নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার আর রাশিনের গল্প (sad version)

১৪ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:০৮

মাইক্র বাসটা বেশ দ্রুতই চলসে । সামনে সিটে বসে আছি । মাইলেজের কাটা বেশ ভাল করে দেখা যাচ্ছে । সত্তর ছুই ছুই করছে । আমি আর পিছন ফিরে তাকালাম । পিছনের সিটে জামান সাহেব চুপচাপ বসে আছেন । সকাল থেকে উনিই সব থেকে চুপচাপ আছেন । কিভাবে আছেন কে জানে । এরকম অবস্তায় চুপচাপ থাকাটা সহজ না ।

আমি আর একবার রাশিনের দিকে তাকালাম । আগের মতই শুয়ে আছে । নিরবে । এখন অবশ্য ওর মুখ দেখা যাচ্ছে না । সাদা কাপড়টা দিয়ে ঢাকা । ওর পাশে ওর মা বসে একভাবে কেঁদে যাচ্ছে । এই মহিলা এতো কাঁদতে পারে ! সকাল থেকে ননস্টপ কেঁদেই যাচ্ছেন । ছি ! কি রকম কথা বলছি আমি ! ওনার কাঁদাটা তো স্বাভাবিক । কাঁদবেই তো ।

আমি আবার সামনের দিকে তাকালাম । দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে । একটু দেরি হয়ে গেছে রওনা দিতে । সব ঝামেলা বেশ দেরি হয়ে গেল । বিশেষ করে পুলিশি ঝামেলা শেষ করতেই যত দেরি হল । বেশ কিছু টাকাও খরচ করতে হল পোষ্টমার্টাম না করানোর জন্য । ভাগ্যভাল যে আব্বার পরিচিত লোক ছিল পুলিশে তা না হলে আরো টাকা যেত । আমি একটু চোখ বুজলাম । আমার এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে না এটা ঘটছে । কাল আর আজ কের ঘটনা গুলো আমি কিছুতেই মেলাতে পারছি না । বার বার মনে হচ্ছে এটা হতে পারে না । আমার পরীটা এরকম একটা কাজ করতে পারে না । কিছুতেই পারে না । সবে তো আমাদের গল্প টা শুরু হচ্ছিল । এম্ন সময় ও কিভাবে চলে যেতে পারে ।

আমার পরীটা আমার পাশেই থাকতো । পাশে মানে আমার পাশের ফ্লাটে । পরীর মতই দেখতে মেয়েটা । আহা । প্রতিবার যখন মেয়েটাকে দেখি বুকের মাঝে কেমন যেন একটা হাহাকার তৈরি হয় । মনে হত, ইস ! ইস! এই মেয়েটা আমার বউ হত । কিংবা গালফ্রেন্ড । কিন্তু আমার সে কপাল নাই । ওর মত মেয়ের বয়ফ্রেন্ড কিংবা স্বামী হবার জন্য যা যা থাকা দরকার তার খুব কমই আমার মধ্যে বিদ্যমান । তাই কেবল দুর থেকেই দির্ঘ্য শ্বাস ফেলতাম । পরীটার নাম রাশিন । যে এখন আমার পাশেই আছে । আমরা একই মাইক্র বাসে করে ওদের গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি ।

আমার খুব ভাল করে মনে আছে প্রথম ওর সাথে যেদিন আমার কথা হয় কি বিরক্তই না হয়ে ছিল আমার উপর ! কথা হয়ে ছিল আমাদের দার্য়ারনের কল্যানে । আমাদেয় বাড়ির গেটটা সব সময় বন্ধ থাকত । দারয়ান থাকলে তো কথা নাই । কিন্তু দারয়ান না থাকলে বাড়ির লোকজন বেশ বিপদেই পরত ।

দুপুরের দিকে দারয়ান সাধারন থাকে না । সেদিনও ছিল না । ভাগ্যিস ছিল না । ছিল না বলেই রাশিনের সাথে দেখা হয়েছিল । রাশিন আমার পাশের ফ্লাটে থাকে । অল্প কথায় বলতে গেলে রাশিন দেখতে ভয়াভহ রকমের সুন্দর । আর সুন্দর বলেই সব সময় খুব মুডে থাকে । মুডে থাকে বলতে সবসময় মুখে একটা বিরক্তির ছাপ । যেন সব কিছুর উপর , সবার উপর সে বিরক্ত । আমি আজ পর্যন্ত রাশিন কে হাসতে দেখি নি । জানি না দেখবো কিনা ।

