নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ আগুন্তুক !

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩১

আবীর কিছুক্ষন তার সমনে বসে থাকা লোকটার দিকে অবিশ্বাস আর বিশ্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো ! লোকটা যা বলছে তা বিশ্বাস করতে পারছে না আবার লোকটা এমন কিছু কথা বলেছে যাতে টার কথা ঠিক অবিশ্বাসও করতে পারছে না ।

বারবার মনে মনে ভাবছে এইটা কি আসলেই সম্ভব ?

না কোন ভাবেই সম্ভব হতে পারে না ! এই লোক নিশ্চই কোন ট্রিকস জানে ! তাই এতো কিছু বলতে পারছে !

কিন্তু কিভাবে ?



আবীর লোকটার দিকে আর একবার ভাল করে তাকালো ! লোকটার চোখ আশ্চার্য রকম শান্ত ! একেবারে মরা মানুষের মত শান্ত ! শীতল চোখে আবীরের দিকে তাকিয়ে আছে !

পরনে নীল রংয়ের একটা শার্ট । রংটা চটে গিয়ে এমন হয়েছে মনে হচ্ছে বহু বছর ধরে লোকটা এই শার্ট টা পরে আছে । নিচে কালো গ্যাবাডিংয়ের প্যান্ট । এটারও রংটা অনেক পুরানো হয়েছে ! সাথে সাদা এপ্রোন ! এটাকে অবশ্য এখন আর সাদা বলাটা ঠিক না ! সাদার চেয়ে হলদেটে ভাবটাই বেশি !

আবীর আবার লোকটাকে বলল

-আপনার কথা আমি ঠিক মত বুঝতে পারছি না !

লোকটা একটু হাসলো ! তারপর বলল

-বুঝতে পারছ না নাকি বুঝতে চাচ্ছ না ! আরো ভাল করে বললে বিশ্বাস করতে চাইছো না ।

-আপনি যা বলছেন তা কি বিশ্বাস করার মত ?

-তা হয়তো না ! কিন্তু আমি যা বলছি তা সবই ঠিক তাই না ?



আবীর কোন উত্তর দিতে পারলো না ! কারন কথাটা একদম ঠিক । আসলেই লোকটা এ পর্যন্ত যা বলেছে সবই ঠিক !



লোকটা বলল

-তোমার পটেকে যে একটা ছয় ইঞ্চি ছুরি রয়েছে এটা তো কারো জানার কথা না ! তাই না ?

আপনা আপনিই আবীরের হাত নিজের বাম পকেটে চলে গেল ! আসলেই সেখানে একটা ছুরি রয়েছে । গত কাল থেকেই ছুরিটা নিয়ে ঘুরছে !

-আমার পকেট টা এমনিতেই উচু হয়ে আছে । একটু তীক্ষ চোখে তাকালে যে কেউ অনুমান করতে পারে এর ভিতর লম্বা জাতীয় কিছু আছে । অনুমানে বলাটা খুব বেশি কঠিন কিছু না ।

লোকটা হেসে ফেলল । বলল

-তাই বুঝি ? তা এই ছুরি দিয়ে যে তুমি তোমার প্রফেসর রায়হানুল কবীর কে খুন করতে যাচ্ছ এটাও কি অনুমানে বলা সম্ভব ?



আবীর বহুদিন এমন চমকে ওঠে নি ! লোকটা বার কয়েক এমন কিছু বলে ওকে চমকে দিয়েছে ! এখন আবারও চমকে দিল ! লোকটার দিকে তাকিয়ে কোন রকমে বলল

-আআআপনি কেমন করে জানলেন ?

উত্তরে লোকটা কোন কথা বলল না ! কেবল হাসলো ! অদ্ভুদ হাসি !



কদিন আগেই আবীর সিদ্ধান্তটা নিয়েছে ! তার ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান রায়হানুল কবীর কে খুন করবে ! যে কোন মূল্যে তাকে খুন করবে ! তার জীবনের সব থেকে বড় জিনিসটা সে কেড়ে নিয়েছে । এতো দিনের স্বপ্ন এতো দিনের সাধনা, আর গত সাড়ে তিন বছরের পরিশ্রম এক বারেই নিজের নামে নিয়ে নিয়েছে !

