নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হিমেল বিকন

হিমেল বিকন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভিলাষ

১৪ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৮:৩১

মিনহাজ নামের ছেলেটি অতি ভদ্র, মার্জিত, বোকা স্বভাবের। সাজ সজ্জা তার বয়স্ক লোকের মত। কেবল ভেতরের মানুষটা অল্প বয়সী। অতি আবেগী, হিসাবী, বাচ্চা স্বভাবের। এই বোকা ছেলেটি হঠাৎ করে এক সুন্দরী কন্যার প্রেমে পরে গেল। সে কন্যা অবশ্য মিনহাজের মত বাধ ভাঙা আবেগী স্বভাবের নয়। শান্ত, নরম, বুদ্ধিমতী। কিন্তু সমাজের তথা কথিত চালাক মানুষ বলতে যা বোঝায় সে কন্যা মোটেই সেই প্রকৃতির চালাক নয়। মেয়েটির নাম সুস্মিতা।

ফেব্রুয়ারির Hug day পালন করার সাহস মিনহাজের ছিল না। কিন্তু সুস্মিতা চুপিসারি যেন তাকে অনুমতি দিল। বোকা মিনহাজ সুস্মিতাকে বলল, তার ভেতর তখন দুটো সত্তা কাজ করছে। এক সাহসী সত্তা আরেক ভীতু সত্তা। সাহসী সত্তা মিনহাজকে ভেতর থেকে বলছিল, “কোনো ব্যাপার না, Hug day পালন করে ফেললেই হয়ে গেল”। কিন্তু ভীতু সত্তা বলছিল অন্য কথা, “আগে মেয়েটার হাত তো ধর। বাকী পরে চিন্তা কর”। শুনে সুস্মিতা মনে মনে বলে ছেলেটা বড়ই পাগল। মিনহাজ নিজে নিজেই আবার বলে উঠল, “আমি কী বোকা! যে মেয়েটার হাত ধরার কথা এতক্ষন ভাবছি, তাকেই কিনা আবার এসব বলছি। সুস্মিতা অকস্মাৎ বলে উঠল, “নিজেই সব বলছ, নিজেই উত্তর দিচ্ছ। আমার বলার আর কি রাখলে”। এটা অবশ্য মিনহাজের নতুন কোনো স্বভাব নয়। সে নিজেই মাঝে মধ্যে ভাবে, সে কি কারও সাথে কথা বলছে? নাকি নিজে নিজে পুতুল খেলছে।

সৃষ্টিকর্তা মানুষকে যেমন অতি রঞ্জিত সময় দেন, মানুষকে তেমন পরীক্ষা ও করেন। কিছু দিন বাদে স্বর্ণা নামের একটি মেয়ে মিনহাজকে ফোন করে। যে ছিল মিনহাজের কলেজ লাইফের ভাল বন্ধু। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তাদের বন্ধুত্ব কলেজেই শেষ হয়ে যায়। স্বর্ণা মিনহাজকে বাসায় ডাকে। বলে খুবই প্রয়োজন, বিকালে সময় নিয়ে যেতে। পুরো দিনের ক্লান্তি নিয়ে অনেকটা অনিচ্ছায় স্বর্ণার বাসায় মিনহাজ হাজির হল। মিনহাজকে স্বর্ণার মা যেন একটু বেশি আদর করে ঘরে নিল। কিছুক্ষণ পর স্বর্ণা মিনহাজকে জানাল আসলে তেমন কোনো দরকার নয়। পড়ার বিষয় সাহায্যের জন্য ডেকেছে। তবে রাতে ডিনার করে যেতে হবে।

