নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

অহিন অথবা একটি অসমাপ্ত গল্পের সমাপ্তি

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:১৬

আহিন যেন একটু মোটা হয়েছে ! আমি আবার দেখলাম ভাল করে !

হুম ! অহিন না হয়ে যায় না ! কিন্তু এখানে কি করছে ?

বেড়াতে এসেছে ?

হতে পারে !

একবার মনে হল যাই ওর সাথে গিয়ে কথা বলি । মেয়েটার সাথে কত দিন পরে দেখা হল ।

পাঁচ বছর ?

হুম ! পাঁচ বছরের বেশি তো হবেই ! সেই সময়ে অহিন কত টুকু একটা মেয়ে ছিল ! ইন্টারমিডিয়েটে পড়তো ! এখন নিশ্চই পড়ালেখা শেষ ! বিয়ে টিয়েও মনে হয় করে ফেলেছে !

যাবো নাকি ?

নাহ !

হঠাৎ করেই যেন মনটা বিদ্রোহ করে উঠল ! পুরানো সব কথা যেন মনে পড়ে গেল চট করেই । এই মেয়েটার জন্যই আজ আমি এখানে ! এই মেয়েটার জন্য আমি আমার জীবনের সব থেকে মূল্যবান সম্পদটা হারিয়েছি !

কেবল এই মেয়েটার জন্য !



আমি ঘুরে উল্টো পথে হাটা দিলাম ! আর এখানে থাকা যাবে না ! এখনই বাংলো তে ফিরে যেতে হবে ! এই মেয়েটার সামনে পরা যাবে না !



-স্যার আজকে পড়বো না !

-কেন ? পড়বে না ? তাহলে আমি আসলাম কেন ?

অহিন আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো একটু ! আমি মনে মনে একটু হতাশ হলাম ।

নাহ ! আল্লাহ এই মেয়েটাকে সব সৌন্দর্য যেন একসাথে দিয়ে দিয়েছে । অহিনকে যে কেউ দেখলে সবার আগে তার কেবল মনে হবে এই মেয়েটা এতো সুন্দর কেন ?

আমি শান্ত কন্ঠে বললাম

-আমি তাহলে যাই !

অহিন আমার কথা শুনে যেন আঁতকে উঠলো । বলল

-যাই মানে ? কোথাও যাওয়া চলবে না ! আজকে আমার জন্য নতুন গাড়ি কেনা হয়েছে ! আমি এখনও চড়ি নি । আপনার জন্য অপেক্ষা করছি ! দুজন এক সাথে চড়বো বলে !

আমি একটু বিভ্রান্ত বোধ করলাম ! অহিনের কথা বার্তা ইদানিং যেন কেমন মনে হচ্ছে ! কেমন একটু সন্দেহ জনক ! মেয়েরা নতুন প্রেমে পরলে যেমন টা হয় ঠিক তেমন ! লক্ষন এদিক ওদিক গেলেই এই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে ! মান সম্মানের প্রশ্ন !

অহিন আবার বলল

-চলেন স্যার !

-আরে ! আমি কেন ? দেখ আমার গাড়িতে চড়তে একদম ভাল লাগে না !

-না না ! আমি কোন কথা শুনতে চাই না ! আপনাকে যেতেই হবে !



যতই না না করলাম । খুব বেশি লাভ হল না ! অহিন খানিকটা একরোখা টাইপের মেয়ে । বড়লোক বাপের মেয়েতো ! সারা জীবন যা চেয়েছে তাই পেয়েছে ! না শুনে খুব বেশি অভ্যাস নাই ! আমাকে যখন রাজি করাতে পারলো না তখন ওর মাকে নিয়ে এল ! আর যাই হোক অহিনের মার কথা আট ফেলতে পারলাম না ! যেতেই হল ।





অসময়ে বাংলোতে ফিরে এলাম ! কেমন জানি একটু একা একা লাগছিল । অবশ্য আমি একাই ! কিন্তু আজকে কেন জানি আরো বেশি একা একা লাগছে ! নিশিকে কেন জানি আজকে বেশি করে মনে পড়ছে !

