নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

বসন্ত শেষের দিন

০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:০৯

চটপটি ওয়ালা তার রসদ গুছিয়ে নিচ্ছে। বিকেল হয় হয়। একজন- দু জন করে কাস্টমার এসে জমা হচ্ছে। ফুটপাথের ওপর স্যান্ডেলের দোকান সাজিয়ে বসেছে বিক্রেতা। শুকনো মত একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে দরদাম করছে। আঁচার ওয়ালা হাঁকাচ্ছে –“ আচাআআআর... এই টক- ঝাল- মিষ্টি আচাআআআর... এএএই কাশ্মীরি আচাআআআর”। তানি দূরে, হলের গেটের সামনে থেমে গিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। আমার দিকে হাত নেড়ে ঢুকে গেল হলের ভেতর।
তানি হলের ভেতর ঢোকার পর আমার চারপাশে নজর বোলানোর ফুসরৎ হল। ব্যাগটা কাঁধে বেয়াড়া রকম বেশী ঝুলে আছে, যেন সুযোগ পেলেই আছাড় খেয়ে পড়বে মাটিতে। ব্যাগ টেনে টুনে কাঁধে ভালো মত তুলতে তুলতে খেয়াল করলাম, চটপটিওয়ালার পাশে বসা এক কাপল আমার দিকে কৌতূহলী চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। আমিও কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে থেকে হাঁটা শুরু করলাম। গন্তব্য টিএসসি হয়ে শাহবাগ। ওখান থেকে বাসে করে মহম্মদপুরে, আমার মেসে।
টিএসসির সড়ক দ্বীপে স্বপন মামার চায়ের দোকানে এক দঙ্গল ছেলে মেয়ের ভিড়। গীটার হাতে লম্বা চুলো এক ছেলে চে এর ক্যাপ মাথায় দিয়ে গান গাইছে। সামনে বসা মেয়েগুলির ঢলো ঢলো দৃষ্টি তার কণ্ঠে নতুন কি ব্যঞ্জনা যোগ করছে তা এত দূর থেকে আর বুঝে উঠতে পারলাম না। হাকিম চত্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্মক্লাবের হর্তাকর্তা প্রবালদা , প্রণবদা, ইমরান ভাইদের দেখা যাচ্ছে। কি এক বিষয় নিয়ে মাথার ওপর হাত নেড়ে নেড়ে দারুন তর্ক বিতর্ক করছে তারা । হয়ত কোআন্টিন ট্যারেন্তিনোর নতুন মুভি “জ্যাঙ্গো আনচেইনড” – ভায়োলেন্স আগের চেয়ে কমিয়ে দিয়ে ট্যারেন্তিনো তার সিগনেচার মার্ক হারিয়ে ফেলেছে কিনা , অথবা সুপারম্যান সিরিজের নতুন মুভি – “ম্যান অফ ষ্টীল”- এর পরিচালনার ভার হলিউডে এই প্রজন্মের সেরা ডিরেক্টর ক্রিস্টোফার নোলেন নিজে না নিয়ে জ্যাক স্নাইডারকে ছেড়ে দিয়ে ভালো করেছে কিনা- এই সবই তাদের যুক্তি তর্কের বিষয়বস্তু। আমি একপলকের জন্য স্তব্ধ হয়ে তাদের দিকে তাকাই। চোখ বন্ধ করে মনে মনে তাদের বিতর্কে ক্ষণকালের জন্য সামিল হই । তারপর পা বাড়াই ।