সন্ধার কিছু সময় আগে যখন ঘরে আলো কম ও নয় বেশি ও নয়, স্বর্ণা মিনহাজের জামার কলার টেনে ধরে তার আলতো স্পর্শ দিয়ে দেয়। অতপর স্বর্ণা যেন রান্না ঘরে তার মায়ের কাছে দৌড়ে পালালো। চোখের পলকেই সব হয়ে গেল। মিনহাজ কিছুই বুঝল না। কিন্তু স্বাভাবিক যা বোঝার সে বুঝেছে। যা বুঝেছে তাতেই তার মাথার ভেতর দিয়ে শত শত ঝড় ঝাপটা দিচ্ছে, মেঘ গর্জন করছে। তার মধ্যে একটি মেঘ সুস্মিতা। যে মেঘ এখনও কিছু বোঝে নি, এখনও গর্জে ওঠে নি। যখন সে গর্জে উঠবে, মিনহাজের এই পৃথিবী যেন মূহুর্তেই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।

রাতে ডিনার টেবিলে স্বর্ণার বাবা-মা, স্বর্ণা ও মিনহাজ উপস্থিত। ডিনার টেবিলে বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই মিনহাজ সব বুঝতে পারল। কলেজ লাইফে মিনহাজ আর স্বর্ণার যে প্রেমটি অসমাপ্ত ছিল, সেই প্রেমটিকে আজ স্বর্ণা পূর্ণ করতে চেয়েছে। স্বর্ণা তার বাবা-মাকে মিনহাজের কথা বলে রাজি করে ফেলেছে। তার বাবা-মা মিনহাজের সাথে স্বর্ণার বিয়ে দিতে সম্মত হয়েছেন। কিন্তু অনেক দেরী হয়ে গেছে। মানুষ কি আজীবন একই থাকে? একটি মানুষকে না পাওয়ার কষ্টে অন্য মানুষটা কি বাকি জীবন ভর কাদবে? স্বর্ণা কি ভেবেছিল আজও মিনহাজ তার অপেক্ষায় রয়েছে? মিনহাজের জীবনে কি নতুন কেউ আসে নি? স্বর্ণার কি নিজেকে এসব প্রশ্ন করা উচিত ছিল না? বা এমন কিছু করার আগে মিনহাজের কাছে একবার শোনা উচিত ছিল না? সে সব সময়ই কি ভাবে যে পৃথিবীটা কেবল তার ইচ্ছাতেই চলে? এখানে অন্য মানুষগুলোর ইচ্ছার ও একটা দাম আছে! তা সে কখনই কি ভাবে না? ডিনার টেবিলে মিনহাজ নিজেকে কেবল এই প্রশ্নগুলোই করছিল।

স্বর্ণার বাবা রাশেদ শিকদার অনেক বড় ব্যবসায়ী। শূন্য থেকে তিনি আজ শিখরে উঠে এসেছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গার তার ১৮টি রেস্টুরেন্ট, ঢাকায় ২টি ও খুলনায় ১টি মোট ৩টি ফাইভ স্টার হোটেল ও বড় সড়কের ৮টি বাসের মালিক সে। ইদানিং তাকে ব্যবসার চেয়ে টেকনাফে বেশি সময় দিতে দেখা যায়। কি নাকি ঝামেলা হয়েছে। তিনিও যেন মিনহাজের মত একটি ছেলের অপেক্ষায় ছিলেন। গরিব, ভদ্র, মেধাবী, সহজ-সরল। যাকে চাইলে বুদ্ধি ও শক্তি খাটিয়ে ঘর জামাই রাখা যায়। আদরের মেয়েকে শশুড় বাড়ি তিনি পাঠাতে চান না। এমন চাওয়ার জন্য মিনহাজই উপযুক্ত। তাছাড়া ইদানিং তার ব্যবসায় বিশেষ সমস্যা যাচ্ছে। রাজনৈতিক নেতা আর প্রশাসন যেন তার গলা চেপে ধরেছে। প্রত্যেকেই চাইছে, টেকনাফের সাথে তার গোপন ব্যবসা উঠে আসুক সবার সামনে। তাই কিছু ঘটে যাওয়ার আগেই মিনহাজকে মেয়ের জামাই করতে পারলে ভাল হয়।