নিশি সেদিন আমাকে কেবল বলেছিল আমি যেন অহিনকে ক্ষমা করে দেই ! মেয়েটার উপর রাগ রেখে কি লাভ !

সত্যি কি তাই ?

রাগ রেখে লাভ নাই ?

আমি জানি না ! কিন্তু আমার মন ওকে ক্ষমা করে দেয় নাই ! আমি ভুলে যেতে পারি নাই !

নিশি আমাকে প্রায়ই বলত

-দেখ তোমাকে ভালবাসি এটা নিয়ে তো তোমার কোন সন্দেহ নাই ! আছে ?

আমি খানিকটা অবাক হয়ে বলতাম

-আরে সন্দেহ থাকবে কেন ?

-তাহলে তুমি মাঝে মাঝে এমন কথা কেন বল ?

-কেমন কথা ?

-এই যে আমাকে বিয়ের কথা ! আমাকে বিয়ে না করতে পারলে জীবনে আর বেঁচে থাকবে না !

আমি কোন কথা না বলে কেবল চুপ করে থাকতাম !

নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলত

-দেখ ! তোমাকে আমি ভালবাসি ! আর সব সময়ই ভালবাসবো ! এটা কোন দিন বদলাবে না ! কিন্তু ভাগ্য বলে একটা কথা আছে ! এটা তোমার মেনে নিতে হবে ! নিতেই হবে ! এটার কোন বিকল্প নাই !

-তুমি কি বলতে চাও ? তোমার বিয়ে হয়ে যাবে আর আমি সেটা চুপচাপ মেনে নিবো ?

-আরে বাবা ! ভাগ্যের সাথে কে যাবে বল ?

এই একটা নিষয় নিয়েই নিশির সাথে আমার প্রায়ই বাঁধতো ! তবুও আমরা সুখেই ছিলাম !

কিন্তু বেশি দিন সুখে থাকতে পারি নি !!



ফোন বাজছে !

তন্ময় হয়ে পুরানো কথা গুলো ভাবছিলাম !বাস্তবে ফিরে এলাম । আমি মোবাইল তুলে দেখি অপরিচিত নাম্বার !

একটু অবাক হতে হল ! আমার কাছে খুব বেশি অপিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে না বললেই চলে ! তাহলে ?

অফিস থেকে নাকি ?

আমি ফোন রিসিভ করলাম !

-হ্যালো ?

-অপু ? কেমন আছো ?

আমি খানিকটা চমকে উঠলাম ! এতো বছর পরে লোকটার গলার আওয়াজ আমি একটুও ভুলতে পারি নি ! আশ্চর্যের ব্যাপার !



আমি বললাম

-ভাল আছি ! আপনার শরীর ভাল ?

-এই আছি কোন রকম ! এখন বয়স হয়েছে তো !

আমি চুপ করে থাকি ! কেন জানি এই লোকটার সাথেও আমার কথা বলতে মন চাচ্ছে না !

-অহিন গেছে তোমার ওখানে ?

একবার ভাবলাম বলি যে আমি তো জানি না ! কিন্তু পরে মনে হল থাক মিথ্যা বলে লাভ নাই !

আমি বললাম

-হ্যা ! দেখলাম ওকে ! বেড়াতে এসেছে মনে হয় !

একবার মনে হল জিজ্ঞেস করি আপনি আমার খবর কিভাবে পেলেন অথবা আমার ফোন নাম্বার কোথায় পেলেন ! কিন্তু পরে মনে হল থাক ! এই কথা জিজ্ঞেস করে লাভ নাই ! উনি এমনিতেও বেশ ক্ষমতাবান মানুষ ! যাদের টাকা আছে তাদের কাছে কোন কিছুই জানা অসম্ভব না !



অহিনের বাবা আসলেই বেশ ক্ষমতাবান মানুষ ! ওদের বিশাল বাড়িয়ে যখন পড়াতে যেতাম তখন আসলেই নিজেকে বড় ক্ষুদ্র মনে হত ! মাঝে মাঝে অহিনের বাবা আসতো মেয়ের কাছে ! সব সময় একটা কর্তৃত্বের ভাব ছিল ওনার চেহারায় !

