৩
বেশ দূর থেকেই পাবলিক লাইব্রেরীর সিড়িতে বসা ওদের গ্রুপটাকে দেখতে পেলো রেহান। দূর থেকে হলেও বেশ বোঝা যায় বাঘ বাঘ প্রিন্ট জামা পরা নিপুকে। বাপরে! স্বভাবেও বাঘ পরেছেও বাঘ প্রিন্ট। কথাটা ভেবে সে নিজের অজান্তে হেসে ফেলে।
কাছাকাছি হতে হই হই করে ওঠে সবাই।
-কই ছিলি তুই? কই থাকোস আজকাল ?
রেহান সেসব কথার উত্তর না দিয়ে বলে ওঠে, বাহ বাহ ! আইসক্রিম খাওয়া চলতেছে না? বলে বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে নিপুর পাশে ধপ করে বসতে বসতে ওর আধখাওয়া আইসক্রিমটাই টেনে নেয়। নিপুর অগ্নি দৃষ্টির ভস্মবাণ উপেক্ষা করে আইসক্রিম শেষ করাতেই বেশী মন দেয়। যদিও আড়চোখে দেখে বেশ বুঝতে পারে বাঘ প্রিন্ট জামা পরা নিপু বাঘিনী মুডেই আছে আজ।
তৃষা জানতে চায়।
-কাল রাতে তোরে ফোন দিলাম ধরলি না কেনো?
- মেজাজ খারাপ হইসিলো তাই।
-কেন?
-কাউকে ফোন দিলে সে যখন ফোন না ধরে তখন মেজাজ খারাপ হয়।
-ওমা! কে ধরে নাই?
- কেন? নিজের বদ স্বভাবের কথা কি বার বার ভুইল্লা যাও?
-হি হি হি হি ( তৃষার হি হি হাসির দিকে আড়চোখে তাকায় নিপু। মেয়েটার উপর মেজাজ খারাপ হয়।)
তৃষার সেদিকে খেয়াল নেই। সে আল্লাদী স্টাইলে বলে,
-রেহান। তুই নাকি হাত দেখতে জানিস? দেখ না আমার হাতে প্রেম আছে কিনা? মানে ভাগ্যে। আমি না একজন কল্পপুরুষের প্রেমে পড়েছি।
-কল্পপুরুষ! কে সে?
- একজন উপন্যাসের নায়ক।
- কোন উপন্যাস। নাম কি নায়কের।
- উপন্যাসের নাম দূরবীন। গল্পের নায়ক ধ্রুব।
- তাই নাকি ! দেখি দেখি তোর হাতে কি আছে?
-হায় হায় ! তোর হাতে প্রেম তো দূরের কথা, বিয়াও নাই।
-কি!!!
- হ। দেখ এই যে এই লাইনটা। দেখনা। তুই নিজেই দেখ।
- আরো আছে। তুই তো মহা ছ্যাকা খাবি। অবশ্য ওয়ান সাইডেড হবে ব্যাপার টা।
- হইসে । বুঝছি কেমন তোর পন্ডিতি। থাম এইবার।
হো হো হাসতে থাকে রেহান। তৃষা ওকে ব্যাগ দিয়ে দমাদম বাড়ি লাগায় আর তার অগ্নিমূর্তী দেখে সবার সাথে ফিক করে হেসে ফেলে নিপুও। সাথে সাথে রেহান বলে
-থাম থাম ! তোর সব মুসকিল আসান হয়ে গেছে। তোর সব ফাঁড়া কেটে গেছে। মেঘেরর আড়ালে সুর্য্য উকি দিসে। আর ভয় নাই।
ঝুপ করে পড়ে যাওয়া শীতের বিকেলের আরো বেশ কিছুক্ষন পার হয়ে বেশ জমাট অন্ধকার বেঁধে আসার পর উঠে দাঁড়ায় ওরা। ওদের সব বন্ধুদের মাঝে সবে ধন নীলমনি রেহানের গাড়িটায় চেপে বসে গাঁদাগাঁদি করে ওরা ক'জনা।
সবার হই হুল্লোড়ের মাঝেও নিপু বেশ চুপচাপ। এক এক করে সবাইকে যার যার বাড়ির কাছাকাছি ড্রপ করে দেবার পর নিপু আর রেহান এখন একা। নিপুর হুতুম পেঁচার মত মুখ করে থাকা দেখে মনে মনে হাসি পেলেও রসিকতা করতে একটু ভয়ই পাচ্ছে এখন রেহান। তবুও ভয়ে ভয়ে রেহানই শুরু করে টুকটাক দু একটা কথা।
নিপু শুধুই হুম হাম উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। ওর মনোযোগ যেন পুরোটাই লালনীল আলোকসজ্জিত বিপনিবিতান গুলোর দিকেই।
রেহান বলে,
-কফি খাবি?
