নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্পঃ হুইলচেয়ার

৩১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৪২

হুইল চেয়ারের চাকা টা গর্তের ভিতরে বেশ ভাল করেই আটকেছে ! মেয়েটি বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে চাকাটা তুলতে পারলো না ! আমি মেয়েটির অসহায় মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন ! মেয়েটির নাকে একটু একটু ঘাম জমছে ! মেয়েটি আরেকবার বাঁদিকে তাকালো !

ঐ দিকে তার বাবা একটু আগেই হাটতে গেছে !

আমি ভাল করেই জানি ভদ্রলোক এতো জলদি আসবেন না ! পুরো পার্ক একবার চক্কর মেরে তারপর আসবেন ! প্রতিদিনই তাই করেন !



মেয়েটি এই সময়ে একা থাকে ! যদিও প্রতিদিনই মেয়েটির বাবা মেয়েটিকে সাথে করে নিয়ে যেতে চায় মেয়েটি ইচ্ছে করেই যায় না ! এই সময় টা মেয়েটি একা একা থাকে ! আসেপাশে প্রকৃতির রূপ একা একা উপভোগ করে !



আর আমি দুর থেকে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকি ! কেন থাকি কে জানে !

আমি মেয়েটির কাছে যাবো কি না এই সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা সময় নিলাম ! খানিকটা দ্বিধা নিয়ে মেয়েটির সামনে হাজির হলাম ! আমাকে সামনে দেখে মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সংকুচিত চোখ !

আমি বললাম

-মে আই হেল্প ? যদি আপনি চান আর কি ?



মেয়েটির চোখে আবার সেই সংকুচিত ভাব ! কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না ! আমি বললাম

-আপনার পছন্দ না হলে আমি চলে যাই ! আপনার বাবার আসতে আরও একটু সময় লাগবে মনে হচ্ছে !

মেয়েটি আবারও চুপ করে রইলো ! কেন জানি মনে হচ্ছে মেয়েটি অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলতে ঠিক অভস্ত্য না !

-আচ্ছা, আপনার মনে হয় ব্যাপারটা পছন্দ হচ্ছে না ! আমি যাই তাহলে !



আমি পা বাড়াতে যাবো তখনই মেয়েটি নরম কন্ঠে বলে উঠলো

-আচ্ছা একটু হেল্প করতে পারেন ! আব্বুর আসতে মনে হয় একটু সময় লাগবে !

আমি হুইল চেয়ার টা গর্ত থেকে তুলে নিয়ে এলাম ! একটু দুরেই একটা সিমেন্টের বেঞ্চ ছিল সেদিকে ঠেলে নিয়ে গেলাম !

বেঞ্চে বসতে বসতে বললাম

-আপনি তো প্রায়ই আসেন এখানে ? তাই না ?

-আপনি তো খুব লক্ষ্য করেন ! তাই না ?



আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম একটু ! কারন ঘটনা একটু সত্য ! আমি মেয়েটাকে দেখি ! একজন মাঝ বয়সী লোক একটা হুইল চেয়ার ঠেলতে ঠেলতে প্রতিদিন বিকেল বেলা এই পার্কে আসে ! আমি তাদের পেছন পেছন পার্কে হাটি ! মেয়েটাকে দেখি ! মেয়েটা তার বাবার সাথে টুকটাক কথা বলে, হাসে ! কিছুটা সময় মেয়েটা তার বাবাকে হাটতে পাঠিয়ে দিয়ে নিজের হুইল চেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে একা একা ঘুরে বেড়ায় !

আমি তাকিয়ে থাকি !



আমি স্বীকার করেই ফেললাম ! বললাম

-জি ! একটি লক্ষ্য করি আপনাকে ! মাঝে মধ্য কথা বলতে ইচ্ছে করে !

-আচ্ছা !