অহিনের বাবার একটা বড় বৈশিষ্ট ছিল যে নিজের সিদ্ধান্ত অপরের উপরে চাপিয়ে দেওয়া ! তার আসে পাশের মানুষ গুলোও এমন টা মেনে নিয়েছে দেখতাম !

ঐ যে বললাম না খুব বেশি টাকা থাকলে যা হয় !



একদিন অহিন কে পড়িয়ে আমি বাসায় যাবো এমন সময় অহিনের বাবা আমাকে ডাক দিলেন ! আমি ভাবলাম আবার কি না !

তিনি আমাকে নিয়ে তার স্টাডি রুমে বসলেন ! তারপর দরজা বন্ধ করে দিলেন । আমি একটু ভয়ই পেলাম ! নিশ্চয় কোন সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলবেন ! এমন কিছু যে আমাকে টিউশনীটা ছেড়ে দিতে বলবেন !

তাহলে একটু বিপদেই পরবোই !

আমার খরচের বেশ খানিকটা এই টিউশনীর টাকা থেকেই আসে ! এটা চলে গেলে আমি একটু বিপদেই পড়বো !

আমাকে বসিয়ে অহিনের বাবা বললেন

-তোমার পড়া শুনা শেষ হতে আর কত বাকি ?

-এই আর বছর খানেক !

-পাড়া লেখার পরে কি করবে কিছু ঠিক করেছ ?

-নাহ ! এখনও করি নি !

-বিয়ে শাদীর কথা ?

আমি এবার একটু অবাক হলাম ! এই লোক আর যাই হোক আমার বিয়ের কেন খোজ নিচ্ছেন ?

আমি বললাম

-এসব তো এখন চিন্তাই করি নি ! বিয়ে করার জন্য তো আগে ভাল একটা জব দরকার ! তাও সেটা তো আসবে আরো পরে !

-আমি যদি তোমাকে জব দেই !

আমি এইবারও ঠিক বুঝতে পারলাম না ওনার কথা ! আমি আসলেই কিছু বুঝতে পারছিলাম না !

আমি বললাম

-আসলে আমি আমি ঠিক বুঝতে পারতেছি না আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন !



অহিনের বাবা একটু সময় কি যেন ভাবলেন ! তারপর বললেন

-দেখ ! তুমি বুদ্ধিমান ছেলে ! তুমি নিশ্চই নিজের ভাল মন্দ বুঝবে ! যাই হোক তোমার সাথে সরাসরিই কথাটা বলি !

-জি বলুন !

-অহিন তোমাকে খুব পছন্দ করে ! আমার আর অহিনের মায়েরও আপত্তি নাই ! ছেলে হিসাবে তুমি ভাল ! আমি চাই তোমাদের বিয়েটা তাড়াতাড়ি হয়ে যাক !

আমি আবারও অবাক হয়ে ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে রইলাম ! এই লোক কি বলছে আমি কানে ঢুকছে না ! আমি কেবল বললাম

-আমার পক্ষে অহিন কে বিয়ে করা সম্ভব না ! অহিন মেয়ে হিসাবে খুব ভাল কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব না !

ভদ্রলোক কিছুক্ষন আমার দিকে চুপ করে তাকিয়ে রইলো ! তারপর বলল

-দেখো ! আমি আমার মেয়েকে খুব আদর আর যত্নের মানুষ করেছি ! ওর কোন ইচ্ছা আমি কোন দিন অপূর্ন রাখি নি !

এই কি ধরনের কথা হল আমি ঠিক বুঝলাম না ! উণি কি আমাকে ফোর্স করছেন ?

আমি বললাম

-আজকে আমি তাহলে যাই ! রাত হয়ে যাচ্ছে ! দেরি করলে আবার বাস পাবো না !

আমি দরজা দিয়ে বের হতে যাবো ঠিক তখনই অহিনের বাবা আমাকে বলল

-তুমি যার জন্য আমার মেয়েকে ছেড়ে যাচ্ছ সে কিন্তু কোন অংশের নিহিনের সমকক্ষ নয় !

