নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ গ্রাজুয়েট টিংকু

১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৩৭

-হারামজাদা থাপড়িয়ে তোর দাঁত খুলে ফেলবো ?

-আরে কি আশ্চার্য ? এখানে থাপড়ানোর কি হল ? টিকেট নাই এটা বললেই হয় । থাপড়া থাপড়ি করার কি দরকার !

-চুপ । একদম চুপ ।

-দেখুন এতো রাগারাগির কিছু নাই । আমি জানি আপনারা কিছু টিকিট নিজেদের কাছে রেখে দেন বেশি দামে বিক্রির জন্য । আমি বেশি দামেই কিনবো । নতুন বিয়ে করেছি । প্রথমরারের মত ঈদ করতে শ্বশুর বাড়ি ..

হৈমর আব্বা আমার কথা শেষ করতে দিলো না । তার আগেই চিত্‍কার চেঁচামিচি শুরু করে দিল । আমি আস্তে করে ফোন রেখে দিলাম ।

দোকানদার ছেলেটার বয়স কম । স্কুলে পড়ার বয়স ।তা না করে এখানে মোবাইলের দোকানে বসে আছে । আমি মোবাইল ফোনটা এগিয়ে দিতেই বলল

-কারে ফোন দিলেন ?

-কেন ?

-এমনেই !

এই বলে মোবাইল টিপতে লাগলো । এই নিয়ে ছয়বার আমি এই পিচ্চির দোকান থাকে ফোন করছি হৈমদের বাসার ল্যান্ড ফোনে । প্রতি দশমিনিট পরপর । পিচ্চিকে বলেছি মিনিটের হিসাব রাখতে । সব টাকা একবারে দিবো । ফোন করার ফাঁকে ফাঁকে পিচ্চির সাথে টুকটাক গল্প করে সময় কাটাচ্ছি ।

-কি নাম ?

মোবাইলটা ড্রয়ারের ভিতর রাখতে রাখতে পিচ্চি বলল

-আমার নাম জাবেদ ।

-পড়া লিখা করিস ?

-হ । করি । কিলাস সেভেন ।

-আজকা স্কুল নাই ?

-যাই নাই । বড় ভাই শ্বশুর বাড়ি গেছে বউ নিয়া । তাই আজকা আমি আইছি ।

তারপর আমার দিকে তাকিয়ে একটু মিসকি হেসে বলল

-আপনেও কি বউ নিয়া শ্বশুর বাড়ি যাইবেন ?

বুঝলাম আমার ফোনে বলা কথা গুলো সে মন দিয়ে শুনেছে । প্রত্যেক ফোনের দোকানদারের এমন একটা সহজাত্‍ প্রবৃত্তি থাকে । কাস্টমার কার সাথে কি কথা বলছে কান খাড়া করে শুনতে পছন্দ করে । জাবেদের ভাইও হয়তো তাই করে । তারপর রাতের বেলা বউয়ের কাছে গিয়ে সেই সব কথা আরও ডাল পালা ছড়িয়ে বলবে ।

আমি সেই প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে কেবল একটা রহস্যময় হাসি দিলাম । তারপর বললাম

-দেখি ফোনটা আরেকবার দে ।

জাবেদ ড্রায়ার থেকে ফোন বের করে আবারও আমার ফোন দিলাম হৈমদের বাসায় । ভাবতেছি এবার কি বলা যায় ' রেলস্টেশন বাস টার্মিলাম সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল সব কিছু হয়ে গেছে ।

এখন ?

ওপাশ থেকে রিং হচ্ছে । আমি ভাবছি এবার কি বলা যায় । রিং বেজেই চলেছে । যখন মনে যে ফোনটা আর কেউ রিসিভ করবে না ঠিক তখনই রিসিভ করলো কেউ । আমি বললাম

-হ্যালো কাটাবন থানা ? বাটা সিগনালের এখানে খুন হয়েছে । জলদি চলে আসুন । হ্যালো ?

ও পাশে খানিক নিরবতা । আমার মনে হল হৈমর বাবার একটা হুংকার শুনতে পাবো । কিন্তু তার বদলে হৈমর মিষ্টি গলা শুলা শুনতে পেলাম ।

-কাটা বনে থানা আছে ?

-নেই ? ও আচ্ছা । শাহবাগ আর কাটাবন তো একই তাই না ? ভাল আছো বাবু ?

আবার খানিকক্ষন নিরবতা ।

-দ্বিতীয় বার আব্বার চিত্‍কার শুনেই বুঝেছিলাম তুমি এরকমটা করছো ? এরকম ফাজলামো কেন করছো ?

