নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি বৃষ্টি দেখেছি

১১ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:০১



নীলুর বৃষ্টি অনেক পছন্দ ছিল । বৃষ্টি হলে আর কোন কথা নাই । ওর মাথায় কি এক অদ্ভূদ চিন্তা ছিল যে বৃষ্টি হলে ওকে ভিজতেই হবে । কোন সময় জ্ঞান নাই । বৃষ্টি মানে ভিজতেই হবে ।

ইনফ্যাক্ট ওকে আমি প্রথম লক্ষ্য করি এই বৃষ্টিতে ভেজা নিয়েই । একদিন ক্লাস করছিলাম । ও আমার পরেই বসে ছিলাম । হঠাৎ আমার নাম ধরে ডাকল ।

-এই অপু ? এই ?

এমনি চিনতাম ওকে । কিন্তু এর আগে কখনও কথা হয়নি ওর সাথে ।

-এই শোন না !

আমি একটু অবাক হলাম । একটু বিরক্তও । কোন দিন কথা বলি নি । প্রথম কথাতেই তুই ।

-কি ?

-আমার বই আর খাতাটা একটু রাখতো !

আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নীলু বের হয়ে গেল । আমি সত্যি অবাক না হয়ে পারলাম না ! বাইরে ততক্ষনে ঝুম বৃষ্টি আরাম্ভ হয়েছে । একটু পর লক্ষ্য করলাম নীলু বাচ্চা কয়টা ছেলে মেয়েদের সাথে বৃষ্টির ভিজছে । বলতে গেলে নাচা নাচি করছে ।

এতো বড় একটা ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে যে এমন করে বৃষ্টিতে ভিজতে পারে আমার ধারনার বাইরে ছিল ।



উহু ! নিজের মনকে আবারও একটা ধমক দিলাম । আমি আবারও নীলুর কথা ভাবতে শুরু করেছি । সকালবেলাই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে ওর কথা আর ভাববো না । কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই ওর কথা আবার ভাবতে শুরু করেছি । আসলে সব দোষ এই হতচ্ছাড়া বৃষ্টিটার । সেই দুপুর বেলা থেকে একভাবে ঝড়েই যাচ্ছে ।

আর আমার কেবল মনে হতে লাগল ঐ বৃষ্টিটা আমাকে মুখ ভেঙ্গিয়ে বলছে আমি তোমার খুব প্রিয় একজনের খুব প্রিয় ছিলাম ।

আমি চোখ ফিরিয়ে নেই । ঘরের সব জানালা বন্ধ করে দেই । আমি বৃষ্টি দেখবো না । ফুল ভলিউমে টিভি ছেড়ে দেই । বৃষ্টির শব্দও আমি শুনতে চাই না । আমি এমন কিছু করতে চাই না যা আমাকে নীলুকে মনে করিয়ে দেয় । আমি ওকে মনে করতে চাই না ।

কেন মনে করবো ওকে ? যে আমাকে একা রেখে চলে গেছে তার কথা আমি কেন মনে করবো ? আমি মনে করবো না । সোফার উপর বসতে ইচ্ছা হয় না । সবুজ কার্পেটার উপর শুয়ে পড়ি ।

নীলু খুব শখ করে এই কার্পেটটা কিনেছিল । নষ্ট হয়ে যাবে বলে বসার ঘরে এটা বিছায় নি । সোবার ঘরটাতে বিছিয়েছিল । প্রথম যেদিন কার্পেটটা পাড়ে নীলুর আনন্দ দেখে কে !!

বাচ্চা মেয়ে দের মত খুশিতে ওর চোখমুখ আনন্দে ভরে ছিল । আমার হাত চেপে ধরে বলল

-দেখো না কি সুন্দর লাগছে ! মনে হচ্ছে সবুজ একটা মাঠে চলে এসেছি ।

আমি এখন ভাবছি অন্য কথা । আমি তখন আসসোস করছি এতোগুলো টাকা বেড়িয়ে গেল বলে ! অবশ্য আফসোসের খুব বেশি কারন ছিল না । আমার নিজের টাকা না বাপের টাকা । তবুও নতুন সংসারে এখনও কতকিছু কেনা বাকি ! আগে ব্যাচেলার ছিলাম তাই কোন ব্যাপার ছিল না ।

-কই বল না কেমন ?