আমার এই কথাটা কেন জানি একটুও পছন্দ হল না ! ঘরে কিছু বলতে যাবো এমন সময় দরজায় কড়া নড়লো ! আমি নিজেই দরজা খুলে দিলাম ! অহিনের মা !

আমি আর কিছু বললাম না !



তারপর থেকে অহিনকে আর পরাতে যাই নি !



-শুনছো ?

-জি আঙ্কেল বলেন !

-অহিন গেছে না তোমার ওখানে ?

-জি ! এসেছে !

-একটা কথা বলবো বাবা ?

-জি বলেন !

-তুমি আমার উপর রাগ রেখ না বাবা ! আমি কেবল আমার মেয়েকে খুশি রাখতে চেয়েছি ! আর কিছু না ! একজন বাবা হিসাবে আমি কেবল আমার মেয়ের কথা চিন্তা করেছি ! আমার ভুল হয়েছে যে আমি তোমার কথা চিন্তা করি নি !

আমি চুপ করে রইলাম !

আমি নিজেও ভেবেছি কথা গুলো ! হয়তো উনি কেবল নিজের মেয়ের কথাই ভেবেছেন ! আর কারো কথা চিন্তা করেন নাই !

কাজটা কি উনি ঠিক করেছেন ?



নিশির সাথে প্রায় বিলেকে আমার দেখা হত !ও ক্লাস করে বের হত আমি হাজির হতাম ওর সামনে ! কিন্তু পরপর এক সপ্তাহ নিশির কোন খোজ নাই ! সপ্তাহ পরে নিশির দেখা পেলমাম !

অন্য দিনের থেকেও আজকে কেমন মুখটা ওর গম্ভীর ! আমার পাশে বাসার পরেও কেমন আমার দিকে তাকালো না ! অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো !

আমি ওর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর হাতে চমৎকার মেহেদি দেওয়া !

আমি ওর হাত ধরতে ধতে বললাম

-আরে ! চমৎকার মেহেদি দিয়েছো তো ?

নিশি কোন কথা বলল না !

আমার ওর হাতের মেহেদি সব সময়ই খুব পছন্দ ! আমি বার বার বলে কয়েও ও ঠিক মেহেদি দিতে চায় না ! আজকে দেখি আমার না চাইতেই দিয়েছে !

আমি খুশি হয়ে গেলাম ! বললাম

-এই চল আজকে তোমাকে নান্নায় বিরানী খাওয়াবো ! আমার জন্য হাতে মেহেদি দিয়েছ এই জন্য !

নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-আমি তোমার জন্য মেহেদি দেই নি !

আমি হাসতে হাসতে বললাম

-তাহলে ? এটা কি তোমার বিয়ের জন্য দেওয়া ?

-হুম !

-হুম ?

আমার মনে হল নিশি আমার সাথে ইয়ার্কি মারতেছে !কিন্তু যখন ওকে কাঁদতে দেখলাম তখন আমি একটা কথাও আর বলতে পারলাম ! একটা কথাও মুখ দিয়ে বের হল না ! কেবল মনে হচ্ছিল যে আমি একটা দুঃস্বপ্ন দেখছি খুব জলদিই শেষ হয়ে যাবে ! আমার ঘুম ভেঙ্গে যাবে !

কিন্তু আমার ঘুম আর ভাঙ্গলো না !

নিশি বলে গেল যে খুব জলদি নাকি ওকে দেখতে এসেছে ! দেখতে এসেই পছন্দ আর ঐ দিনই বিয়ে হয়ে গেছে ! ছেলে হাসান টেক্সাইলে জব করে করে ?

আমি আবার চমকে উঠলাম !

হাসান টেক্সাইল ?

অহিনের বাবার নাম জাহুদুল হাসান ! হাসান গ্রুপের মালিক ! হাসান টেক্সাইল ওনারই প্রতিষ্ঠান ?

নিশি আরও কথা বলল কিন্তু আমার মাথার ভিতর আর কিছুই যেন ঢুকছিল না ! আমার কাছে সব একবারে পরিস্কার হয়ে গেছিল !



নিশি চলে যাওয়ার পরেও আরো অনেক্ষন বসে রইলাম ! এতো দিন পরে নিজেকে কেমন খুব নিঃসঙ্গ লাগলো ! খুব বেশি একা মনে হল ! মনে হল যেন আমার আর কিছুই নাই ! কেউ নাই ! আমি বড় একা !

