নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পথহারা এক তরীর মাঝি।

ইলিয়াছুর রহমান

সাপে কাটলে সবাই দৌড়ে পালায়,অথচ আমি সাপ দেখলে এগিয়ে যাই।

ইলিয়াছুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাগলের প্রলাপঃ-০১ (ধারাবাহিক)

২১ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১:০৬


বাসা থেকে আমার অফিস মিনিট পাঁচেকের পথ। অফিস বলা ঠিক হচ্ছে কিনা জানি না, শুদ্ধ ভাষায় বলতে গেলে এটাকে প্রকল্প বলাই ভালো। প্রকল্পে নির্মাণ কাজের দেখাশুনা করি,সেখানে খেটে মানুষদের কাজের তদারকি করি যেন তারা কাজটা ঠিকঠাক মত করে। তবুও আমি এটাকে প্রকল্প না বলে অফিসই বলি। আমার ভাষায় এটা অফিসই। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত থাকি কর্পোরেট অফিসের মানুষেরাও তাই-ই করে। তাদের কাজকর্ম শুধুমাত্র কাগজে কলমে আর ফোনের মধ্যে সীমাবদ্ধ আর আমার কাজকর্ম শুধু কাগজ-কলম-ফোনে সীমাবদ্ধ নয় শারীরিক পরিশ্রমও করতে হয়। খেটেখাওয়া-খাটি কিন্তু অশিক্ষিত মানুষগুলোকে সামলানো একেবারে সহজ ব্যাপার নয়। আমার মত যারা শুধুমাত্র নামের ইঞ্জিনিয়ার(সিভিল) তারা ভালো বুঝবেন। সুতরাং আমার কর্মক্ষেত্রকে কোন ভাবেই আমি ছোটভাবে দেখার সাহস পাই না। তাই আমার কর্মক্ষেত্রকে আমি অফিস বলতেই পারি। যাই হোক যা বলছিলাম... আমি শুধু মাত্র দুপুরে বাইরে খাওয়ার বিড়ম্বনার জন্যই খরচটা একটু বেশী হলেও সবসময় অফিসের কাছাকাছি বাসা নেয়ার চেষ্টা করি। এই কারণেই ঘন ঘন আমাকে বাসাবদলের অভিযানে নামতে হয়।এক বাসায় ছয়মাসের বেশী থাকা হয় না।কাজকর্ম যেদিকে একটু বেশী আমার বাসাও সেদিকেই!! এ নিয়ে আমার পরিচিত কিছু আপন মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। বরাবরের মতই তাদের প্রশ্ন আমার এত ঘন-ঘন বাসাবদলের কারণ কি !! উত্তরটা তাদের উদ্দ্যেশ্যে "ভাই, সত্য কথা বলতে সাতসকালে ঘুম থেকে উঠে ঢাকা শহরের রাস্তার জ্যাম ঠেলে অফিস করার চেয়ে একদিন কষ্ট করে বাসা বদল করে নেয়াটাতেই আমি বেশী সুখ পাই,সে জন্যই ঘন-ঘন বাসা বদল !! " বিগত আট বছর এভাবেই চলছে। আজ অফিস থেকে বাসায় ফিরছি দুপুরে খাবো বলে। অফিসের খুব কাছেই রাস্তায় নেমে দেখি এক কোমর পানি,আপনি ভাবছেন কোন অখ্যাত-গ্রাম্য-নীচূ এলাকায় আমার অফিস?