| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গোলাম মহিউদ্দিন নসু
মনের কথা- সত্য কথা- বাস্তবতা- গবেষণা- সমস্যা- সম্ভাবনা- ইতিহাস- ঐতিহ্য- স্থাপত্য- ফোক কালচার সহ ইত্যাদি বিষয়ে সাংবাদিকতার দৃষ্টিতে লেখা-লিখি।
গোলাম মহিউদ্দিন নসু, নোয়াখালী ঃ
১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৯২ সালে গঠিত গণ-আদালতের অন্যতম বিচারক,বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য টাঙ্গাইল জেলার এলেঙ্গার ঐতিহ্যবাহী জমিদার পরিবারে ১৯১৪ সালের ৩ নভেম্বর জন্ম গ্রহন করেন । বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও মানবাধিকার আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ,সমাজের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে প্রেরণার অফুরান উৎস এ মহান জন ইহলোক ত্যাগ করেন ২০০৪ সালে। বৃটিশ-ভারতীয় সময়ে গড়ে উঠা নোয়াখালী গান্ধী আশ্রম ট্রাষ্টের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
জেলার অন্যতম সেবা প্রতিষ্ঠান গান্ধী আশ্্রম ট্রাষ্ট সম্প্রতি বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য কে নিয়ে নোয়াখালী জেলায় এক স্মৃতিচারন আলোচনার আয়োজন করে।
গান্ধী আশ্রম ট্রাষ্টের সচিব , জাতীয় পর্যায়ে একাাধিকবার স্বীকৃতি প্রাপ্ত সমাজসেবক ঝর্না ধারার সভাপতিত্বে আরোচনা উপস্থাপন করেন নোয়াখালী আইনজীবি সমিতির সাবেক সাধারন সম্পাদক কাজি মানছুরুল হক খসরু। আলোচনা করেন, নোয়াখালীর প্রবীন সাংস্কৃতিক ও সমাজসেবী জন বিমলেন্দু মজুমদার,মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠক আবদুল আউয়াল, নোয়াখালী াাইনজীবি সমিতির সাবেক সাধারন সম্পাদক মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন প্রমূখ।
আলোচানায় জানান যায়,এলেঙ্গার মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয়ে শুরু হয় তাঁর শিক্ষাজীবন। কৃতী ছাত্র হিসেবে ওই বিদ্যালয় থেকে সরকারি বৃত্তিসহ ষষ্ঠ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়ে টাঙ্গাইল শহরের বিন্দুবাসিনী উচ্চবিদ্যালয়ে থেকে ১৯৩১ সালে সরকারি বৃত্তিসহ ম্যাট্রিক পাস করেন। এ সময় তিনি নিয়মিত ফুটবল খেলতেন। তারপর উচ্চতর লেখাপড়ার জন্য কলকাতায় যান। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে আইএসসি পাস করেন ১৯৩৩ সালে এবং বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৩৫ সালে। ঐসময়ে তাঁর লেখা কয়েকটি জনপ্রিয় বিজ্ঞান প্রবন্ধ থেকে ধারণা করা যায় যে একসময়ে তাঁর ইচ্ছা ছিল মৌলিক বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করার। তবে মানবকল্যাণে আইনশাস্ত্রে পারদর্শিতার গুরুত্ব অনুধাবন করে তিনি কলকাতার ইউনিভার্সিটি ল কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৩৮ সালে প্রথম শ্রেণীতে আইনে ¯œাতক ডিগ্রি অর্জন করেন । এ সময় তিনি অর্থশাস্ত্র অধ্যয়নেও আগ্রহী হন এবং ১৯৪০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন ।
কলকাতায় শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি ফিরে আসেন পূর্ব বঙ্গে এবং ১৯৪১ সালে আইনজীবী হিসেবে ময়মনসিংহ জেলা আদালতে কর্মজীবন শুরু করেন । ১৯৪৭ সনে ভারত বিভাগ হয় এবং পূর্ব বঙ্গের প্রতিটি হিন্দু পরিবারকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় দেশত্যাগ করবে কি করবে না সেই সিদ্ধান্তটি নিতে হয়। এর মধ্যে ১৯৪৮ সনের ২৬শে নভেম্বর চিত্রা সিংহের সাথে দেবেশ ভট্টাচার্য পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। দেশের এক চরম অনিশ্চয় সময়ে চিত্রা ও দেবেশ ভট্টাচার্য সিদ্ধান্ত নেন দেশ ত্যাগ না করবার।
