এমনটি নয় এখানে জাপানী সৈন্যদেরও কবর রয়েছে।



ছবি - গুগল
সমাধিক্ষেত্রটির প্রবেশমুখে একটি তোরনণ রয়েছে।যার ভিতরের দেয়ালে সমাধিক্ষেত্রের ইতিহাস ও বিবরন ইংরেজী ও বাংলায় লেখা রয়েছে।তোরন ঘর থেকে সামনে প্রশস্ত পথ।যার দুই পাশে সারি সারি এপিটাফ।তাতে নিহতের নাম ,পরিচয়,মৃত্যু তারিখ লেখা রয়েছে।এপিটাফে প্রত্যেকের ধর্ম অনুযায়ী ধর্মীয় প্রতিক লক্ষ্য করা যায়। খ্রিস্টানদের এপিটাফে ক্রুশ আর মুসলমানদের এপিটাফে আরবী লেখা।এই প্রশস্ত পথ ধরে সামনে রয়েছে সিড়ি দেওয়া বেদি।বেদির উপর খ্রিস্ট ধর্মের ক্রুশ ।বেদির দুই পাশে আরও দুইটি তোরণ ঘর।এ দুটি তোরন ঘর দিয়ে সমাধির পেছনের অংশে যাওয়া যায়।
সমাধিক্ষেত্রের সামনের অংশের প্রশস্ত পথের পাশেই ব্যতিক্রমি একটি কবর রয়েছে যেখানে একসাথে ২৩ টি এপিটাফ দিয়ে একটি স্থানকে ঘিরে রাখা হয়েছে। স্থানটি মুলত: ২৩ জন বিমান সেনার একটি গণকবর।

প্রতি বছর নভেম্বর মাসের ১১ তারিখে কমনওয়েলথ দেশসমুহের বাংলাদেশে নিয়োজিত হাইকমিশনার / কূটনীতিকগণ ছুটে আসেন ওয়ার সিমেট্রিতে । তারা সবাই সৈনিকদের প্রতি জানান ফুলেল শ্রদ্ধা আর সব ধর্মের ধর্ম গুরুদের সমন্বয়ে হয় বার্ষিক প্রার্থনা সভা ।

তথ্যসূত্র - সংগহীত।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৪

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: কিউরিসিটি - এটা কি আপনি নিজে রিসার্চ করে লিখেছেন নাকি শুধুমাত্র সংগ্রহ করেছেন?

৩০ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৪৫

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ সামু পাগলা বহিন ,আপনার মন্তব্যের জন্য।

না রিসার্চ বলা যায়না ।তবে ঘরের কাছে এর অবস্থান ।শৈশব থেকে সবসময় অসংখ্যবার / বার বার দেখি কিন্তু চোখের দেখা যে পরিপূর্ণ দেখা নয় এবং শৈশব থেকে দেখেও তা সম্পর্কে কত কম জানি - তা এ সম্পর্কিত দৈনিক পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন পড়ে উপলব্ধি হ্য়।তার পর থেকেই ওয়্যার সিমেট্রি সম্পর্কিত - তথ্য, সিমেট্রির প্রাংগন / এ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং সর্বোপরী গুগল মামার সাহায্যে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জানার প্রচেষ্টা।

জানার এই জানার চেষ্টার করুন পরিণতিই এই লেখা প্রসব।

২| ৩০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:১৬

ওমেরা বলেছেন: সংগ্রহ পোষ্ট হলেও ভালো লাগল , অনেক কিছু জানমাল । নেট ঘেটে সব কিছু সব সময় জানা হয় না । আপনাকে ধন্যবাদ ।

৩১ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:১৫

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ ওমেরা।
আপনার ভাল লাগল জেনে আমারও ভাল লাগল।

আসলে বর্তমানে বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার মাঝে এবং গুগল নামক দৈত্যের কল্যানে জগতের সবকিছুই মানুষের হাতের নাগালে সে ছোট থেকে বড় যে কোন বিষয়ই হোক না কেন।
তারপরেও যে কোন বিষয়ে এক ক্লিক এ জানা আর নিজের চেষ্টা দ্বারা জানায় একটু প্রার্থক্য থেকে যায়। জানার চেষ্টাই আমাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়।

৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০১

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: প্রতিমন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।

লেখাটি আসলেই অনেক তথ্যবহুল। এধরণের লেখায় পরিশ্রম করতে হয় অনেক এবং সামু ব্লগও সমৃদ্ধ হয় কন্টেন্টে। কৃতজ্ঞতা রইল মেধা ও শ্রম ব্যায়ে।

আরেকটা কথা বলে যাই, ব্লগে টিকে থাকার এবং সবার প্রিয় হবার জন্যে নিজের একটা স্টাইল লাগে। আপনার সেটা আছে। আপনার মন্তব্যগুলো অনেক সেন্সিবল হয় এবং জরুরী লাইনগুলো বোল্ড করেন। অন্যদের ব্লগে আপনার বিস্তারিত মন্তব্যগুলো সবার মনে দাগ কাটছে আশা করি। এভাবেই মন দিয়ে ব্লগিং করতে থাকুন।
শুভেচ্ছা।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:২০

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পাগলা বহিন ।

আমি কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি আপনার মন্তব্যে। আপনি যে মন্তব্য করেছেন তাতে আমি খুবই প্রীত।আপনারা যারা ব্লগে সিনিয়র তাদের এরকম পজেটিভ এবং উৎসাহমূলক মন্তব্য আমার মত নবীশ ( :P খবিশ না) দের সামনে এগিয়ে যাবার,কিছু লেখার প্রেরণা যোগাবে নি:সন্দেহে।

আবারো হৃদয়ের গভীর থেকে উষ্ণতম অভিনন্দন আপনার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.