সুবিশাল এই ইউনিভার্সিটির যত ছাত্র ছাত্রী আছে তাদের জিজ্ঞেস করে দেখুন - কি হতে চাও , বা কি করতে চাও পড়াশোনা শেষ করে? একশ জনের মধ্যে নিরানব্বুই জন জবাব দেবে, চাকরি করব। কোথায়? আইবিএ বা বিজনেস ফ্যাকাল্টির হলে বলবে ব্যাট( ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো), সায়েন্সের ফার্মেসী বা মাইক্রোবায়োলজি অথবা এপ্লাইড ক্যামেস্ট্রী ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট হলে বলবে কোনও ফার্মাসিউটিকেলস এর কথা। বাদ বাকি সব একগাল হেসে বলবে- “বিসিএস দিমু ভাই!” বা, “ব্যাংকে চাকরির প্রিপারেশন নিচ্ছি” । এতগুলো ছাঁচে গাঁথা মানুষের ভিড়ে, এই চে এর ক্যাপ পরা গীটার হাতে ছেলেটি বা, ফিল্ম ক্লাবের প্রবালদা-প্রণবদা- ইমরান ভাই, এরাই বেতিক্রম। তারা জানতে চায়, বুঝতে চায়, সব কিছু নিয়েই অনেক অনেক প্রশ্ন তাদের। বড় কথা হল সব কিছু নিয়ে তাদের আছে একটা নিজস্ব মতামত।
ডানে ছবির হাট রেখে বামে চারুকলা। ভেতরে উঁকি দিলেই দেখা যাবে আনমনে কেউ তুলি ক্যানভাস নিয়ে বসে ছবি আঁকছে। অথবা, প্রদর্শনী হলে নবীন কোনও চিত্রশিল্পীর আর্ট একজিবিশন চলছে। বুঝে, না বুঝে অনেক কৌতূহলী চোখ ঝুলে আছে ছবিগুলোর ওপর।
ছবির হাটের বিপরীত দিকের গেটে দেখা যাবে কম বয়সি দুই ছেলে মিলে চিকেন ফ্রাই – ফ্রেঞ্চ ফ্রাই , আলুর চপ ইত্যাদি বানিয়ে বিক্রি করছে । বয়স কত হবে আর , পনের- উরধে ষোল । এদের আমার এই ক্যাম্পাসের সব চেয়ে আয়রনিকেল ফিগার মনে হত । এত বড় বিদ্যাপীঠ আমাদের সবার প্রিয় এই ক্যাম্পাস। কিন্তু বেঁচে থাকার তাগিদ এদের মত কত কত কমবয়সি ছেলেপিলেকে বাধ্য করেছে এই ক্যাম্পাসকে ঘিরেই নিজেদের অন্ধকার জীবনকে আরও অন্ধকারের দিকে ঠেলে নিয়ে যেতে ! অনেকটা মোমের আলোর নীচে লুকিয়ে থাকা অন্ধকারের মত । এই সমস্ত বিষয় একসময়ে অনেক ভাবতাম । রাত দিন ভাবতাম । এখন ভাবা ছেড়ে দিয়েছি । জীবন একটা সময় এসে চিন্তার ডানা অল্পতেই গুটিয়ে ফেলে । চিন্তাভাবনাকে বল্গাহীন ঘুড়ির মত আকাশে উড়তে দেবো- সেই সৌভাগ্য নিয়ে অন্তত আমি পৃথিবীতে আসিনি ।
এরি মধ্যে আমার ক্লান্ত বিধ্বস্ত পা টেনে হিঁচড়ে আমাকে আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সারাদিন ধকল গেছে অনেক। আর দাঁড়াতে না পেরে বসে পড়লাম রাস্তার পাশে।