ক্যাম্পাস থেকে ফিরেছিলাম । বাড়ির সামনে এসে দেখি রাশিন দাড়িয়ে আছে গেটের সামনে । এজইউজাল বিরক্ত মুখে । পাশে এক রিক্সা ওয়ালা তার রিক্সা নিয়ে অপেক্ষা করছে । তবে রাশিন কে আজ অন্য দিনের থেকে যেন বেশি বিরক্ত লাগছে । বারবার কলিংবেল চাপছিল । আমি চুপচাপ দাড়িয়ে আছি একটু দুরে ।

“আফামনি আমার ভাড়াটা দিয়া দেন । চইলা যাই” ।

“আরে আশ্চর্য ভাড়া দেব কোথ্থেকে ? আপনাকে বলিনি আমার ব্যাগ ছিনতাই হয়ে গেছে । বাসা থেকে টাকা দিতে হবে” ।

“কিন্তুক গেট তো কেউ খুলে না । সারা দিন কি বইসা থাকবার পারি” ।

“বসে থাকেন । আপনার ভাড়া আপনি পেয়ে যাবেন” । রাশিন এবার আমার দিকে তাকাল । বলল “আমি অনেকক্ষন ধরে বেল বাজাচ্ছি । কেউ আসছে না । আপনি কি একটু দেখবেন আপনার বাসা থেকে কেউ আসে কি না” !

“মনে হয় কারেন্ট নাই” ।

“তাহলে” ? রাশিনকে আবার অস্থির মনে হল ।

“আর একটা উপায় কি আছে” ? আমি বলি ।

“ কি “?

“আপনি একটু সরে আসেন আমার কাছে চাবি আছে” ।

“আপনার কাছে চাবি আছে” ? রাশিন কে আমার উপর বিরক্ত মনে হল । “চাবি ছিল তো এতোক্ষন দাড়িয়ে ছিলেন কেন ? প্রথমে ফলা যেত না” ?

“আসলে আমি সুযোগই পাই নি । আপনি যেভাবে বিরক্ত মুখে কলিংবেল টিপ ছিলেন বলতে সাহস হয় নি” ।

আমার কথা মনে হল রাশিনের পছন্দ হল না । বলল “ঠিক আছে দরজা খুলুন” । খানিকটা হুকুমের মত শোনাল ।

আচ্ছা এখন যদি গেট না খুলি । একবার মনে হল বলি যে আমার চাবি আমি খুলব না । কিন্তু বলা হল না । গেট খুলে দিলাম । রাশিন ভিতরে চলে গেল ।

আমি রিক্সা ওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে দিলাম । সিড়ি ঠেলে উপরে উঠল । দেখলাম রাশিন এখানেও ওদের ঘরের গেটের সামনে দাড়িয়ে বেল টিপছে । বিরক্ত মুখে ।

রাশিন আমাদের পাশের ফ্লাটেই থাকে । আমি দরজা খুলতে খুলতে ওর দিকে তাকালাম । দেখলাম রাশিন আমার দিকে কেমন বিরক্ত চোখে তাকিয়ে আছে । আমি তাড়াতাড়ি বললাম “দেখুন আপনার ঘরের চাবি কিন্তু আমার কাছে নাই । আগে থেকে বলে দিলাম” ।

রাশিন মনে ঠাট্টাটা পছন্দ করল না । সুন্দরীরা খুব একটা ঠাট্টা পছন্দ করে না । কিছু বলার আগেই আমি ঘরে ঢুকে পড়লাম । কিছুক্ষন পর দরজায় কড়া নড়ল । দরজা খুলে দেখি রাশিন ।

আমার দিকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে বলল “আপনি রিক্সা ভাড়াটা দিয়েছেন । এই নিন” । আমি খানিকটা অবাক হলাম । ভান করলাম আর কি । বললাম “কই না তো । আমি দেইনি” ।

“দেখুন আমি জানি ভাড়াটা আপনিই দিয়েছেন । নিন । আমি কারো কাছে ঋনি থাকতে পছন্দ করি না” ।

আমি টাকা টা নিলাম । রাশিন ঘুরে যাচ্ছিল এমন সময় আমি ডাকলাম ওকে ।

“শুনুন” ।

রাশিন ঘুরে দাড়াল । “বলেন” !

