| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শ্রাবণধারা
" আমাদের মতো প্রতিভাহীন লোক ঘরে বসিয়া নানারূপ কল্পনা করে, অবশেষে কার্যক্ষেত্রে নামিয়া ঘাড়ে লাঙল বহিয়া পশ্চাৎ হইতে ল্যাজমলা খাইয়া নতশিরে সহিষ্ণুভাবে প্রাত্যহিক মাটি-ভাঙার কাজ করিয়া সন্ধ্যাবেলায় এক-পেট জাবনা খাইতে পাইলেই সন্তুষ্ট থাকে......."
এসএসসি পাস করে তখন একাদশ শ্রেণিতে উঠেছি। সেই সময়ে, এখন গাজায় যেমন ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে, তখন বসনিয়া নামে ইউরোপের ছোট একটা দেশে এরকম এক গণহত্যা চলছিল। গাজার গণহত্যার সাথে তার পার্থক্য ছিল এই, গাজার গণহত্যা দিনের পর দিন আমাদের ফোনে লাইভ সম্প্রচার হয়েছে, বসনিয়ার গণহত্যা বিটিভির সংবাদ আর খবরের কাগজে সীমাবদ্ধ ছিল।
তখন কলেজে আমাদের দেয়ালপত্রিকা প্রকাশিত হতো। আমরা ছাত্ররা কাচাঁ হাতে কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ লিখতাম। বসনিয়ার গণহত্যা নিয়ে আমিও সেবার একটা কবিতা লিখে ফেললাম। গণহত্যা যতদিন কিশোর মনের দুঃখ হয়ে ছিল, ততদিন বেশ ছিল, কিন্তু যখন দেয়ালপত্রিকায় কবিতাটি প্রকাশিত হলো, তখন আমার মনে একটা ভ্রান্তি জন্মালো যে, খাসা একখানা কবিতা লিখে ফেলেছি। কবিতার ভাষা ও ছন্দ, সদ্ভাবসৌন্দর্য, প্রসাদগুণ বা প্রাঞ্জলতা বিষয়ে কোন ধারনা না থাকলেও, মনে হল এই কবিতা পুরস্কার না পেয়ে যায় না।
আমাদের একজন অত্যন্ত স্নেহপ্রবণ শিক্ষক সেবছর দেয়ালপত্রিকার বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন। কবিতাটি প্রকাশিত হলে তাঁকে আমি দু-একবার জিজ্ঞাসাও করে ফেললাম, কবিতাটা কেমন হয়েছে সে বিষয়ে। দুই-তিন মাস পরে কোনো এক অনুষ্ঠানে কলেজের প্রিন্সিপাল যখন দেয়ালপত্রিকায় প্রকাশিত পুরস্কার পাওয়া লেখকদের নাম ঘোষণা করলেন, দেখা গেল আমার কবিতাটিই সেরা কবিতার পুরস্কার পেয়েছে। বুক ফুলিয়ে, সেলুট ঠুকে প্রিন্সিপালের কাছ থেকে পুরস্কার নিলাম, আর মনে মনে বললাম, যা ভেবেছিলাম তাই, আমার কবিতাটি নির্বাচিত হয়েছে।
বহুদিন পরে, শ্রদ্ধেয় সেই শিক্ষক ততদিনে প্রয়াত। একদিন সেই বহুকাল আগে কবিতা লিখে পুরস্কার পাওয়ার ঘটনাটি মনে পড়ল। পুরাতন স্মৃতি খুটিয়ে খুটিয়ে ভাবতে গিয়ে উপলব্ধি করলাম, বহুবছর আগে যেমন ভেবেছিলাম আমার কবিতাটা সবচেয়ে ভালো হয়েছে তাই পুরস্কার জিতেছি, আসলে তা নয়। আসল ঘটনা হল, আমাদের সেই শিক্ষক কোনভাবে আমার মনের ইচ্ছাটা বুঝে গিয়েছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন, আমি মনে মনে আশা করেছি আমার কবিতাটি পুরস্কৃত হবে। কবিতাটা কেমন হয়েছে সেটা তার কাছে গুরুত্বপূর্ন ছিল না। আমার মনের প্রত্যাশাই তাঁর কাছে মুখ্য ছিল। আশাভঙ্গের কষ্ট যেন না পাই, সেই বিবেচনায় তিনি আমাকে পুরস্কারটি দিয়েছিলেন। আমার কবিতাটি হয়তো পুরস্কারের মাপকাঠিগুলো পূরণ করেছিল, কিন্তু পুরস্কারটি কবিতার প্রত্যক্ষ ফলাফল ছিল না। সেটা ছিল আমার সেই শিক্ষকের উপলব্ধির ফল, মহানুভবতার ফল, আমাকে তাঁর আশীর্বাদও হয়তোবা!