যে চরিত্রগুলোকে পেছনে ফেলে আসলাম, আজীবনের খায়েস ছিল, এদের একজনের মত হবার। গায়ক না হতে পারি, শ্রোতা হিসেবে হয়ত মন্দ হতাম না। ইমরান ভাইদের মত চলচিত্রবোদ্ধা না হয় নাই হতাম, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনতে তো আমার কোনও আপত্তি থাকত না। ছবি আঁকা এ জীবনে হত না জানি, কিন্তু ছবি দেখতে আমার বরাবরই ভালো লাগত। কি করলাম অনার্সের এই চার চারটে বছর?
পাশে ধুলোয় পড়ে থাকা এক কৃষ্ণচূড়া ফুলের আগুনে লাল রঙ হঠাৎ আমার নজর কাড়ল।
আজ বসন্তের শেষ দিন। পড়ন্ত বিকেলের রোদে আমার দীর্ঘাইত ছায়া রাস্তার ওপাশের দেয়ালে গিয়ে পড়ছে। বিশাল সে ছায়া আমার কৃষ কায়ার জন্য এক নিশ্চুপ বিদ্রূপ। অন্য ভাবেও ছায়ার মেটাফর সাজানো যেতে পারে। বলা যেতে পারে ভার্সিটির চারটি বছর কাটিয়ে দিলাম এক হিসেবে ছায়ার পিছে ছুটে ছুটে।
আজও মনে আছে ভার্সিটি জীবনের প্রথম দিনের কথা। গ্রামের বাড়ি থেকে আক্ষরিক অর্থে একবুক স্বপ্নমাত্র সম্বল নিয়ে যখন ঢাবির বিশাল ক্যাম্পাসে পা রাখি তখন প্রথম দর্শনেই মনে হয়েছিল, এই জায়গাই হবে আমার স্বপ্ন পুরনের কারখানা। ততদিনে গ্রামের অপার অপার্থিব সবুজ নিয়ে ছড়াটাইপ কবিতা লিখে হাত পাকিয়ে ফেলেছি। জীবনানন্দের অধ্যায় শেষ করে ততদিনে আমার শামসুর রাহমান, রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ , হেলাল হাফিজ বা আবু জাফর ওবাইদুল্লাহের পর্ব শুরু। মনে হয়েছিল, অনেক কিছু দেয়া-নেয়ার আছে আমার ইট পাথরের জঙ্গল এই ঢাকা শহরের সাথে। চারবছর পরে, আজ যখন আজিজের সামনে বসে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি, তখন আমার ছোট খুপরি ঘরের মত মেসের কোথায় লুকিয়ে আছে গ্রাম থেকে যত্ন করে নিয়ে আসা কবিতার খাতা, আমি জানি ও না।
চারবছর আগের এক দিন। ফার্স্ট ইয়ারে, ফখরুল স্যারের ক্লাসে কি এক কথায় চলে এল পাবলো নেরুদোর কবিতা। স্যার জিজ্ঞেস করলেন, আমরা কেউ নেরুদোর নাম শুনেছি কি না। ক্লাসের সব পাঠ্যবইখেকো পণ্ডিত ছাত্রেরা প্রশ্ন শুনে নোট নেবার ভঙ্গি করে ঝুঁকে পড়লো নোট খাতার ওপর। বাকিরা বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজল। আর ব্যাকবেঞ্চাররা তাদের সামনের সীটে বসা ছেলেপেলেদের পিছনে মুখ লুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আমি নিজেও তখন খুব মনোযোগ দিয়ে আমার সামনের জনের পিছে মুখ লুকিয়ে ঘাপটি মেরে আছি, এমন সময় শুনলাম হঠাৎ মিষ্টি কণ্ঠে কে যেনো পড়ে চলছে-
I want you to know
one thing.