-ভাল কিন্তু একটু বেশি বিলাশিতা হয়ে গেল না ?

নীলু মুখ একটু মলিন হল ।



আরে দুর ! যত চাচ্ছি ওকে ভাববো না তত ওর ভাবনা চলে আসছে । আমি সবুজ কার্পেট থেকে বিছানায় উঠে এলাম । ওর কথা কিছুতেই ভাববো না । আমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করি । ঘুমালে হয়তো ওর ভাবনা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবো ।



-কি করছ ?

নীলুর কণ্ঠ । কিন্তু ওর কন্ঠ কিভাবে আসবে ? নিশ্চই আমার কল্পনা ।

-কিছু করছি না ।

নীলুর হাসির শব্দ শুনতে পেলাম ।

-সত্যি কিছু করছো না ?

-না । তোমার সাথে কোন কথা নাই । তুমি চলে যাও ।

-বাব্ব বাহ আমার উপর রাগ করছ ?

-হুম । রাগ করেছি ।

নীলু আবার হেসে উঠল ।

-হাসছো কেন ?

হাসি মিশ্রিত কণ্ঠ নীলু বলল

-তুমি আমার উপর রাগ করতেই পারবে না । সেই ক্ষমতা তোমার নেই ।

কোন জুটসই জবাব না পেয়ে বলল

-তাহলে তুমি আমাকে ছেড়ে কেন চলে গেল ?

-কই গেলাম ? এই তো আমি তোমার কাছে । তোমার সাথে কথা বলছি ।

-না তুমি বলছ না । তুমি আমার কল্পনা ।

-আচ্ছ ? তাই ?

নীলু আবার হেসে উঠল । বলল

-আচ্ছা তুমি যা বল তাই । এখন চল বাইরে খুব সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে । চল না একটু ভিজি ! চল না !

বৃষ্টির কথা উঠতেই আমি ভিজতে গেলাম । কিন্তু নীলুকে কোথাও দেখতে পেলাম । নাম ধরে ডাক দিলাম । কিন্তু ও কোন জবাব দিল না ।

ওর নাম নিতে নিতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল । পুরো ঘর কেমন অন্ধকারে ছেয়ে আছে । টিভি চলছিল । এখন বন্ধ । বাইরে এখনও বৃষ্টি পড়ছে তুমুল বেগে । আওয়াজ আসছে । কারেন্ট চলে গেছে বোধহয় ।

বাধ্য হয়েই জানালা খুলে দিলাম । বাইরে এখনও বৃষ্টি পড়ছে ।

আমার নীলুর পছন্দের বৃষ্টি !



ঐ দিন পর নীলু পরপর দুদিন ক্লাসে আসল না । তৃতীয় দিন একটা টিউটিরিয়াল ছিল । ঐ দিন নীলুকে আবার দেখলাম । কিন্তু চেহারার একি অবস্থা ? ও কাছে এসে ওর খাতা পত্র চাইল । দিতে গিয়ে বললাম

- চেহারার একি অবস্থা ? শরীর খারাপ নাকি ?

নীলু শুকনো মুখে বলল

-একটু জ্বর ।

বই গুলো নিয়ে ও ঘুরতে যাবে ঠিক এমন সময় ও কেমন জানি দুলে উঠল । আমি না ধরলে হয়তো মাথা ঘুরে পরে যেত । ওর গায়ে তখন আকাশ পাতাল জ্বর ।

-একি তোমার গায়ে তো খুব জ্বর !

