শুনেছি আমার জন্মের এক মাসের মাথায় আব্বু আম্মু ১৮৬/বি, শিরিয়া মঞ্জিল ৪নং বাড়িতে বাসা ভাড়া নেয়। টিনের দুটি রুম একটি লম্বা রান্না ঘর।সামনের রুমে আমাদের বড় খাটটা , একটা বড় পড়ার টেবিল, কাপড় রাখার আলনা। পরের রুমটা আব্বু আম্মুর, সেখানে ছোট একটা খাট, কাঠের সোকেচ, কাঠের আলমারি আর সোকেচ এর উপর নিপ্পন সাদা-কালো টিভি টা।যার ভিতর ছিল সুন্দর এক অতীত, আর মুগ্ধতা। গোসলখানা ছিল আমাদের রান্না ঘরের পাশে আর বাথরুম টা একটু দূরে। গোটা বাড়ীতে মোট টিনের ঘর ছিল তিনটা , একটা দালান ঘর জমিদার খালাম্মা ওখানে থাকত। আমার পাশের ঘরে মিন্টু তার পশে রাজিবদের ঘর, মিন্টুর বাবা পুলিশে চাকরি করে ড্রাইবার, রাজিবের বাবা হোমিও চিকিৎসক।
মিন্টু আমার বন্ধু, আমাদের বন্ধুত্ব ঠিক কখন থেকে তা আমি জানিনা। বোধ হবার পর থেকে আমরা বন্ধু। এমন কোন দুষ্টামি নাই যা আমরা এক সাথে করতাম না। সকল থেকে রাত পর্যন্ত অভিনব সব দুষ্টামি আমরা করে যেতাম। যেমন: গ্যাসের মেইন লাইন অফ করে দেওয়া , মার কাছ থেকে পয়সা চুরি করে বাজারের মাঠ থেকে বস্তা আইসক্রিম খাওয়া। গোসলখানায় কেউ গোসল করতে গেলে উকি মারা , তারপর “দেখে ফেলসি বলে খেপানো”। সোমা দিদির নতুন বিয়ে হয়েছে, দুলাভাই বাসায় আসলে টিনের ফুটোতে চোখ লাগিয়ে রাখা। পাশের বাড়ির মানিকের সাথে ঝগড়া করা, মানিকের অনেক শক্তি তাই তাকে হারানোর বুদ্ধি বের করা। আর কোন অঘটন ঘটিয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা।
আমরা একসাথেই স্কুলে ভর্তি হলাম। মিন্টুর রোল ছয় আর আমার সাত। একসাথে স্কুলে যেতাম কবরস্থান দিয়ে। আরো অনেকেই এই পথ দিয়ে যেত। আমাদের কাউরই ভয় লাগতনা।স্কুল ছোট বেলা থেকেই ভালো লাগত না। বিশেষ করে পরিক্ষার সময়। জ্বর উঠে যেত তখন, এল্যার্জি নামক একরোগ যার জন্য দায়ি ছিল। বরাবরই পরিক্ষায় ফেইল করতাম, আমি আর মিন্টু দুজনেই ফেইল করা মানে কপাল ভালো, রেজাল্ট কার্ড কোমরে গুজে বাসায় ফিরতাম, আসার পথে এটা কোথায় লুকোব তার ফন্দি করতাম।
আর যদি আমি বা মিন্টু কেউ একজন ভুল করে পাশ করে ফেলতাম, বাসায় গিয়ে বুক ফুলিয়ে রেজাল্ট কার্ড দেখাতাম।আর সারা বাড়ি বলে বেড়াতাম যে মিন্টু ফেইল করেছে, আমি ফেইল করলে মিন্টু বলে বেড়াত।তখন দুদিন একে অপরের শত্রু হয়ে যেতাম।
আমাদের ঈদ কিংবা মিন্টুদের পূজা প্রথম সেমাই বা প্রশাদ আমাদের দুজনকে আগে দিতে হতো তারপর বাকিরা। ঈদে যেমন মিন্টুর নতুন জামা লাগত তেমনি দূর্গা পূজাই আমারো নতুন জামা চাই।
ক্লাস ফোরে আমার রনির সাথে বন্ধুত্ব হয়। মিন্টু কেন জানি রনিকে নিতে পারত না, কিন্তু রনিকে আমার অনেক ভালো লাগত। মিন্টু আমাকে মানাও করেছে রনির সাথে না মেশার জন্য। আমিও তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হই যে রনি খারাপনা।
ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত আমরা একসাথে ছিলাম। বার্ষিক পরিক্ষার পর রানা চলে যায়, তারা গ্রামে বাড়ি তৈরি সেখানে চলে গিয়েছে। আমি রনির সাথে এতটায় ব্যস্ত হয়ে পরেছিলাম যে, চলে যাবার সময় মিন্টুকে সময় দিতে পারিনি। আমার উপর অনেক রাগ আর অভিমান নিয়ে মিন্টু চলে গেল, আর যাবার সময় বলে গেল “এই রনি একদিন তোর ক্ষতি করবে”। মিন্টুর চলে যাবার মূহূতটি আমার মনে নেই, তবে সে এখনো আমার মনে আছে, আনেক খুজেঁছি পাইনি। এখনো খুজেঁ বেড়াই তাকে। আমার বন্ধু মিন্টু কে…।
পর্ব ২ Click This Link
পর্ব ৩ Click This Link
পর্ব ৪ Click This Link
পর্ব ৫ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:৫০