আবীর এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না !



আবীর আবারও বলল

-আপনি কিভাবে জানেন ? বলেন কিভাবে জানেন ? মাইন রিডিং করতে পারেন আপনি !

-হাহাহাহা ! মাইন রিডিং ? নাহ ! ওটা অনেক ঝামেলার বিষয় ! আমি অত কিছু জানি না ! আমি পত্রিকা পড়ে জেনেছি !

-মানে কি ? পত্রিকা পড়ে জানেছেন মানে কি ?

আবীর মেজাজটা এবার একটু খারাপ হয় । মনে হয় এই লোকটার সাথে কথা বলাটাই তার ভুল হয়েছে । কি সব আজগুবি কথা বার্তা বলছে ! পত্রিকায় পড়েছে !

কিভাবে পত্রিকার পড়েছে !

-আমি এখন উঠি !

-আরে কোথায় যাও ? তোমার প্রফেসর এখনও আসে নি ! আজকে সে আসতে আরো ঘন্টা দুয়েক দেরী করবে ! ঠিক সময় বলতে এখনও এক ঘন্টা ৫৬ মিনিট পরে ! একা একা বসে থাকার চেয়ে আমার সাথেই না গল্প কর !

-আপনার সাথে প্যাঁচ প্যাঁচ করার কোন ইচ্ছাই আমার নেই ! আমার আরো অনেক কাজ আছে !

-হাহাহাহাহা !

লোকটা বেশ কিছুক্ষন হাসলো আপন মনে ! তারপর বলল

-তোমাকে একটা জিনিস পড়াই ! পড়ার যদি মনে হয় যে তুমি চলে যাবে তাহলে আম তোমাকে আটকাবো না !

লোকটার চোখে কিছু ছিল যা উপেক্ষা করে আবীর যেতে পারলো না ! আবার বসে পড়লো লোকটার পাশে !



লোকটা একটা পত্রিকা বের করে এগিয়ে দিল আবীরের দিকে !

-নাও !

-পত্রিকা ? সিরিয়াস লী ?

লোকটা আবার একটু হাসলো কেবল !

আবীর বলল

-দেখুন আমি সকাল বেলাই পত্রিকা পড়েছি ! আমার এখন আবার পত্রিকা পড়ার কোন ইচ্ছা নেই !

-আহা ! পড়েই দেখো না ! প্রথম পাতার নিচের দিকে পড় !



আবীর অনিচ্ছা সত্তেও পত্রিকা টা হাতে নিল ! প্রথম আলো !

আজ কে সকালে বের হওয়ার সময়ই সে পত্রিকা পড়ে এসেছে !

পত্রিকাটার দিকে চোখ বুলাতেই ওর একটু আজিব লাগলো ! ওর যতদুর মনে হচ্ছে আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ছিল পদ্মাসেতু নিয়ে একটা নিউজ ! কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে সরকারী আর বেসরকারী দলের একটা খবর ! এখানেই তার অবাক লাগলো !



খানিকটা অবাক হয়েই আবীর আবার লোকটার দিকে তাকালো ! লোকটা অন্য দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছে !

আবীর প্রথম পাতার নিচের দিকে চোখ বুলাতে লাগলো তখনই তার চোখ আটকে গেল একটা খবরের শিরোনামে ! প্রথমে নিজের চোখ কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না ! হাতের পত্রিকাটা কাঁপতে লাগলো ! কাঁপতে কাঁপতেই আবীর পড়া শুরু করলো !



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর খুন !

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স বিভাবের চেয়ারম্যান প্রফেসর রায়হানুল কবীর (৬০) কে ছুরির আঘাতে হত্যা করেছে তার অধিনস্ত থিসিসরত এক ছাত্র !