তাহলে আপনার ধারণা পুরোপুরি ভুল।ঢাকা শহরের স্বনামধন্য আবাসিক এলাকা তথা ধানমন্ডির সেন্ট্রাল জোনেই আমার অফিস।সকালে ১০টার দিকে বড়জোর একঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে পুরো এলাকার পানি এসে জমেছে রাস্তার মাঝে এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল ৩টা। অফিসে যাওয়ার পথে যতটুকু পানি দেখেছিলাম এখনো ঠিক সেরকমই আছে। কিছুটা হয়তো কমেছে তবে সেটুকু এতো বেশী সময়ের তুলনায় না কমে যাওয়ারই সমান । সকালে প্যান্ট তুলেছিলাম উরুতে, হাতে ছিলো পায়ের জুতা আর এখন হাতে জুতার জায়গাটা অক্ষত থাকলেও প্যান্টটা হাঁটুর কিছুটা উপরে তুললেই পানির উপর দিয়ে হেটে বাসায় যাওয়া যাচ্ছে, পার্থক্য এতোটুকুই। অবাক হচ্ছেন জানি !! ধানমন্ডির মত এলাকায় মেয়রের বাসার সামনে এক কোমর পানি অবাক হওয়ার মতই ঘটনা। আমিও অনেকদিন থেকে অবাকই হচ্ছি।শুধুমাত্র অবাক হয় না ভুক্তভুগী এলাকাবাসী,জনপ্রতিনিধি আর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সবাই বুঝি অভ্যস্তই হয়ে গেছে,আপনি আমি অবাক হয়ে কোন ফায়দা আছে? নাই। পানির উপর দিয়ে হেটে কিছুদুর এগুতেই সামনে একটা মার্সিডিজ, বলা চলে যেখানে শূকনো কাপড়চোপড় বাঁচিয়ে মানুষজন পানি সাতরে পার হবার সংগ্রামে ব্যস্ত সেই পানির মধ্যেই অর্ধডুবন্ত মার্সিডিজের স্পিড চল্লিশ কিঃমিঃ এর উপরে সামনে দিয়ে উত্তাল বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট ঢেউ মত পানির ধারা গিয়ে দুপাশের ওয়ালে গিয়ে আছড়ে পড়ছে । কিছু বুঝে উঠার আগেই এতোক্ষন কষ্ট করে ঠিকঠাক মতো গুজিয়ে রাখা আমার কাপড়চোপড় নোংরা-ময়লা পানি দিয়ে ভিজে জুবুথুবু অবস্থা,সাথে আমিও। ঠিক পরক্ষনে মার্সিডিজের মধ্যে বসে থাকা দুই ভদ্রলোকের জ্ঞ্যান-বুদ্ধি-বিবেক নিয়ে আমার মনে বেশ সন্দেহের সৃষ্টি হলো।মনে চাইলো সামনে পেলে দুই কানে দু-চড় লাগিয়ে দেই।মনে মনে বলে আর লাভ কি !! ততক্ষনে তারা অনেকদুর চলে গিয়েছে,আর সামনে পেলেও হয়তো চড় মারাটা আমার হতোই না...। হয়তো অতোটা অভদ্রও আমরা নই ।