আর আমাকে একা আর নিঃসঙ্গ বানানোর পেছনে কেবল ঐ অহিন দায়ী !

আর কেউ না !





-তুমি অহিনের সাথে কথা বল নি তাই না ?

আমি আবারও কিছু সময় চুপ করে রইলাম । আসলেই ! আমি তো অহিনের সাথে কথা বলি নি !

আমি বললাম

-জি না বলি নি !

-একটা কথা তোমাকে বলি আমি যা করেছি এতে অহিন জড়িত ছিল না ! ও জানতোও না !

আমি চুপ করে রইলাম ! অহিনের বাবা বলল

-তুমি তো সেদিন সব কথা অহিনকে বলে চলে গেলে ! ঐ দিনের পরে মেয়েটা আমার কেমন যেন হয়ে গেল ! কারো সাথে ঠিক মত কথা বলে না ! হাসেও না ! আর বিশেষ করে আমার সাথে কথা বলে না !

আমি তবুও চুপ করেই রইলাম !



ঐ দিনের পরের দিনই আমি অহিন কে ফোন করে ডেকে আনি ! আমার ফোন পেয়ে তো অহিন খুব খুশি মনেই হাজির হল ! আসলে ও ভেবেছিল হয়তো আমি ওকে কিছু বলবো !

যেদিন থেকে অহিন কে পড়ানো বাদ দিয়েছি সেদিন থেকে অহিনের ফোন প্রায়ই আসতো ! আমার সাথে দেখা করতে চাইতো ! আমি সব সময় এড়িয়ে যেতাম ! কিন্তু আজকে আমার ফোন পেয়ে অহিন যেন একবারে উড়ে চলে এল !

আমি ঐ দিন অহিনের সাথে খুব কখারাপ ব্যবহার করেছিলাম । আসলে আমার মাথা খারাপ ছিল ! আমার তখন কেবল একটা কথাই মনে হচ্ছিল যে আমার সামনে দাড়ানো এই মেয়েটার জন্যই আমি আমার নিশিকে হারিয়েছে ! এই মেয়েটার জন্য !

অহিন কেবল আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল ! রাস্তা দিয়ে মানুষ জন যাচ্ছিল তারাও আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখছিল !

অহিনের চোখ দেখে মনে হচ্ছিল যে আমি এমন কথা যে ওকে বলতে পারি এটা ঠিক ওর বিশ্বাস হচ্ছে না !

একদম শেষে বললাম

-তুমি যেই উদ্দেশ্যে এইটা করেছে সেইটা কোন দিন পুরন হবে না ! আমি জীবনেই তোমাকে বিয়ে করবো না ! জীবনেও না ! যদিও বিয়ে করার জন্য কোন মেয়ে না খুজে পাই তবুও তোমার মত মেয়েকে বিয়ে করবো না !





-আমার মেয়েটা ঐ দিনের পর থেকে আমার সাথে আর একটা কথাও বলে নি ! একটা কথাও না !

হঠাৎ আমার মনে হল অহিনের বাবা মনে হয় কাঁদছেন !





আমি তারপর একদম গায়েব হয়ে যাই ! কারো সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ রাখতাম না ! অনার্স শেষ হওয়ার পরে ইন্ডিয়া চলে যাই ! ওখান থেকে এমবিএ পড়ি ! দেশে আসার পরে এই খানে জয়েন করি ! এতো দিন ভালই ছিলাম !



-আমি এতোদিন তোমাকে অনেক খুজেছি ! কিন্তু কোথাও পাই নি ! এই তো গট সপ্তাহে পেলাম ! জানো অহিন এই খবরটা শোনার পর থেকে একটু স্থির থাকে নি ! তোমার সাথে দেখা করার জন্য ওর ভিতরে এখন ওর ভিতরে যে একটা আকুলতা .......

অহিনের বাবা আরো কিছু বলতে গেছিল কিন্তু বলতে পারলো না !

তিনি আসলেই মনে হল কাঁদছে ! আমি কি বলে শান্তনা দিবো ঠিক বুঝতে পারছি না !

