নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদ ই মিলাদুন্নবি (সঃ) নিয়ে দু\' কথা

২০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:২৯

দেওবন্দী সুফি ঘরানায় আমার ইসলাম শিক্ষা। আমাদের পাক - ভারত উপমহাদেশে দেওবন্দী আর বেরেলভি / রেজাখানি এই দুটো ট্র্যাডিশনের গুরুত্ব অনেক।
.
বেরেলভি ট্র্যাডিশনের সবচে সুন্দর প্রতিশব্দ, আমার মতে - ফোক (Folk) ইসলাম। মানে, ইসলাম পাক - ভারতীয় উপমহাদেশে আসার পর, শত শত বছরের পথ পরিক্রমায় আউলিয়া - সূফী, এবং তাদের ভক্ত - খাদেমদের হাতে যে শেইপ লাভ করেছে, সেটা। তারা নিজেদের আলাদাভাবে সুন্নি বা সূফীও দাবি করেন। মাইজভাণ্ডার হচ্ছে এই ট্র্যাডিশনের বোধগম্য একটা উদাহরন, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে।
.
আর দেওবন্দী ট্র্যাডিশনের জন্ম একটা এন্টি কলোনিয়াল, এন্টি ব্রিটিশ স্ট্রাগল থেকে, সিপাহী বিদ্রোহের পর পর, ১৮৬৬ সালে। এটা প্রথমত একটা সূফী ট্র্যাডিশন, কারন দেওবন্দী ধারার প্রধানপুরুষ যিনি, সেই হাজি ইমদাদুল্লাহ সাহেব মূলত সূফী, এবং আধ্যাত্মিক সাধক ছিলেন। সিপাহী বিপ্লবের সময় সাহারানপুর - থানাভবন থেকে সরাসরি যে ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রাম মুসলমানেরা আয়োজন করে, তার সর্বাধিনায়ক ছিলেন এই হাজি সাহেব। মুসলিমরা পরাজিত হলে হাজি সাহেব মক্কায় হিজরত করেন, কারন তার নামে গ্রেফতারি, এবং ফাঁসির পরোয়ানা ছিল ব্রিটিশদের তরফ থেকে। এই হাজি সাহেবের শিষ্য, মাওলানা কাসেম নানুতবি (রহঃ) দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রধানতম প্রতিষ্ঠাতা।

