somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পটা এমনও হতে পারতো........

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উৎসব বাড়ির গমগমে পরিবেশের মাঝেও বোধশূন্য নির্লিপ্ত একটা সময় কাটছে নিপুণের। বাড়িভর্তি লোকজন, আত্নীয় স্বজনদের মুখর পদচারণা, আনন্দ উল্লাস! কিছুই যেন স্পর্শ করছেনা ওকে। এত কিছুর মাঝে থেকেও, সবার মধ্য থেকে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে সে বার বার। চোখের সামনে ভেসে উঠছে একটি অতি প্রিয় মুখ। হাসিখুশী সদা চন্চল গভীর একজোড়া চোখ। কিন্তু সে চোখে নিপু আজ দেখছেনা আনন্দের লেশমাত্র ছায়া। অদৃশ্য সে চোখজোড়া যেন একরাশ দুঃখ মেখে চেয়ে রয়েছে তার দিকে। ছোট্ট একটা শ্বাস গোপন করে ফেললো নিপুণ। চাপ ধরা একটা কষ্টের পাহাড় পুরোটা বুক জুড়ে। সে খুব ভালোভাবেই জানে যে কল্পনাটা তার নিজের মনেই গড়া। তার নিজের মনের গোপন কষ্টটাই জন্ম দিচ্ছে এমন এক স্বপ্নের।

মা বড় চাচীকে সাথে নিয়ে এগিয়ে এলেন। বড়চাচী ওর হাত দুটো টেনে নিয়ে পরম যত্নে পরিয়ে দিলেন একজোড়া ভারী সোনার বালা। তারপর নিপুণের থুতনী ধরে চুমু খেয়ে বুকে টেনে নিলেন।
-কত বড় হয়ে গেছিস মামনি! কতদিন পর দেখছি তোকে।
নিপুণ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো । কি অদ্ভুত ! কিছুই মাথায় ঢুকছে না ওর! এতদিন পর বড়চাচীর সাথে দেখা। অথচ ওর ভেতর কেমন যেন এক ভাবলেশহীন শূন্যতা।

রাত প্রায় দুটো। আসন্ন উৎসবের সকল কর্মচন্চলতা নিভে নেমেছে গভীর রাত। কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছেনা আর কোথাও। শুধু নিপুণের চোখে ঘুম নেই। শুয়ে আছে চুপচাপ। কি এক নিদারুন শুন্যতা! বুকের ভেতর কিসের এক হাহাকার! অথচ ওর চোখ এখন রঙ্গীন স্বপ্ন বুনে যাবার কথা ছিলো। আর ঠিক দশদিন পর ওর বিয়ে।


-তুই একটা বেহাইয়া।
-কেন ? কেন? কি করছি আমি?
-কি আবার করবি?-
-বেহাইয়ামী করছিস।
-কি রকম?
-তৃষার হাত ঐভাবে ধরে কি এত দেখছিলি? ছেলেরা কেমন বেহাইয়া হয় আমি জানিনা?
- ওহ তৃষার হাত ধরলে বেহাইয়া না? তাইলে তোর হাত দে। ধরে দেখি বেহাইয়ামীর প্রায়েশ্চিত্ত হয় কিনা।
ওর ভালোমানুষী করে কাঁচুমাচূ মুখ করা দেখে হেসে ফেলে নিপু।



-ঐ তোর ফোন বিজি কেনো?
-আরে ফোন কি সব সময় বিজি ছাড়া ইজিই থাকবে? তুমি না হয় মাদাম তেরেসা। আমি তো আর ...........
-তুই কি?
- কিছু না । আমি আমিই।
-হুম
-হুম কেনো? নিপু নিরুত্তর।
- আচ্ছা বাবা ভুল হইসে। গান শোন।
তাল ,লয় সূর ছাড়া গান ধরে রেহান।
ভালোবেসে সখী নিভৃত যতনে আমার নামটি রেখো তোমার পূজারো মন্দিরে।
-কেমন হইসে?
- বাজে।
-আসলেই
- হুম আসলেই। তবে....
- কি তবে।
-গুড ট্রাই। তোকে যে পাত্রে রাখা হবে সে পাত্রের আকারই ধারণ করবি তুই। হা হা হা
- তবে সমস্যা হলো । তোর আশেপাশে কোনো পাত্র রাখা যাবেনা।
-হুম।দিনদিন বেশী চালাক হইছো ।
হা হা হা হাসতে থাকে নিপু।


কত হাসি! কত গান! একের পর এক মনে পড়ে যায়। কিন্তু সেদিন! নিজের চোখকেও আজও বিশ্বাস করতে পারেনা নিপু। রেহানের প্রতি তৃষার আদেখলেপনা কিছুতেই সহ্য করতে পারেনা নিপু। সব জেনেশুনেও তৃষার নেকামীগুলোতে যে প্রছন্ন সায় ছিলো রেহানের সে আসলেই কখনও বোঝেনি। এতই বোকা ছিলো যে নিপু! নিজের বোকামীতে নিজেরই লজ্জা হয় আজ। যেদিন টিএসসির কোনার বারান্দায় ওদের দুজনকে ভর দুপরে আবিষ্কার করে নিপু । পরম মমতায় তৃষার চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছিলো রেহান। দূর থেকে সে দৃশ্য দেখে নিপুর আর সেদিন বুঝতে বাকী রইলোনা কিছুই। মেঘে মেঘে অনেক বেলা গড়িয়েছে!