-বাবা ! তুমি আমার মেয়েটাকে মাফ করে দিও ! ওর মুখে একটু হাসি ফুটাও ! আমি আর কিছু চাই না তোমার কাছে ! দেখো আমার কত টাকা ! কত ক্ষমতা কিন্তু তবুও আমি আমার আদরের মেয়ের মুখে একটুও হাসি ফুটাতে পারছি না ! কতটা অসহায় আমি ! এই অসহায় বাবার একটা কথা ....



আসলেই আমি কি করবো ?

নিশি আমাকে এই কথা বলছিল ! ভালবাসার জন্য মানুষের সব কিছু করতে পারে ! অনেক অন্যায় করে ফেলে ! তখন তার মনে ভাল খারাপ আর কোন কথা আসে না ! এটাকে দোষ ধরে রেখো না !

মেয়েটাকে আর কষ্ট দিও না !





পরদিন অফিসে গিয়ে দেখি অহিন চা বাগানের ভিতরে ঘোরাঘুড়ি করছে ! একা একাই । নিজের কেবিনে বসে রইলাম চুপ করে ! গত কালের কথা গুলো বারবার মনে পড়ছিল !

আমার মেয়েটা আর হাসে না !

আর কারো সাথে কথা বলে না !

এর জন্য কি আমি দায়ী ? একজন তো একজন কে পছন্দ করতেই পারে ! তাকে চাইতেই পারে !

আমি ঐ দিন কার কথা আবার ভাবতে লাগলাম ! অহিন সেদিন খুব আনন্দ নিুয়ে এসেছিল আমার সাথে দেখা করতে ! কিন্তু আমি যখন ওর সাথে খারাপ ব্যাব হার শুরুর করি ও কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল ! কাঁদতেও ভুলে গিয়াছিল মেয়েটি ! জানি না বাসায় গিয়ে কেঁদেছে কি না ?



আমি বয়কে বললাম অহিন কে ডেকে আনার জন্য ! আর কিছু না বলি অন্তত কিছু কথা বলা যাক !

বয় আমাকে এসে বলল যে সেই মেম সাহেব চলে গেছে !

চলে গেল কেন ?

রাগ করে ?



বিকেল বেলা বাসায় গিয়ে দেখি অহিন আমার বাংলোর বারান্দায় বসে আছে ! আামকে দেখে উঠে দাড়ালো ! আমি ওকে দেখে খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে হয়ে গেলাম ! দেখলাম ও নিজেও তাই হল !

ওকে বললাম

-কেমন আছো ?

-আছি !

কোন রকম মাথা নিচু করেই জবাব দিল ! আগের মত আর সেই প্রাণ চঞ্চলতা নাই !

আমি বললাম

-এখানে ?

-আপনি তো আর আসবেন না ! তাই নির্লজ্জের মত আমাকেই আসতে হল !



আমি কথা হারিয়ে ফেললাম ! মেয়েটা আসলে কি বলতে চায় !

নাহ ! আম তো জানি মেয়েটা কি বলতে চায় ! আমি ওকে বসতে বলে ভিতরে চলে গেলাম !

ফ্রেস হয়ে যখন ফিরে এলাম তখন অহিন চা খাচ্ছে !

আমি বসতে বসতে বললাম

-কবে এসেছ ?

অহিন আমার দিকে একটু তাকিয়ে বলল

-আপনি ভাল করেই জানেন আমি কবে এসেছি !

তাই তো আমি তো ভাল করেই জানি ও কবে আসেছে ! কি বাচ্চাদের মত প্রশ্ন করতেছি !

দুজনেই চুপ করে রইলাম কিছুক্ষন ! অহিন চুপচাপ চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই গেল ! আমি ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম ! এই মেয়েটা আজকে আমাকে কি বলতে এসেছে ?

নাকি কেবল চা খেতেই এসেছে !

আমি অহিনের চা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থাকি !

আচ্ছা আজকে কি অহিনের কাছে সরি বলা উচিৎ ? মেয়েটার তো দোষ নাই ! আমি তো ওর সাথে খারাপ ব্যব হার করেছিলাম ! এই জন্যই হয়তো মেয়েটা আজ এমন চুপচাপ হয়ে গেছে ! ওর বাবা তো তাই বলল !