-না
-চা?
-না
-কেক
- না
-গান শুনবি?
নিপু উত্তর দেবার আগেই সিডি প্লেয়ার অন করে রেহান।
In my heart I know that you are mine
But my mind keeps changing all the time
It's so hard to find security
To bring love into our destiny
I know that you wouldn't tell me if I'm out of line
I hear the senses telling me I've been running blind
Chorus
I wanna love you
And hold you through the night
I wanna love you
Make sure that you'll be alright
I wanna love you
And hold you through the night
I wanna love you
But nothing's coming out right
When I'm close to you I'm in too deep
But without you I can't even sleep
I would give up almost everything
To feel love and all the joy it brings
I know that you're trying hard to say what I can't find
Oh how I understand your pain
You've been left behind
Chorus
I know that if you can help me open up the door
Oh I could love you once again and forevermore
I would love you once again
Take care of you and then
Make sure that you will never be lonely
http://www.youtube.com/watch?v=ueGrE7ZjcF0
এক সপ্তাহ পর.........
৪
-নিপু তুই কখনই আর আমাকে তুই বলবিনা। বেশ গাম্ভীর্য্যের সাথে বলে ওঠে রেহান।
নিপু অবাক বিস্ময়ে ওর দিকে তাকায়!
- তাইলে কি তোরে আজ থেকে আপনি করে বলতে হবে নাকি!
- না। আপনি বলতে হবেনা।
- তাইলে?
- তুমি করে বলবি।
-ওহ সবাইকে তোমার গার্লফ্রেন্ড পাইসো না? এক্স গার্লফ্রেন্ডের কথা মনে পড়ছে?তোমার বাল্যপ্রেম।
-হ। হাসি হাসি মুখে বলে রেহান।
- উইশ দুনিয়ার সব হট মেয়েগুলা আমার গার্লফ্রেন্ড হইতো!
-চোপ!
-তোর মত শয়তানের গার্লফ্রেন্ড হবে কোন গাধা?
-কেন? আমার শয়তানীর দেখলি কি?ওকে ভালোবাসার সংজ্ঞা বল।
- কি???
-আরে কানে শুনতে পাস না? বল ভালোবাসা কারে কয়? এক কথায় প্রকাশ। দেখি পারো কিনা?
- জানিনা । যা ভাগ।
- আর শোন এটা এক কথায় প্রকাশ করা সম্ভব না।তবে তিন কথায় প্রকাশ করা যাইতে পারে।
- ওকে তিন কথায়ই বল।
-বলবোনা । ভালোবাসা মানে অনেক কিছু আর সেটা তোর মত হারামীর জানার দরকারও নেই। চুপ থাক।
-না । এক কথায়ই বলা যায়।
-তোর মাথা।
-যদি পারি। কি দিবি?
-কিছুইনা। তোকে আমি আর এই জীবনে কিছুই দেবোনা।
- এহ! এজ ইফ আমাকে কতকিছু দিয়ে ভাসাই দিসস।
- ঐ চোপ। অন্যের জিনিসে এত লোভ কেনো? আল্লাহ যা দিসে তাই নিয়ে খুশী থাকতে পারিসনা?
- উফফ!! গাধা কি গাছে ধরে! জীবনে কাউরে দেখসস নিজের জিনিসে লোভ করতে?বলদ কোথাকার!
হে হে হে হে
নিজের কথায় নিজে হেরে গিয়ে অগ্নিমূর্তী ধারণ করতে গিয়েও হেসে ফেলে নিপু।
-তোর হাসিটা সুন্দর! যাই বলিসনা কেনো ।
- হইসে। আর আমাকে খুশী করানো লাগবেনা।
- তোরে খুশী করাই আমার কি লাভ?
- জানিনা........ আল্লাহর ওয়াস্তে চুপ থাক একটু।
- দেখিস পরে কইলাম কইতে পারবিনা।
-কি কইতে পারবোনা?
- চুপ কেনো চুপ কেনো?