বামপন্থী রাজনৈতিক আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে ১৯৪৯-১৯৫০ সালে প্রায় দুই বছর তিনি তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকার কর্তৃক ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলে রাজবন্দী ছিলেন। তিনি জেল-জুলুমে অবদমিত হননি । সহকারাবন্দীদের সাথে অধিকার আদায়ের জন্য অনশন ধর্মঘটে অংশ নেন। কারাগারে লেখা তাঁর একটি কবিতা ‘শারান্তরালে পহেলা বৈশাখ’ থেকে তা স্পষ্টতই বোঝা যায়। এ কবিতাটির শেষ কটি চরণ ছিল :
তাই আজ শুনি
দুর্নিবার গতিচ্ছন্দে আগামীর স্পষ্ট প্রতিধ্বনি।
দেশে দেশে ইতিহাস নবরাজ্য গড়ে
স্পন্দমান জীবনের স্পর্শ আজ উদ্বেলিত করে।
আকাশে ও মাঠে, বন্ধু, শুনিছ না জীবনের গান
বছরের প্রথম দিবসে আজ তারই উদাত্ত আহ্বান।
এসব কবিতা পরবর্তী সময়ে তাঁর কাব্যগ্রন্থ কল্পকাব্য মঞ্জুষায় প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর চারটি প্রবন্ধ সংকলন রয়েছে। কারাগার থেকে চিত্রা ভট্টাচার্যকে তাঁর লেখা চিঠির মাধ্যমে জানা যায, তিনি কারাগারের শত অসুবিধার মধ্যেও তাঁর কাব্যচর্চা অব্যাহত রেখেছেন, বিশ্ব সাহিত্যের পুরোধাদের রচনা পড়ছেন, এমন কি ঊর্দু ভাষা শিখেছেন।
কারামুক্তির পর দেবেশ ভট্টাচার্য ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টে আইন পেশা শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৬১ সালে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট হন। ১৯৬০ সালে তিনি বার কাউন্সিলের সদস্য মনোনীত হন এবং ১৯৬৫ সালে বার কাউন্সিল অ্যাক্ট চালু হওয়া পর্যন্ত ওই দায়িত্বে ছিলেন। পরে হাইকোর্টের রুল কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন এবং ঢাকা হাইকোর্টের অবলুপ্তি পর্যন্ত ওই পদে যুক্ত ছিলেন। ক্রমান্বয়ে তিনি তৎকালীন পাকিস্তানের একজন অত্যন্ত যশস্বী আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। সম্পত্তি বিষয়ক আইন তথা দেওয়ানি আইনে তিনি বিশেষ পারদর্শিতার স্বাক্ষর রাখেন। বর্তমানের অনেক যশস্বী আইনজীবীর হাতেখড়ি হয় তাঁর কাছে।
দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য ঢাকা সিটি ল কলেজ (যা বর্তমানে ড. আলীম আল-রাজী ল কলেজ) প্রতিষ্ঠার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন এবং ১৯৫৫ থেকে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এ কলেজে নিয়মিত শিক্ষকতা করেন।
১৯৭১-এর মার্চ মাসে পাকিস্থানী সেনা বাহিনী কর্তৃক গণহত্যা শুরু হলে দেবেশ ও চিত্রা ভট্টাচার্য সকলের অজ্ঞাতে তাঁদের বন্ধু ও সুহৃদ ড. আলীম আল-রাজীর ধানমন্ডির বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন । কয়েক মাস পরে ড. রাজীর সহযোগিতায় এক দুঃসাহসিক পরিকল্পনায় ছদ্মবেশে ঢাকা থেকে পালাতে সক্ষম হন।
পাকিস্তান শাসনামলে হিন্দু সমাজ থেকে আগত কোনো ব্যক্তি হাইকোর্টে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাবার সম্ভাবনা ছিল না, সেই সম্ভাবনা উন্মুক্ত হয় বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর। বাংলাদেশের স্বাধীন সরকারের আমন্ত্রণে দেবেশ ভট্টাচার্য ১৯৭২ সালের ২১শে জানুয়ারি নবগঠিত হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৫ সনের জুন মাসে তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি নিযুক্ত হন। বিচারক হিসেবে তাঁর লেখা বেশ কিছু সাংবিধানিক ও মানবাধিকার বিষয়ক রায় তৎকালীন প্রেক্ষাপটে নিরপেক্ষ ও সাহসী হিসেবে বিবেচিত হয় এবং বর্তমানেও সেগুলো দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখিত হয়ে থাকে।
১৯৭৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে অবসর গ্রহণের বয়স কমিয়ে দেবেশ ভট্টাচার্যকে অকালীন অবসরে যেতে বাধ্য করে। এক নতুন অনিশ্চয়তায় দেবেশ ভট্টাচার্য চেম্বার প্রাক্টিসের মাধ্যমে আইনজীবীদের পরামর্শ দেয়া ও সালিসিতে সাহায্য অব্যাহত রাখেন। এছাড়া এই সময়ে তিনি নানাবিধ সামাজিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত হবার সুযোগ পান।