নীলু আবার শুকনো মুখে বলল

-একটু জ্বর । আমাকে একটু বেঞ্চে বসিয়ে দিবে প্লিজ ।

-তোমার গায়ে খুব জ্বর । এখন বসতে হবে না । ডাক্তারের কাছে চল আগে ।

-এখন পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে । আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হতে হবে না । তুমি পরীক্ষা দাও ।

-আরে এরকম টিউটিরিয়াল আরো হাজারটা আসবে । আগে ডাক্তারের কাছে চল ।



ওকে একপ্রকার জোর করেই ক্যাম্পাসের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম । টিউটিরিয়াল দেওয়া হল না । ডাক্তারের কাছ থেকে যখন বের হয়েছি এখন ওর অবস্থা আরো খারাপ । কেমন যেন লাগছিল । ওকে এই অবস্থা ছেড়ে আসতে কেন জানি মনে চাচ্ছিল না । ও বলল

-আমাকে একটু হলে রেখে আসবে ?

-হুম । কোন হলে থাকো ?

ও হলের নাম বলল ।

-তোমার রুম মেইট আছে এখন রুমে ?

নীলু একটু হাসল ।

-আছে । অন্তত ১০০ আছে ।

-মানে কি ?

-আমি গন রুমে থাকি ।

-ও মাই গড ! এ অবস্থায় তো তোমাকে গনরুমে রাখা যাবে না । ঢাকায় কোন আত্মীয় আছে তোমার ?

-নাহ ।

-তাহলে ?

-তাহলে কিছু না । আমাকে হলেই রেখে আসো ।

-না । তুমি আমার সাথে চল ।

-কোথায় ?

-আমার বাসায় চল ।

নীলু আমার দিকে তাকাল । কি যেন ভাবল ? তারপর বলল

-তোমার বাসায় সমস্যায় হবে না ? মানে আমি একটা মেয়ে !

-কোন সমস্যা নাই । আমি ফ্লাট ভাড়া করে থাকি ।

ও আর কথা বলল না । অবশ্য ওর সে অবস্থা ছিলও না । নীলুকে বাসায় নিয়ে আসলাম ।

মোটামুটি পাঁচ দিন ওর অবস্থা বেশ খারাপ ছিল । একবার ভাবলাম হাসপাতালে নিয়ে যাই । আবারও ডাক্তার ডেকে আনলাম । পাঁচদিন পর ওর জ্বর ছেড়ে গেল ।

ঐ দিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি নীলু রান্না ঘরে রুটি বানাচ্ছে । আমি অবাক হয়ে বললাম

-কি করছ তুমি ?

নীলু খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল

-রুটি বানাচ্ছি । দেখছ না ?

-দেখতে তো পাচ্ছি । কিন্তু কেন করছ ?

-আশ্চর্য মানুষ রুটি কেন বানায় ? খাওয়ার জন্য !

-আরে বাবা তুমি কেন করছ ? তোমার শরীর খারাপ । তোমার বিশ্রাম নেওয়ার দরকার । আর কাজ করার জন্য বুয়া তো আছে । একটু পরই চলে আসবে ।

নীলু হাসল ।

-অনেক বিশ্রাম করেছি । আর কত ? তাছাড়া জ্বর নেই ।

আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে ওর কপালে হাত দিলাম জ্বর দেখার জন্য । আসলেই জ্বর নেই ।

ওর কপাল থেকে হাত সরিয়ে নেবার সময় ওর চোখে চোখ পড়ল । ঠিক তখনই আমার মনের মধ্যে কেমন জানি একটা অস্বস্তি হল ।

আমি কিভাবে এতো সহজে ওর গায়ে হাত দিয়ে ফেল্লাম ? এই পাঁচ দিনে তো কতবার ওর জ্বর মেপেছি, একবারও এই অস্বস্তিটাতো আসে নি ! তাহলে এমন কেন অস্বস্তি লাগছিল ?