রাগ দেখাতে গিয়ে আবারও হেসে ফেলে নিপু। তারপর দুজনই হো হো হাসতে থাকে।
http://www.youtube.com/watch?v=GhU43ozh8TM
দু' সপ্তাহ হলো পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আর এরই মাঝে হাঁপিয়ে উঠেছে নিপু। আসলে কিসে যে ওর ভালো লাগা সে তা নিজেই জানেনা। ক'টাদিন এত ব্যাস্ততা ! এত ক্লান্তি ! আহ একটু যদি ঘুমোনোরও সময় পেতো এমন ভাবনায় হা পিত্যেস করা! কিছুক্ষণ চোখ বুজে প্রিয় একটা গান শোনার জন্য বুক ফেঁটে যাওয়া! আর এই যে এখন পরীক্ষা শেষ আর শুরু হয়েছে তার যত রাজ্যের বিরক্তি।
ঘুমও ভেঙ্গেছে সেই সাত সকালে। নিজের রুমটা গুছালো কিছুক্ষন। নিজে হাতে বাবা মার জন্য পরোটা, ভাজি, হালুয়া বানালো। তবুও এখন বাজে মোটে সাড়ে দশটা। সময় যেন কাটতেই চাইছে না। কিযে করে এখন সে!
সেলফোনটার দিকে চোখ পড়তেই রেহানকে এস এম এস দেয় একটা। যদিও জানে রেহান এখন ঘুমের রাজ্যে। দুটো তিনটের আগে ঘুম ভাঙ্গবেই না তার। তবুও নেই কাজ খই ভাঁজ টাইপ একটা এসএমএস লিখলো,
কিরে নবাবজাদা। ঘুম ভাঙ্গেনা?
আধা ঘন্টা হয়ে গেলো নো রিপ্লাই ব্যাক। তার মানে ঘুমাচ্ছে শয়তানটা।
অনলাইনে আসলো। মেসেন্জারে লগ করলো। একজন ফ্রেন্ডও অনলাইন দেখাচ্ছে না।
রেহানকে অফলাইন দিলো।
- ঐ শয়তান!
-ওঠ ঘুম থেকে।
নো রিপ্লাই।
কি আর করা! রেহানের ফেসবুকে ঢুকে পোকার খেলার ট্রাই করে এবং যথারীতি রেহানকে লস খাওয়াতে থাকে।
কিছুক্ষন পর রেহান নড়ে চড়ে ওঠে।
-হুমম
-কি! ঘুম ভাঙ্গছে লাট সাহেব?
- হুমমমমম!
- এস এমএস রিপ্লাই দিসনা কেন?
-হুমমমমমমমমমমমমম
-ঐ শুধু হুম হুম করিস কেনো?
-কারণ আমি ঘুমাইতেসি।
-ও তার মানে তুমি ঘুমায় ঘুমায় চ্যাট করো না?
-হ্যা।
- তাইলে ঘুমায় থাক । কষ্ট করে টাইপ করার কোনোই দরকার নেই।
বলে মেসেন্জার থেকে সাইন আউট করে নিপু। সাথে সাথেই রেহানের ফোন........
-শুনতে চাইলি না? এত ক্ষন ঘুমাইতেসি কেন?
-না চাইলাম না। আচ্ছা বল কেন? কেন ঘুমাইছিস? এখন বল।
-ওকে বলি। কালরাতে তৃষা ফোন দিসিলো। ওর সাথে কথা বলতে বলতে ভোর হয়ে গেলো। শেষে ঘুমাইসি ৬ টায়।
-ওকে। ভেরীগুড!
-তৃষা চায়না আমি ওরে ছাড়া কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাই।- হুম ওকে। ওকে বলে দিস তুই আর কোনো মেয়ের দিকে শুধু চোখ কেন তোর নাক, মুখ, তোর খোঁচা খোঁচা বদখত মার্কা দাড়ি কিছুই তুলে তাকাবি না।
-হে হে হে ,আরে খেপিস কেন? বুঝোসনা তোর সাথে আমার এত ভালো ফ্রেন্ডশিপ সেটা আরকি স হ্য হয়না তার। হে হে হে হে মেয়ে মানুষ বুঝিসই তো। হিংসা নারীদের ভুষন। হে হে হে ।
- শুনো । গাধার মত হে হে করা লাগবেনা । তৃষাকে বলে দিও ও যা ভাবছে সেটা কিছুই না। আমি ১০০% হার্মলেস। কাজেই উনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। বুঝছো সোনামনি?
-হুম! আরো অনেক কিছুই বুঝছি। বাট এইটাও বুঝলাম তুমি জোক নিতে পারোনা। আমি তো ফান করছিলাম।
-ও তাই নাকি!
- হ তাই।
- চুপ থাক।
- তো! আমি কি তোমার সাথে মিথ্যা বলি মনে হয় তোমার?
- জানিনা বলতেও পারো। তবে একটা কথা ভাবছি।
-কি? আমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবিনা? আমার মুখ দেখবিনা?
-হ্যাঁ। ইনটেলিজেন্ট বয়!
-ওকে।
-তোর ইগো অনেক বেশী বুঝছোস আর এই আকাইম্মা ইগোর কোনো দাম নাই সেইটাও বুঝিস।
- আর তোর বুঝি কম ?