“আপনি মানুষের কাছে ঋনি থাকেন না” ?

“না” ।

“তারমানে কেউ আপনাকে কিছু দিলে তা আপনি ফেরত্ দিয়ে দেন” ?

“জি” ।

“কিন্তু আমাকে তো দেন নি” ।

“মানে ? আপনি আমাকে কি দিয়েছেন যা আমি ফেরত্ দেই নি” ?

“কিছুতো একটা অবশ্যই আমি আপনাকে দিয়েছি । তা না হলে আমি এমনি এমনি বলতাম না” ।

রাশিনকে আবার বিরক্ত মনে হল । “দেখুন আমি হেয়ালি পছন্দ করি না । কি দিয়েছেন বলেন” ।

“ দেখুন রিক্সা ভাড়াটা যে আমি দিয়েছি তা আমি কিন্তু আপনাকে বলি নি । বলেছি বলেন ? তারপরও কিন্তু ভাড়াটা দিয়ে গেলেন” ।

রাশিন কিছু বলল না । ঘরের ভিতর চলে গেল ।

ঘরের ভিতর এসে মনে হল এমন কথা কেন বললাম ?

ও কি কিছু বুঝতে পেরেছে ?

নাকি বুঝবে ?

জানি না ।

বুঝলে বুঝবে ।

কত দিন আর চুপ করে থাকবো । এটা দিয়েই না হয় এক ধাপ এগিয়ে যাবো । আমার মনে ক্ষন আশা ছিল হয়তো রাশিনের মনে আমি কৌতুহল ঢোকাতে সক্ষম হয়েছি । এবার যখন দেখা হবে ও নিশ্চই আমার সাথে কথা বলবে । একবার হলেও জানতে চাইবে আমি আসলে ওকে কি দিয়ে ছিলাম । কিন্তু সেরকম কিছুই হল না ।

পরদিন যখন দেখা হল ওর চোখ মুখে সেই চিরো চেনা বিরক্তির ছাপ । আমাকে দেখে এমন একটা ভাব করল যেন আমাকে চিনেই না । খানিকটা খারাপই লাগল । একটু চেষ্টা করেছিলাম । কাজ হল না ।

নিজের মন কে বোঝালাম এ মেয়ে তোমার জন্য না । অন্য দিকে হাটো । কিন্তু মন থেকে সাপোর্ট পেলাম না ।

থাক না হয় । হয়তো কোন রাশিনকে কাছে পাওয়া হবে না । না হোক । চোখের সামনে সে আছে । এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল । তারপর আবার একদিন রাশিনের সাথে কথা বলার সুযোগ এল ।

রাতের বেলা । সেদিন রাতের বেলা কারেন্ট চলে গেছিল । গরম কাল । কারেন্ট গেলে ঘরে টেকা দায় । তাই ছাদে এসেছিলাম হাওয়া খেতে । কিন্তু হাওয়া খেতে এসে যে হাওয়া টাইট হয়ে যাবে বুঝতে পারি নি । যখনই ছাদে পা দিলাম ছাদের একেবারে কোনায় একটা .... । এই বিজ্ঞানের যুগে বলতে লজ্জা লাগছে । কিন্তু নিজের চোখ কে কিভাবে অবিশ্বাস করি । সাদা পোশাক পরে দাড়িয়ে আছে । আমি ভয়ে কাঠ হয়ে গেলাম । ঘুরে পিছনে যাবো তারও পারছি না । পা টা যেন ছাদের সাথে লেগে গেছে । কি করবো ভাবছি এমন সময় লক্ষ্য করলাম সাদা আয়োবয়টা এদিকে এগিয়ে আসতেছে । আকাশে চাঁদ নেই । চারিদিকে আলোর ছিটে ফোটা নাই । তবুও বোঝা যাচ্ছে ওটা এদিকেই এগিয়ে আসছে । আর একটু এগিয়ে আসলে বুঝতে পারলাম আয়বয়টা একটা মেয়ের ।

তারমানে পেত্নী !চিৎকার করতে যাবো এমন সময় পেত্নীটা বলে উঠল “ভয় পেয়েছেন” ?