আমার জানা নেই । ওকে ওভাবে রুটি বানানো অবস্থায় দেখে আমার মনে আরো অদ্ভুদ একটা অনুভূতি হল ।

নাস্তা খাওয়ার সময় অনেক কথা হল ওর সাথে । বলা চলে ওখান থেকে আমাদের মেলামেশা শুরু হল । তারপর থেকে ওর সাথে অনেক সময় কাটাতে লাগলাম । আমরা সবকিছু শেয়ার করতাম ।





বৃষ্টির বেগ মনে হচ্ছে বেড়েছে । এরকম বৃষ্টি হলে তো কথাই নাই । ওকে কিছুতেই ধরে রাখার উপায় ছিল না । বৃষ্টিতে ও ভিজবেই । আমি জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেই । বৃষ্টির ফোটা আমার হাতে পড়তে লাগল ।

-এভাবে ভিজলে কি হয় ?

নীলুর কথা যেন আবার শুনতে পেলাম ।

-কিভাবে ভিজবো ?

-তুমি মনে হচ্ছে জানো না ? মনে নেই এই ছাদটাতে আমরা একবার বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম !



আমার এই বাসাটা একে বারে ফ্লাট বললে ভুল হবে । তিন ইউনিটের বাড়িতে বাড়িওয়ালা কেবল এক ইউনিট কোন রকম করে ফেলে রেখেছে । পুরো ছাদটাই বলতে গেলে ফাকা পরে আছে । নীলুর এই ফাকা ছাদটাও অনেক পছন্দ ছিল । ও প্রায়ই আসতো ।

বাচ্চা মেয়েদের মত ছাদে উপর লাফালাফি করতো । একা একা এক্কা দোক্কা খেলতো । আমি হাসতাম কেবল ।

ঐ দিন সকালবেলা আমার বাসায় এসে হাজির । কাঁদে ছোট একটা ব্যাগ । আমি জিজ্ঞেস করলাম

-ব্যাগে কি ?

ও বলল

-শাড়ি । আজ খুব বৃষ্টি হবে । শাড়ি পরে বৃষ্টিতে ভিজবো আজ ।

কেমন যেন একটু অন্য রকম লাগছিল ওকে । বুয়া আসলেও ওকে বিদায় করে দিল । দুপুরের রান্না ও নিজেই করল । দুপুরের দিকেই বৃষ্টি আরাম্ভ হল । আমি জানালার পাশে দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছি এমন সময় নীলু এসে হাজির । ওকে দেখে একটু অবাক হলাম । এর আগে কখনও ওকে শাড়িতে দেখি নি ।

কালো ব্লাউজের সাথে কালো শাড়ি আর কপালে কালো বড় একটা টিপ । আমি খানিকটা সময় ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম এক ভাবেই । নীলু একটা কালো পাঞ্জাবী আমার দিকে এগিয়ে বলল

-নাও এটা পর ।

-কার এটা ?

-তোমার জন্য কিনেছি । নাও জলদি পরো এখন । আজ তোমার সাথে আমি বৃষ্টিতে ভিজবো ।

কালো পাঞ্জাবী পরে বৃষ্টি নেমে পড়লাম । বৃষ্টির ফোটা গুলো কেমন সিরসরে অনুভূতি জাগাচ্ছিল মনে । কালো শাড়ি পরা নীলু আমার আগে আগে হাটছিল । একটা সময় আমার কাছে এসে আমার হাতটা ধরল । আমার দিকে তাকাল গভীর ভাবে ! নীলুর ঐ গভীর দৃষ্টিতে কি ছিল জানি না আমার পুরো পৃথিবীটা যেন এলো মেলো হয়ে গেল ।

সেদিন ঠিক কি করেছিলাম আমার আজও ঠিক মনে পড়ে না । কি এক ঘোরের মধ্যে ছিলাম ।

কেবল এই টুকু মনে আছে ওকে খুব গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরেছিলাম । আর পাগলের চুম খেয়েছিল ওকে ! বৃষ্টির জলে যেন দুজন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলাম ।



-কি হল ভিজবে না বৃষ্টিতে ?

-না ভিজবো না ।

-কেন ? চল না একটু বৃষ্টিতে ভিজি !

-তুমি ভিজো ।

-তুমি না ভিজলে আমি কিভাবে ভিজি ?

-সেদিন কিভাবে ভিজেছিলে ?