মঙ্গলবার বেলা ১২টার টার দিকে নিজ কার্যালয়ে খুন হন প্রফেসর রায়হানুল কবীর ।

নিহতের অফিস সেক্রেটারী জানান, বেলা ১২টার দিকে নিজের ডিপার্টমেন্টের এক ছাত্র স্যারের সাথে দেখা করতে আসে ! উক্ত ছাত্র জানায় সে স্যারের আন্ডারে থিসিস করছে । একটা বিশেষ বিষয় নিয়ে স্যারের সাথে কথা বলা দরকার !

ছেলেটি ভিতরে যাওয়ার দশ পনের মিনিটের মাথায় একটা চিৎকার ভেসে আসে স্যারের রুম থেকে । তার কয়েক মুহুর্ত পরেই সেই ছাত্র কে হন্তদন্ত হয়ে স্যারের রুম থেকে বের হয়ে যেতে দেখা যায় ! আমরা কয়েকজন স্যারের রুমে ধুকে দেখি স্যার মাটিতে পরে আছে । তার সারা শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে !

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন প্রথম আলো কে জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রফেসরকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ছাত্রের পরিচয় আবীর হাসান বলে জানিয়েছে অফিস সহকারী ।

দুপুর ১টার দিকে শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক মো. রফিক লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। পরে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সেখান থেকে নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।





সম্পূর্ন খবরই পড়ার পর আবীর খানিকটা অসুস্থ বোধ করতে লাগলো ! গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল ! এখনই তার এক গ্লাস পানি খাওয়া দরকার !

-কি পানি খাবে ?

আবীর বলল

-আপনি কে বলেন তো ? এই খবর আপনি কোথায় পেলেন ! আপনি নিশ্চই কিছু করেছেন ! এই খুন আমি করি নি ! আমি করি....... !

-অবশ্যই তুমি এখনও খুন কর নাই !

-তাহলে ? এই খবর পত্রিকায় কিভাবে আসলো ?

-আমি বলেছি তুমি এখনও খুন কর নি ! কিন্তু করবে ! আজকেই করবে !

-তাহলে ? যেই খুন আমি করি নি সেই খুনের খবর কিভাবে আজকের পত্রিকায় আসলো !

-আজকের পত্রিকা ?

লোকটা হাসল !



আবীর শরীর বেয়ে আবারও একটা কাঁপন বয়ে গেল ! চট জলদি পত্রিকার তারিখের দিকে চোখ বুলিয়ে নিল !



১১অক্টোম্বর ২০৩২ ! সোমবার !

কিন্তু আজকে তো ১০ তারিখ ! রবিবার !



কালকের পত্রিকা আজকে কিভাবে বের হল ! কিভাবে ? আবীর কিছু বুঝতে পারছে না । কেমন যেন মাথায় জট পাকিয়ে যাচ্ছে !

না ! কিচ্ছু বুঝতে পারছে না ! এমন টা তো কিছুতেই হবার কথা না !

আবীর বলল

-এটা তো আজকের পত্রিকা না ! আগামী কালকের পত্রিকা !

- হুম ! আগামী কালকের !

-আপনি কোথায় পেলেন আগামী কালকের পত্রিকা ?

-আসার সমসয় নিয়ে এলাম !

-আসার সময় নিয়ে এলাম মানে নি ? এমন ভাবে বলছেন যেন মিরপুর থেকে শাহবাগ আসায় সময় পত্রিকা কিনে এনেছেন !

আবীরের কথা শুনে লোকটা হাহাহা করে হেসে পড়লো ! তারপর বলল

-ঐ রকমই মনে কর !

-আপনি এত হেয়ালী করে কেন কথা বলছেন ? আমি কিছুই বুঝতে পারছেন না ! আজকে সকাল থেকেই আপনি আমার সাথে লেগে আছেন ! আমি যেখানে যাচ্ছি যেখানে যাচ্ছেন ! আমার সম্পর্কে এমন কিছু বলে দিলেন যা আমি ছাড়া আর কারো জানার কথা না । আবার এখন আগামী কালকের এক পত্রিকা এনে দিলেন যেখানে আমি খুন করেছি এমন কথা লেখা রয়েছে । আমি কিছুই বুঝতে পারছি না !