-আরে হিমুর গল্প পড় নাই ? হিমু ঠিক এই ভাবে রূপার বাবাকে জ্বালাতন করে ।

-শুনো তুমি হিমু না আর আমি রূপা না । খবরদার আর ফোন দিবা না এই খানে ।

-আরে তাহলে কেমন করে হবে ? তোমার সাথে কথা বলবো কিভাবে ? তুমি তো ফোন বন্ধ করে রেখছো ?

-কেন রাখবো না শুনি ? কাল তুমি কি বলেছিলে মনে আছে ?

-আরে বাবা একটা বিড়ালই তো ! আর তো কিছু না ।

-এই খবরদার আমার বাবুকে নিয়ে আর একটা কথা বলবা না !

বাবু ! এই হল মাইয়া মানুষের কারবার ! একটা বিলাইয়ের জন্য আমার মত ভালা পুলারে ...

-শুনো তুমি ...

-কোন শুনাশুনি নাই । আগে তুমি টিংকুর কাছে সরি বলবা তারপর তোমার সাথে কথা !

আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হৈম ফোন রেখে দিল । আমার মেজাজটা একটু খারাপই হল ।

হওয়ারই কথা ! গার্লফ্রেন্ড যখন বয়ফ্রেন্ড থেকে একটা বিলাইকে বেশি আদরকে একটু রাগ হওয়ারই কথা ।



কাল বিকেল বেলা ঠিক ছিল সব কিছু । হৈমর সাথে কথা বলছিলাম । কথা বলতে বলতেই হৈম একটু আও বলে চিত্‍কার করে উঠল । ফোনের এপাশ থেকেই আমি ওর আওয়াজটা শুনতে পেলাম । কোন কিছুতে ব্যাথা পেয়েছে । আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম

-কি হয়েছে ?

-কিছু হয় নি ।

-কিছু তো একটা হয়েছেই । কি হয়েছে ?

-আরে এমন কিছু না । টিংকু একটু আচড় মেরেছে ।

-কি ? রক্ত বের হয়েছে ?

-আরে কিছু না । একটু ।

আমার মেজাজটা টিংকুর উপর খারাপ হল খুব । আমার এমনিতেই বিড়াল পছন্দ না । ছোট বেলায় একবার বিড়ালের কামড় খেয়ে ইনজেশন নিতে হয়েছে । তার উপর হৈম এই বিড়াল কে এতো আদর করে আমার একদম সহ্যই হয় না ।

-শালার টিংকু । একটা আছাড় মার !

-এই তুমি কি বললা ?

-বলবো না ? ফাজিলের ফাজিলের ফাজিল ।

-এই খবরদার টিংকুকে কিছু বলবা না ।

-আরে তোমার টিংকুকে খালি একবার কাছে পেয়ে নিই ।

হৈম হঠাত্‍ করে আমার উপর রেগে গেল । বলল আমার বকা শুনে নাকি টিংকু চলে গেছে ।

আমি তো অবাক ?

-আমি বকলাম কোথায় ?

হৈম বলল

-তুমি টিংকুকে সরি বলবা তারপর তোমার সাথে কথা ?

কিসের ভিতর কি ? এই মেয়েরা এমুন আজিব লজিক পায় কোথায় ? আমি ভেবেছিলাম হয়তো এমনি বলছে । কিন্তু রাতের বেলা সত্যি সত্যিই আমার সাথে কথা না বলে ফোন বন্ধ করে রাখলো ।

সকাল বেলাও একই অবস্থা । শেষে না পেরে ওদের বাসার ফোনে ফোন দিলাম ।





প্রেমে পড়লে আর প্রেম করতে গেলে কত কিছু করতে হয় । আজকে কোথাকার কোন বিলাইকে সরি বলতে হবে । বিদেশী বিলাই হলেও হয় এ হল খাটি দেশি বিলাই ।

আচ্ছা কুকুরের যেমন নেড়ি কুকুর আছে বিলাইয়ের ভিতর নেড়ি বিলাই নাই ? দেখি খোজ নিতে হবে ।

ক্ষমা অনুষ্ঠান হৈমদের ছাদের উপর অনুষ্ঠিত হবে । এমনই আমাকে জানানো হয়েছে । হৈমদের বাড়ির দারোয়ানের সাথে আমার ভাব আছে । প্রায়ই হৈমর সাথে দেখা সাক্ষাত্‍ করতে আসি তাই হাত করে রেখেছি । প্রায় বিশ মিনিট ধরে অপেক্ষা করার পর হৈম হাজির এল গম্ভীর মুখে । তার চেয়েও বেশি গম্ভীর হয়ে আছে হৈমর কোলের বিলাই টা । আমার সামনে আসতেই বিলাইটা বলল

-মিয়াও ।

আমিও বললাম

-মিয়াও ।

-মিয়াও মিয়াও ।

সঙ্গে সঙ্গে আমিও বললাম

-মিয়াও মিয়াও ।



-এই তুমি আমার টিংকুকে ভেঙ্গাচ্ছ কেন ?