আমি বললাম

-বিয়ে কর নি কেন ?

-আপনিও তো করেন নি !

-আমার কথা আলাদা ! যাকে চেয়েছিলাম তাকে পাই নি ! তাই অন্য কাউকে ভালবাসতে পারি নি এখনও !

অহিন আমার দিকে আবারও কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো ! তারপর বলল

-আমার ক্ষেত্রেও তাই ! যাকে চেয়েছিলাম তাকে পাই নি ! তাই অন্য কাউকে ভালবাসতে পারি নি এখনও !

আমি আবারও কথা হারিয়ে ফেললাম ! অহিন বলল

-জানেন, আমি ঐ দিনটার পরে আর একটা দিনও শান্তি পাই নি ! মানুষ মানুষকে এভাবে কষ্ট দিতে পারে আমি কোন দিন ভাবতেও পারি নি ! আমি কোন দিন আমার বাবাকে কিছু বলি নি ! নিজের পছন্দের কথা সব সময় নিজের ভিতরেই রেখেছিলাম ! আমার বাবা কি করেছে তার জন্য আপনি ....।

অহিন আর কিছু বলতে পারলো না ! চুপ করে গেল ! আমি দেখলাম ওর চোখ বেয়ে পানি পরতেছে !

আমি বললাম

-আসলে ঐ সময় আমার মাথা ঠিক ছিল না ! আই এম সরি !

অহিন উঠে দাড়ালো ! যাওয়ার সময় কেবল বলল

-এই সরিটা আর কিছু আগে বলা কি আপনার উচিৎ ছিল না ?



আমি চুপ করে বসেই রইলাম ! বসে বসে ওর চলে যাওয়া দেখলাম ! অহিন কি কেবল এই কথাটা টুকু বলার জন্যই এসেছিল আমার কাছে ! নাকি অন্য কিছু ! অহিন চোখের আড়াল চলে যাওয়ার পরেই আমার কেবল মনে হল ও হয়তো আর কিছু বলতে চেয়েছিল আমাকে ?

সত্যি কি বলতে চেয়েছিল ?



আমি কেন জানি বারান্দা থেকে নেমে অহিন যেদিকে গেছে সেদিকে হাটা ধরলাম ! এতোক্ষনে মনে হয় অনেক দুর চলে গেছে ! যাই হোক পাওয়া যাবে ওকে !

ঐ তো সামনে মোড় ঘুরলেই পাওয়া যাবে ! মোর ঘুরেই অহিনকে দেখতে পেলাম ! রাস্তার পাশে বসে মাথা নিচু করে আছে ! কাঁদছে !

আমি ওর পাশে বসে ওর মাথায় হাত দিলাম !

কি বলবো ভাবছি এমন সময় অহিন নিজেই জড়ানো কন্ঠে আমাকে বলল

-মানুষকে ভালবাসার অপরাধ কি এতো বড় ? এতো নিষ্ঠুর প্রতিদান পেতে হয় ?

ওর কন্ঠে কিছু একটা ছিল যে আমার বুকের ভিতরে কেমন করে একটা নাড়া দিল !

আমি ওর মাথায় হাত দিয়ে বললাম

-আচ্ছা ! যা হওয়ার হয়ে গেছে ! এটা চাইলেও এখনতো বদলাতে পারবো না আমরা !

আমি আরো কিছু বলতে যাবো যাবো ঠিক তখনই অহিন আমাকে জড়িয়ে ধরলো ! একটু পরে আমি ওর ফোঁপানোর আওয়াজ পেলাম !

জানি না কি করা উচিৎ ! কেবল মনে হল মেয়েটা হয়তো খামোখা কষ্ট দিয়েছি ! যে অপরাধ ও করে নি সেই শাস্তি ওকে দিয়েছি ! কিন্তু মেয়েটা আমাকে ভালই বেসে গেছে ! কষ্ট পেয়েছে তবুও !

আমিও আস্তে করে ওকে জড়িয়ে ধরলাম !