লোকটা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল

-এতো কিছু তোমার না বুঝলেও চলবে এখন কেবল তোমাকে একটা জিনিস দেখাই ! যেটা দেখলেই আমার এখানে আসার উদ্দেশ্য তোমার সাথে পরিস্কার হয়ে যাবে ! এসো আমার সাথে !

-কোথায় যাবো ?

-আরে এসো না !



এই বল লোকটা উঠে দাড়ালো ! লোকটা আবীরও বাধ্য ছেলের মত তার পিছন পিছন যেতে লগলো !

-কোথায় যেতে হবে ?

-বেশি না ! ঐ গাছটার আড়ালে !

আবীর বড় কড়ই গাছটার দিকে তাকিয়ে দেখে ! কিছুই নেই সেখানে ! কড়ই গাছ টা পার হলেই সেখানে একটা ক্যান্টিন আছে ! ভার্সিটির অনেক ছেলে মেয়ে একসাথে আড্ডা মারে ! আবীর নিজেও সেখানে আড্ডা মেরেছে কত !

কি ব্যাপার লোকটা ওকে ওখানে নিয়ে যেতে চাইছে কেন ?

আবীর আস্তে আস্তে হাটতে লাগলো লোকটার পিছনে ! কি আছে ঐ গাছটার পিছনে ! আবীর খুব ভাল করেই জানে কি আছে কিন্তু তবুও মনে হচ্ছে নিশ্চই নতুন কিছু আছে ! কিন্তু কি ?



বাঁধানো বড় কড়ই গাছটা পার হতেই একটা হালকা আলো ঝলকানী আবীরের চোখ লাগলো ! আবীরের চোখ আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে গেল ! যখন চোখ খুলল তখন ওর সামনে যেন এক অন্য পৃথিবী !

আবীর কেবল বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে দেখলো ও যেন অন্য কোথাও চলে এসেছে । পরিচিত ক্যাম্পাস কিছুই নেই এখানে । আশে পাশে কেবল ধ্বংস স্তুপ ! যতদুর চোখ যায় কেবল ধু ধু করছে । চারিদিকে কেবল ধ্বংস স্তুপ ! কয়েকটা বড় বড় বিল্ডিং ভাঙ্গা চুড়া অবস্থায় পড়ে আসে !



-এ কোথায় নিয়ে এলেন ?

-কেন ? চিন্তে পারছ না ? আমি তো ঐ একই জায়গায় আছি ! ঐ গাছটার পাশেই ! দেখো !

আবীর এবার আরো একটু ভাল করে তাকিয়ে দেখে আরে এই তো গাছের বাঁধাই করা বেদি টা বোঝা যাচ্ছে ! কিন্তু গাছ টা তো দেখা যাচ্ছে না ! আর ঐ তো পাশেই ক্যান্টিন টা পড়ে আছে ! আকারে অবশ্য অনেক বড় !

কিন্তু প্রান হীন । আগের দিনের পরত্যাক্ত জমিদার বাড়ির মত ! মনে হচ্ছে এখানে যেন অনেক দিন কেউ আসে নাই !

-সব কিছু এমন প্রান হীন কেন ?

-কারন এই টা একটা প্রানহীন পৃথিবী !

-মানে কি !

-মানে কিছু না ! চারিপাশের অবস্থা দেখে বুঝতে পারছো না ! এখন এই পৃথিবীতে আর কোন মানুষ বেঁচে নেই ! সব শেষ জীবিত মানুষটি গত পরশু দিন মারা গেছে !

-আপনি কি বলছেন এই সব !



আবীর কেবল চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো অবাক হয়ে ! নিজের পরিচিত ক্যাম্পাসটা কে দেখে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না ! লোকটা বলছে পুরা পৃথিবীতে একটা লোকও বেঁচে নেই ! কিভাবে ? কিভাবে এমন টা হয়েছে !



আর লোকটা বলেছে জায়গা একই আছে তারমানে কি সময় বদলে গেছে ? লোকটা কি ওকে ভবিষ্যতে নিয়ে এসেছে ! ঐ যে আলোর ঝলকানী ?

