নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আকরাম এইচ রাফি

আকরাম এইচ রাফি

বাস্তবতায় বিশ্বাসী, শান্তি প্রত্যাশী।

আকরাম এইচ রাফি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃত যুবকের রূহ এবং মুসাফির

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৯

১ম দৃশ্য,
অনেকদিন আগের ঘটনা। একজন মা
তার যুবক ছেলেকে নিয়ে এক
আত্নীয়ের বাড়ি বেড়াতে,যাচ্ছিলে
ন। যাওয়ার পথে তাদের,গাড়ি
দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
উক্ত দুর্ঘটনায় মা আহত হয়ে জ্ঞান
হারিয়ে ফেলেন কিন্তু যুবক ছেলেটি
ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
আশেপাশের লোকজন
ছেলেটির,মা'কে স্থানীয় একটি
হাসপাতালে ভর্তি করে দেয় এবং মৃত
ছেলেটির লাশকে এক জঙ্গলের পাশে
দাফন করে ফেলেন।
জ্ঞান ফেরার পর মা তার যুবক ছেলের
মৃত্যুর খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে
পড়েন।
কিন্তু সৃষ্টি কর্তার বিধান যে কেউ
লঙ্গন করতে পারেনা। অবেশেষে
নিয়তির কাছে হার মেনে মা তার
আগের যায়গায় ফিরে যান এবং আগের
মতই বসবাস করতে শুরু করেন।
.
.
২য় দৃশ্য
প্রথম দৃশ্যের কিছু বছর পরের ঘটনা এক
মুসাফির জঙ্গল পথে হেটে যাচ্ছিলেন।
পথিমধ্যে তিনি তার শরীরে বেশ
ক্লান্তি অনুভব করেন। একদম যেন পা
চলতে চাইছেনা। তাই তিনি গাছের
ছায়ায় খানিকক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার
সিন্ধান্ত নেন।
একটি বড় গাছের নিচে বসে তিনি
বিশ্রাম নেয়া শুরু করেন। কিন্তু
নিজের অজান্তেই তিনি গভীর ঘুমে
আচ্ছন্ন হয়ে গেলেন। যখন তার ঘুম
ভাঙলো তখন গভীর রাত।
রাতের নিকশ আঁধারে তিনি কিছুই
দেখতে পাচ্ছিলেন না। তিনি মনের
মধ্যে কিছুটা ভয় ভয় অনুভব করেন। একে
তো গভীর রাত, তার উপর অপরিচিত
জায়গা। এছাড়া জঙ্গলে হিংস্র
জীবজন্তুও থাকতে পারে।
এমন সময় তিনি খেয়াল করলেন
জঙ্গলের পূর্ব দিকে হাল্কা মৃদু আলো
দেখা যাচ্ছে।
তিনি ভাবলেন নিশ্চয় জঙ্গলের পূর্ব
পাশে কোনো বসতি আছে। মুসাফির
সেই আলো অনুসরণ করে এগিয়ে
গেলেন।
গিয়ে দেখতে পেলেন একটি
কবরস্থান। আর কবররস্থানের পাশেই
ছোট্ট একটি মাঠ। সেই মাঠে কয়েকজন
মানুষ আলো জ্বালিয়ে ভালো ভালো
খাবার খাচ্ছে। মুসাফির কিছুটা
অবাক হলেন। কারা এই মানুষ যারা
এতো রাতে কবরস্থানের পাশে বসে
খাবার খাচ্ছে।
কিন্তু হঠাতই তার নজরে পাড়লো ঐ
লোকগুলো থেকে হাত দশেক দুরে
একটি যুবক ছেলে একা বসে আছে।
পোশাক দেখে বোঝা যাচ্ছে
ছেলেটি খুব গরীব আর অনেক দিনের
ক্ষুদার্থ।
কিন্তু তার সামনে কোনো খাবার নেই।
মুসাফির বেশ অবাক হয়েই যুবক
ছেলেটির দিকে এগিয়ে গেলেন।
মুসাফির এগিয়ে গিয়ে যুবক ছেলেটির
পাশে বসলেন। যুবক ছেলেটি তখন
অসহায়ের মতো মুসাফিরের দিকে
তাকিয়ে রইলো।
মুসাফির যুবক ছেলেটিকে প্রশ্ন
করলেন, "ওহে যুবক। আপনাকে এতো
বিষন্ন দেখাচ্ছে কেন। মনে হচ্ছে
আপনি অনেক দিনের ভুক্ত?"
.
মুসাফিরের প্রশ্নে যুবক ছেলেটি
অশ্রুসিক্ত চোখে জবাব দিলেন,
"ওহে মুসাফির, আমি আল্লাহর একজন
গুনাহগার বান্দা। আপনি সামনে যে
কবরস্থান দেখছেন ওখানেই আমার
বাস। মৃত্যুর পূর্বে আমি তেমন নেক
আমল করতে পারিনি। সময় কাটিয়েছি
