somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিপুণের দিনরাত্রী

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৩:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


I'm so lonely, broken angel
I'm so lonely, listen to my heart

প্রিয় গানটির সুরেলা আবেশে, গভীর এক আছন্নতায় চোখ মেললো নিপু। টেবিলের উপর অদূরে পড়ে থাকা সেলফোনটা টেনে নিয়ে ডিসপ্লেতে নাম্বারটা চেক করার চেষ্টা করলো আধো ঘুম আধো জাগরনে। পড়তে পড়তে কখন যে টেবিলেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলো।

ওপ্রান্ত থেকে ততক্ষনে রেহানের একরাশ বিরক্তি ঝরা কন্ঠস্বর ভেসে আসছে। ছেলেটার এটা একটা বদভ্যাস। এক মূহুর্তের অপেক্ষা সহ্য হয়না। ঘুম জড়ানো কন্ঠে নিপুর হ্যালো শোনার আগেই ওদিক থেকে শুরু হয়ে গেল রেহানের বাক্যবাণ - -

: ঐ মরা ফোন ধরসনা কেন? কাল না তোর পরীক্ষা? আর তুই মরার মত ভোস ভোস ঘুমাইতেসিস? প্রিপারেশন ঠিক ঠাক না হইলে আর পরীক্ষা খারাপ হইলেই তো কাল থেকে শুরু করবি ভ্যানর ভ্যানর সাথে ফিচ ফিচ প্যান প্যান। আর আমার জান ঝালাপালা করবি। তখন তো তোর কান্নার জ্বালা যন্ত্রনায় আমি শুদ্ধা তোদের পাশের বাড়ির কুকুরটা পর্যন্ত পালায় যাবে..... ........ .........X((X(X((

ওর কথা শুনে এই আধকাঁচা ঘুম ভেঙ্গেও খিলখিল হাসতে থাকে নিপু। ওর হাসি শুনে আরো ক্ষেপে রেহান।

:ঐ হাসবিনা খবরদার। যা চোখে মুখে পানি দিয়ে আয়। এক কাপ কফি বানা । তারপর কফি খাইতে খাইতে আমারে একটা গান শুনা। ঠিকঠাক ৫ মিনিট সময়। তারপর সোজা কোনোদিক তাকাবিনা বুঝছস? সোজা পড়ার টেবিল আর তারপর মন দিয়া পড়া শেষ কর।X((

একটা লম্বা হাই টেনে আড়মোড়া ভাঙ্গে নীপু।

: নারে, মরে গেলেও আর পারবোনা। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। পড়ালেখা জাহান্নামে যাক। আমি গেলাম ঘুমাতে আর খবরদার ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করবিনা।

; আর হ্যাঁ, কাল সকালে ডেকে দিতে ভুলিস না যেন। ওকে জান্টুস? :)

-বাই ------------

আর একটা হাই তোলার আগেই শুরু হয়ে গেলো ওদিক থেকে আবারও..

: ঐ খবরদার । খবরদার বললাম ঘুমাবিনা। যা , যা বলতেসি, হাতে মুখে পানি দিয়া আয়। কফি খা। সব ঠিক হয়ে যাবে।

; ঊফফ তুই আমারে আর জালাইস নাতো। তুই কি আমারে মরতে বলিস? ঘুমে মারা যাচ্ছি আমি। প্লিজ তোর দোহাই লাগে, তুই একটু আমারে রেহাই দে। আর জীবনেও তোকে বলবোনা আমাকে ডেকে দিতে। এখন একটু ঘুমাইতে দে। প্লিজ!!

- সকাল ৭ টায় কিন্তু ডেকে দিতে ভুলিসনা ওকে জান্টু মান্টু???:)

- এখন বাই বাই, গুড নাইট, স্লিপ টাইট।

বলেই ফোনটা কেটে দেয় নিপূ।
ফোনটা সাইলেন্টে দিয়ে সোজা বালিশের তলায় চালান করে দেয় আর তারপর আরাম করে যেইনা কমফোর্টারটা গায়ে টেনে নিয়েছে, ওমনি বালিশের তলা থেকে শুরু হলো ঘ্ র র ঘ র র ভাইব্রেশন। কি আর করা সেটা উপেক্ষা করেই ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো সে।

কি আশ্চর্য্য ! ঘুম আসছেনা। মাতালের মত অসহ্য ঘুমটা কই যে হঠাৎ পালিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে বালিশের তলা থেকে ফোনটা টেনে বের করল। দেখলো এই ১৯ মিনিটে ২২টা মিসকল। হেসে ফেললো নিপূ । উফফ এঈ মহা পাগোলটাকে নিয়ে কি যে করবে সে!