কিন্তু কিভাবে সম্ভব ?

মানুষ কি এই ভাবেই সামনের ভবিষ্যতে যেতে পারে ? কত গুলো প্রশ্ন আবীরের মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগলো ! কিন্তু কোন উত্তর সে পেল না !

বারে বার মনে হল এটা কোন ভাবেই হতে পারে না ! অসম্ভব !

কিন্তু লোকটা কিভাবে সামনের দিনের পত্রিকা এনে দিল ! তাহলে ওকেও সামনে নিয়ে আসলো ?

-এটা কোন সময় ?

-১০ অক্টোম্বর ২১৩২ !

-২১৩২ ?

-হুম !

-১০০ বছর !

-হুম ! আমরা যেখানে ছিলাম সেখান থেকে ঠিক একশ বছর পরে আজকেই এই পৃথিবী !

-এই অবস্থা !

-হ্যা ! এই অবস্থা ! তোমার জন্য !

-আমার জন্য ? কি বলছেন এই সব ! আমি কি করেছি ?

-হুম ! তোমার জন্য ! তুমি কিছু কর নি আবার অনেক কিছু করেছ ?

আবীর লোকটার কথা কিছু বুঝতে পারে না !

-আপনি প্লিজ আমাকে একটু পরিস্কার করে কিছু বলবেন ? আমি কিভাবে দায়ী আমার জন্য এসব কিভাবে হল ? আর প্লিজ দয়া করে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান ! আমি এখানে আর এক মুহুর্ত থাকতে চাই না !





-তো আপনি বলতে চাচ্ছেন এই সব কিছুর পেছন আমি দায়ী ?

লোকটা নিজের হাতের ঘড়ির দিকে খানিক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল

-তুমি ঠিক কি কারনে প্রফেসর কে খুন করতে চাইছো বলতো ?

-আমি যতদুর জানি উত্তরটা আপনার জানা ।

-হুম । জানা । তবুও আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাইছি ।

আবীর কিছুক্ষন লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো । কিছু যেন বুঝতে চাইছে আসলে লোকটা কি জানতে চাইছে । লোকটা এখনও সেই শীতল চোখে তাকিয়েই আছে আবীরের দিকে । আবীর চোখের দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে নিয়ে বলল

-আসলে প্রফেসর রায়হানুল কবীর আমার তিন বছরের প্রচেষ্টা কে কেড়ে নিয়ে আমার কাছ থেকে । আরো ভাল করে বলতে গেলে আমার সারা জীবনের স্বপ্নটা তিনি কেড়ে নিয়েছেন !

-বলতে চাইছো তোমার গবেষনা ।

-জি ।

-কিসের গবেষনা ?

-আসলে......

আবীর কিছুক্ষন ইতস্তর করলো । বলবে কি না বলবে এখনও ভাবছে ! শেষে বলেই ফেলল ! আবীর বলতে শুরু করলো !

-আসলে ছোট বেলা থাকতেই আমার বাবা ক্যান্সারে মারা যান ! আমার পুরো শৈশব টা কাটে পুরোপুরি বাবা শূন্য ! আমি বাবার কাছে কেবল চকলেট খেতে চাইতাম ! বাবা প্রতিদিন বাসায় আসার সময় আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসতো ! আমার কাছে বাবার স্মৃতি বলতে এই টুকুই !

এই টুকু বলে আবীর একটু থামলো ! কিছুটা সময় পরে আবার বলল -আমরা কোন কিছু জানতামও না যে আমার বাবা ক্যন্সারের আক্রান্ত ! বাবা কোনদিন বলেও নি আমাদের ! আমি তারপর থেকেই মনের ভিতর একটা জেদ ছিল এই ক্যান্স্যারকে আমি জয় করবো !

-আচ্ছা ! তা করতে পেরেছ ?

