নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাস্তব এবং সাধারন মানুষ আমার লিখার জীবন। এখানে রানা নামের একজন অতি সাধারন ব্যক্তির দৈনিক জীবন এবং তার দৃষ্টিতে সমাজের বর্তমান অবস্থা এবং এর প্রভাব তার নিজের ভাষায় প্রকাশ করা হবে।

আমি রানা

আমি বিশেষ কেউ বা কিছু না। যা মনে আসে যেভাবে মনে আসে তাই লিখি।

আমি রানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৮৬/বি শিরিয়া মন্জিল, ছোটবেলার ডায়রি।

১৬ ই জুন, ২০২০ রাত ৮:৫০

৩(ডোবা কাহিনী)

ছবি: গুগল
গরিবুল্লাশাহ এর মাজারের পিছনে বিশাল বিশাল দুটি ডোবার পাড় ধরেই এলাকাটি গড়ে উঠেছে। পুরো এলাকাটিই চার পাশে পাহাড় দ্বারা ঘেরা। এই ডোবা দুটিকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় "ডেফা" । এই এলাকায় খুব সীমিত লোকের বসবাস। স্থানীয় যারা রয়েছে এই ডোবাকে ঘিরেই তাদের জীবিকা নির্বাহ হয়ে যায়। যেমন কেউ কেউ ডোবা থেকে মাছ ধরে। সারাদিন ডিঙ্গী নৌকা নিয়ে ডোবাই জাল মারে। কেউ বা তীরে বসে ছিপের মাথায় কেচোঁ লাগিয়ে মাছ ধরে ভালোই মাছ পাওয়া যায়। কেউ আবার ডোবার পাড়ে গরুর খামার গড়ে তুলেছে খামারের গরুদের প্রধান খাদ্য ডোবার কচুরীপানা। খামারের মালিক জৈনক বৃদ্ধলোক প্রায়ই দেখতাম একটি প্লাস্টিকের ড্রাম লম্বা-লম্বি ভাবে কেটে তা নৌকা হিসেবে ব্যবহার করত এবং ডোবার জলে ভেসে বেড়াতো। কেউ বা আবার ডোবার পাশ ধরে নানা জাতের শাক-সবজির চাষ করতো। তবে মাছ ধরাটাই স্থানীয়দের প্রধান পেশা ছিল। ডোবা বা ডেফার কারনে এলাকার নাম হয়েছিল ডেফারপাড়। যদিও বর্তমান মানুষ জন এলাকার আধুনিক নাম দিয়েছে এবং এক ডেফারপাড়ের ভিতর তিন তিনটি আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে।
আমাদের বাসা মানে ১৮৬/বি শিড়িয়া মন্জিলের পিছন দিকে লাগানো ছিল বড় ডোবাটা। বাড়ীর একটা অংশ ও ডোবাতে ছিল। আমার ছোট বেলাটা কেটেছে এই ডোবার সাথে খেলা করে। তার বুকে মানুষের বিচরন দেখে।দূরবীন দিয়ে দূরে ওপাড়ের মানুষগুলোকে দেখে। কত কত এডভেঞ্চার কল্পনা করেছি এই ডোবাকে নিয়ে। মনে মনে কত যুদ্ধ করেছি এই সকল খারাপ মানুষদের সাথে যারা এই ডোবাকে ধ্বংস করে দিয়েছে, তাদের কাছে আসল গুলি কিংবা ছুড়ি ছিল তাতে কি ??!! আমার আব্বু ও আমাকে একটা রিভলবার আর একটা তলোয়ার কিনে দিয়ে ছিল। তা দিয়েই প্রতিদিন তাদের সাথে যুদ্ধ করতাম, প্রতিদিনই একা আমি জিতে যেতাম কিন্তু ভাগ্য খারাপ যে, শেষ পর্যন্ত বাস্তব যুদ্ধে তারাই জিতে গেল।
হঠৎ করেই এলাকায় সন্ত্রাসী বেড়ে গেল। সাথে সাথে বেড়ে গেল পক্ষ ও বিপক্ষ। প্রায় প্রতিদিন গুলির শব্দ শোনা যেত। চোখের সামনে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে অস্ত্র সহ ধাওয়া করতে দেখেছি। দু-একদিন পর পর শোনা যেত পাহাড়ে লাশ পাওয়া গিয়েছে কিংবা কেউর হাত অথবা পা কেটেঁ ফেলেছে। এক রাতে আমি আর মা ঘুমিয়ে ছিলাম মাঝ রাতে শুনি মা চিৎকার দিয়ে উঠেছে, ঘুম থেকে উঠেই দেখি এক লোক বয়স ২৮-২৯ হবে সুন্দর শরীর সাস্থ , মায়ের পা ঝাপটে ধরে বলছে "আফা আপনে আমার মা, মার পেটের বইন আমারে বাঁচান, তারা আমারে মাইরা ফালাইবো" মা বলল "খাটের নিচে ডুকেন" মা সারা রাত আমাকে জড়িয়ে ধরে খাটের এক কোনে জড়সড় হয়ে বসে ছিল। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পরদিনই জমিদার খালাম্মাকে ঢাকাই ফোন করে আব্বু দিনে দিনে পুরো বাসায় গ্রীল লাগিয়ে দিল। আমন দলাদলি আর গোলা গোলির মাঝে কেটে গেল আরো দুটি বছর। হায়েনা গুলোর নজর গিয়ে পড়লো ডোবার উপর। আমাদের বাসার যে একটু অংশ ডোবা ছিল তার উপর ও বিশেষ একটি দলের নজর পড়লো, তারা এটা আমাদের নিজের বাড়ী মনে করে নানা রকম হুমকি-ধামকি দিতে শুরু করলো। আমরাও জমিদার খালাম্মাকে ফোনে সব জানালাম, খালাম্মা ঢাকা থেকে আসার আগেই হঠাৎ একদিন তারা স্ব-দলবলে অস্ত্রসহ আসলো মা আগেই টের পেয়ে গ্রীলের গেইটে তালা লাগিয়ে আমাদের সবাইকে নিয়ে একটি রুমে ঢুকে পরলো। কিছুক্ষণ চিৎকার চেচামেচি করে তারা চলে গেল। পরদিন হঠাৎ তারা আবার এসে হাজির, মা গেইটে তালা লাগানোর সময়টুকু পাইনি, কিন্তু আজ পরিবেশ ভিন্ন। তারা সবাই হাসি মুখে, গেইটের বাহিরেই দাড়িঁয়ে আছে। মা যখন তাদের সামনে গেল একজন মাঝ বয়সি সন্ত্রাসী শুদ্ধ উচ্চারনে বলল "আপা আমাদের ভুল হয়ে গিয়েছে, কলকের জন্য আমরা দুখিঃত। আমরা আর আপনাদের বিরক্ত করবো না। এটা যে আপনার বাড়ি তা আমরা জানতাম না।মাফ করবেন।" খানিক থেমে আবার বলল " আমরা যে কাল এসেছিলাম তা বক্কর ভাইকে বলার দরকার নেই। আর দুলাভাইকে ও এসব নিয়ে আর চিন্তা করতে মানা করবেন। " মা এবং আমরা সবাই কিছুই বুঝলা না। এখানে বক্কর ভাই বলতে কি এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কানা বক্করকে বুঝিয়েছে??? কানা বক্কর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রতিদিনই দু-তিনটা মাডার করে আনেক ছেলেপুলেও আছে তার, ডোবা দখলের মধ্যে প্রধান হচ্ছে সে। সে কেন আমাদের সেলটার দিবে???
দুলাভাই বললতে আব্বুকে বুঝিয়েছে এটা বুঝতে পেড়েছি। কিন্তু বক্কর রহস্য তখন উৎঘাটন করা সম্ভব হয়নি।
এরপর রাতের আধারে আরো অনেকেই বাড়ি দখলের চেষ্টা করেছে কিন্তু অজানা কারনে সকাল হতে হতেই সব ঠিক হয়ে গিয়েছে।
আমাদের বাসার ছোট্ট সেই অংশটুকু ছাড়া পুরো ডোবা ভরাটের মহাজগ্য চলছে। ট্রাকে ট্রাকে ময়লার গাড়ি আসছে আর তা ডোবার পানিতে ফেলা হচ্ছে। ধীরে ধীরে ডোবার পানির রং কালো হচ্ছে এবং ডোবা ময়লার ভাগারে পরিণত হয়েছে।পুরো শহরের ময়লা যেন এই ডোবা একাই নিজের বুকে নিয়েছে। আর আমাকে বলেছে "এটা শহরের ময়লা না এটা মানুষের মনের ময়লা তাদের পাশবিকতার ময়লা" ডোবা ভরাটের সময় যতবারেই ডোবার দিকে তাকিয়েছি ততবারেই দেখলাম ডোবাটি যেন আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে যেন সে মৃত্যুশষ্যায় এবং বলছে "তার আর কিছুই করার নেই"। ডোবার এক একটি অংশ ভরাট হচ্ছে, মানুষ গুলো দখলে মেতে উঠছে এবং একটার পর একটা লাশ পড়ছে। একদিন কানা বক্কর ডোবা ভরাটের কাজ দেখতে আসলো। তখন মায়ের সামনে এসে একটা হাসি দিয়ে বলল "আফা কেমন আছেন?" মা হঠাৎ তাকে দেখে ভয় পেয়ে গেল। তার বাম চোখটা থ্যাতলানো।চেহারাটা চেনা , মূহুর্তেই মনে পড়ে গেল একরাতে মা তাকে আশ্রয় দিয়ে বাচিঁয়ৈ ছিল। এই জন্যই সে আমাদের বাসার অংশটি দখল করতে দেয়নি। তার বছর খানেক পর দেশে RAB এর আর্বিভাব হলো চোখের সামনে কত কত সন্ত্রসীর লাশ দেখলাম একদিন শুনলাম কানা বক্কর ক্রসফায়ারে মারা গেছে আবার শুনলাম সে বেচেঁ আছে। RAB আসারপর ।অনেক সন্ত্রসী দাড়িঁ রেখে নামাজ কালাম পড়া শুরু করে দিয়ছিল।
এখন কেউ আর ডেফার পার বলেনা। সবাই আবাসিক এলাকার নাম নিয়ে ডাকে। এখন মাঝে মাঝে ওখানে গেলে দেখি ডোবাটার বুক চিড়ে দশতলা বিল্ডিং বের হয়েছে। এলাকার সখল শীর্ষ সন্ত্রসী মারাগেল কিংবা শুধরে গেল কিন্তু ডোবাটাকে মেরে ফেললো।