কিছু দিন আগে বিয়ে বাড়ির এক দাওয়াত থেকে ফিরে মিনহাজ সুস্মিতাকে বলেছি, “আজ অনেক রঙিন সময়ের ভেতর ও সৎ ছিলাম।
সুস্মিতাঃ ওরে বাবা! তাই নাকি হুম?
মিনহাজঃ কোনো এক মেয়ের কথা মনে করেই সৎ ছিলাম।
সুস্মিতাঃ কার কথা মনে করে সৎ ছিলে?
মিনহাজঃ সুস্মিতা নামের এক মেয়ের কথা মনে করে।
সুস্মিতাঃ ও আচ্ছা! তাই বুঝি?
মিনহাজঃ বিয়ে বাড়িতে কত মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিল, কেউ কেউ বোরোকার ঝাপটা দিল, কেউ কেউ দূর থেকে বুলি দিল “ এই আপনি চোখ বন্ধ করেন, আমরা সেলফি তুলব”, কেউ কেউ আমার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংছি মারছিল। কিন্তু তারা জানত না আমি মনে মনে অন্য কারও কথা ভাবছি।
সুস্মিতাঃ ওরা যদি এটা জানত তাহলে আমাকে ধরে পিটাত।
মিনহাজঃ কত মেয়ে কতভাবে সেজেছিল, কত ছেলেরাই না তাদের দিকে আকর্ষিত হয়ে তাকাল, কিন্তু আমি তাকাই নি। ভেবেছি এখন তাকানোর প্রয়োজন নেই। আমার যাকে পছন্দ তাকে সামনে রেখে শুধু মাত্র তাকেই ওভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখব। যাকে ভালিবাসি, কেবল তাকে দেখলেই আমার মনে শান্তি আসবে। তাছাড়া আসবে না।
সুস্মিতাঃ এমনভাবে বলছ যেন কোনো দিন দেখ নি?
মিনহাজঃ দেখেছি কিন্তু মন ভরে নি। তার উপর গত দুদিন না দেখা। মন ছটফট করছে তোমাকে একবার দেখার জন্য।
সুস্মিতাঃ এসো। দেখে যাও। আমিও দেখব আমার সামনে তুমি কেমন সৎ থাক।

রঙিন দিনগুলোর মাঝে আজ হঠাৎ কি হয়ে গেল! সৎ মিনহাজ কি আজ অসৎ হয়ে গেল? স্বর্ণার সাথে যা হয়েছে তাতে কি আসলেই তার কোনো দোষ ছিল? আজকাল এসব ভাবতে ভাবতেই মিনহাজের সময় যায়। এগুলো ভাবার পরক্ষণেই আবার সে ভাবে অবশ্যই তার দোষ ছিল! সে তো চাইলে স্বর্ণাকে বাধা দিতে পারত! কিন্তু সে তা করে নি। সুস্মিতাকে সে আজ কি বলবে? ভয় হয়। সবটা শোনার পর সুস্মিতা যদি মুখের ওপর সম্পর্কটা শেষ করে দেয়? নাকি মিনহাজের উচিত সব কিছুই লুকিয়ে যাওয়া? কিন্তু স্বর্ণা নামক এই ঝড়কে কি লুকিয়ে রাখা সম্ভব?