You know how this is:
if I look
at the crystal moon, at the red branch
of the slow autumn at my window,
if I touch
near the fire
the impalpable ash
or the wrinkled body of the log,
everything carries me to you,
as if everything that exists,
aromas, light, metals,
were little boats
that sail
toward those isles of yours that wait for me.

কৃষ্ণচুড়া ফুলটি কুড়নোর পর দেখলাম, এখনও বেশ সজীব রয়েছে। সৌভাগ্যবান, নয়কি? পায়ের তলার মাটি সরে গেলে মানুষইতো মুহূর্তে দুমড়ে মুচড়ে যায়।
প্রেমে পড়ার জন্য আমি কোনও মনিকা বেলুচ্চি বা জুলিয়া রবার্টস কে খুঁজছিলাম না। যে জায়গায় বড় হয়েছি, সেখানে পর্দার আড়াল থেকে কোনও মেয়েকে উঁচু গলায় কথা বলতে দেখাটাও ব্যতিক্রম ছিল। কাজেই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ক্লাসরুমে বসে কোনও মেয়ে পাবলো নেরুদোর কবিতা আবৃত্তি মোটেও অস্বাভাবিক কিছু না হলেও আমার জন্য তা ছিল পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যের মত।
ওর অনেক কিছুই অস্বাভাবিক ছিল আমার জন্য। গীটার বাজিয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়া, আর্ট গ্যালারীতে গিয়ে তরুন আঁকিয়েদের ছবি প্রদর্শনী দেখা, ক্যাননের ডিএসএলার ক্যামেরায় সময় পেলেই ছবি তুলতে থাকা, সেমেসটারের ফাঁকে ফাঁকে হঠাৎ ঘুরতে বেরিয়ে পড়া, মেরেলিন মনেরো স্টাইলে চুল রাখা- সবকিছুই আমাকে অবাক করত। সবচেয়ে মুগ্ধ হতাম ওর সবার সাথে প্রাণবন্তভাবে সবার সঙ্গে মেশা, আর দিলখোলা হাসি!
আমার গ্রামে আমি ছিলাম হিরো। অনেক ছেলেপেলের আদর্শ। কলেজ লাইফে নাটক লিখে- ডিরেকশন দিয়ে মঞ্চস্থ করে, গল্প-কবিতা লেখে খাতা ভরিয়ে শিক্ষকদের ভালোবাসার পাত্রে পরিনত হয়েছিলাম সহজেই। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে গেলাম এই নারীমূর্তির সামনে। এমন কিছু নেই যা ও জানেনা! শিল্প সাহিত্যের এমন কোনও শাখা প্রশাখা নেই যাতে ওর গমন নেই! মুগ্ধতা থেকে ভালবাসা।
একদিন ফ্রেন্ড সার্কেলের আড্ডায় এককথা দু কথায় বেরিয়ে পড়লো তানি-ও নাকি ক্লাসে এসে মাঝে মাঝে আমার খোঁজ করে।
সে সময় শাহরুখ খানের ওম শান্তি ওম সিনেমা মাত্র রিলিজ পেয়েছে। সারাদিন শুনতাম ঐ সিনেমার “ আঁখো মে তেরে আজব হি আজব সি আদায়ে হ্যাঁয়” গানটা। জহরুল হক হলের পুকুর পাড়ে বসে দুপুরবেলা কানে এয়ারফোন লাগিয়ে একই গান বার বার, বার বার শুনতাম। কল্পনা করতাম, তানি ঐ সিনেমার নায়িকা দীপিকা পাদুকনের মত গাড়ি থেকে বের হয়ে আসছে। হাজারো মানুষের ভিড়ে আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ও হঠাৎ ভিড়ের মাঝে আমাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এসে হাত ধরে টেনে বের করে যেন নিয়ে এল। চিন্তা করেই সে কি আনন্দ আমার!