পর্ব ১ Click This Link
পর্ব ২ Click This Link
পর্ব ৪ Click This Link
পর্ব ৫ Click This Link





মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: ডোবাটার প্রতি আপনার বেশ মায়া পড়ে গেছে!!

১৭ ই জুন, ২০২০ রাত ২:১১

আমি রানা বলেছেন: পুরো শিরিয়া মঞ্জিল আমার ভালোবাসার জায়গা।

২| ১৬ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:০২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: এই রকম শত শত ডোবা খাল বিল নদী নালা ক্ষমতাবানদের কব্জায়।

১৭ ই জুন, ২০২০ রাত ২:১৩

আমি রানা বলেছেন: এই ডোবাটা তার রূপক অর্থে ব্যবহার করলাম।

৩| ১৬ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:৩৬

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: ওয়াসার পেছনে বাগমনিরাম স্কুল অাছে৷ স্কুলের পেছনে অামার বাবা জমি কিনেছিলেন৷ সম্ভবত অাশির দশকে৷ কিন্তু টিকতে পারেন নাই৷ তাকে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়৷এখনো কী নিজের ইচ্ছায় কোন এলাকায় ইট নিয়ে কাজ শুরু করে দেয়া য্য়? না কী ইট কিনতে অারেকজনকে বাধ্যতামূলক ঠিকা দিতে হয়৷ মাঝে মাঝে ভাবি- অামরা কোথায় পড়ে অাছি৷ অাপনার ই ডোবাকে বহু বছর পর দেখলাম বিশাল অাবাসিক এলাকা৷

১৭ ই জুন, ২০২০ রাত ২:১৫

আমি রানা বলেছেন: তিনটে আবাসিক এলাকা হয়েছে সেখানে।

৪| ১৬ ই জুন, ২০২০ রাত ১১:৫২

মেটালক্সাইড বলেছেন: নামটা কি ডেভারপার নাকি ডেফারপার। কারণ ছোটবেলা থেকে আমরা ঐ নামে চিনতাম। শুধু ডেভারপার নয় পাশের ইস্পাহানি ও ফয়েজ লেক পাহাড়েও একসময় এই শহরের মাস্তানদের আখড়া ছিল, সিএমবির কথা নাই বা বললাম। আর বর্তমানে বায়েজিদের পিছনে শেরশাহ পাহাড়ে মাস্তানদের আস্তানা। গুগলের স্যাটেলাইট ইমেজে এখন এই শহরকে দেখি পুরো ন্যাড়া, কোথাও সবুজের চিহ্ন নেই বিক্ষিপ্ত কিছু কবরস্থান আর সরকারি জমি ছাড়া।
আপনি ডেভারপারের মরণ দেখেছেন আর আমি দেখছি প্রাণের এই শহরের মৃত কংকালকে।

৫| ১৭ ই জুন, ২০২০ রাত ২:২১

আমি রানা বলেছেন: অনেক আগে ছিল ডেফারপার তারপর নাম দিল ডেভারপার আর এখন তো কুসুমবাগ আ/এ, গরিবুল্লা হাউজিং এবং বাইতুল আমান হাউজিং হয়েছে।পুরো শহরটাই ডোবাটার মতো মারা গিয়েছে।

৬| ১৭ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: পুরো শিরিয়া মঞ্জিল আমার ভালোবাসার জায়গা।


করোনা মুক্ত হলে একদিন এসে দেখে যাবো শিরিয়া মঞ্জিল।

১৭ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:১০

আমি রানা বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই। আপনাকে নিয়ে তাহলে আবার শিরিয়া মঞ্জিল যাবো। শুনেছি খালাম্মা বাড়ী বিক্রি করে দিয়েছে। সেদিন অনেক কেদেছিলাম। পারে যদি কোনো দিন অনেক টাকা হয় তাহলে বাড়ীটা আমি কিনে নেবো।

৭| ১৯ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:৩৯

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: সব দখল হয়ে যাচ্ছে, কোথায় আর কিছু থাকবে না, না ডোবা না নালা!

২৬ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:০৭

আমি রানা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে..
হুমায়ুন আজাদ স্যারের মতই বলতে হয়, " একদিন সব কিছুই নষ্টদের দখলে যাবে" তাই হচ্ছে।

৮| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:৩৬

অধীতি বলেছেন: ডোবাটার জন্য মায়া হচ্ছে। শৈশবের অনেক কিছুই এখন বিদীর্ণ হয়ে গেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.