গান-বাজনা, রংতামাশা করে। যার
দরুন মৃত্যুর পরে আমি এর ফল ভোগ
করছি। আমি অনেক দিনের ভুক্ত। প্রতি
রাতে ফজরের নামাজের আগে
আমাদের কবরবাসিকে কিছু
খাবার দেয়া হয় পৃথিবীতে যার যার
নেক আমলের ভিত্তিতে। যেহেতু আমি
পৃথিবী হতে পরকালের তরে নেক আমল
সঞ্চয় করতে পারিনি তাই আমাকে
কিয়ামত পর্যন্তই ভুক্ত থাকতে হবে।"
.
এই বলে যুবক ছেলে কাঁদতে লাগলো।
ছেলেটির জন্য মুসাফিরের মনে মায়া
জাগলো। মুসাফির ছেলেটিকে
প্রশ্ন করলেন, "ওহে যুবক, আপনার এ
করুন পরিণতি হতে মুক্তি লাভের
কোনো উপায় আছে কি?"
.
প্রতি উত্তরে যুবক জবাব দিল, "ওহে
মুসাফির, আমার মা যদি আমার জন্য
আল্লাহর নিকট দোয়া প্রার্থনা করে,
আমার রুহের মাগফিরাতের জন্য দান
খয়রাত করে তবে হয়তো পরম করুণাময়
আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করতে পারেন।"
.
যুবকের কষ্টের কথা চিন্তা করে
মুসাফির সিন্ধান্ত নেন তিনি যুবকের
মায়ের কাছে যাবেন এবং যুবকের এই
পরিণতির কথা জানাবেন। যাতে
মহিলা তার মৃত ছেলের জন্য আল্লাহর
নিকট ফানা চায়।
অতপর যুবক থেকে তার মায়ের ঠিকানা
নিয়ে মুসাফির রওনা হলেন যুবকের
বাড়ির উদ্দেশ্যে।
ঠিকানায় পৌছে মুসাফির যুবকের
মাকে খুঁজে বের করলেন এবং তার
ছেলের করুণ পরিণতির কথা
জানালেন।
মৃত ছেলের করূণ পরিণতির কথা শুনে
মহিলা কাঁদতে কাঁদতে মুসাফিরকে
বললেন,
"ওহে মুসাফির ভাই, আমি পৃথিবীর
মায়ায় আমার মৃত ছেলের কথা ভুলেই
গিয়েছিলাম। আজ যখন আমার মৃত
ছেলের আযাবের কথা শুনতে পেলাম
তখন থেকে আমার নিজেকেই অপরাধী
মনে হচ্ছে। কথা দিলাম আমি আল্লাহর
কাছে আমার ছেলের জন্য ক্ষমা
প্রার্থনা করবো। তার রুহের শান্তির
জন্য গরীব মেসকিনদের দান খয়রাত
করবো।"
অবশেষে মুসাফির খুশি মনে মহিলা
থেকে বিদায় নিয়ে আসেন।
.
৩য় দৃশ্য,
দ্বিতীয় দৃশ্যের এক মাস পরের ঘটনা।
মুসাফির পুনঃরায় সেই জঙ্গলের
গাছের নিছে নিদ্রা যাপন করলেন
এবং পূর্বের মতো গভীর রাতেই তার ঘুম
ভেঙে গেল। ঘুম ভাঙতেই মুসাফির
জঙ্গলের পূর্ব দিকে হাটা আরম্ব
করলেন। আজকেও সেই দিকে মৃদু আলো
দেখা যাচ্ছে।
কবরস্থানের কাছে গিয়ে মুসাফির
দেখতে পেলেন সেই যুবককে। কিন্তু
আজ তাকে অসহায় বাবক্ষুদার্থ মনে
হচ্ছেনা। অন্য সবার মতো তাকেও আজ
ভালো ভালো খাবার দেয়া হয়েছে।
মুসাফির যুবকের দিকে
এগিয়েবগেলেন। মুসাফিরকে
দেখেইবযুবক হাসি মুখে সালাম
জানালেন।
মুসাফির যুবকের কাছে তার বর্তমান
অবস্থার কথা জানতে চাইলে যুবক
জবাব দেয়, তার মা তার জন্য
আল্লাহতালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা
করেছেন। তাই পরম করুণাময় মহান
আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
আর এখনবতিনি ভালোই আছেন।
মুসাফির যুবকের পরিত্রানের কথা
শুনে খুশি হন এবং আল্লাহর নিকট
যুবকের আত্মার শান্তি কামনা করে
সেই স্থান ত্যাগ করেন।
.
.
কিছু কথা,
পৃথিবীতে একজন মানুষ ধর্মেকর্মে
যেরূপ নেক আমল করবে, পরকালে ঠিক
সেরূপ ফল ভোগ করবেন। উক্ত গল্পে
ভালো খাবার দ্বারা ভালো ভাবে
শান্তিতে থাকাকে বুঝানো হয়েছে।
সবাই সত্য ও ন্যায়ের পথে চলার
চেষ্টা করবেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.