হঠাৎ আমার কন্ঠস্বর তীব্র হয়ে ওঠে ।

-কেন সেদিন ভিজেছিলে ?

আমি আবার জানতে চাই চিৎকার করে ।

কোন জবাব আসে না ।



নীলুকে তার কিছুদিন পরেই বিয়ে করে ফেলি । ওকে আর কিছু ভাল লাগতো না তখন । একটা পলক না দেখলে কেমন জানি অস্থির লাগতো । বিয়ের পর আমাদের জীবনটা আরো সুন্দর হয়ে ওঠে । দুজন দুজনকে একটা পলকের জন্য চোখের আড়াল করতাম না ।

একসাথে ভার্সিটি যেতাম একসাথে আসতাম । একসাথে খেতাম , একই প্লেটে খেতাম , গোসল করতাম একসাথে বিকেল হলে ওর সাথে ছাদে ছোটা ছুটি করতাম ।

ওর ছেলেমানুষী যেন আরো বেড়ে গেল । আগে বৃষ্টি হলেতো কেবল ও একা ভেজার জন্য লাফাতো তখন আমাকেও ভিজতে হত ওর সাথে ।

বৃষ্টির প্রতি এমন পাগলামো দেখে মাঝে মাঝে বিরক্ত হতাম । বিরক্ত হওয়ার প্রধান কারন টা হল প্রত্যেকবার বৃষ্টি ভেজার পরই ওর জ্বর আসতো । মাঝে মাঝে তো জ্বর গায়ে নিয়েও বৃষ্টিতে নেমে পড়ত । তখন খুব চিৎকার চেচামেচি করতাম । কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হত না ।

ঐ দিন ঠিক একই কাজটা করেছিল । নীলুর গায়ে আগে থেকেই দুদিনের জ্বর ছিল । রাত তখন বারটা কি সাড়ে বারটা হবে । সারাদিন ক্লাস নিয়ে বেশ ব্যস্ত ছিলাম । বিকেল বেলা আবার নীলুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে ছিলাম । ডাক্তার বৃষ্টিতে ভিজতে সাফ মানা করে দিয়েছে ।

তবুও নীলু আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে বলল

-এই বাইরে না খুব সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে । চল না একটু বৃষ্টিতে ভিজি !

ওকে ধমক দিলাম । ডাক্তার কি বলেছে মনে করিয়ে দিলাম । চুপচাপ ঘুমাতে বলে নিজেও ঘুমিয়ে পড়লাম ।

সকাল বেলা বাথরুমে ভেজা কাপড় দেখে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । তারমানে রাতের বেলা ও আমাকে না জানিয়েই বৃষ্টিতে ভিজেছে । মেজাজটা খারাপ হল ।

নীলুকে বকার জন্য শোবার ঘরে গিয়ে দেখি নীলু প্রায় অজ্ঞান হয়ে বিছানায় পরে আছে । ওর গায়ে আকাশ পাতাল জ্বর ।

কি করবো কিছুই বুজতে পারছিলাম না । জ্বল পট্টি দিয়েও কাজ হচ্ছিল না ।

জ্বর কমছিল না কিছুতেই । উপায় না দেখে ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম । স্ট্রাচারে যখন ওকে আইসিইউতে নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন অল্প ক্ষনের জন্য ওর হুস ফিরেছিল । আমি তখন ওর হাত ধরা । ও ফিসফিস করে বলল

-আমার উপর রাগ রেখো না কেমন ! তোমার কথা শুনিনি বলে আমার উপর রাগ রেখো না ।

-তোমার উপর কখনও রাগ করেছি আমি বল ?

-তুমি ভাল থেকো ।

আমি আর কথা বলতে পারলাম না । নার্সরা ওকে আইসিইউ এর মধ্যে নিয়ে গেল । আমি শেষ বারের মত ওর চোখে জল দেখতে পেলাম ।



- কই চল । বৃষ্টি শেষ হয়ে যাবে তো ?

-আমি ভিজবো না ।

-প্লিজ চল না !