আমাদের জীবনের যা কিছু পুরস্কার, সবই কোন না কোন অদৃশ্য স্বীকৃতির মতো নয় কি? জীবনের অনেক প্রাপ্তিই আমাদের যোগ্যতার চেয়ে বেশি নয় কি?
(পরিশেষে: জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতে বসনিয়ার গণহত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছিল। গণহত্যার অপরাধে প্রেসিডেন্ট কারাদজিচ ও সেনাপতি ম্লাদিচকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরও ৯০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করা হয়েছিল।)
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২
শ্রাবণধারা বলেছেন: বলেন কী, আপনি এত পুরানা লোক নাকি? এই ঘটনা তো বেশ আগের।
আর শিবিরের সাথে বেশ ছোটবেলা থেকেই আপনার সম্পর্ক দেখি!
শিবির যাকে কালচার শিখায়, তার কিন্ত বাকি জীবনে আর কালচার্ড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না!
২|
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩০
করুণাধারা বলেছেন: বছর শেষের পোস্ট ভালো লাগলো!
নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইলো। আমাদের সবার জন্য শুভ হোক ২০২৬!
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২
শ্রাবণধারা বলেছেন: আপনাকেও নতুন বছরের শুভেচ্ছা করুণাধারা আপু। আশা করি ভালো আছেন।
৩|
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৯
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ২০০৫/০৬ সালের শুনেছি গান। তখন প্রাইমারী লেভেলের ছাত্র ছিলাম। শিবির সবসময় গাজা, বসনিয়া এসব নিয়ে রাজনীতি করতো । এদের কিছু গজল টাইপ ক্যাসেট পাওয়া যেত। ফুলকুড়ি নামে একটি সংগঠন ছিলো। কিশোরকন্ঠ নামে একটা বই বের হতো।
বড়ো মামার লাভ ম্যারেজ ! মামীর পরিবার একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক ছিলেন। বড়ো মামী শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন ধরে নিয়ে যায় তখন নাকি কুরআন খতম দিয়েছিলেন। সে মানুষ পরে ছাত্রী সংস্থায় যোগ দিয়ে যোগ দিয়ে পরিণত বয়সে জামাতের প্রভাব শালী রুকন ছিলেন।
জামাত-শিবিরকে কাছে থেকে দেখেছি। তাই উহাদের ভন্ডামি চিনতে অসুবিধা হয় না।
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩৮
শ্রাবণধারা বলেছেন: ধন্যবাদ।
২০০৫-০৬ সালের দিকে সম্ভবত জাতিসংঘের আদালতে বসনিয়া গণহত্যার বিচার চলছিল। গণহত্যার ঘটনা আরো প্রায় ১০ বছর আগের।
আপনি বিভিন্ন মন্তব্যে আপনার বড় মামির কথা লিখেছিলেন, মনে আছে। জামাত-শিবিরকে কাছে থেকে দেখে থাকলে, আপনি নিশ্চয়ই তাদের বেশ ভালই চিনবেন।
জামাতের পাদবিজ্ঞান (এদের দলের লোকের বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন বিকৃতচিন্তার বিষয়গুলো নিয়ে) বলে একটা লেখা লিখব বলে, মনে মনে ভাবছিলাম। এখন আপনি আবার জামাতের পাদসংস্কৃতি বলে একটা নতুন জিনিস মাথায় ঢুকিয়ে দিলেন।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: বসনিয়ার জেনোসাইড প্রথম আমার নজরে আসে শিবিরের কালচারাল সংগঠনের একটা সংগীত শুনে । আমার বড়ো মামী জামাতের রুকন ছিলেন । বড়ো মামার বাসায় গেলে এসব গান শুনতাম । তখন পেপারে এ বিষয়ে আরো ডিটেইলস পড়া শুরু করেছি।