| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গোলাম মহিউদ্দিন নসু
মনের কথা- সত্য কথা- বাস্তবতা- গবেষণা- সমস্যা- সম্ভাবনা- ইতিহাস- ঐতিহ্য- স্থাপত্য- ফোক কালচার সহ ইত্যাদি বিষয়ে সাংবাদিকতার দৃষ্টিতে লেখা-লিখি।
দৈনিক ভোরের কাগজে
মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০১৪
গোলাম মহিউদ্দিন নসু (বেগমগঞ্জ) নোয়াখালী থেকে : নোয়াখালীর নলপুর হাইস্কুলে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োজিত শিক্ষকের যোগদানের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্বাক্ষর/লেখা বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করা হবে, কার দেয়া তথ্য সঠিক। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের কোনো মতামত নেয়া হয়নি।
ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার জাফর ইমাম উচ্চ বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক আ ফ ম ফরমান (ব্যানবেইস আইডি নং-১০৫১১৫৪) পদত্যাগপত্র কিংবা ছাড়পত্র না নিয়ে ভুয়া কাগজপত্র সৃজন করে জালিয়াতির মাধ্যমে নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলার নলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি নেয়ার গুরুতর অভিযোগ করা হয়। জেলা শিক্ষা অফিসার আজিজুল হক অভিযোগটি অসত্য বলে দাবি করেন। এ বিষয়ে দৈনিক ভোরের কাগজে গত ৯ আগস্ট একটি সংবাদ ছাপা হয়। শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য স¤প্রতি নোয়াখালী জেলা শিক্ষা অফিসার আজিজুল হককে নির্দেশ প্রদান করেন।
জেলা শিক্ষা অফিস মহাপরিচালকের চিঠি প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে জানান, গতকাল সোমবার এ বিষয়ে তদন্ত করার জন্য জাফর ইমাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক ফোরকানকে জেলা শিক্ষা অফিসে ডাকা হয়। জেলা শিক্ষা অফিসের প্রধান সহকারী দীপক কুমার জানান, অভিযোগকারী প্রধান শিক্ষক দাবি করেন, তিনি ফোরকানকে ছাড়পত্রসহ কোনো প্রকার কাগজপত্র দেননি। আবার ফোরকান দাবি করেন প্রধান শিক্ষকই তাকে কাগজপত্রগুলো দিয়েছেন, যা তিনি অফিসে জমা দিয়ে চাকরিতে যোগদান করেছেন। উভয়ের বক্তব্যের আলোকে তারা প্রধান শিক্ষকের প্রয়োজনীয় লেখা ও স্বাক্ষর নিয়েছেন- যা একজন সংশ্লিষ্ট স্বাক্ষর লেখা বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেবেন। নোয়াখালীতে এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ পাওয়া না গেলে ডিজি কার্যালয়ে প্রেরণ করবেন।
বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কেন জাফর ইমাম হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন বই এবং অপরাপর সদস্য ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করা হলো না এমন বিষয় জানতে জেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, জাফর ইমাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অশোক কুমার হাওলাদারের লিখিত অভিযোগে জানা যায়, আ ফ ম ফরমান সহকারী শিক্ষক হিসেবে জাফর ইমাম উচ্চ বিদ্যালয়ে ১/৮/২০১০ তারিখে যোগদান করেন। গত ১২/৫/২০১৪ তারিখ পর্যন্ত ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত থেকে ১৩/৫/২০১৪ তারিখ থেকে অনুপস্থিত থাকেন। কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে বা বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকায় ৫/৬/২০১৪ এবং ২৬/৬/২০১৪ তারিখে ডাকযোগে তার গ্রামের ঠিকানায় দুইটি চিঠি প্রেরণ করা হয়। এমনকি ৭/৮/২০১৪ তারিখে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে তাকে চিঠি প্রেরণ করলেও তিনিস চাকরিতে যোগদান করেননি এবং কোনো যোগাযোগও করেননি।
গত জুলাই/১৪ মাসের বেতন এমপিওতে অত্র স্কুলের তালিকায় তার নাম না দেখে কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করে জানতে পারে আ ফ ম ফরমান নোয়াখালী সদর উপজেলার নলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করে ব্যান বেইস নং ১০৫১১৫৪ মোতাবেক বেতন ভাতা গ্রহণ করছেন।
আ ফ ম ফরমান চুরি করা বা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে জালিয়াতের মাধ্যমে কাগজপত্র বানিয়ে শিক্ষা কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন বলে তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধান শিক্ষক ২৫/৮/১৪ তারিখে নোয়াখালী জেলা অফিসার বরাবরে আবেদন করে। এ বিষয়ে নোয়াখালী শিক্ষা অফিসার আজিজুল হকের সঙ্গে ২৮ আগস্ট/১৪ তারিখে আলাপ হলে তিনি বিষয়টি দেখবেন এবং ১ সেপ্টেম্বর/১৪ তারিখে জানান, অভিযোগটি সত্য নয়। পদত্যাগ পত্র গ্রহণকারী, ছাড়পত্র ও অভিজ্ঞতা সনদপত্র প্রদানকারী প্রধান শিক্ষক অশোক কুমার হাওলাদার লিখিতভাবে অভিযোগ করে বলেছেন, তিনি কোনো ধরনের পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করে, ছাড়পত্র ও অভিজ্ঞতা সনদপত্র আ ফ ম ফরমানকে দেননি। বিনা অনুমতিতে শিক্ষক ফরমান অনুপস্থিত রয়েছেন। এ পর্যায়ে জেলা শিক্ষা অফিসার কিভাবে নিশ্চিত হলেন, অভিযোগ সত্য নয়। এমন প্রশ্নে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি। ৩রা সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষক আ ফ ম ফরমানের সঙ্গে ফোনে আলাপ হলে তিনি দাবি করেন, প্রধান শিক্ষক থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সকল কাগজপত্র নিয়েছেন। বর্তমান কর্মস্থল নলপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হারুনুর রশিদ জানান, ফরমানের দাখিলকৃত কাগজপত্র দিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তার এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে পুনরায় আলাপ করতে গেলে ৩ সেপ্টেম্বর তার কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে অফিসের প্রধান সহকারী দীপক চন্দ্র পোদ্দার জানান, অভিযোগের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য ৭/৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিষয়টি (ডিজি, শিক্ষা বিভাগ) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করবেন।
ফেনী জাফর ইমাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানা, তিনি কোনো প্রকার কাগজপত্র আ ফ ম ফরমানকে দেননি। শুধুমাত্র অনুপস্থিতির জন্য তাকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এমনকি রেজিস্ট্রি করে যে চিঠি দেয়া হয়েছে, তার ডকুমেন্টও তার কাছে আছে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফেরদৌস আলম মজুমদার জানান, আ ফ ম ফরমান অনুপস্থিতির কারণে তাকে বারবার চিঠি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া কোনো শিক্ষকের পদত্যাগ পত্র গ্রহণ, তাকে ছাড়পত্র প্রদান বা কোনো শিক্ষক নিয়োগ বিষয়ে অবশ্যই ম্যানেজিং কমিটির সভার সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। এ বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির কোনো সভা হয়নি। একজন শিক্ষক হয়ে এমন ধরনে জালিয়াতি করার কারণে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া একান্ত জরুরি। তিনি আরো বলেন, তার এ আচরণ শিক্ষক সমাজকে কুলসিত করছে। বিষয়টি তদন্ত করে দোষী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষে প্রতি জোরালো অনুরোধ করেন।
©somewhere in net ltd.