| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি
সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।
রিকশায় করে ঢাবির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ মনে হলো-কাজী নজরুল ইসলামের কবরটা জিয়ারত করে আসি, সাথে ওসমান হাদির কবরটাও একবার দেখে নিই। একদিকে বিদ্রোহী কবি, আরেকদিকে নতুন আবিষ্কৃত বিপ্লবী-জাতীয় ভারসাম্য রক্ষা হয়।
রিকশা থামিয়ে নামলাম। ভাড়া দিতে ধরেছি—ঠিক তখনই রিকশাওয়ালা এমন ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলো, যেন সে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কথা বলছে।
- “মামা, আপনে কি ওসমান হাজীর কবর জিয়ারত করতে আসছেন?”
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
- “ওসমান হাজী কে?”
লোকটা আমাকে এমন চোখে দেখলো, যেন আমি সংবিধান ছিঁড়ে ফেলেছি।
- “এই যে মামা, সেদিন যে মারা গেলো। এইখানেই তো কবর দিছে হেরে।”
আমি বললাম,
- “সে তো ওসমান হাদি।”
রিকশাওয়ালা তখন জ্ঞানের এমন এক স্তরে পৌঁছালো, যেখানে তথ্য আর যুক্তি ঢুকতে পারে না।
- “হাজী আর হাদি একই জিনিস। আরবীতে হাজী, বাংলায় হাদি। আর সেও তো হজ্ব করছে—ফেসবুকে দিছিলো।”
এই পর্যায়ে আমি বুঝে গেলাম—এ দেশে গবেষণা লাগে না, লাগে বিশ্বাস।
ভাড়া দিতে চাইলে রিকশাওয়ালা হাত নেড়ে উঠলো।
- “কি যে বলেন মামা! আপনে শহীদের কবর জিয়ারত করতে আসছেন, আমি আপনের কাছ থিকা ভাড়া লইমু? আপনে তো আমারে জান্নাতের রাস্তায় দাড় করাইছেন।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
- “ওসমান হাদি সম্পর্কে তুমি আসলে কী জানো?”
রিকশাওয়ালা তখন পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় বয়ানে।
- “সে অনেক ইসলামিক লোক আছিল। নামেই প্রমাণ। ভাড়া লাগবো না। আপনের ফোনে নেট আছে—আমারে ওসমান হাজীর একটা ওয়াজ শুনান।”
আমি ভাবলাম—এই দেশটা আর নির্বাচনে চলে না, চলে ওয়াজে।
ফেসবুক খুলে একখানা বিপ্লবী ওয়াজ চালু করে তার হাতে দিলাম।
রিকশাওয়ালা এমন মনোযোগ দিয়ে শুনছে, মনে হলো এই ওয়াজ শেষ হইলেই সংবিধান সংশোধন হবে।
ঠিক তখনই-ধপাস!
পেছন থেকে আরেকটা রিকশা এসে আমাদেরটায় গুতা মারলো।
এক সেকেন্ডে ওয়াজ অফ, নৈতিকতা অফ, ধর্মীয় চেতনা অফ।
রিকশাওয়ালা মোবাইল ফেরত দিয়ে লাফিয়ে নামলো।
- “তুই ধাক্কা দিলি কেন খানকীর পোলা! আইজকা তোর শাউয়া-মাউয়া একদম…”*
আমার ফোনে তখনও ভেসে আসছে—
“ইসলাম শান্তির ধর্ম…”
আমি দাঁড়িয়ে ভাবলাম—
এই দেশের রাজনীতি রিকশাওয়ালার মতোই।
ওয়াজে বিপ্লবী,
স্ট্যাটাসে শহীদ,
ধাক্কা লাগলে আদিম।
এখানে আদর্শ মানে পরিস্থিতিনির্ভর,
নৈতিকতা মানে নেট থাকলে,
আর রাষ্ট্র মানে—যতক্ষণ কিছু ধাক্কা লাগেনি।
তারপর আমরা অবাক হই—
কেন জঙ্গি জন্মায়,
কেন ফ্যাসিজম ফেরে,
কেন মানুষ আবার শক্ত হাত খোঁজে।
এই দেশে সমস্যা নেতা না।
সমস্যা হলো—আমরা সবাই রিকশায় বসে বিপ্লব করি,
কিন্তু ধাক্কা লাগলেই নামিয়ে দেই সব আদর্শ।
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:১০
এস.এম. আজাদ রহমান বলেছেন: এইতো ধাক্কা লেগেছে তাহলে, নিজেরমত না হলেই আদর্শ আর লাইনে থাকতে চায় না।
২|
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:০১
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: আমরা সবাই রিকশায় বসে বিপ্লব করি,
........................................................................
ডুস না খেলে হুস হয়না ।
হুজুগে বাঙালী তাই ৫৪ বৎসরেও
নিজ আত্ন পরিচয় খুঁজে বেড়ায় ।
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৮
এস.এম. আজাদ রহমান বলেছেন: জি ভাই একদম সত্যি।
৩|
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৩
রাসেল বলেছেন: আমার দৃষ্টিতে দুইটা বিষয় উঠে এসেছে (১) হাদির প্রতি রিকশাওয়ালার অন্ধত্ব এবং (২) রিকশাওয়ালার অশ্লীল ভাষা।
আমার বিবেচনায়, উভয়ই এসেছে শিক্ষার অভাব থেকে এবং সমাজের নেতৃত্ব স্থানীয় (রাজনৈতিক পর্যায় এবং প্রশাসনিক পর্যায়) ব্যক্তিদের নিরপেক্ষতাহীনতার কারণে। সমাজের নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিগণ নিরপেক্ষতাহীন কেন, আমরা সবাই জানি।
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৫
এস.এম. আজাদ রহমান বলেছেন: ভাল বিশ্লেষন, ধন্যবাদ।
৪|
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: একদম সঠিক।
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৪
এস.এম. আজাদ রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।
৫|
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৫৫
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: রিক্সাওয়ালাদের মূখের ভাষা একটু খারাই হয়তো, এই জাতীর শিক্ষিতদের আসল রুপ দেখা যায় যখন স্বার্থের হেরফের হয়।
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৪
এস.এম. আজাদ রহমান বলেছেন: যথার্থ মূল্যায়ন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৭
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: এটা আপনার বিদ্বেষ থেকে বানানো কথামালা।