আমি চুপ করে থাকি । কেন জানি আমার কান্না আসে !

-কই চুপ করে আছো কেন ? চল ! ঐ কালো পাঞ্জাবীটা পরো । কাবাডের বাম পাশের ড্রায়ারে আছে ।

ওকে কথা দিয়েছিলাম ওর উপর রাগ করে থাকতে পারি না । ও ভাল থাকতে বলেছিল কিন্তু আমি ভালও থাকতে পারছি না ওকে ছাড়া ।

আমি কালো পাঞ্জাবীটা পরে নিই । বৃষ্টির ফোটা আমার মনে আজও কেমন একটা শিহরন জাগায় ! যেন ও এখনও আমার পাশে বৃষ্টিতে ভিজছে । ওর খুব পছন্দের বৃষ্টি ।

মন্তব্য ২৮ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (২৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:১৮

রাতুল_শাহ বলেছেন: পরে পড়ব।

জমার খাতায় জমা রাখলাম।

১১ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:১৯

অপু তানভীর বলেছেন: রাখেন :P :P :P

২| ১২ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ৩:১১

ডিএন বলেছেন: পরলাম কিন্তু আমি বৃষ্টি একেবারে অপছন্দ করি ভাই B-)) B-)) । অনেক ভাল লিখেছেন । ভালো লাগল +++++++++++
ভালো থাকবেন

১২ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:৫৩

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ । কিন্তু বৃষ্টি কেন পছন্দ করেন না ভাই ??

৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০১২ ভোর ৪:২০

মুনসী১৬১২ বলেছেন: মন আকাশ
জমাট কাজল
ফোটা ফোটা কষ্টগুলো
ঝরছে অবিরল

সুখচিত্র বিষাদ পালে
ভাসে মন সরোবরে
রেখে যাওয়া সময় ডায়রি
পড়ে যাই বারেবারে


১২ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:৫৪

অপু তানভীর বলেছেন: রেখে যাওয়া সময় ডায়রি
পড়ে যাই বারেবারে

দারুন!!

৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০১২ ভোর ৪:৫৮

ফারিয়া বলেছেন: আপনার লেখাগুলো এত সুন্দর করে লেখেন, সুন্দর বলতেই হয়!

১২ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:৫৭

অপু তানভীর বলেছেন: আমি যে কয়জনের লেখা পড়ি তার মধ্যে আপনি একজন । আপনার ভাল লেগেছে, এটা জেনে সত্যি আমার অনেক ভাল লাগল । :) :) :)

৫| ১২ ই এপ্রিল, ২০১২ ভোর ৫:০৯

কখনো মেঘ, কখনো বৃষ্টি বলেছেন: আমার মাঝে রোমান্টিকতা ভীষন রকমের কম। বৃষ্টি দারুন অপছন্দ।

অথচ, এই বৃষ্টিমাখা স্নিগ্ধ লেখাটা পড়ে আমার চোখে সত্যি পানি চলে আসছে।

"আমি বৃষ্টি দেখেছি
বৃষ্টির ছবি একেঁছি
আমি রোদে পুড়ে ঘুড়ে ঘুড়ে অনেক কেঁদেছি
আমার আকাশ-কুসুম স্বপ্ন দেখার খেলা থামেনি
শুধু তুমি চলে যাবে, আমি স্বপ্নেও ভাবি নি!"

১২ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১১:০১

অপু তানভীর বলেছেন: আপনি বিশ্বাস করবেন কি না জানি না অন্জন দত্তের এই গান টা আমার অনেক অনেক প্রিয় । গত কাল এই গানটা শুনে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল । তখনই আমি গল্পটা লিখলাম ।

আপনার চোখে পানি আনানোর জন্য দুঃখিত ।

"আমি বৃষ্টি দেখেছি
বৃষ্টির ছবি একেঁছি
আমি রোদে পুড়ে ঘুড়ে ঘুড়ে অনেক কেঁদেছি
আমার আকাশ-কুসুম স্বপ্ন দেখার খেলা থামেনি
জবাব দিন|মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
শুধু তুমি চলে যাবে, আমি স্বপ্নেও ভাবি নি!"