-জি ! পেরেছি ! এটা নিয়েই কাজ করেছি আমি সারা জীবন ! রায়হানুল স্যার কে আমার ইচ্ছার কথা বলতে তিনিও খানিকটা আগ্রহ দেখান ! ক্লাসের ব্রাইট স্টুডেন্ট ছিলাম ! সেই সুবাদে স্যারের সাথে আমার ভাল সম্পর্ক ছিল ! কিন্তু আমি যখন আমার কাজে সফল হলাম রায়হান স্যার সমস্ত ক্রডিট টা নিজের নামে নিয়ে নিলেন ! নিজেই আস্ট্রেলিয়ার একটা জার্নালে নিজের নামে ছাপিয়ে দিলেন ! এটা কি সহ্য করার মত বলেন !

লোকটা কোন কথা বলল না !

আবীর আবার বলল

-কিন্তু আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছি না ! আমি যদি তাকে খুন করি তাহলে এটার জন্য পৃথিবীকে ধ্বংসের মুখে পড়বে !

-তোমার খুন না ! পৃথিবী ধ্বংসের কারন হচ্ছে তোমার আবিস্কৃত ক্যান্সারের এন্টিবডি !

-আমি ঠিক বুঝলাম না ! আমি মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এন্টিবডি তৈরি করেছি ! ধ্বংসের জন্য না !

-আ ঠিক ! আসলে তোমার আবিস্কার কেবল ক্যান্সারের জন্য না, মোটামুটি সব ধরনের রোগের জন্য একটা শক্ত প্রতিশেধক এটা কি তুমি জানো ?

আবীর ঠিক কিছু বুঝতে পারলো না ।

লোকটা বলতে শুরু করলো

-তোমার আবিস্কার ছিল অস্বাভাবিক কোষকে স্বাভাবিক করা ! তোমার এন্টিবদি কোষে নিলেই তা আপনা আপনি কোষকে স্বাভাবিক করে ফেলে ! এবং কোষের উপর একটা শক্ত আবরন তৈরি করে ! যে টা কেবল ক্যান্সারই না প্রায় সকল প্রকার রোগের জীবানুকেই প্রতিরোধ করে ! তুমি এটা জানো না মনে হয় ! তাই না ?

-না ! এটা তো জানি না ! কিন্তু, এটা তো ভাল দিক ! এখানে আমার দোষ কোথায় ?

এই শতাব্দীর শেষের দিকে প্রত্যেক মানুষকে কেই তোমার আবিস্কৃত এন্টিবডি শরীরে নিতে হবে ! সব দেশের সরকার আইন করে এটা বাধ্যতা মুলক করবে !

-ভাল তো ! তাহলে মানব সমাজ রোগ শোক থেকে মুক্ত হয়ে যাবে ! ভাল না ?

-হুম ! ভাল । কিন্তু তোমার এন্টিবডির যে একটা সাইড ইফেক্ট আছে এটা কি তুমি জানো ?

-সাইড ইফেক্ট ?

-হুম ! এটা তুমি যেমন এখন জানো না, অন্য কেউও এর বিষয়ে জানে না ! তোমার এন্টিবডি কোষের গায়ে একটা আবরন তৈরীর সাথে সাথে একটা ইয়াই৫৮এক্স নামে একটা ভাইরাস কোষের নিউক্লিয়াসের ভিতর প্রবেশ করিয়ে দেয় ! এটা একটা মুখ্য উপাদান তোমার এন্টিবডির ! এর প্রধান কাজ হল মানুষের এঙ্গার বা রাগ কে বহু গুনে বাড়িয়ে দেওয়া ! ঠিক যখন পৃথীবীর সব মানুষের ভিতরে এই ইয়াই৫৮এক্স ভাইরাস ঢুকে যাবে তখন অকারনে মানুষের ভিতর হানাহানির পরিমান টা বেড়ে যাবে ! সামান্য বিষয় নিয়ে তুল কালাম কান্ড বেঁধে যাবে ! তুমি কি জানো রাশিয়ার সাথে চীনের কেবল এই কারনে যুদ্ধ বেঁধে যাবে কারন রাশিয়ার এক পর্যটক কে চিনের মহাপ্রাচীর দেখতে দেওয়া হয় নি !