একটা কথা বলাই হয়নি,রাস্তায় উঠে আসা মলমুত্রসমৃদ্ধ ড্রেনের নোংরা পানির উপর দিয়ে আসার পূরো সময়জুড়ে সদ্য বিয়ে করা প্রিয়তমা ফোনে আমার সাথেই ছিলো। নোংরা পানিতে কাপড়চোপড় ভিজিয়ে দেয়া মার্সিডিজে বসা দুই ব্যাক্তিকে উদ্দ্যেশ্য করে মুখ ফসকে বের হওয়া গালিগালাজ শুনে কিছুটা অবাকই বটে। আমার মতো ভদ্র ছেলে কি করে মানুষকে এভাবে গালিগালাজ করতে পারে ।তার অবাক করার দোষে আমি অন্তত দুষ্ট নই এটা আমি বলতেই পারি, তাকে বহুবার বলেছি "তুমি যতটা সাধু বা ভদ্রমানুষ আমাকে ভাবো আমি ঠিক ততটাই তার উল্টো" সে বিশ্বাস না করলে তো আমার কিছু করার নেই তাই নয় কি ? আরেকবার তাকে সে কথাটাই বুঝানোর চেষ্টা করলাম। কিছুতেই বুঝতে চাইলো না বরং আমি নোংরা-নর্দমার পানিতে ভিজে গেছি সেকথা শুনে হেসেই খুন। এ জীবনে আমার বিব্রত অবস্থায় এতোটা খুশী হতে অন্তত কাউকে দেখি নি।
ভারাক্রান্ত হৃদয় ভরা দুঃখ থাকলেও নিজের কাছেই তা চেপে রাখলাম। পানি সাঁতরানো শেষে বাসার নীচে দাড়িয়ে ভাবলাম আজকের মতো শিক্ষা হয়ে গেছে এই বাসায় ঢুকলাম আর নীচে নামছি না। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে আবার আগামীকাল।চারতলায় উঠে দেখি মেইন গেটে তালা ঝুলানো যার চাবী আমার কাছে নেই। এই সময়টা কেউ না কেউ বাসায় থাকে ভাবলাম আজকেও হয়তো কেউ আছে। তালাবন্ধ দেখে আরো একটু হতাশ হলাম। অসুবিধার কিছু নেই ফ্ল্যাটে ঢুকতে হলে আমাকে আরেকটু কষ্ট করে নীচে নেমে দারোয়ানের কাছ থেকে চাবি নিয়ে আসতে হবে। আমরা সবাই যখন বাসা থেকে বের হয়ে যাই তখন মামার কাছে চাবি দেয়া থাকে।চাবি নিতে গিয়ে দেখতে হলো দারোয়ান নীচে নেই। একটু পর দেখি বাসার সামনে একটু দূরে বাচ্চাকে নিয়ে খেলাধুলো করছে। সে আমাকে দেখে একটু বিরক্তই মনে হলো। অবশ্য মুখখানা কালচে রঙয়ের হয়ে গেলেও চাবিটা আমাকে দিলো ঠিকই।ততক্ষণে আমার প্রিয়তমা কি একটা কথায় মনঃক্ষুন্ন হয়ে ফোন ছেড়ে দিয়েছে । মেজাজ ভালো না থাকলে আমার মিঠা কথাও অন্যের কাছে তিতা তিতা লাগে।সব মিলিয়ে আমার মনের অবস্থা জগাখিচুড়ি। তালা খুলেই বাথরুমে ঢুকে আগে গোসল সেরে নিলাম।
গোসল সেরেই ফোনে ব্যস্ত হলাম প্রিয়তমার মান ভাঙ্গানোর কাজে। নতুন সম্পর্ক তো মান-অভিমান লেগেই আছে । একে অপরকে বুঝতে তো একটু সময় লাগেই। প্রিয়তমাকে মনের মত করে তৈরী করে নিতে তাকে অতিরিক্ত একটু সময় দিতে হচ্ছে।এটা সবার ক্ষেত্রেই হয় !! যাই হোক সেসব কথা বলবো অন্য একদিন।