.
বেরেলি - দেওবন্দী বাদেও এই উপমহাদেশে লা মাজহাবি / গায়রে মুকাল্লিদ / আহলে হাদিস / সালাফি / ওয়াহাবিরাও ছিলেন, আছেন। সুন্নিদের মধ্যে মোটাদাগে এই কিছু ভাগ আমাদের এখানে।
.
ঈদ এ মিলাদুন্নবী (সঃ) - নামে বিশাল উৎসব আয়োজন, সমাবেশ, মিলাদের জলসা আয়োজন করেন বেরেলভি ট্র্যাডিশনের হজরতরা। দেওবন্দী ট্র্যাডিশনে এই দিন আলাদাভাবে সেলিব্রেট করা হয় না। সালাফিরা সরাসরি একে বিদাত উল্লেখ করে হারাম ঘোষণা করেন। উদাহরনত - জাকির নায়েক সাহেব যেমন তার সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্টে ঈদ এ মিলাদুন্নবী আয়োজন জাহান্নামের রাস্তায় নিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
.
যা হোক, বেরেলি ট্র্যাডিশনের হজরতদের জশনে জুলুস, মিলাদের আয়োজন নিয়ে আমাদের দেওবন্দী মুরুব্বিদের সমস্যা নেই, যতক্ষণ না এটা ঘিরে ব্যবসা শুরু হয়। অর্থাৎ, সাধারণ মানুষ এবং মুরিদদের কাছ থেকে পয়সা / চাঁদা উঠিয়ে ব্যাপক ধুমধাম করে ঈদ এ মিলাদুন্নবি আয়োজন করা হয়।
.
দেওবন্দী ট্র্যাডিশনের প্রতিষ্ঠাতা ও আধ্যাত্মিক গুরু হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী মিলাদে অংশ নিতেন, এবং মিলাদে কিয়াম করতেন, কোন কোন সূত্রে এমনটা জানা যায়। তবে ওনার প্রধানতম খলিফা, 'ফকিহুল উম্মাত' মওলানা রাশিদ আহমাদ গাঙ্গুহি (রহঃ) অবশ্য উরস - মিলাদ - কিয়াম ইত্যাদির ঘোর বিরোধী ছিলেন, কারন তার নিজের মহল্লা গঙ্গুহে মাজারের নামে ব্যবসা চলতো। উঁচুমাপের আলেমে দ্বীন হিসেবে ইসলামের নামে এই মাজার ব্যবসা - মাজার পূজা তাকে অত্যন্ত কষ্ট দিতো, এবং আমৃত্যু চেষ্টা করেও তিনি উরস বন্ধ করতে পারেন নি। হজরত গাঙ্গুহি (রহঃ) এর জীবনী 'তাজকিরাতুর রাশিদ' এ মাওলানা আশেকে এলাহি মিরাঠী (রহঃ) লেখেন, গঙ্গুহ এলাকায় যখন উরস চলতো, তখন হজরত রাশিদ আহমাদ (রহঃ) অতিথিদের আসতে মানা করে দিতেন তার সঙ্গে দেখা করতে।
.
কিন্তু আমার সিলসিলা হাজি সাহেবের যে খলিফা - সূফীর সঙ্গে গিয়ে মেলে, সেই হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভি (রহঃ) এর (বিশেষত বাংলাদেশী) শিষ্যবৃন্দ মিলাদ - কিয়ামের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করেন নি, নিজেরা তা আয়োজন না করলেও। মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরি (রহঃ) এর জীবনী পড়লে তা জানা যায় (ইসলামিয়া প্রকাশনী)।
.
পুরনো ঢাকায় দেওবন্দী ট্র্যাডিশনের হাজরাতদের ছোট বেলা থেকে দেখে বড় হয়েছি। রাসুল (সঃ) - এর ছোট থেকে ছোট সুন্নাহ-এর নিবিড় অনুসরন- অনুশীলন করতেন তারা। মাওলানা আশরাফ আলী থানভি (রহঃ) এর সুলুক - তাসাউফের ওপর ছোট কিন্তু খুবই কার্যকর বই - কসদুস সাবিলে হজরত স্পষ্ট করে লিখেছেন যে - এটা আমাদের বিশ্বাস, কোন ব্যক্তি যদি এরকম একটা জায়গায় থাকে, যেখানে তার আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জনের জন্য কোন সূফী সাধক পাওয়া যাচ্ছে না, তবে সে (ফরজ ইবাদতের পর) খুব শক্তভাবে দুরুদ শরিফের আমল আঁকড়ে ধরবে। রাসুল (সঃ) এর ওপর পড়তে থাকা দুরুদ আল্লাহতা'লার মনোযোগ আকর্ষণে অত্যন্ত কার্যকর। যেকোনো বিপদগ্রস্থ, পথভোলা মানুষ রাসুল (সঃ) এর ওপর দুরুদ পাঠ করলে তাকে পথ দেখানোর দায়িত্ব স্বয়ং খোদা নিয়ে নেন, এমনটা আমাদের বিশ্বাস। এভাবে রাসুল (সঃ) এর ওপর দুরুদ ও সালাম পাঠ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এছাড়াও, দেওবন্দী হাজরাতদের সূফী আড্ডায় প্রচুর পরিমানে নাত ও নাশিদ পাঠ করা হতো রাসুল (সঃ) এর সম্মানে ও ভালোবাসায়।
.
এই হচ্ছে আমি যেই সূফী ট্র্যাডিশনে বড় হয়েছি, সেই দেওবন্দী ট্র্যাডিশনের দৃষ্টিভঙ্গীতে ঈদ ই মিলাদুন্নবি (সঃ) আয়োজন। রাজারবাগ পীরের "ঈদ ই মিলাদুন্নবি পালন করা ফরজ", আর সালাফি - গায়েরে মুকাল্লিদদের "ঈদ ই মিলাদুন্নবি আয়োজন বিদআত ও হারাম" - এই দুই এক্সট্রিম অবস্থানের মধ্যে এই হচ্ছে দেওবন্দি ট্র্যাডিশনের সহনশীল মধ্যপন্থী অবস্থান।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: সব বুঝলাম। মানলাম।
কিন্তু এই দিনে মিছিল কেন করতে হবে? মিছিলে দেখা যায় দুই তিনজন দাড়িওলা বসে থাকে গাড়িতে। গাড়ি আবার ফুল দিয়ে সাজানো। মানে কি এসবের? মসজিদ মাদ্রাসা কেন লাইটিং করতে হবে? চাঁদা তুলে অনেক খানাদানার আয়োজন কেন করতে হবে?