সুস্মিতা বুঝতেই পারছিল কিছু দিন ধরে মিনহাজের কি যেন হয়েছে। মিনহাজ ও ব্যাপারটা আর লুকিয়ে রাখতে পারছিল না। ফাগুনের শেষ দিনে মিনহাজ সুস্মিতাকে সব খুলে বলে। মিনহাজ নিজেকে বড় অপরাধীর বেশে সাজিয়ে রেখেছে। কিন্তু সে অপ্রত্যাশিত কিছু দেখল সুস্মিতার ভেতরে। সুস্মিতা এমন ভাব করছে যেন সে মিনহাজের চেয়ে বড় অপরাধী। মিনহাজ সুস্মিতাকে বাধ্য করল কি হয়েছে তা খুলে বলার জন্য। সুস্মিতা বলল, “মিনহাজ আমি খুবই দুঃখিত। প্লিজ তুমি আমাকে ভুল বুঝো না। আমি তোমাকে নিয়ে এত কিছু ভাবি নি”। সে একটু থামল। মিনহাজ কোনো কথা বলছে না। শুধু তাকিয়ে আছে। সুস্মিতা আবার বলা শুরু করল, “ প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না। আমি তোমাকে শুধু মাত্র বন্ধু হিসেবেই দেখেছি। তোমার উচিত স্বর্ণাকে সুযোগ দেওয়া। বিশ্বাস কর আমি সত্যিই কোনো দিন তোমাকে নিয়ে এত কিছু ভাবি নি”।

মিনহাজঃ তুমি স্বর্ণার এসব শোনার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছ?
সুস্মিতাঃ না! কসম খেয়ে বলছি। আমি আগে থেকেই তোমাকে শুধুমাত্র বন্ধু হিসেবে দেখতাম। বিশ্বাস না হয় তো তোমার বান্ধবী আমেনার কাছে শুনে দেখ।
মিনহাজঃ সুস্মিতা! তুমি কি অন্য কাউকে পছন্দ কর? বা অন্য কারও সাথে তোমার রিলেশন চলছে?
সুস্মিতাঃ না না! প্লিজ! এমন কিছু না। এমনিই।
মিনহাজঃ তুমি কি আসতে আসতে আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছ সুস্মিতা?
সুস্মিতাঃ না এমন কিছু নয়। আমরা আগে যেমন ছিলাম, এখনও তেমনই থাকব। দূরে সরে যাব কেন?
মিনহাজঃ আমি বুঝি সুস্মিতা! আমি তোমার জন্য পারফেক্ট না। তোমার আসা হয়তো আরও অনেক বেশি। তুমি আমাকে সত্যটা বলে দেও সুস্মিতা!
সুস্মিতাঃ তুমি এমন কিছু ভেবো না প্লিজ। তুমি যথেষ্ট ভাল একটা ছেলে। আমি জাস্ট রিলেশন চাই না। রিলেশন আমার ভাল লাগে না।
মিনহাজঃ ঠিক আছে সুস্মিতা। তুমি আজ থেকে মুক্ত। তোমাকে আর কোনো চাপ সহ্য করতে হবে না। শুধুমাত্র আমার চোখের সামনে এমন কিছু কর না যাতে আমি কষ্ট পাই।

একথা বলেই মিনহাজ চলে আসল। মনে মনে একাই বলে চলল, “ কি ই বা করার ছিল! ভালবাসা জোর করে হয় না। মনে কষ্ট লাগছে খুব। কিন্তু কিছু করার নেই। সে আমাকে কখনো ভালোবাসেনি। মুরুব্বিদের কথা শোনা উচিত ছিল। মা একটা একটা মেয়ে পছন্দ করেছে আর আমি গোপনে জেনে ফেলে মা-কে বার বার নিষেধ করে দিয়েছি। বলেছি আমার জন্য মেয়ে আমি পছন্দ করব। এখন বুঝতে পারছি। মানুষের বয়স এমনি এমনি হয় না। বয়সেরও একটা দাম আছে। আমার মা ভালই বোঝেন আমার জন্য কোন মেয়েটা ভাল হবে। বরং আমি তার পছন্দের মধ্য দিয়েই আমার ভালবাসার মানুষের জন্য অপেক্ষা করব। তার জন্য যে আমাকে সত্যিই মন থেকে ভালবাসবে। যার চোখে হব আমি প্রদীপের শিখার মতো জ্বলজ্বল করা রাজকুমার।

Himel Bikon

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১২:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: একদম বাংলা সিনেমা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.