দেশপ্রেমিক দেবেশ ভট্টাচার্যকে সমাজসংস্কারক, সমাজসেবী ও আত্মত্যাগী মানুষ হিসেবেও স্মরণ করতে হয়। তিনি বাংলাদেশে হিন্দু নারীদের অধিকার অর্জনের লক্ষ্যে হিন্দু আইন সংশোধনের জন্য সরব ছিলেন। বাংলাদেশে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যও তিনি প্রয়াস চালান। বাংলাদেশের নারীসমাজের স্থিতিসত্তা ও আইনগত অধিকার সম্পর্কে তিনি লিখেন, ‘যদিও বাংলাদেশে প্রচলিত সম্প্রদায়গত আইনে নারী পুরুষ ভেদাভেদমূলক অসমবিধান সাংবিধানিক নির্দেশ অনুযায়ী বাতিল বলে অবধারিত হয়েছে, কিন্তু ঐসব অসমবিধান এখনও সর্বক্ষেত্রে কার্যকর রয়েছে। রাষ্ট্রের তরফ থেকে যদি ঐসব বিধানের সামাজিক ব্যবস্থার প্রয়োগহীনতার বিরুদ্ধে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় তবে সমাজকে ঐসব অবৈধ আইনের প্রভাব থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে না। তাই একান্ত প্রয়োজন অবিলম্বে বাংলাদেশে রাষ্ট্রের তরফ থেকে সর্বজনীন সমঅধিকার প্রদায়ী দেওয়ানী বিধি (টহরভড়ৎস ঈরারষ ঈড়ফব) প্রণয়ন ও তার প্রবর্তন।’
বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য তাঁর বিশাল ভান্ডারে সংগৃহীত আইন গ্রন্থগুলো দান করে গেছেন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন লাইব্রেরিতে। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজকল্যাণমূলক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি আলীম আল-রাজী ল কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের সভাপতি, নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রমের সভাপতি এবং চট্টগ্রামের প্রবর্তক সংঘের সভাপতি ছিলেন। এলেঙ্গায় বিভিন্ন আর্থসামাজিক সংগঠনের তিনি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি ব্রতচারী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মুষ্টিভিক্ষার মাধ্যমে এলেঙ্গাতে ‘বাণী মন্দির’ নামে পাঠাগার স্থাপন করেন। আশির দশকে মহিলা সমবায় কেন্দ্র, দাতব্য চিকিৎসালয় এবং শিশুদের জন্য দুগ্ধ বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করেন তিনি। শীতার্তদের মধ্যে নিয়মিতভাবে বস্ত্র বিতরণ করতেন। নিজ গ্রাম এলেঙ্গায় তাঁর মায়ের নামে একটি বালিকা বিদ্যালয়সহ দুটি উচ্চবিদ্যালয় এবং একটি কলেজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলনের একজন সোচ্চার কণ্ঠ হিসেবে বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য সবিশেষ প্রশংসা ও ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ শত্র“ সম্পত্তি আইন প্রতিরোধ কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ইংরেজিতে রচিত এনিমি (ভেসটেড) প্রপার্টি ল ইন বাংলাদশ : নেচার অ্যান্ড ইমপ্লিকেশন শীর্ষক গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ‘বর্তমানে বলবৎ শত্র“ সম্পত্তি আইন-এর অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহারের কারণে ক্রমাগতভাবে সমাজের একটি অংশ নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাই এটা আবশ্যিক (রসঢ়বৎধঃরাব) এবং জরুরি কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, উক্ত আইন অবিলম্বে রহিত করা এবং এই আইনের আওতায় শত্রু সম্পত্তি বা অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে যে সকল সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ।তা ঐ সকল ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গ বা তাঁদের প্রকৃত উত্তরাধিকারীদের কাছে যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যার্পণ করা।’
বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্যের চারিত্রিক দৃঢ়তা ছিল লৌহের ন্যায় কঠিন, যা কোনো চাপের কাছেই কখনো নতিস্বীকার করেনি। তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল মানবিক গুণাবলিসমৃদ্ধ, ত্যাগ ও মানবতার সেবায় উৎসর্গীকৃত। শত বাধা-বিপত্তির মধ্যেও তিনি সর্বদা জীবন ও মানুষের প্রতি আস্থাশীল ছিলেন।
দেবেশ ভট্টাচার্য পৃথিবী ও মানবপ্রেমী একজন মানুষ ছিলেন। তিনি রবীন্দ্রানুরাগী ছিলেন, তাঁর লেখা কয়েকটি কবিতায় রবীন্দ্রনাথের প্রভাব স্পষ্ট, এছাড়া তাঁর হাতের লেখাও রাবীন্দ্রিক ছিল। তাঁর গলায় রবীন্দ্রনাথের কবিতার আবৃত্তি লোকজনকে মুগ্ধ করেছে। রবীন্দ্রনাথের মতই জীবনের নানা উথ্বান ও পতনে তিনি কখনই নিরাশ হন নি, বরং এক নব উদ্যমে প্রতিকূলতাকে বুঝেছেন। দেশের নানাবিধ সঙ্কটের মুহূর্তে তাঁর কাছে উপদেশের জন্য সমাজের নানাবিধ স্তর থেকে মানুষ ছুটে এসেছে, তিনি কখনই তাদের নিরাশ করেন নি।
সামাজিকভাবে তিনি যে আদর্শে বিশ্বাস করতেন ব্যক্তিগত জীবনেও সেই আদর্শ থেকে তিনি বিচ্যুত হন নি। সেই জীবন ছিল নিরাভরন ও নিরহঙ্কার। এক ধরণের সর্বত্যাগী গান্ধীবাদী দর্শন পরোক্ষভাবে তাঁকে পরিচালিত করেছে।
বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য আইনের শাসন ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ব্যয় করেছেন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৯২ সালে গঠিত গণ-আদালতের তিনি ছিলেন অন্যতম বিচারক। তিনি বাংলাদেশ শান্তি কাউন্সিলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বাংলাদেশ নাগরিক কমিটির কার্যকরী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৮৫ সালের জগন্নাথ হল দুর্ঘটনার গণতন্ত্র কমিশনের তিনি ছিলেন সভাপতি। তিনি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ এবং মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা ছিলেন। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ শান্তিপ্রিয় মানুষটি বার্ধক্যেও বিরত থাকেননি মানবাধিকারের আন্দোলন থেকে, সব নাগরিকের সম-অধিকারের আন্দোলন থেকে।
২০০৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি (সোমবার, ২০ মাঘ, ১৪১০ সন) সন্ধ্যা ৭-৩০ মিনিটে ঢাকার শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্যের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দুই দিন তাঁর মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখার পর ৪ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) সকালে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে রাখা হয়। সেখানে শোকাভিভূত সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বুধবার রাতেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা, প্রধান বিচারপতিসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার সংগঠন প্রবীণ এই আইনজ্ঞের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।
সহধর্মিণী সাবেক সংসদ সদস্য চিত্রা ভট্টাচার্য, দুই পুত্র অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও পদার্থবিদ ড. দেবদর্শী ভট্টাচার্য, একমাত্র কন্যা দেবলীনা রায়, পুত্রবধূ ড. ইরিনা ভট্টাচার্য, নাতনি সাশা ভট্টাচার্যসহ আত্মীয়-পরিজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য। পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর নামানুসারে এলেঙ্গায় একটি দাতব্য ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে তাঁর সমাজসেবামূলক কাজের ধারা অব্যাহত রেখেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ ।
গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট ও নোয়াখালী বাসীর পক্ষথেকে এই ক্ষণজস্মা পরুষকে তাঁর জন্ম শতবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাবনতচিত্তে শ্মরণ করছ্ ে।##
গোলাম মহিউদ্দিন নসু
নোয়াখালী ,তারিখ ঃ ২৭.৮.১৫
০১৭১৪৮৪০৮৯৪

©somewhere in net ltd.