নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

পদ্মাসেতু প্রসঙ্গে দুটো কথা

২৬ শে জুন, ২০২২ রাত ৯:১৯

অরিয়েন্টেশন ক্লাসে আমার স্টুডেন্টরা প্রায়ই জিজ্ঞেস করে, আমার বাস্তুভিটা কোথায়। আমি উত্তর দিই মাদারীপুর। একটু পজ দিয়ে বলি, সারাজীবনে ২-৩ বার গিয়েছি মাত্র। শেষবার গিয়েছি ২০০৫ সালে। আজ ১৭ বছরে একবারও যাওয়া হয় নি। আমি মূলত ঢাকাইয়া ই। তাতেও অনেকের আগ্রহ কমে না। প্রশ্ন করে, বাড়িতে যাই না কেন। তখন ইতস্তত করে উত্তর দিই, লঞ্চডুবির মধ্যে পড়েছিলাম ছোটবেলায়। তারপর আর ১ বার যাওয়া হয়েছে, ছোটবোনের আকিকার উদ্দেশ্যে। আর যাই নি কখনো।
.
লঞ্চডুবির ট্রমা ব্যাখ্যাতীত, অনতিক্রম্য এক বস্তু, যার আঁধার আমি এখনো বুকে বয়ে বেড়াই। ডুবুডুবু এক লঞ্চ, তার যাত্রীদের উদ্ধার করার জন্যে পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকা আর একটি লঞ্চ, সব যাত্রীদের ডুবন্ত লঞ্চের এক সাইডে এসে জমা হওয়া, ফলে যাত্রীদের ওজনে লঞ্চটা হুড়মুড় করে কাত হয়ে পড়া, নীচে ঘূর্ণায়মান ঘোলা কালো পানি, এরি মধ্যে লাফ দিয়ে পাশের লঞ্চের ডেকে ছিটকে গিয়ে পড়া, কোনরকমে। ১৯৯৭/৯৮ সালের ঘটনা।
.
এই ঘটনার ফলশ্রুতিতে, সত্যিসত্যিই আমি মানসিকভাবে বাস্তুচ্যুত একজন মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠেছি। নাড়ির বিন্দুমাত্র টানও নাই, দাদাবাড়ির প্রতি। নানাবাড়ি নোয়াখালীতে সেই অনুপাতে অনেকবার যাওয়া হয়েছে।
.
গতকাল আব্বু এলাকায় শ্রমিক আর দিনমজুর শ্রেণীর মানুষদের নিয়ে দোয়া মাহফিল, আর হালকা খাবার - মিষ্টি ইত্যাদির আয়োজন করেছিলেন পদ্মাসেতু অর্জনে শুকরিয়াজ্ঞাপন করে, আর সেতুর দীর্ঘস্থায়িত্ব কামনা করে। আমি নিজেও অবাক হয়েছি প্রথম প্রথম তার এ আয়োজনে। পরে ব্যাপারটা আমার উপলব্ধিতেও এসে জমা হতে থাকে, একটু একটু করে।
হয়তো আমার শেকড়ের সঙ্গে আরও গভীর সন্নিবেশ থাকতো শৈশবে শাহজাহান খাঁর ট্রান্সপোর্ট মাস্তানিতে জর্জর হয়ে দেশের বাড়ি যাওয়া বন্ধ না করলে।
.
১৭ বছর আগের স্মৃতি থেকে আবছা আবছা যা মনে পড়ে, তা থেকে স্মরণ হয় যে মাদারীপুর অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গা। এতো সবুজ, আর এতো এতো পানি চারিদিকে! পুকুর, খাল, বিল, নদী - কি নেই? বাড়ির কাছে ছোট্ট একটা হাট, টুইব্বার হাট তার নাম। সকালবেলা সে হাটে গিয়ে অদ্ভুত রকমের স্বাদের একটা মিষ্টি দিয়ে পরোটা সহ নাস্তা করতাম। তার আগে ভোর বেলা গাছ পাড়া খেজুরের রস ভর্তি গ্লাসে চুমুক। ঈদের দিন সকালে দেশভাগের সময় এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া গা ছমছমে জমিদারনিবাস - বড়বাড়ির আঙ্গিনায় ঈদের জামাত। আত্মীয় স্বজনের বাড়ি বাড়ি ঘুরে সাকুল্য ৭২ টাকা সালামি। রাতের বেলা উঠোনে পাটি পেতে আয়োজন করা ছোট্ট সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, বড়বোনদের গল্পের আসর। স্মৃতির ঝুলি আরও লম্বা হতে পারতো। যাই ই নি কখনো, হবে আর কি?
.
যা হোক, হয়তো এখন হবে। হয়তো আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের দাদাবাড়ির সঙ্গে নাড়ির টান আমাদের চেয়েও বেশী হবে।
.
পদ্মাসেতু শুধু পদ্মার দুই পাড়কে নয়, আমাকে আমার অনুৎযাপিত শৈশবের সঙ্গেও সংযুক্ত করে। এ সেতু নিয়ে আমাদের উচ্ছ্বাসের কারন আপনার বাড়ি কুমিল্লা, ফেনি, নোয়াখালী, সিলেট বা চট্টগ্রাম হলে বাই ডিফলট বোঝার কথা না। সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাসকে ঢালাওভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিবেচনা করাটা নিজের রাজনৈতিক বোধেরও দুর্বলতার পরিচায়ক।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুন, ২০২২ সকাল ৯:১৭