২| ২১ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:২৯

*কালজয়ী* বলেছেন: বেরেলভিদের অন্যতম বীর ব্রিটিশ বিরোধী আহমেদ শাহ বেরেলভির কথা জানতাম। তার তরিকায়ে মুহাম্মদিয়া' সংগ্রাম ও শহিদ হওয়াকে বাঙ্গালী মুসলমান স্মরন করে বলে শুনিনা।

২১ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:২৬

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরেলভি (রহঃ)কে সুন্নি / বেরেলি ফেরকার তাত্ত্বিক - আধ্যাত্মিকগুরু, আহমদ রেজা খান সাহেব কাফের ফতোয়া দিয়েছেন। এই কারনে বাংলাদেশ - ভারত - পাকিস্তানের বেরেলি ট্র্যাডিশনের অধিকাংশ লোকজন শ্রদ্ধার চোখে দেখে না। দেওবন্দী ট্র্যাডিশনে সৈয়দ আহমদ শহীদ (রহঃ) এবং শাহ ইসমাইল শহীদ (রহঃ) খুবই সম্মানিত ব্যক্তি। তবে মুঘলদের পতন - ব্রিটিশ শাসনের শুরুর দিকে যে অর্থে ইসলাম কেন্দ্রিক যুদ্ধ বিগ্রহ নিয়ে আলোচনা হতো, সেই আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন এই দুই হজরত। এখন আর মিলিট্যান্সির দিকে যাওয়ার সুযোগ নেই, বা উচিৎ ও নয় বলে তাদের আলোচনা সাধারণভাবে হয় কম বলে আমার ধারনা।

বাংলাদেশের মীর নিসার আলী তিতুমির ছিলেন সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরেলভি (রহঃ) এর অনুসারি। বাংলাদেশে প্রকৃত অর্থে ওয়াহাবি ছিলেন হাজী শরীয়তুল্লাহ। মক্কা মুকাররমায় হজ্জ করতে গিয়ে তৎকালীন আরবের ওয়াহাবি আলেমদের সরাসরি সংস্পর্শে তিনি ওয়াহাবিজম শেখেন। কাজেই সৈয়দ আহমদ শহীদ (রহঃ) এবং তার অনুসারিরা, এবং দেওবন্দী উলামাদের ওয়াহাবি বলে প্রচার করবার যে প্রয়াস, এটা সবার আগে ব্রিটিশরা নিয়েছিল, তারপর, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বেরেলি ফেরকার আলা হজরত আহমদ রেজা খান বেরেলভি দেওবন্দী উলামাদের ওয়াহাবি বলে প্রচারনা চালানো শুরু করেন। এখনো বাংলাদেশের বেরেলি - কাদেরিয়া ফেরকার অনেকেই দেওবন্দী উলামাদের অন্যায়ভাবে ওয়াহাবি বলে থাকে।

৩| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩০

খায়রুল আহসান বলেছেন: বিষয়টি প্রসঙ্গে আপনার অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারলাম। এ ছাড়াও অনেক অজানা তথ্য জানলাম। আমার তো মনে হয় দেওবন্দীদের 'সহনশীল মধ্যপন্থা'টিই অনুসরণীয়।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৯

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: অনেকদিন পর আলাপ হচ্ছে স্যার। আশা করি ভালো আছেন। দেওবন্দের প্রতিষ্ঠা ১৮৬০ এর দশকে। সে সময়ের আকাবেরগন, আর আজকের কওমিপন্থী আলেমদের মধ্যে বিশাল তফাত আছে, জ্ঞানে, চারিত্রিক দৃঢ়তায়। তবুও, মোটাদাগে বলা চলে যে দেওবন্দী মাসলাকের অনুসারিরা এখনো মধ্যপন্থী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.