শুয়ে শুয়েই ফোন দিলো রেহানকে। ওপাশ থেকে দু একটা রিং হবার পরে রিসিভ করলো রেহান। কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ নেই। সর্বনাশ! ক্ষেপেছে। ভয়ে ভয়ে খুব আস্তে নরম করে বললো ....

-হ্যালো। তবুও ওপাশে নিরুত্তর।

-হ্যালোওওওওওওও .....(একটু টেনে আল্লাদ করে বললো যেন ঊনার মান ভাঙ্গে।)

-শুনতে পাচ্ছিস?

তবুও কোনো কথা বার্তা নেই। ভেতরে ভেতরে একটু ঘামছে নিপু। মরেছে। রেহান এমনিতে রাগেনা কিন্তু রাগলে সেই রাগ ভাঙ্গাতে নিপুর মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়।

: রেহান একটা কথা শোন। এমনিতেই প্রিপারেশন ভালো না আবার তুই যদি এমন করিস তাইলে কাল আমার পরীক্ষা নির্ঘাৎ অনেক খারাপ হবে।
- প্লিজ....কথা বল ...
: আই এ্যাম স্যরি.......

পরীক্ষার কথায় মনে হয় কাজ হলো... রেহান মুখ খুললো.....

: আমি বুঝিনা কেনো তুই আমার সাথে এমন করিস নিপু।

: আচ্ছা বাবা স্যরি বললাম তো। আর করবোনা।

: যাও তাইলে উঠো। এক কাপ কফি খেয়ে পড়তে যাও । এখন পৌনে তিনটা।ঠিক পাঁচটায় উঠে দু ঘন্টা ঘুমিয়ে নিও ওকে? বেস্ট অফ লাক!( সিরিয়াস ম্যুডে রেহান নিপুকে তুমি করে বলে।)

ফোন কেটে দিয়ে এক মগ কফি বানিয়ে পড়ার টেবিলে যায় নিপু। যতখানি পারে মন দেয় পড়ালেখায়। পাঁচটার আগ দিয়ে মোটামুটি একটা প্রিপারেশ নিয়ে বই বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায়।

জানালা দিয়ে ভোরের মিষ্টি হিমহিম বাতাস বয়ে আসছে। জানালার কাছে এগিয়ে যায় নিপু। জমাট বেঁধে থাকা অন্ধকার অন্ধকার পার্কটায় ঝাড়ু দিচ্ছে ঝাড়ুডদারনীরা। কয়েকটা পাখী উড়ছে এদিক ওদিক। আবছায়া এক আলো আঁধারীর খেলা ভোরের বাগানটা জুড়ে। হঠাৎ নিপুর মনটা অজানা এক কষ্টে হু হু করে ওঠে । এই অনাবিল সুন্দর সকালে নিপুর হঠাৎ খুব কান্না পায়।

বালিশের উপর পড়ে থাকা সেলফোনটা ঠিক সে মুহুর্তে বেঁজে ওঠে। নিপু এগিয়ে যায় । বড় দেওয়াল ঘড়িটায় তাকিয়ে দেখে ঠিক সকাল পাঁচটা। রেহানের ফোন। ছেলেটা সারারাত ঘুমায়ওনা!
ফোনের দিকে হাত বাড়ায় নিপু। ফোনটায় বেজে চলেছে প্রিয় গানটা ....

I'm so lonely, broken angel
I'm so lonely, listen to my heart

One n only, broken angel
Come n save, before I fall apart

http://www.youtube.com/watch?v=-whp15J2n_M


চলবে ......

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:১৯
৯২টি মন্তব্য ৯৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×