প্রায় পুরোটা বালিশ ভিজে গেছে নিপুর চোখের জলে। সে জল মুছিয়ে দেবার জন্য কেউ নেই আজ। বিছানা ছেড়ে ওঠে নিপু। বাথরুমে গিয়ে জলের ঝাপটা দেয় চোখে মুখে।
জানালায় দাঁড়িয়ে দেখে গভীর কালো রাতের আকাশ জুড়ে একটা হালকা নীলাভ আলোর আভা। আকাশটাকে খুব আপন মনে হয়। খুব চলে যেতে ইচ্ছে করে আকাশের কাছাকাছি কোথাও কোনো গভীর শূন্যতায়।

হলুদ শাড়ীতে সেজেছে নিপু।ফুলে ফুলে সাজানো গাঁয়ে হলুদের মন্চটার ঠিক মাঝখানে যেন এক জীবন্ত ফুলকুমারী হয়ে বসে আছে সে। খোঁপায় হলুদ ফুল, হাতভর্তি হলুদ কাঁচের চুড়ি। চারিদিকে হলুদ কমলা শাড়িতে মেয়েরা । মনে হচ্ছে এই শীতের সন্ধ্যায় আগেভাগেই বসন্ত নেমেছে আজ নিপুদের বাগানে। হঠাৎ ঝলমলে এক ডালিয়া ফুলের মত লাল টুকটুক শাড়ি, বেণীতে জড়ানো বেলীফুলের মালা, ওর সামনে এসে দাঁড়ালো তৃষা। সাথে ফারাজভাই। তিনিও পান্জাবী ধুঁতিতে সেজেছেন বেশ নতুন বরের মত।মিটি মিটি হাসছেন তৃষার পাশে দাঁড়িয়ে। নিপু হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইলো ওদের দিকে। ওর বিস্ফারিত দৃষ্টি দেখে তৃষা একগাল হেসে বললো,
-বিয়ে করে ফেললাম শেষ পর্যন্ত। বাসায় রাজী হলোনা। তাই সোজা কাজী অফিস। আর তারপর গত পরশু.....

সবকিছু জলের মত পরিষ্কার হয়ে আসলো এবার নিপুর কাছে। ফারাজভাই রেহানের খুব কাছের মানুষ। অথচ রেহান শয়তানটা কোনোদিন বলেনি এতকিছু তলে তলে তার কথা , তৃষার কথা। তৃষার হাত ধরে কেঁদে ফেললো নিপু। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তৃষা ওর দিকে। ওর পাশে ধপ করে বসে পড়ে জিগাসা করলো।
- তুই কি এই বিয়েতে রাজি না? একবার শুধু বল যে তুই রাজি না ..
কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নিপু জানতে চাইলো
-রেহান কেমন আছেরে?



এত ভোরে দরজা খুলে নিপুকে এই সাজে দেখে হা করে চেয়ে আছে বুয়াটা। তাকে পাশ কাটিয়ে সোজা গিয়ে রেহানের ঘরে ঢোকে নিপু। রুমের কোনার একটা ইজিচেয়ারে গিটার হাতে বসে রেহান। রাত্রী জাগরিত জবাফুলের মত লাল টকটকে ক্লান্ত দুচোখ তুলে তাকায় ওর দিকে।

নিপু এগিয়ে যায়। সারারাত কেঁদেকেঁদে চোখ ফুলিয়েছে সেও। রেহানের সামনে রাখা টুলটার উপর ধপ করে বসে পড়ে।

-তুই আমাকে কিছু বলিস নি কেনো?
রেহান নিরুত্তর। মুখ ফিরিয়ে নেয়। গিটারে টুং টাং আওয়াজ তোলে সে।
নিপু রেগে যায় আরো।
ওর কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে,
-বল? বলিসনি কেনো বল?

রেহান ওর দিকে গভীর চোখ জোড়া মেলে তাকিয়ে থাকে।

ভোরের নিস্তরঙ্গ বাতাসে সূর তোলে ওর গিটার। ওর ভরাট কন্ঠ গেয়ে ওঠে

আমি ঘরের হইনি , বাহির আমায় টানে....
আমি তোমার হইনি ঐ আকাশটা জানে....
বলো তোমায় ফেলে আমি যাবো কোনখানে???

বলো তোমায় ফেলে আমি যাবো কোনখানে???

নিপু হাপুস নয়নে কাঁদতে থাকে।

রেহান গেয়ে চলে,
আমি তোমায় ফেলে বলো যাবো কোন খানে???

http://www.youtube.com/watch?v=cUEu4OkE-5M

নিপুর মুখ কান্না, জল আর হাসিতে মাখামাখি হয়ে ঝলমল করতে থাকে ভোরের আবছায়া আলোয়।


হুম। গল্পটা এমনও হতে পারতো........
কিন্তু এমন শুধু গল্পেই হয় । বাস্তবটা অনেকাংশেই বীপরিত। সে যাই হোক গল্পটা এমনও হতে পারতো। :)


নিপুণের দিনরাত্রী-১

নিপুণের দিনরাত্রী-২

নিপুণের দিনরাত্রী-৩ ও ৪

নিপুণের দিনরাত্রী-শেষ পর্ব


সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৩
১৫১টি মন্তব্য ১৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×