আবীর অনেকক্ষন চুপর করে রইলো ! কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না !

-তাহলে আমার এখন কি করা উচিৎ ! আমি কি আমার আবিস্কার বন্ধ করে দিবো । কিন্তু সেটা তো এখন সম্ভব না ! আমার সব কিছু তো রায়হানুল কবীরের কাছে ! আমি তো কিছু করতে পারবো না ! আপনার তো আরো আগে আসা দরকার ছিল !

-হুম ! সমস্যা নেই ! আমি আমার কাজটা করতে পারবো ! একটা বিশেষ কারনে আমি এই সময়ে এসেছি ! যা জানার দরকার ছিল তা জেনে নিয়েছি ! মনে হয় এখন সমস্যার সমাধান করতে পারবো !

-কিভাবে ?

-সে টা তোমার না জানলেও চলবে ! আমি এখন যাই !

-কোথায় যাবেন ?

-দেখা যাক !

লোকটা অদ্ভুদ ভাবে হাসলো !







পরিশিষ্টঃ

সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সাল



আব্দুল হাসান আলীর রিপোর্ট টা হাতে নিয়ে ডাক্তার সামিল আলী কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন ! নিজের চোখ কে যেন তিনি ঠিক মত বিশ্বাস করতে পারছেন না !

আব্দুল হাসান আলীর অবস্থা এই কয় দিনে এতো উন্নতি কিভাবে হল এটা তিনি কিছুতেই বুঝতে পারছনে না !

আব্দুল হাসান লাষ্ট ষ্টেজে ছিলেন ! শরীরের ৫০% সেল ডেমেজ ছিল ! তিনি নিজেই তার সময় বেধে দিয়েছিলেন চার মাস ! আর আজকে তিনি কি দেখছেন ! মোটামুটি ৯০% সেল রিপেয়ার হয়ে গেছে আপনা আপনি !

এটা কিভাবে সম্ভব ?

এটা তো মেডিক্যাল সায়েন্সের একটা মিরাক্যাল !

তিনি আরো কিছু টেস্ট করালেন ! যদিও ফলাফল জানেন তবুও খানিকটা শিওর হতে চান !



আব্দুল হাসান আলীর ফুর ফুরে মেজাজ নিয়ে বাইরে বের হলেন পপুলার থেকে ! তার মন আজ অসম্ভব ভাল ! যেন একটু এক নতুন জীবন পেয়েছেন আজকে ! বাসার সবার কাছ থেকে যে সত্যটা লুকিয়ে রেখেছিলেন আজকে সেটা প্রকাশ করে দিবেন ! তার স্ত্রী তার ছেলে যাদের ছেড়ে যাবার একটা প্রচন্ড ভয় কাজ করছিল মনের ভিতর আজকে সেই ভয়টা আর নেই ! ভাগ্যিস তিনি সেই অদ্ভুদ লোকটার কথা শুনেছিলেন ! তা না হলে হয়তো আজকে তিনি পরে থাকতেন কোন হাসপাতালের বেডে !

তিনি তার সাত বছরের ছেলের জন্য চকলেট কিনলেন ! ছেলেটা প্রতিদিন চকলেট খাওয়ার জন্য বায়না ধরে ! স্ত্রীর জন্য ফুল কিনলেন ! আরো কিছু কেনাকাটা করলেন বাড়ির সবার জন্য !



রাস্তা পার হতে যাবেন ঠিক এই সময় একা রিক্সার আব্দুল হাসান আলীকে কে পেছন থেকে হালকা একটু ধাক্কা মারলো !

হঠাৎ কি যেন হল আব্দুল হাসানের মাথায় রক্ত চেপে গেল ! কষে এ চড় মারলো রিক্সাওয়ালার গালে ! চড় মারার পর নিজেই খানিকটা অবাক হয়ে গেলেন !

রিক্সাওয়ালার বয়স কম করেও হলেও ৬০ হবে ! এই বয়সের একজন কে তিনি কিভাবে চড় মারলেন !

ইদানিং হঠাৎ হঠাৎই এমন রাগ উঠে যায় !