আরও কিছুক্ষন কথা হল ! আরও কিছুটা বলার ইচ্ছে ছিল কিন্তু দেখলাম মেয়েটির বাবা ফিরে এসেছে ! আমাকে দেখে ভদ্রলোক হাসলেন একটু ! তারপর মেয়েকে নিয়ে চলে গেলেন । আমি বসে রইলাম ।





মেয়েটিকে আমি বেশ কদিন থেকেই চিনি ! আমাদের বাসা থেকে মেয়েটার বাসাটা দেখা যায় বেশ ভাল ভাবেই ! আমি যখন বারান্দায় আসি তখনই মেয়েটাকে দেখতে পাই বারান্দায় বসে আছে হুইল চেয়ারে । মেয়েটার মুখটা একটা বিষন্ন মনে হয় । হবেই, শারীরিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ নয় যে কোন মানুষের জন্যই এটা সত্য ।

বিশেষ করে আমাদের বাড়ি থেকে একটু দুরে একটা ছোট্ট প্রাইমারী স্কুল আছে । মেয়েটা প্রায় সময় চেয়ারে বসে সেদিকে তাকিয়ে থাকে । বিশেষ করে যখন টিফিন পিরিয়ডে পিচ্চি ছেলেমেয়ে গুলো যখন মাঠে দৌড়াদৌড়ি করে তখন যেন মেয়েটার মুখটা আরও বেশি বিষন্ন লাগে । আমার খারাপ লাগে ।



কিন্তু মেয়েটার সাথে আমার কথা বলতে ইচ্ছে হয়েছে অন্য কারনে । প্রতিদিন সকালে উঠেই আমি খাটের উপর শুয়ে শুয়েই মেয়েটার বারান্দার দিকে তাকাতাম ! দেখতাম মেয়েটা প্রায়ই নিজের হুইল চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করছে । কোন কারন নেই । কিছুক্ষন গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আবার বসে পড়ছে ।

পরপর কদিন জিনিসটা দেখে একটু কৌতুহল হল, এমন করার কারন কি ? একদিন বারান্দায় এসে দেখার চেষ্টা করলাম কনে মেয়েটা এমন করে ?

কোন কারন কি আছে ?

তখনই মেয়েটা উঠে দাড়ায় নি ! হঠাৎ দেখলাম মেয়েটা উঠে দাড়ালো ! মানে চেষ্টা করছে । নিজে নিজে পারছে না তাই সামনে বারান্দার গ্রিল ধরে দাড়ালো !

আমি বোঝার চেষ্টা করলাম কেন মেয়েটা এরকম উঠে দাড়ালো ! তখনই একটা জিনিস আমার নজরে এল !

মেয়েটা এক হাত দিয়ে গ্রিল ধরে নিজের ব্যালেন্স ধরে রাখার চেষ্টা করছে এবং অন্য হাতটা নিজের বুকটার কাছে রেখেছে !

আর মুখে কিছু একটা বলছে....



কয়েক মুহুর্তের ভিতরেই আমার সারা শরীরে একটা ঝাকুনির মত অনুভুত হল যখন আমি বুঝতে পারলাম মেয়েটা কেন এভাবে দাড়িয়ে আছে ! আমার গায়ের লোম দাড়িয়ে গেল মুহুর্তেই !



পাশের স্কুলে এই সময়ে জাতীয় সংগীত গাওয়া হচ্ছে সকালের শরীর চর্চার শেষে ! আর মেয়েটা সেই জন্যই দাড়িয়েছে !



মুহুর্তের ভিতরেই নিজের কাছে লজ্জিত হয়ে গেলাম ! নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে নিজেকে কেমন যেন ছোট মনে হল খুব ! মেয়েটা একটা পা মনে ঠিক মত কাজ করে না তবুও মেয়েটা নিজের দেশের জাতীয় সংগীত কে সম্মান জানানোর জন্য এতো কষ্ট করে উঠে দাড়িয়েছে আর আমি ?

নিজের পা দুটি সুস্থ থাকা সত্তেও এই কাজটা কোন দিন করি নি !

লজ্জা আর রাখি কোথায় ?