চিৎকার গলাতেই আটকে গেল । এটা তো পেত্নী না । রাশিনের গলা ।

‘’না’’ ! কোন মতে বললাম ।

‘’ভয় পায় নি” ? কিন্তু নিজের আওয়াজটা নিজের কাছেই অদ্ভুদ শোনাল ।

রাশিন খিল খিল করে হেসে উঠল । ওর হাসির শব্দে রাতেই নিরবতা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল । আশ্চর্য এই গম্ভীর মেয়েটা কে এর আগে কোন দিন এভাবে হাসতে দেখিনি ।

“ভয় পান নি’’ ? কোন মতে হাসতে হাসতে বলল ।

“আসলে সত্যিই ভয় পেয়েছিলাম’’ । এবার স্বীকার করেই ফেললাম । “এভাবে আপনাকে এখানে আশা করি নি । তার উপর আবার এতো রাতে” ।

রাশিন বলল “ঘুম আসছিল না । তাই এখানে এসেছি । রাতেই এই নিরবতা আমার অনেক ভাল লাগে । তাছাড়া আমার মনটা খানিকটা অস্থির” ।

“কেন অস্থির ?

“একটা গাধার জন্য অস্থির” ।

গাধা মানে ! নিজের কাছেই প্রশ্ন করলাম । গাধা মানে নিশ্চই কোন ছেলে । কোন ছেলের জন্য রাশিনের মন অস্থির । কেন জানি মনটা খারাপ হল । মনে হল ঐ গাধা যদি আমি হতাম ! যদি আমার জন্য ওর মনটা অস্থির হত !

রাশিন হঠাৎ বলল “অপু সাহেব’’ ।

“বলুন” ।

“এই গভীর অন্ধকার দেখে আপনার কিছু মনে হয়” ?

“কিছু মনে হয় মানে ? ঠিক বুঝলাম না” ।

রাশিন বলল “আমার কি মনে হয় জানেন ? আমার মনে হয় খুব শীঘ্রই আমি অন্ধকারের সাথে মিলিয়ে যাবো । এমন এক গভীর অন্ধকারে তলিয়ে যাবো যেখান থেকে আর কোন দিন ফিরে আসবো না” ।

আমি খানিকটা বিভ্রান্ত হই । এই মেয়েটা এসব কি বলছে !

“অপু জানেন আমি প্রতিদিন এই সময়টা ছাদে আসি” ।

“তাই নাকি ? প্রতিদিন” ?

“হুম । প্রতিদিন । প্রতিদিন কেন আসি জানেন” ? আমার জবাবের অপেক্ষা না করেই বলল “আমি প্রতিদিন আসি একটা কাজ করার জন্য । কিছুক্ষন নিজের সাথে যুদ্ধ করি তারপর বিফল হয়ে ফেরত্ চলে যাই” ।

আমি আবারও ওর কথা কিছু বুঝতে পারি না । বললাম “আপনার কথা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না । একটু সহজ করে বলবেন” ?

“ আজ অনেক রাত হয়েছে । আজও কাজটা করতে পারলাম না । তবে একদিন পারবো নিশ্চই । আজ আসি” ।

আমাকে আর কোন সুযোগ না দিয়ে রাশিন নিচে চলে গেল । আমি বোকার মত দাড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষন ।

ও কি বলতে চেয়েছিল কিছুই বুঝিনি সেদিন । ইস যদি তখন বুঝতে পারতাম ! তাহলে হয়ত আজ এমন একটা ঘটনা ঘটত না ।

তারপর থেকে প্রায় দিনে রাশিনের সাথে আমার কথা হতে থাকে । রাতের বেলা । প্রতিদিন রাতে যখন ছাদে পা রাখতাম দেখতাম ও একই ভাবে ছাদের ঐ কোনার দিকটাতে দাড়িয়ে আছে । নিচের দিকে তাকিয়ে আছে । কি দেখতো কে জানে । আমার সাড়া পেলে এদিকে আসতো । কথা বলত । মাঝে মাঝে হাসতো । কিন্তু দঃখের বিষয় আমি ওর হাসি দেখতে পেতাম । অন্ধকার রাত, কিভাবে দেখবো । রাশিন আমার সাথে রাতেই যা কথা বলত ।

দিনের বেলা দেখা হলে এমন একটা ভাব করতো যেন আমাকে চিনেই না । আর মুখেতো সেই চিরোচেনা বিরক্তির ছাপ লেগেই থাকতো । আমি খানিকটা অবাক না হয়ে পারতাম না । রাতের অন্ধকারে রাশিন আমার যতখানিই পরিচিত ছিল দিনের আলোতে যেন ততখানিই অপরিচিত ।