ফেবু লিংক

মন্তব্য ২৮ টি রেটিং +১২/-০

মন্তব্য (২৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৪

বটবৃক্ষ~ বলেছেন: আমিও আস্তে করে ওকে জড়িয়ে ধরলাম !

কেন!! আরেকটু জোরেই নাহয় ধরতেন!! :P :P ;)

এক নিমিষে গলপো শেষ!! হবেনা!! আরো ১০ পেইজ লিখতে হবে!!!!!!!নাইলে আন্দোলন হবে....

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:০৪

অপু তানভীর বলেছেন: হুম আরো একটু জোর্ব ধরা উচিৎ ছিল ! কিন্তু প্রথম বার তো তাই আস্তে করে ধরেছিল ! খুব জলদিই জোরে জড়িয়ে ধরবো !!

২| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৭

শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: বরাবরের মতোই অসম্ভব সুন্দর :) আচ্ছা,'অহীন'অর্থ কি?

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:০৫

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ !!
ঠিক জানি না ! আমি নিহিন থেকে অহিন বানিয়েছি :):)

৩| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৯

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ১ম ভললাগা...সুন্দর লিখেছে..সত্যিকারের ভালবাসা বিরল

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:০৬

অপু তানভীর বলেছেন: হুম ! আসলেই সত্যিকারের ভালবাসা বিরল !
ধন্যবাদ !!

৪| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৫১

এনোমালী বলেছেন: গলপো এত ছোটো হৈলো কেন ???

খেলুম না X(

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:০৭

অপু তানভীর বলেছেন: হায়হায় কন কি ? আমি সাধারনত যে গল্প লিখি এটা তার দ্বিগুন ! তাও বলেন ছোট ??
আমি যামু কই ??

৫| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৭

আতিকুল০৭৮৪ বলেছেন: সুন্দর।এই গল্পটা অন্য ধাচের।ভাল হয়েছে।

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:০৮

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ !! :):)

৬| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫২

নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: চমৎকার :D :D

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:০৯

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ !! :):)

৭| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪২

শ্রাবণ জল বলেছেন: ভাল লেগেছে ভাইয়া।

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১১

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ !!

৮| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:২৮

অহন_৮০ বলেছেন: চমৎকার হয়েছে ......... এই অহীন নাম টা কি আমার নিক দেখে অনুপ্রাণিত ;) ;) ;) ;) ;) ?

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১৭

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ !!

কি জানি !! হইলেও হইতে পারে !!

৯| ২৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:০৮

শায়মা বলেছেন: আহা তাই বলে তুমি নিশিকে ভুলে গেলে!!!!!


X(



খুব খারাপ

২৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:১৮

অপু তানভীর বলেছেন: কি কউ আপু ?? ভুলে গেলাম কই ??:(:(

১০| ২৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:১৪

ফজলে আজিজ রিয়াদ বলেছেন: ওরে প্রেম রে

২৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:২২

অপু তানভীর বলেছেন: হুম !! প্রেম !!

১১| ২৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ২:৫১

রুদ্র মানব বলেছেন: +++++

২৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:২৩

অপু তানভীর বলেছেন: :):):)

১২| ২৯ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:১৭

রেইন ম্যান বলেছেন: চৌধুরী সাহেব টাকা দিয়ে আর যাই হোক ভালবাসা কেনা যায়না

২৯ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:২৮

অপু তানভীর বলেছেন: হুম !! তাই তো দেখা যাচ্ছে !!

১৩| ৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৪০

সপ্নীল আমি বলেছেন: অসাধারন একটা গল্প। ভালোলাগা দিয়ে গেলাম। পরেরবার থেকে একটু জোরে ধরেন...... ;) ;) ;)

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:১২

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ !!

দেখা যাক ! সামনে আর ভুল করবো না ! ;););)

১৪| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:০০

কে এম শিহাব উদ্দিন বলেছেন: রেইন ম্যান বলেছেন: চৌধুরী সাহেব টাকা দিয়ে আর যাই হোক ভালবাসা কেনা যায়ন =p~ =p~ =p~

১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:০৩

অপু তানভীর বলেছেন: =p~ =p~ =p~ =p~

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.