তারপর থেকেই মেয়েটার সাথে কেন জানো কথা বলতে খুব বেশি ইচ্ছা করছিল ! আজকে পেয়েও গেলাম !





দুই

-তুমি আামকে লুকিয়ে কেন দেখো বললে না তো ?

পরদিন কথা হচ্ছিল পার্কে !

-কারন তুমি অনেক অনেক ভাল একটা মেয়ে তাই !

-তাই ? তুমি কিভাবে জানলে ? তুমি তো আমার নামই জানো না !

-জানি না ! কিন্তু আমি জানি ! তবে আমি জানি তুমি খবর সহজেই মানুষকে আপন করে নাও !

-কিভাবে জানো ?

-এই কালকে তুমি আমাকে আপনি করে বলছিলে আজকে তুমি করে বলছো ! আর তুমি এটা লক্ষ্যও কর নি !

ব্যাপাটা মনে হতেই মেয়েটা নিজেই হেসে উঠলো ! আমার মনে হল আমরা বন্ধু হয়ে গেলাম ! সে দিনই জানতে পারলাম মেয়েটির নাম জয়া !





পরদিন সকালে জয়া যখন বারান্দায় দাড়িয়ে বুকে হাত দিয়ে আমার সোনার বাংলা গাচ্ছিল আমিও দাড়িয়ে ছিলাম বুকে হাত দিয়ে ! জয়া মনে হল আমাকে দেখতে পেল ! গান গাওয়া শেষে আকটু হাসলোও আমার দিকে তাকিয়ে !





তিন

-জানো আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেছে ?

-তাই নাকি ?

-হুম !

তাই তো বলি জয়ার শরীরে একজন মুক্তিযোদ্ধার রক্ত বইছে ! তাইতো দেশের সংগীতের প্রতি এতো সম্মান ! আর আমাদের ?

আমরা কেবল সার্টিফিকেইন দিয়ে মুক্তি যোদ্ধা চিনি ! অন্য কিছুতে নয় !



তারপর থেকে জয়ার সাথে আমার কথা বার্তা বাড়তেই থাকে ! ওর বাবার সাথে কথা বলি বিকেল বেলা ! ওনার মুক্তিযুদ্ধের দিন গুলোর কথা শুনি !

আরও জানার আগ্রহ জাগে মনের ভিতর !

জয়ার বাবা যখন নিজের যুদ্ধের দিন গুলোর কথা আমাদের সামনে বলতে থাকেন ওনার চোখ মুখ এক আশ্চার্য দূত্যি দেখতে পাই সাথে সাথে জয়ার চোখে মুখে নিজের বাবার জন্য একটা গর্ব দেখতে পাই !



আমার প্রায়ই মনে হয় ইস আমার বাবাও যদি মুক্তিযুদ্ধ করতে তাহলে আমিও জয়ার মত গর্ব করতে পারতাম ! এই দেশটা পেছনে তাদের যে আত্মত্যাগ, যে অবদান তার জন্য তাদের ছেলে মেয়েরা গর্ব করতেই পারে ! করা উচিৎও !







চার

-আরে কি হল ?

-চল !

-কোথায় ?

-স্কুল মাঠে ?

জয়া আমার দিকে একটু তাকিয়ে রইলো অবাক হয়ে ! বলল

-এখন ?

-আরে বারান্দায় দাড়িয়ে থাকার চেয়ে সোজাসুজি মাঠেই যাই ! চল চল ! আমি নিয়ে যাচ্ছি !

জয়ার মুখে একটু আনন্দ দেখতে পেলাম ! ও রাজীও হয়ে গেল দ্রুত !



জয়ার মা প্রথমে একটু মানা করলেও তিনিই রাজি হয়ে গেলেন ! মেয়ে ইচ্ছে আর আনন্দটা মাটি হতে দিলেন না !



আমি জয়াকে নিয়ে স্কুল মাঠে হাজির হলাম ! তখন শারীর চর্চা প্রায় শেষ ! এখনই জাতীয় সংগীতে সাথে সাথে পতাকা উঠানো হবে ! আমি জয়া কে বললাম আমার কাথে হাত রেখে দাড়াতে !