কিন্তু সেদিন এর ব্যতীক্রম হল । আমি নিলক্ষত গেছিলাম কিছু বইটই কিনতে । বই কিনে নিলক্ষতে মোড়ে দাড়িয়ে আছি বাসের জন্য এমন সময় রাশিন কে দেখলাম রাস্তার ও পারে । আমি নিশ্চিত জানি রাশিন রাস্তা পার হবে । আমার কাছ দিয়ে চলে যাবে । একবার আমার দিকে ফিরেও তাকাবে না । আমি মোটামুটি সেরকম প্রস্তুতি নিয়েই আছি ।

কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে রাশিন আমার কাছে এসে বলল

“এখানে’’ ? আমি সত্যিই অবাক হলাম । বেশ খানিকটা অবাক হলাম ।

“এইতো বই কিনতে এসেছিলাম’’ ।

‘’ক্লাসের বই’’ ?

‘’কিছু ক্লাসের কিছু গল্পের’’ ।

‘’বাসায় যাবেন এখনই’’ ?

“হ্যা । বাসাতেই যাবো” ।

“চলুন একসাথে যাওয়া যাক” !

রাশিনের কাছ থেকে এমন প্রস্তাম পেয়ে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । ওর সাথে যখন রিক্সাতে চেপেছিলাম মনে হচ্ছিল আমি এ পৃথিবীর সব থেকে সুখি একজন মানুষ । বাসার সামনে নামার পর ও বলল “রাতে আজ ছাদে আসবেন । কিছু কথা বলব আপনাকে” ।

সত্যি দিন টা আমার জন্য অন্য রকম ছিল । অন্য রকম আনন্দের দিন । রাতে ছাদে গিয়ে দেখলাম রাশিন ছাদের মাঝ খানে পাটি পেড়ে বসে আছে । আকাশে পূর্ণিমা ছিল তাই ওকে পরিস্কার দেখা যাচ্ছিল । আমার পরীটা এই চাঁদের আলোতে কি অপূর্ব সুন্দরই না লাগছিল । মনে হচ্ছিল এই সৌন্দর্য এই পৃথিবীর না । এর জন্ম অন্য কোথাও । আমি অনেক্ষন আমি ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম । এক ভাবেই । মনে হল এই মুখের দিকে আমি অনন্ত কাল ধরে তাকিয়ে থাকতে পারবো ।

“কি দেখছেন” ?

ওর কথায় একটু ধাতস্থ হলাম । একটু সাহস করে বললাম “তোমাকে দেখছি । এই পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর আর পবিত্র মুখটাকে দেখছি” ।

রাশিনের মুখটা কেমন জানি হয়ে উঠল । বললাম “কি হল ? আমিতো ভুল কিছু বলি নি” ।

“পবিত্র” ? শব্দটা ও একবার উচ্চারন করল । “আমি পবিত্র না অপু । মোটেই পবিত্র না । আমার এই দেহটা বড় অপবিত্র কুলষিত” ।

আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম ওর কথা শুনে ।

“কি বলছ এসব ? এমন কথা বল না প্লিজ” ।

“আমি তোমাকে এই কথা গুলো বলার জন্যই ডেকেছি । আজ যদি না বলতে পারি তাহলে আর কোন দিন বলা হবে না” । রাশিন বলেই চলল “আমি এরকম টা ছিলাম না । ছোট বেলা থেকে আমি খুব চঞ্চল ছিলাম । ঘুড়ে বেড়াম । খেলতাম । সারাক্ষন চিত্কার চেচামেচির মধ্যেই আমার দিন কাটতো । আমার দিনের বেশির ভাগ সময় কাটতো আমাদের ছাদে ।

সময় পেলেই আমি ছাদে চলে যেতাম । কথনও একা অথবা অন্য ছেলে মেয়ে দের সাথে । আমাদের ছাদের চিলেকোথায় এক লোক থাকতো । বাবার বন্ধু । একই অফিসে চাকরি করতো । আমি ওনাকে জামিল চাচা বলে ডাকতাম । জামিল চাচা আমাকে খুব আদর করতেন ।