আমি আকাশ থেকে পড়ার ভঙ্গি করে বললাম

-কি বলছো এসব ? তোমার টিংকু আমাকে দেখে বলল মিয়াও । মানে ভাল ? আমিও বললাম ভাল । টিংকু বলল মিয়াও মিয়াও । মানে দিন কাল কেমন যাচ্ছে । আমি বললাম ভাল খুব ভাল । বিলাইকে সরি বলতে এসেছি । ভাল হবে না ?

হৈম আমার কথায় হাসলো না । বলল

-তাই না ? এখন সরি বল ।

-বলতেই হবে ?

-হুম ।

আমি টিংকুর কাছে মুখ নিয়ে বললাম

-মিয়াও ।

আমার মিয়াও শুনে টিংকুও আবার বলল

-মিয়াও ।

হৈম বলল

-এই মিয়াও কি কথা ! সরি বল ।

-আরে তুমি কি ? বিলাই কি ইংরেজি বোঝে নাকি ?

-আমার টিংকু সব বোঝে ।

-আচ্ছা তোমার মত তোমার টিংকুও গ্রাজুয়েট নাকি ?

-কি বললা তুমি ? কি বললা ?

-আরে বাবা কথা কথায় এতো চেতো কেন ? তোমার টিংকুকে গ্রাজুয়েট বলেছি কি খারাপ বলেছি । বল টিংকু তোর কি খারাপ লেগেছে ।

টিংকু বলল

-মিয়াও ।

-দেখেছ টিংকুও খুশি ।

কিন্তু হৈম খুশি হল না । আমি এর আগেও দেখেছি হৈমকে গ্রাজুয়েট বললেই ও কোন কারন ছাড়াই রেগে যায় । কেন রেগে যায় কে জানে ।

যাহ শ্লা ! এসেছিলাম এক রাগ ভাঙ্গাতে । এখানে এসে আবার নতুন ভাবে রাগিয়ে দিলাম । এর রেশ কদিন থাকে কে জানে । আমার আর কোন কথা না শুনেই হৈম টিংকুকে নিয়ে হন হন করে হেটে চলে গেল ।





পরিশিষ্টঃ

আমি আর কি করবো ? উদাস হয়ে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকলাম । এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম । বিকেল বেলা এদিকার ছাদের বড় চমত্‍কার জিনিস দেখা যায় । ঠিক তখনই চোখ চলে গেল পাশের ছাদে ।

পাশের ছাদে কি ?

সেটা না হয় অন্য কোন গল্পে বলব ।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৫০

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: হাহা ভালো লাগল!

১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:০৫

অপু তানভীর বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ!!!!

২| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৮:৫০

ভিটামিন সি বলেছেন: পাশের ছাদে আর কি থাকবে? হয়তো জোড়া বিলাই (মেল+ফিমেল)।

১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:০৯

অপু তানভীর বলেছেন: পাশের ছাদে বিলাই না! আছে অন্য কিছু ;)

৩| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৫২

চারশবিশ বলেছেন: জোশ হইছে

১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:১০

অপু তানভীর বলেছেন: থেঙ্কু!!!! :)

৪| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৪৭

আইএমট্রিনিটি বলেছেন: সেরাম মজা পেলুম :D :P

১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৩১

অপু তানভীর বলেছেন: থেঙ্কু!!!!

৫| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:২২

ইষ্টিকুটুম বলেছেন: বুঝেছি। পাশের ছাদে আরেকজন আছে। তাই না???

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:২৮

অপু তানভীর বলেছেন: এই তো আপনি বুঝতে পারছেন!! ;)

৬| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৪৯

ইষ্টিকুটুম বলেছেন: আমিই যদি না বুঝি...তাইলে কি আর চলে???

আমি হলাম, আমি। আমার বাসায় আইসেন বেড়াইতে।

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৫৩

অপু তানভীর বলেছেন: বউকে!!! অবশ্য আসবো!!!

৭| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:১৬

ইষ্টিকুটুম বলেছেন: বউকে মানে কি?? অন্য কিছু ভাবছিলেন নাকি? অন্যকিছু ভাবতে ভাবতে...কমেন্ট করে দিলেন??

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:২৯

অপু তানভীর বলেছেন: হিহিহি!!! এক টু ভুল হইছে!!!!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.