আব্দুল হাসান আলী কিছু আমলে নিলেন না ! তিনি বাড়ির দিকে হাটা দিল ! বাড়িতে তার ছেলে তার জন্য অপেক্ষা করছে !

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৭

নিরপেক্ষ মানুষ বলেছেন: চমত্‍কার।নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া প্রচেষ্টায় আছেন মনে হচ্ছে।বেশ ভাল

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৫৩

অপু তানভীর বলেছেন: না মানে কদিন থেমে মনের ভিতর কোন রোমান্টিক থিম আসতেছে না ! তাই একটু চেষ্টা করলাম আর কি !

ধন্যবাদ !!

২| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৫১

শান্তির দেবদূত বলেছেন:
অনেক ভাল লেগেছে। গতিশীল একটা গল্প। প্রতিটি বাক্য পড়ার পর, পরের বাক্য পড়ার আগ্রহ জেগে উঠছিল, এটাতেই আপনার লেখার মাধ্যমে পাঠককে টেনে ধরে রাখার ক্ষমতা টের পাওয়া যায়।

ভাল থাকুন, আর আমাদের এমন আরও সুন্দর সুন্দর গল্প উপহার দেন। শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৫৫

অপু তানভীর বলেছেন: দেবদুত ভাই এই গল্প লিখতে ইচ্ছা করেছে আপনার লেখা পড়ে ! আপনার ভাল লেগেছে মানে হল আমার লেখা সার্থক !

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ !!

৩| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৫

এক্সপেরিয়া বলেছেন: কোনদিন না আমার চরিত্রও এরকম হয়ে যায়...... :(

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১০

অপু তানভীর বলেছেন: সে কি ? কেন ? এরকম কেন হবে ??
:-/ :-/

৪| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২২

সুমন কর বলেছেন: এক টানে পড়ে ফেললাম। অনেক ভালো হয়েছে। আরো সুন্দর গল্পের অপেক্ষায় রইলাম।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩১

অপু তানভীর বলেছেন: সত্যি ভাল হয়েছে ?

অনেক অনেক ধন্যবাদ !

দেখা যাক আরো কিছু লেখা যায় নাকি !!
:):)

৫| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৪

দি ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো বলেছেন: গল্পের মাঝখান থেকে শুরু করেছিলাম । পরে আবার প্রথম থেকে পড়েছি ।


•••••••অসাধারন••••••••

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৯

অপু তানভীর বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ !!

:):):)

৬| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩০

আমি তুমি আমরা বলেছেন: ফাটাফাটি কনসেপ্ট, ফিনিশিংটা আরো চমৎকার। ভাল লাগল :)

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫৮

অপু তানভীর বলেছেন: যাক ! কোন রকম কিছু একটা হয়েছে বোঝা যাচ্ছে !
ধন্যবাদ !!

:):):)

৭| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫২

স্বপনচারিণী বলেছেন: ম্যাসেজটা অসাধারণ হয়েছে। সাবলীলভাবে পরিণতিটা লিখে দিলেন।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১২

অপু তানভীর বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ !! :):)

৮| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫৮

নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: B:-) B:-)

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০৫

অপু তানভীর বলেছেন: কি হইলো ভাই ?? B:-) B:-)

৯| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৪

নীলতিমি বলেছেন: অসাধারন গল্প। পিলাচ! :)

সাথে আরো কিছু নিকৃষ্ট মানুষ দেখলাম। সবাই পড়ে মজা পেল, ভালো বললো কিন্তু প্লাস দিলো না!

:( :(

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৭

অপু তানভীর বলেছেন: আরে না না ! ওদের দোষ দিয়ে লাভ নাই ! সামুর প্লাস বাটনে সমস্যা ! ঠিক কাজ করে না !


ধন্যবাদ !! অনেক ধন্যবাদ !! :):)

১০| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:০৪

হান্টার১ বলেছেন: সামুর প্লাস বাটনে সমস্যা ! ঠিক কাজ করে না !

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৪

অপু তানভীর বলেছেন: হুম!! কবে যে ঠিক হবে কে জানে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.