কিন্তু একদিন তার আসল চেহারা আমার সামনে এল । আমি তখন সবে সেভেনে পড়ি । একদিন ছাদে খেলা করছি । একাই । দুপুরের কিছু পরে হবে সময়টা । বাবা মা ঘুমিয়েই ছিলো । হঠাত্ জামিল চাচা আমাকে ডাক দিল ওনার ঘরে । আমি কিছু না ভেবেই ওনার ঘরে চলে গেলাম ।

জামিল চাচা কি করলেন জানো ? আমার ঘরে ঢুকতেই দরজা বন্ধ করে দিল । তারপর ...” রাশিন আর কিছু বলতে পারছিল না । কেবল দেখছিলাম চাঁদের আলোতে ওর চোখ জলটা চিকচিক করছে ।

আমি বললাম “থাক আর বলতে হবে না” ।

“না বলতে হবে । না হলে কথা গুলো আর কোন দিন বলা হবে না” । কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ও আবার বলতে শুরু করল । “প্রথম কিছুক্ষন কি হচ্ছিল আমি বুঝতেই পারি নি । তারপর আমার আর হুশ ছিল না । ঐ ছোট দেহটা ঐ পৌচাশিক অত্যাচার বেশিক্ষন সহ্য করতে পারে নি । যখন আমার জ্ঞান ফেরে দেখি ছাদের এক কোনায় আমি পড়ে আছি । লজ্জা আর ভয়ে কাউকে কিছু বলতেও পারি নি তখন । ঐ ছোট বেলাতেই পুরুষ মানুষের প্রতি আমার যে কি ঘৃণা জন্ম নিল” ।

রাশিন থামল কিছুক্ষন । আমি কি বলব কিছুই বুঝতে পারি না ।

“তারপর আবারও ঐ একই ঘটল যখন আমি হায়ার সেকেন্ডারীতে পড়ি । এবার কোচিংয়ের এক শিক্ষক । তারপর .. “

“রাশিন থাক । প্লিজ চুপ কর” ।

“কেন? কেন চুপ করবো? খুব খারাপ লাগছে শুনতে”?

আমি কোন কথা বলতে পারি না ।

“এখনও কি তোমার মনে হচ্ছে আমি খুব পবিত্র ? আমি যত ছেলে আমার দিকে তাকাতে দেখেছি ততবারই সেই শিয়ালের চোখ গুলো দেখি” ।

আমি বললাম “আমাকেও কি ঐ দলেরই মনে হয়”?

রাশিন এই প্রশ্নটার জবাব দিল না । কিছুক্ষন পর বলল “তোমাকে এতো গুলো কথা কেন বললাম” ?

“আমি জানি না । কেন” ? আমি জানতে চাইলাম ।

“আমি নিজেও জানি না” ।

তারপর রাশিন একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বলল “এটা কালকে পড় । আজকে না । মনে থাকবে তো” ?

“আচ্ছা” । আসার পথে রাশিন বলল “তুমি খুব ভাল ছেলে অপু । ভাল থেকো সব সময় । আর আমার কথা মনে রেখো” ।

আমি নিচে চলে আসি । এখন যদি বুঝতে পারতাম ও কেন আমাকে এমন কথা বলেছিল । আমি কথনও ওকে ছেড়ে আসতাম না ।

সারাদিন অনেক ধকল গেছে । রাশিনকে ওর গ্রামের বাড়িতে রেখে আসতে আসতে রাত হয়ে গেল । ওর বাবা খুব করে থাকতে বলেছিল । আমার কেন জানি থাকতে মন চাইল না । মনে হল আর কিছুই নেই এখানে । রাশিন কে রেখে যাচ্ছি । মনে হচ্ছে আমার সবকিছুই এখানে রেখে যাচ্ছি । তবুও এখানে আর একদম থাকতে ইচ্ছা করছে না ।

মাইক্রবাসটাতে করে ফেরার পথে হঠাৎ বুক পকেটে হাত গেল । রাশিনের চিঠিটা এখনও পড়া হয় নি । আস্তে করে চিঠিটা বের করলাম । মাইক্রোর রিডিং লাইটটা জ্বালিয়ে দিলাম । অল্প কয়েকটা লাইন ।