যাইহোক। বাই। বাইরে যাবো।
-হুম। আচ্ছা যা।
-তবে একটা কথা শুনে যা।
- কি?
- আই হেট ইউ।
-কি!
- ইয়েস !!!!!!!!!!!!!!! আই হেট ইউ। আই হেট ইউ। আই হেট ইউ।
- ওকে! থ্যাংকস! জেনে খুশী হলাম! হেট কর নো প্রবলেম। কিন্তু লাভ করতে গেলেই প্রবলেম হি হি।
-তোরে লাভ করতে যাবো? আমারে কি পাগলা কুত্তায় কামড়াইছে!
-না তুই নিজেই তো একটা ....
-কি?
- পাগলা কুত্তা। হি হি হি
-ঢং দেখায় তোমারও কোনো লাভ নাই।
- কিসের ঢঙ!
-জানিনা। যাই হোক আজ থেকে জেনে রাখ। আই হেট ইউ। আই হেট ইউ। আই হেট ইউ।
হাহাহাহাহহাহাহা রেহান এর রাগ দেখে হাসতে থাকে নিপু। যদিও ভেতরে ভেতরে ভীষন এক ক্রোধে জ্বলে যাচ্ছে সে। যেটা সে কিছুতেই রেহানকে বুঝতে দেবেনা।
( কত্তবড় সাহস! আই হেট ইউ বলা তাকে! ইচ্ছে করে এক বাড়ি দিয়ে মাথা ফাটায় দিতে শয়তানটার।) নিপুর হাসি দেখে আরো খেপে রেহান । হাসতে হাসতেই বলে নিপু,
-গান শুনবি?
-না
- আমার খুব গান শুনাতে ইচ্ছে করছে তোকে।
- ওকে শুনা। লাস্ট চান্স। এই চান্স আর তো পাবিনা।
-কেনো?
- কারণ আজ থেকে তোর সাথে আমার মুখ দেখাদেখি তো বন্ধ! এ্যান্ড ইট'স ট্রু।
-হুম। আচ্ছা। ঠিক আছে। তাই হবে।
ভীষন মন খারাপ হচ্ছে নিপুর। অভিমানে গলার কাছটায় একটা কষ্টের দলা আটকে আসছে। কেনো এইভাবে বলবে রেহান ওকে?
মনের সব ভাবনা গোপন করেই ফোনটা কানে নিয়েই সে বারান্দার দোলনায় এসে বসে।
http://www.youtube.com/watch?v=ro50XOhnuVc
গান শেষ হবার বেশ কিছুক্ষণ পরেও দুজনই চুপচাপ। নিপু বলে শেষমেষ
- কথা বলিসনা কেনো?
- ঘুমাই গেসি।
- কি? ঘুমাই গেসিস! ঘুমাই গেসিস মানে কি?
- ঘুমাই গেসি মানে ঘুমাই গেসি। তোমার এই পেনপেনানি গান শুনে ঘুমাই গেসি আবার আমি।
- ঐ আমার গান পেনপেনানি না? আর তোমার তৃষার গান তোমার জীবন মরণ, বাংলা সিনেমা। হুহ! মর তুই। আল্লাহর কসম তুই মর।
- ওকে। বাট ডোন্ট ফরগেট, আই হেট ইউ।
প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়ে যায় নিপুর । সেল অফ করে দেয় ঠাস করে।
I'm walking away oh to find a better day
I'm walking away from the troubles in my life
I'm walking away oh to find a better day
I'm walking away
Sometimes some people get me wrong
When it's something I've said or done
Sometimes you feel there is no fun
That’s why you turn and run
but now I truly realize
Some people don't wanna compromise
well I saw them with my own eyes spreading those lies
and well I don't wanna live a lie, too many sleepless nights
not mentioning the fights, I'm sorry to say lady
I'm walking away from the troubles in my life
I'm walking away oh to find a better day
I'm walking away from the troubles in my life
I'm walking away oh to find a better day
I'm walking away
Well I'm so tired baby
things you say you're driving me away
whispers in the powder room baby
don't listen to the games they play
girl I thought you'd realise
I'm not like them other guys
coz I saw them with my own eyes
you should've been more wise
and well I don't wanna live a lie, too many sleepless nights
not mentioning the fights, I'm sorry to say lady
I'm walking away from the troubles in my life
I'm walking away oh to find a better day
I'm walking away from the troubles in my life
I'm walking away oh to find a better day
I'm walking away
http://www.youtube.com/watch?v=n0kddeows1c
রেহানের মনটাও সারাদিন খারাপ হয়ে থাকে......
চলবে.......
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৮