| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
''বাবা''
সেলিম পিছনে ফিরে তাকায় । মিতুল কিছু বলবি ? এই সাইকেলটা দেখো । অনেক সুন্দর তাই না । আমার বন্ধু রাকিবের । সেলিম চুপ থাকে । ছেলে বড় হচ্ছে । দিন দিন তার চাহিদা বাড়ছে । কিন্তু তার রোজগার বাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই । সামান্য একটা চাকরী থেকে যা আসে তা দিয়ে পুরো মাসটা ঠিক মতো চলে না । অনেক সময় ধার-দেনা করে চলতে হয় । মাঝে মাঝে নিজের ভাগ্যকে দোষ দেয় সে । ভাগ্যের কারো অভিযোগ শোনার সময় নেই । সে চলে তার নিজস্ব ভঙ্গিমায় । সে সাধারণ মানুষের ধার ধারবে কেন ?
-শুনছো ?
-হু
-আজ আসার সময় বাবুর জন্যে ডায়াপার আনতে হবে । একটু মনে করে নিয়ে এসো কেমন ?
সংসারে এমনিতেই খরচের কমতি নেই । তার উপর আবার বাড়তি খরচ । তার অন্য দুই ছেলে-মেয়ের জন্য তো এই ডায়াপার জিনিসটা লাগে নি । তাহলে এই পিচ্চিটার জন্য লাগবে কেন ? এই গাধা মেয়ে মানুষ সেটা বুঝবে না । সেলিমের মনে হচ্ছে রেহানার গালে জোড়ে কসে একটা চড় মারলে তার ভাল লাগতো । কিন্তু সেটা সম্ভব না ।
-ডায়াপার আনাটা কি জরুরী ?
-অবশ্যই জরুরী ।
-বড় দেখে একটা পলিথিনের কাগজ আনলে চলবে না ?
-না চলবে না । আচ্ছা তুমি এমন কেন বলতো ?
-এমন কেন মানে ?
-বলি একটা করতে চাও একটা । সেদিন বলেছিলাম প্যারাসুট বেলীফুল আনতে আর তুমি আনলে মগ বাজারের খোলা তেল । এখন দেখেছো আমার চুলের অবস্থা ।
-ঠিক আছে এর পরের বার আনার সময় ভালোটা আনবো ।
-তোমার এই মুখস্থ কথাটা দয়া করে আমাকে আর শুনাবা না ।
-আচ্ছা।
রেহানা চলে যায় । সেলিম দেখতে থাকে অদূরে রৌদ্রের ঝলকানিতে চিকচিকে করা কাকটার দিকে । কাকের মতো জগত সংসারে সেও অবহেলিত । একজন বাবা হিসেবে সে ব্যর্থ । একজন স্বামী হিসেবে সে ব্যর্থ । একজন পরাজিত মানুষ সে !
-বাবা !
-কি রে কিছু বলবি ?
-দেখো তো এই পাঞ্জাবীটা তোমার গায়ে হয় কি না ?
-তুই টাকা কোথায় পেলি ?
-নতুন একটা টিউশনি পেয়েছি বাবা । কিছু টাকা অগ্রিম দিয়েছে ।
-তাহলে নিজের জন্য কিছু নিলেই তো হতো । আর তাছাড়া আমার কাপড় তো এখনো ছেড়ে নি ।
-তুমি সেই কবে থেকে শুধু একটা পাঞ্জাবীই পরো । অনেক পুরনো হয়ে গেছে । তুমি নতুন পাঞ্জাবীটা পরো বাবা আমি তোমার জন্য চা করে নিয়ে আসছি ।
সেলিম ভাবতে থাকে । এলোমেলো সব ভাবনা । কবে থেকে সে দরিদ্রতার সাথে সঙ্ঘবদ্ধ ? জীবনের অনেক সময়ই তো সে পার করেছে । সামনের জীবনের আর কতোটা বাকি ? মেয়ে তার বড় হচ্ছে । বড় লক্ষ্মী মেয়ে মিতা । কখনো মুখ ফুটে কিছু চায় নি । লোকে বলে বাবার বাড়িতে মেয়েরা কষ্টে থাকলে নাকি স্বামীর বাড়িতে সুখী হয় । মিতার কপালে কি সেই সুখ আছে ? ছেলে মেয়েদের বেশির ভাগ আবদার সে পূরণ করতে পারে না । কষ্টটা তারও কম নয় । একজন বাবা হিসেবে সংসারের সবার অভাবের কথা তার শুনতে হয় । কিন্তু তার অভাবের কথাটা শুনবে কে ? তার ধারণা জগত সংসারে তার কষ্ট আর কেউ না বুঝলেও চাঁদের মতো এই মেয়েটা ঠিক বুঝতে পারে । তাই তো সে জগতের সবচেয়ে সুখী বাবা !!
©somewhere in net ltd.