একদিন, এরকমই এক দুপুর বেলা পুকুরঘাটে বসে দিবাস্বপ্ন দেখছি চোখ বুজে। ফাঁকে ফাঁকে ভেবে চলেছি তানিকে সেদিন কেমন লাগছিল ক্লাসে, কিভাবে কথা বলেছিল সবার সাথে, ক বার হেসেছিল, আমার দিকে ক বার তাকিয়েছিল- ইত্যাদি ইত্যাদি।
গায়ের ওপর হঠাৎ গাছের একটা পাতা পড়লে চোখ খুলি। দেখি, তানি আমার পাশে বসে আছে!
হায়রে, পাগলই হয়ে যাচ্ছি- ভাবলাম মনে মনে। আগে চোখ বুজে কল্পনার চোখে দেখতাম তানিকে , এখন চোখ খুলেও ওকেই দেখতে পাই! তাকিয়ে দেখলাম, তানি মুচকি হাসছে আমার দিকে। ধড়মড় করে উঠে বসলাম, এটা আসল তানি ! শত ভাগ আসল তানি !
সেদিন বিকাল পর্যন্ত তানি গল্প করল আমার সাথে। অনেক হাসির সাথে ভাগ্য অনেক কান্নাও মিশিয়ে রেখেছিল সেদিন আমার জন্য। তানি আমার ভালোবাসার কথা শুনে জানালো, ভার্সিটির ক্লাস শুরু করার আগেই ওর আকদ হয়ে গেছে।
ও যখন কথাটা আমাকে বলল, তখন কি একবারের জন্য ওর চোখের পাতা টল টল করে ওঠেনি? কেঁপে ওঠেনি বুকের ভেতরটা একবারের জন্যও? তবে ওর মুখ মলিন কেন হয়ে উঠেছিল? কেন ওর আকদের কথা বলার সময় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল ও ? কেন এরপর আর পাঁচ মিনিটও বসতে তর সইল না ওর ? কেন সাথে সাথেই উঠে চলে গেল ও?
অনেকগুলো প্রশ্নের জবাব আমার আজও অজানা। কিন্তু ঐ যে আগেই বলেছি, ছায়ার পেছনেই ছুটে চলেছি চার চারটি বছর তারপরও। রেগুলার সকালবেলা ওর হলের সামনে গিয়ে বসে অপেক্ষা করা থেকে নিয়ে ক্লাস শেষের পর আবার হল পর্যন্ত আগিয়ে দেয়া আর মাঝখানে যতটুকু সময় একসাথে থাকা যায় তার পুরোটুকু একসাথে কাটানো।
আজ আমাদের অনার্স শেষের দিন। সারাটাদিন সবাই হই হল্লা করে কাটিয়ে দিয়েছে। অজান্তেই একটা হাত আমার কপালের চলে এল। তানি, আমি চলে আসার আগে এখানে ওর আলতো হাতের ছোঁয়ায় একটুখানি রঙ মাখিয়ে দিয়েছে। ধুলে এ দাগ মিলিয়ে যাবে, হাসি চলে এল ভাবতেই- মনে যে দাগ কেটে গেল, তা তুলবো কি দিয়ে ?
তানির এক কাছের বান্ধবীর মুখে শুনলাম, নয়ন এই মাসেই ওর স্বামীর কাছে, লন্ডনে চলে যাবে। ওখানেই মাস্টার্স করবে।
কিছুই হল না। একটা বলার মত কবিতা এল না, বলার মত একটা রেজাল্ট করতে পারলাম না, একটা ভালো বন্ধু বানাতে পারলাম না, যাকে দেখে দেখে চারটা বছর পার করে দিলাম, সে সপ্তাখানেকের মধ্যে চলে যাচ্ছে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে,আমার থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে। হয়ত আর কখনো দেখাও হবে না ওর সাথে।
বাসের অপেক্ষায় বসে আছি। এমন একটা একটা বাস যদি আসত, যেটায় চড়ে বসলে সব ঝুট ঝামেলা পেছনে ফেলে অন্য কোনও সময়ে অন্য কোনও পৃথিবীতে হাজির হওয়া যায়! ক্লান্ত পা দুটোর ওপর ভর করে দাঁড়ালাম, হাঁটতে শুরু করলাম যেখানে আলো আর আঁধার মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে , সেদিকে।