জয়া তাই করলো !

নিজের ব্যালেন্স বজায় রাখতে একটু সময় লাগলো ! তারপর সোজা হয়ে দাড়ালো ! তখনই জাতীয় সংগীত শুরু হয়ে গেল !

চারজন মেয়ে সামনে দাড়িয়ে মাইকটা হাতে নিয়ে আমার সোনার বাংলা গাইতে শুরু করলো ! আর স্কুলের একজন বুড়ো মত শিক্ষক পাতাকা উঠানো শুরু করলো গানের সাথে সাথে !





আমার সোনার বাংলা,

আমি তোমায় ভালবাসি।



চিরদিন তোমার আকাশ,

তোমার বাতাস

আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।



ও মা,

ফাগুনে তোর আমের বনে

ঘ্রাণে পাগল করে

মরি হায়, হায় রে

ও মা,

অঘ্রানে তোর ভরা খেতে,

আমি কী দেখেছি মধুর হাসি।।



কী শোভা, কী ছায়া গো,

কী স্নেহ, কী মায়া গো,

কী আঁচল বিছায়েছ

বটের মূলে,

নদীর কূলে কূলে।



মা, তোর মুখের বাণী

আমার কানে লাগে

সুধার মতো-



মা তোর বদন খানি মলিন হলে

আমি নয়ন

ও মা আমি নয়ন জলে ভাসি

সোনার বাংলা,

আমি তোমায় ভালবাসি।








আস্তে আস্তে পতাকাটা একেবারে উপরে উঠে গেল ! উড়তে লাগলো বাতাসে ! গান শেষ করে হঠাৎ লক্ষ্য করলাম আমার চোখ কেন যেন ভিজে উঠেছে ! কেন আমি জানি না !

জয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর ঠিক তাই !

জয়া সেই পানি লুকানোর চেষ্টাও করলো না ! ওর চোখে একটা আশ্চার্য আনন্দ ছিল ! হুইল চেয়ারে বসতে বসতে বলল

-থেঙ্কিউ !

-কেন ?

-এই যে ! তুমি জানো না এটা আমার কত পছন্দের একটা কাজ !

-আজ থেকে আমারও ! আমরা এবার থেকে প্রতিদিন একসাথে এখানে আসবো ! ঠিক আছে ?

-ঠিক আছে ?



আমি জয়া কে আবার ওর বাসার দিকে নিয়ে গেলাম ! মনে রভেরতে কেমন একটা শান্তি শান্তি লাগছে ! কেন জানি না ! তবে লাগছে !











মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:১২

শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: খুব সুন্দর.. এক কথায় অসাধারন.. :) :)

৩১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:২৪

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ :):):)

২| ৩১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:২৫

লাভ ভাই বলেছেন: অসাধারন হয়েছে ভাইয়া....... :)

৩১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৩৮

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ :):)

৩| ৩১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৩১

মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌ বলেছেন: মনটা মোমের মত গলে গেল মনে হচ্ছে!!!!

৩১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৩৯

অপু তানভীর বলেছেন: :) :) :)

৪| ৩১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৪৯

রসায়ন বলেছেন: ধিকি ধিকি জ্বালা বুকের মাঝে এ প্রেমের ফাগুনে
গলে যায় মন মোমের মত হৃদয়ের আগুনে :)


অসাধারণ লেগেছে গল্পটা । নিজেকে নায়কের জায়গায় ধরে গল্পটা পড়লাম । আমারও চোখটা ভিজে উঠল !

৩১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৫৩

অপু তানভীর বলেছেন: লেখার সময় আমারও এমন টা হয়েছিল !

:)

৫| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:১৭

সংগ্রামী বালক বলেছেন: আমার বাবাও যদি মুক্তিযুদ্ধ করতো তাহলে আমিও জয়ার মত গর্ব করতে পারতাম|

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:১৮

অপু তানভীর বলেছেন: হুম !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.