বাসায় আমি একা,আর কেউ নেই। ফোনে কথা চলছে,কানে ফোন নিয়ে মেইন গেটটা ভিতর থেকে বন্ধ করে রুমে এসে বসলাম । ফ্যান চলছে, রুমের দরজাটাও চাপানো। রুমের ভিতরে সচারাচর এই অবস্থায় বাইরের শব্দ আসে না। তার উপরে মনোযোগ অর্ধেকটা ফোনে। কিছুক্ষন পর কানে এলো কেউ একজন দরজায় খুব জোরে ধাক্কাধাক্কি করছে। খুব দ্রুত উঠে গিয়ে দরজাটা খুলতেই ওপারের মানুষটার ব্যবহারে কিছুটা আশ্চর্য হলাম,একবার মনে হলো সে দরজায় নক করার সাথে সাথে খুলে দেয়ার জন্য আমি বেতনভুক্ত কর্মচারী। দেরি হলো কেন সেজন্য তিনি মহা গরম। মুহুর্তেই আমার প্রচন্ড রাগ হলো। তাকে শুধু বললাম "আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন ? আমি ইচ্ছে করে তো আর দেরী করি নি ।" এইবার তিনি আরো বেশী গরম।মনে হলো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। তখনই বুঝলাম,মানুষটা অসহায়, বুদ্ধিসুদ্ধি একটু কম। আমিও যদি তার মতো গরম হয়ে কথা বলি তাহলে এখানে মারামারি নিশ্চিত। আর এই অশিক্ষিত,পাগলের সাথে মারামারি করা মানেই নিজেকেই ছোট করা সমান কথা। প্রচন্ড রাগকে সংবরণ করে ওখান থেকে চলে আসলাম। কি দরকার আছে আমার!! উনার রাগ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয় আমি উনার জায়গায় থাকলে হয়তো আমারও রাগ হতো কিন্তু প্রকাশভঙ্গিটা হয়তো অন্যরকম হতো। কোন সময়ে কিভাবে আপনার আবেগ প্রকাশ করতে হয় সেটা তো ছোটবেলাই বাবা মায়ের কাছ থেকে শেখার কথা। এটাই তো পারিবারিক শিক্ষা । বাবা মা অশিক্ষিত হলে সাধারণত ছেলে-মেয়েদের মাঝে এই ধরনের সমস্যা দেখা যায়।সেজন্যই শিক্ষিত সমাজ সবসময় মায়েদের শিক্ষিত করানোর ব্যাপারে এতোটা উৎসাহী।আমার আত্নসম্মানে একটু লেগেছে বটে ইচ্ছে করছে দু-চারটা বসিয়ে দেই তাতে করে উনি কি আর আঙ্গুল চুষবে ? আমি চারটা দিলে তিনি অন্তত একটা দেবে তাতে আমার মান-ইজ্জত খুব বেশী বাড়বে না বরং কমবেই। আচ্ছা উনার একটু পরিচয় দেই,উনি চলতি মাসেই আমাদের মেসে উঠেছে,এখন পর্যন্ত পরিচয়ও হয় নি আমার সাথে। আমাদের মেসে থাকে খায় এতোটুকুই জানি। কথাবার্তা আর আচরণ দেখে মনে হলো নোয়াখালি-বরিশাল এদিকেই হয়তো তার জন্ম। আচার আচরণে ক্ষ্যাত ক্ষ্যাত একটা ব্যাপার আছে। বাসার পাশের এক দোকানে ফ্লেক্সি আর বিকাশের ব্যবসা করে। এসব লোকের সাথে আমার কথা বলারও রুচি হয় না। তাই বলে আপনারা কেউ আমাকে অহংকারী ভাবলে আমার করার কিছু নেই। তবে আমি তা একেবারেই নই। এরকম লোক আমার সাথে থাকতে পারে জানলে আমি এই মেসে কখনোই উঠতাম না। এই বিষয়ে আমার বেশ এলার্জি আছে। এই মাসের প্রথম দিকে অবশ্য আমি মেসের রুম ছেড়ে দিয়েছি,আগামী মাস থেকে নতুন বাসায় উঠবো।এই ঘটনার পরে এই মাসের বাকি দিনগুলো কতো তাড়াতাড়ি শেষ হয় সেই অপেক্ষায় আছি। হরেক রকম বাসায় হরেক রকম মানুষের সাথে আমার বসবাস এরকম বিদঘুটে লোক আমার চোখে পড়ে নি এখনো। আসল ব্যাপার হলো, ব্যবহারেই বংশের পরিচয় সে কথাটি সবাই জানা দরকার,জানার সুযোগ করে দেয়া আমাদেরই দায়িত্ব। তাহলে হয়তো এরকম বিদঘুটে মানুষ আর দেখা যাবে না।

চলবে............।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.