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: সেতুটি আরো আগে করা দরকার ছিল।

২| ২৯ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২১

খায়রুল আহসান বলেছেন: একটা সেতু শুধু কংক্রীট আর স্টীল কাঠামোর মিশ্রণে গড়া প্রমত্তা নদীর দু'পারের সংযোগ গড়ে দেওয়া জড় একটা সেতুই নয়, এটা দু'পাড়ের লোকদের মাঝে নাড়ির সংযোগও গড়ে দেয়, দেবে।
আমার বাড়ি যেতে যমুনা সেতু পাড়ি দিতে হয়। যখন যমুনা সেতু নির্মিত হলো, তখন সে কি উত্তেজনা (তবে পদ্মার তুলনায় এক দশমাংশও নয়)! ভেবেছিলাম, এতদিন পরে আমাদের দুঃখ ঘুচলো! এখন থেকে ছয়/সাত ঘণ্টায় ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়া যাবে। প্রথম প্রথম যেতও তাই। কিন্তু আজ অব্যবস্থাপনার কারণে দশ/বার ঘণ্টা লাগে, যা আরিচা-নগরবাড়ি ফেরীতে পার হয়ে যেতে যে সময় লাগতো, তার চেয়ে কয়েক ঘণ্টা বেশি। আশাকরি পদ্মা সেতুর অবস্থাও এমনটি হবে না। মর্যাদার প্রতীক এ সেতুর উপর কর্তৃপক্ষের তীক্ষ্ণ নজরদারি থাকবে।

০৯ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ১২:৩৯

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আমারও একই আকাঙ্খা স্যার। আশা করি কুশলে আছেন। আপনার আম্মার ইন্তেকালের খবর পড়েছি , দোয়াও করেছি সে সময়। মন্তব্য করে জানান দেয়া হয় নি, কিন্তু আপনি সবসময় আমার স্মরণে আর দোয়ায় আছেন। আপনার আত্মজৈবনিক বইটি এবারের বইমেলায় সংগ্রহ করেছি। শীঘ্রই পড়া শুরু করবো। ভালো থাকবেন। অগ্রিম ঈদের শুভেচ্ছা। দোয়াপ্রার্থী।

৩| ০৯ ই জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩১

নতুন বলেছেন: পদ্মাসেতু শুধু পদ্মার দুই পাড়কে নয়, আমাকে আমার অনুৎযাপিত শৈশবের সঙ্গেও সংযুক্ত করে। এ সেতু নিয়ে আমাদের উচ্ছ্বাসের কারন আপনার বাড়ি কুমিল্লা, ফেনি, নোয়াখালী, সিলেট বা চট্টগ্রাম হলে বাই ডিফলট বোঝার কথা না। সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাসকে ঢালাওভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিবেচনা করাটা নিজের রাজনৈতিক বোধেরও দুর্বলতার পরিচায়ক।

এই কথাটা অনেকেই বোঝেনা। আমার বাড়ী ফরিদপুরে, ফেরীঘাটের কারনে কত সমস্যা হয়েছে সেটা অন্যরা বুঝবেনা।

৪| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৩:৩৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: "আপনার আম্মার ইন্তেকালের খবর পড়েছি , দোয়াও করেছি সে সময়" - আমাকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করে গেলেন!
আপনার জন্যেও নিরন্তর শুভকামনা এবং দোয়া....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.