যখন তুমি এটা পড়বে তখন আমি এমন এক জায়জাতে চলে গেছি যেখান থেকে আর ফিরে আসব না । অপু তোমাকে খুব মিস করবো । জানি তুমিও খুব মিস করবে আমাকে । জানো খুব চেষ্টা করেছি তোমাকে ঐ হায়নার দলে ফেলতে । কিন্তু পারি নি । আর পারি নি এই অপবিত্র দেহটাকে তোমার যোগ্য ভাবতে । আমি আর এই কষ্ট সহ্য করতে পারছিলাম না । তাই চলে গেলাম । তুমি ভাল থেকো । আমাকে মনে রেখো । আর তোমার কাছে ঋণি রয়েই গেলাম । তোমার মনটা নিয়ে চলে যাচ্ছি ।



চিঠিটা আমি ভাজ করে রেখে দিই । বুক পকেটে ।



বি:দ্র: একই শিরোনামে গত পরশু দিন একটা গল্প লিখেছিলাম । সেটা ছিল আনন্দের গল্প । আজ একই গল্প আবার লিখলাম । তবে একটু অন্য রকম করে । আর গল্পটা শায়মা আপুর জন্য । ওনার লেখার একজন অন্ধ ভক্ত আমি । ওনার মন্তব্যের জন্যই গল্পটা আমি আবার লিখেছি ।





আগের গল্পের লিংক

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:২৫

শায়মা বলেছেন: আর গল্পটা শায়মা আপুর জন্য । ওনার লেখার একজন অন্ধ ভক্ত আমি । ওনার মন্তব্যের জন্যই গল্পটা আমি আবার লিখেছি ।



কিন্তু আজ তুমি মাইর খাবা।X(


এডিট করতে বলেছি বলে কি মেরে ফেলতে বলেছি!!!!X(X(


আরে অহংকারী মেয়েটাকে দিয়ে এই ভাবে প্রেমে পড়ানোর চাইতে ছেলেটাকেই বেশী বেশী পড়াতে বলেছিলাম।


তাই বলে তুমি মেরে ফেলবা !!!!!!!:( :( :(


১৫ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১২:৩৭

অপু তানভীর বলেছেন: কি করবো বল ?? মাথায় যে আর কিছু আসে নি । আর আমি তো দুঃখের গল্প সাধারনত লিখি না । একটা না হয় ওরকম হল ! পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।

২| ১৪ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:২৬

শায়মা বলেছেন: তবে যাই বলো মেরে ফেললে মানুষ সেটা বেশী বেশী মনে রাখে।:(


ওকে যেহেতু গলপই তাইলে আবার বাঁচানো যেতে পারে তাইনা??? :)


ভুত পেত্নী বা পরী করে হলেও আবার রাশিনকে বাঁচিয়ে তোলো ভাইয়া।:)

১৫ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১২:৩৪

অপু তানভীর বলেছেন: কিভাবে বাচিয়ে তুলি বল ? বুদ্ধি দাও একটু ।

৩| ১৪ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৪৩

শায়মা বলেছেন: Click This Link


এইযে একটা স্যাড এন্ডিং এ আমাকেও সব্বাই তেড়ে মারতে এসেছিলো একদিন।:(


তাই দেখে আমি আবার বাঁচিয়ে দিলাম নিপুকে।:)

Click This Link



মেরে ফেলছো বলে এই গল্পে কেউ আর রাগ করে কথাই বলছেনা।:(

১৫ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১২:৩৩

অপু তানভীর বলেছেন: তাই তো দেখছি । আপনার লেখা গুলা পড়লাম । অনেক ভাল লাগল ।

৪| ১৪ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১১:১৮

সতবাদী বলেছেন: কিছু লিখব ভাবছিলাম কিন্তু কি লিখব বুজতেছি না রে ভাই।


তয় অনেক সুন্দর হইছে।


হৃদয়স্পর্শী গল্প।

১৫ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১২:৩২

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৫| ১৪ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১১:৪৯

আমি তানভীর বলেছেন: আগেরটাই তো ভাল ছিল । মারতে গেলেন কেন :(

১৫ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১২:৩১

অপু তানভীর বলেছেন: দুইটাই তো গল্প । কেবল দেখলাম গল্পটা দুই দিকে যেতে পারে । আপনি যেদিকে যান । অথবা যেটা পড়তে পছন্দ করেন ।

৬| ১৫ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১২:১৪

ঈষাম বলেছেন: ভালোই :)

১৫ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১২:৩১

অপু তানভীর বলেছেন: হুম ।

৭| ১৬ ই মার্চ, ২০১২ সকাল ৭:০৩

রাতুল_শাহ বলেছেন: গল্পটা পড়লাম।

শেষে গিয়ে মর্মাহত হলাম। কারণ এটা আমাদের জন্য গল্প না।

১৬ ই মার্চ, ২০১২ দুপুর ১২:৫৪

অপু তানভীর বলেছেন: কেন ভাই ? এটা কেবল একটা গল্পই । আর কিছু না । মন খারাপ করার কিছু নাই ।