৬| ১২ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৮

মাহী ফ্লোরা বলেছেন: এত দারুন একটা লেখা। ভাইয়া আমি তো আপনার ভক্ত হয়ে গেছি।

১২ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১১:০২

অপু তানভীর বলেছেন: আমি আপনার লেখার অনেক ভক্ত । :) :) :) :)

৭| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ২:৫৯

ShusthoChinta বলেছেন: আমার কাছে এটা আপনার সেরা গল্প।
এইসব ছোটগল্পের একটা সংকলন বের করে ফেলুন না,দারুন হবে!

১৬ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৩:১১

অপু তানভীর বলেছেন: এ গল্পটা আমি যখন লিখি তখন আমার মন খারাপ ছিল । এটা আমারও অনেক প্রিয় গল্প ।
ছোটগল্পের একটা সংকলন যে বের করবো টাকা পাবো কই বলেন ??

৮| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৯

খুশবু বলেছেন: :(

১৬ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ৮:২৪

অপু তানভীর বলেছেন: :( :( :( :(

৯| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৫:১০

রাশান শাহরিয়ান নিপুন বলেছেন: এইডা ভালো হয় নাই। আনন্দ+মজার জন্য ব্লগে আসি। কিন্তু পোস্ট পড়ে যদি মন খারাপ হ্য়ে যায়, তাইলে আর কি লাভ?

২৭ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ৯:০৬

অপু তানভীর বলেছেন: সব সময় যদি আনন্দের মধ্যে থাকলে আনন্দের মজাটা থাকে না । আনন্দটা কেমন পানসে হয়ে যায় । তাই মন খারাপেরও দরকার আছে । তবুও আপনার মন খারাপ করিয়ে দেবার জন্য সরি ।

১০| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:০৭

রাশান শাহরিয়ান নিপুন বলেছেন: :( :( :( ইটিজ উখে।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ২:২৮

অপু তানভীর বলেছেন: :) :) :) :)

১১| ২৫ শে মে, ২০১২ দুপুর ২:২৫

সালমাহ্যাপী বলেছেন: এক নিঃশ্বাসে পড়ে গেলাম ।খুব খুব খুব বেশি সুন্দর হয়েছে।

ধুর গল্পটা পড়ে মনটাও খারাপ হয়ে গেল :(

২৫ শে মে, ২০১২ দুপুর ২:৩৫

অপু তানভীর বলেছেন: সালমাহ্যাপী আপনার নামটা হ্যাপী, আপনি দুঃখি হইলে কিভাবে চলবে??

১২| ১৮ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:৪৮

একজন আরমান বলেছেন: ভাইয়া আমার চোখে জল....

২৪ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:০৮

অপু তানভীর বলেছেন: গল্পটা আামর অনেক পছন্দের । নিজে যখন পড়ি নিজেই সিক্ত হয়ে পড়ি !!

১৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:৩২

আমি তুমি আমরা বলেছেন: :(( :(( :((

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:১১

অপু তানভীর বলেছেন: :( :( :(

১৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২১

শান্তির দেবদূত বলেছেন: এত খারাপ লাগল লেখাটা পড়ে! এত চমৎকার রোমান্টিক একটা লেখার ফিনিসিং এত ট্রাজিক কেন হলো!! অদ্ভুত লেখা !! হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হলো!!

এত ভালো একটা লেখায় এত কম রেসপোন্স!! অবাক হলাম।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৯

অপু তানভীর বলেছেন: এটা আমার লেখা গুলোর ভিতর সব থেকে কষ্টের লেখা ! আমার অসম্ভব পছন্দের একটা লেখা ! যতবার আমি এই লেখাটা পড়ি মন খারাপ হয় !
মন বিষন্ন হয় !
খুব বিষন্ন সময়ে লেখাটা লিখেছিলাম !
লেখাটা পড়লে সেই বিষন্ন সময়টাতে ফিরে যাই !!

ধন্যবাদ ! :):):)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.