পরিশিষ্টঃ রাস্তায় মুহূর্তে জড়ো হওয়া শত শত মানুষের চোখ বাসের চাকায় পিশ্ঠ ছেলেটার মৃতদেহের ওপর আটকে থাকলেও কেউ কিন্তু অদূরে ধুলোর মাঝে পড়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া ফুলটিকে খেয়ালই করল না। অথচ, জীবনের শেষ কিছু মুহূর্তে ছেলেটা তার জীবনকে এই ফুলের ক্ষণস্থায়ী আয়ু্স্কালের চেয়েও অনর্থক ভেবেছিল। সারাজীবন ধরে মানুষের একটু মনোযোগ- একটু শ্রদ্ধা – ভালবাসার আকঙ্খায় গুমরে মরা হাড়হাভাতে ছেলেটা যেভাবে সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হল, ব্যাপারটা এইভাবে না হলেও কি চলত না ?

কিন্তু এটাই হয়ত পৃথিবীর নিয়ম। নিঙরে জীবনের শেষ বিন্দুটুকু শুষে নেয়ার আগে কারো দিকে এই মোহিনী ভ্রুক্ষেপও করে না ।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৩:৩৫

ছিন্ন মূল বলেছেন: ভাই আইডি খুলেই এক সাথে এত পোস্ট (৪.৩০ ঘণ্টায় মাত্র ৬১ টা #:-S ) কেন এবং কিভাবে ??

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৫:৫৩

েবনিটগ বলেছেন: অভিনন্দন সামুতে, কোন সুবিধা অসুবিধায় ম্ন খুলে সবাইকে জানাবেন।

৩| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৪৩

বটবৃক্ষ~ বলেছেন: সুন্দর! হ্যাপি ব্লগিং!! :)

৪| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:১১

টিসেলিম বলেছেন: প্রথম পোস্ট ৯:২৯পি এম শেষ পোস্ট ১:০৯ এ এম .। মাঝখানে সময় ব্যবধান ৩ঘন্টা ৪০ মিনিট মানে ২২০ মিনিট .। একেক টা পোস্ট প্রতি সময় ব্যয় ৩.৬১ মিনিট!

৫| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৩৮

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ব্লগার বন্ধু ছিন্নমূল এবং বন্ধু টিসেলিমঃ

আমি ব্লগের নিয়ম কানুনের ব্যাপারে একদম আনকোরা । একটা বড় সম্ভাবনা ছিল গতকাল রাতে আমার মডেমের ব্যালান্স শেষ হয়ে যাওয়ার এবং হাস্যকর হলেও সত্য এই যে ,নতুন একাউন্ত খোলার পর আমার মডেমের ব্যালান্স শেষ হবার আগেই আমি সব লেখাগুলি নিয়ে আমার একাউন্ত এ রাখতে চেয়েছি। তাই এক সাথে এত পোস্ট।

লেখাগুলি এক রাতে লেখা না , বা কপি পেস্ট ও না। গত প্রায় এক বছর ধরে লেখা গুলি আমি আমার ফেসবুক একাউন্তে নোটস হিসেবে শেয়ার করে আসছি।

সামুতে মাত্র একদিন বয়েসি এক ব্লগারের লেখা পড়া এবং মন্তব্য করার বিনীত ভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। :)

৬| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৪১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: বন্ধু ব্লগার বেনিটগঃ অবশ্যই ভাই , সাহস পেলাম দৃঢ় পায়ে এগিয়ে যাওয়ার। :)

৭| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৪১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ , ব্লগার বন্ধু বটবৃক্ষ :)

৮| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৫

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: হ্যাপি ব্লগিং!!!

:) :) :)

৯| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:২০

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ বন্ধু বর্ষণ । :)

১০| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৩২

সদয় খান বলেছেন: চালিয়ে যান...

১১| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:০৮

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: সদয় অনপ্রেরনার জন্য ধন্যবাদ , বন্ধু সদয় খান :)

১২| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৬

কাক ফ্রাই বলেছেন: পেচা ব্লগে কি আপনি লিখেন ? লিখলে কোন নামে ?

১৩| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:১০

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: সাজিদ আবির নামে লিখি। তবে রেগুলার না। :)

১৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১৮

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
লেখাটি কি প্রকাশিত ? ভিন্নরকম ভাল লাগা ৷

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:১৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: এটা আমার ইহজনমে লেখা প্রথম গদ্য, জাহাঙ্গীর ভাই! :P

এখন পর্যন্ত অপ্রকাশিত অবস্থায় আছে।

ধন্যবাদ জানাই এত পেছনের পুরাতন একটা লেখা খুঁজে বের করে পড়ায় ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.