৮| ১৬ ই মার্চ, ২০১২ দুপুর ১২:৫৮

শিশিরের শব্দ বলেছেন: :| :|

১৬ ই মার্চ, ২০১২ দুপুর ২:২৪

অপু তানভীর বলেছেন: :( :( :( :(

৯| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১২

মাহফিজুর রহমান বলেছেন: গল্পটা হৃদয়স্পর্শ করে গেলো..... :| :|

১৯ শে এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৮

অপু তানভীর বলেছেন: :( :( :( :(

১০| ১৫ ই জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২১

নিরপেক্ষ মানুষ বলেছেন: আসলে এত প্রেমের গল্প পড়েছি যে শুরুতে একটু পড়লেই শেষে কি হবে তা বুঝতে পারি।এই গল্পেও সেটা হয়েছে।আমার ধারণাটা মিলে গেছে।গল্পটা ভাল হইছে

১৫ ই জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪২

অপু তানভীর বলেছেন: :) :) :)

১১| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৫৬

তাসজিদ বলেছেন: অপু ভাই,
নিঃসন্দেহে আপনার সেরা গল্প দের একটি। অসাধারণ।
তবে আপনার এ অসাধারণ গল্প এর মাঝে negative message আছে।
আমির খানের সত্য মে বিজয় এর child abuse পর্ব তা দেখেছেন। ইন্ডিয়াতে ৫২% শিশু শৈশবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, যা একটি সরকারি গবেষণা তে পাওয়া গিয়েছে। আমাদের দেশেও কিন্তু এ হার কম নয়। যদিও এ বিষয়ে কোন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ইনফরমেশন আমাদের কাছে নেই। তবু এ হার কম নয়। আমাদের দেশেও অসংখ্য ছোট ছোট ছেলে মেয়ে এর শিকার হয়। এটাই বাস্তবতা।


আপনার গল্পের নায়িকা রাসিন শিশুকালে যৌন নির্যাতনের শিকার হন। যার জন্য সে প্রতিদিন আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এবং অবশেষে সে সফল হয়।

যারা শিশুকালে যৌন নির্যাতনের শিকার হন তাদের জন্য আপনি সচেতন অথবা অসচেতন ভাবে একটি সমাধান দিয়েছে। আত্মহত্যা। যা আমাদের ধর্মে মহা পাপ হিসাবে বলা হয়েছে।

তাহলে যেই ছোট মেয়েরা শিশুকালে যৌন নির্যাতনের সিকার হয়েছে তাদের এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবার একটি কি একটিই।

যে নরপশু রা এর জন্য দায়ী, তার ত দিব্বি ভাল আছে। তাহলে মেয়েরা কেন আত্মহত্যা করবে। যার সে নিজে কোন ভাবেই দায়ী না।

একজন লেখক হিসাবে আপনি সমাজের দায়ভার এড়াতে পারেন না। আপনার গল্প পরে কোন মেয়ে অনেক বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারে?????????????


























০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:১৯

অপু তানভীর বলেছেন: কি আশ্চর্যের কথা !!!!
আমি তো এতো কিছু ভেবে লিখি নি !!
কেউ যদি এমন কিছু করে ফেলে তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে.........

১২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:১৪

তাসজিদ বলেছেন: লেখক বলেছেন: কি আশ্চর্যের কথা !!!!
আমি তো এতো কিছু ভেবে লিখি নি !!
কেউ যদি এমন কিছু করে ফেলে তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে........


অপু ভাই,
ভাবা ত উচিৎ, নাকি??????

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:২৯

অপু তানভীর বলেছেন: নাহ ভয় নাই !! আমার পাঠক সংখ্যা খুব বেশি না ।আর সবাই বেশ বুদ্ধিমান । তারা এমন বোকামী করবে না !!

১৩| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:০৪

বটবৃক্ষ~ বলেছেন: তাই বলে মেরে ফেলবা! X( X(

২১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:২১

অপু তানভীর বলেছেন: আমার ইচ্ছা !! সৃষ্টি যেমন করতে পারি তেমনি মারতেও পারি !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.