| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গোলাম মহিউদ্দিন নসু
মনের কথা- সত্য কথা- বাস্তবতা- গবেষণা- সমস্যা- সম্ভাবনা- ইতিহাস- ঐতিহ্য- স্থাপত্য- ফোক কালচার সহ ইত্যাদি বিষয়ে সাংবাদিকতার দৃষ্টিতে লেখা-লিখি।
গোলাম মহিউদ্দিন নসু,নোয়াখালী:
নয় ফেব্রয়ারী বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রপথিক শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক এর ৮১তম জন্মদিন। আগামী ১৫ ফেব্র“য়ারী ৪৭তম মৃত্যু বার্ষিকী।
তদানীন্তন পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর যে সব অকুতোভয় কর্মকর্তা পাকিস্তানী স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামকে তরান্বিত করেছে, সার্জেন্ট জহুরুল হক তাদের অন্যতম।
আগরতলা মামলার অন্যতম আসামী এই বীর শহীদের স্মৃতি রক্ষায় নিজ জেলা নোয়াখালীতে কোন উদ্যোগ নেই। না করেছে সরকার; না করছে জেলার মুক্তি সংগ্রামের অনুজরা।নিজ জেলায় উপেক্ষিত সার্জেন্ট জহুর।
নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার সোনাপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৩৫ সালের ৯ই ফেব্রয়ারী সার্জেন্ট জহুরুল হকের জন্ম। পিতা কাজী মজিবুল হক। বাংলাদেশের সাবেক এর্টনী জেনারেল প্রয়াত আমিনুল হক- সার্জেন্ট জহুরের বড় ভাই, মাদু চাচা খ্যাত সাবেক জাসদ নেতা কাজি মাহফুজুল হক তারই চাচা,প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. মাজহারুল হক এ পরিবারের কৃতী সন্তান।জহুর জন্মতেই স্বাধীনচেতা-ন্যায় পরায়ন-মেধাবি হিসাবে সমাজে পরিচিত।
সার্জেন্ট জহুর ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। শুরুতে কোহাটে থাকলেও ১৯৬৫-৬৮ সালে তিনি ট্রেনিং ইন্সষ্ট্রাকটর হিসেবে করাচীতে ছিলেন। বারো বছর চাকুরী শেষে ১৯৬৮ সালের ২৬শে জানুয়ারী থেকে অবসর চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু ২২শে জানুয়ারী তারিখে তাকে গ্রেফতার ও তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী করে গোপন বিচারে সোপর্দ করা হয়।সার্জেন্ট জহুরুল হক ঢাকা কারাগারে বন্দী থাকাকালে ১৯৬৯সালের ১৫ফেব্র“য়ারী পাকিস্তানী সৈনিক মন্জু শাহর রাইফেলের গুলিতে আহত হয়ে সিএমএইচ হাসপাতালে মারা যান। কারাবন্দী সার্জেন্ট জহুরুল হককে ওই মামলার প্রধান আসামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে রাজস্বাক্ষী হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয় । ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কারা অভ্যন্তরে গুলি করে হত্যা করা হয় সার্জেন্ট জহুরুল হককে।
পরিবারের সদস্যদের উদ্ধৃতি দিয়ে এলাকার প্রবীনজনরা এবং জেলা আওয়ামীলীগ নেতা সাংস্কৃতিকজন এড: এমদাদ হোসেন কৈশরের দেয়া তথ্য মতে জানা গেছে,১৪ ফেব্র“য়াারি, সন্ধ্যায় ক্যান্টমেন্টে সৈনিকদের খাবারের উচ্ছিষ্ট সংগ্রহের জন্য বাঙালি শিশুরা ভিড় করে। এতে পাকিস্তানী সৈনিকেরা কয়েকজন অভুক্ত শিশুকে ধরে অমানবিকভাবে প্রহার শুরু করে।কয়েকজন বন্দী এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানালে হাবিলদার 'মনজুর শাহ' বন্দীদের নিজ নিজ কামরায় ফিরে যেতে আদেশ করেন। জহুরুল হক মনজুর শাহর আদেশ না মেনে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এতে মনজুর শাহ ক্ষিপ্ত হয়ে এ অজুহাতে পরদিন তাঁকে অতর্কিতে গুলি করেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্তরুপে বন্দী অবস্থায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী গুলি এবং উপর্যুপরি বেয়নেটের আঘাতে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
সে সময়ে স্বৈরাচারী আয়ুব খানের কুশাসনের বিরুদ্ধে এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল অভিযুক্তের নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে দেশব্যাপী যে গণআন্দোলন চলছিল সার্জেন্ট জহুরুল হকের হত্যাকান্ডে তা অসাধারণ তীব্রতা লাভ করে। বাংলাদেশের মানুষ দেশ-মাতৃকার মুক্তি প্রয়াসী এই বীর যুবককে সেদিন কেবল শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেনি, দেশে স্বায়ত্বশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর নামে শপথ গ্রহণ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ ইকবাল হলের নাম পরিবর্তন করে ‘সার্জেন্ট জহুরুল হক’ হল নাম প্রবর্তন করেন। স্বাধীনতার পর চট্রগ্রাম বিমান বাহিনীর ঘাটিতে সার্জেন্ট জহুরুল হকের নামাংকিত হয়।
জহুরুল হক ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত সাহসী ও নির্ভীক। খেলাধূলায় ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী। ততকালীন পাকিস্তানে তিনি একাধারে বেশ কয়েক বছর বিমান বাহিনীর সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তিনি ছবি আঁকতে ভালবাসতেন। নানা রকম হাতের কাজে তিনি ছিলেন পারদর্শী । কাঠ খোদাই করে নানা রকম শিল্পকর্ম করতেন। কাঠের ছোট ছোট টুকরো সংযুক্ত করে ছবি আঁকতেন। জাতীয় যাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধ জাতিঘরে তার স্বহস্তে নির্মিত বেশ কিছু শিল্পকর্ম নিদর্শন রক্ষিত আছে।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্তরুপে বাংলাদেশের স্বীধীনতা সংগ্রামে চরম আত্বত্যাগের জন্য তিনি আজও বাংলার মানুষের অন্তরে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।
শুধুই নিজ জেলাই তিনি উপেক্ষিত রয়ে গেলেন।#
গোলাম মহিউদ্দিন নসু
নোয়াখালী
০১৭১৪৮৪০৮৯৪
তারিখ ঃ ৯-২-১৬

©somewhere in net ltd.