নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরব্য উপন্যাসের সেই মরুচারী যে সত্যান্বেষণে জীবন উৎসর্গ করে। সেই উপন্যাসের চরিত্র নিজের ভিতরে লালন পালন ও প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে এই পথচলা।

মামুন রেজওয়ান

মামুন রেজওয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

"একটি নিষিদ্ধ দিন"

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:১৫


চিত্রঃ- গুগল হতে সংগৃহীত

সকালটা শুরু করেছি ৭ঃ১৫-মিনিটে। গতকাল রাতে শুতে একটু দেরী হয়েছিল। অবশ্য রোজই কম বেশী এরকম হয়। অফিস থেকে যদিও চলে আসি সন্ধ্যা ৬টা বাজতে বাজতেই। সারাদিন প্রচুর ব্যস্ততায় কাটে অফিসে। এখন ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যাস্ত আমি। আমার একটা বাড়ি হয়নি এখনও এই আফসোসে ঘুমাতে পারিনা ঠিকমত। সন্ধ্যায় রুমে এসে ফেসবুকে ঢুকি। নিউজফিড সুন্দরীদের পিকে বোঝায় হয়ে থাকে। আজকেও একজনের ছবি দেখে মাথাটা একটু ঝাকি দিয়ে উঠেছে। চিন্তা করলাম মেয়েটাতো সেই অস্থির! যে করেই হোক পটাতে হবে। ম্যাসেঞ্জারে হ্যালো! বলে একটা নক দিলাম। অপেক্ষা করছি সিন শব্দটা দেখা যায় কিনা। এরপরে কি বলতে হবে সব ছক করে ফেলেছি মনে মনে। আসলে আমি এসব ব্যাপারে খুব সিদ্ধহস্ত। ঠিক এই সময়ে এশার আজান ভেসে আসল পাশের মসজিদ থেকে। ধুস জানালাটা কে যে, খুলে রাখে! হেডফোন খুঁজতে লাগলাম। আজান কানে গেলে কেমন যেন, বিবেকটা হালকা খোঁচা দেয়। আরেহ এখন ইয়াং আমি, এখন লাইফটা উপভোগ করার সময়। এই বয়সে কেও পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে? বুঝিনা আমি, এই বয়সে গার্লফ্রেন্ড থাকবে কয়েকটা, রাতভর পার্টি হবে। পার্টিতে থাকবে মার্গারিটা। এক পেগ মার্গারিটা ঢালব গলায় আর স্ক্রর্ট হিসাবে পার্টিতে থাকা লেডিদের নিয়ে আমোদ ফুর্তি করব। তানা কি সব আদিম রুলস। বিয়ের আগে নাকি কোন মেয়ের সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা বলাই যাবেনা। এটা কোন কথা! মেয়ে ছাড়া আড্ডা, পার্টি জমে! কি সব অদ্ভুত নিয়ম!
মা আরেক যন্ত্রনা শুরু করেছে। রোজ ফোন দিয়ে বিয়ে করবি কবে, বিয়ে করবি কবে বলে বলে মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। আরেহ এই বয়সটা আমোদ ফুর্তি করে নেই। স্টাবলিশ হয়ে নেই তারপরে ভাবা যাবে বিয়ের কথা।

যাক বাবাহ I am not afraid গানটা আপাতত আমার বিবেকটা চেপে রাখতে সাহায্য করেছে। ওহ! এইতো ম্যাসেজ সিন হয়েছে। ওয়াও টাইপিং এর সাইনও দেখা যাচ্ছে। যাইহোক কি উত্তর আসে অপর পক্ষ থেকে সেই অপেক্ষায় থাকার পাশাপাশি একটু "ডার্টি ক্লাব" চ্যাট গ্রুপটাতে ঢু মারি। মেয়েদের শরীরের বিশেষ অঙ্গ নিয়ে গ্রুপটাতে রাফসান যে সুন্দর সুন্দর মেমে বানায়! আসলেই ছেলেটা খুব ক্রিয়েটিভ এবং ট্যালেন্টেড। গ্রুপটাতে ঢুকে কয়েকটা মেমে দেখতে না দেখতেই ফিল করলাম ডোপামিন রিলিজের হার বেরে গেল মস্তিষ্ক থেকে। হৃদপিন্ড প্রচন্ড গতিতে ব্লাড পাম্প করা শুরু করল। মেয়েটার ছবি ভেসে আসল মস্তিষ্কে। শরীরের বিশেষ অঙ্গ প্রস্ফুটিত করে যে ছবিটা দিয়েছিল ঘুরেফিরে সেই ছবিটা মস্তিষ্কে ঘুরপাক খেতে লাগল। এক্স গার্লফ্রেন্ডের কথা মনে পড়ে গেল। দ্রুত ম্যাসেঞ্জারে চলে আসলাম। একে আমার লাগবেই। রাতের খাওয়া সেরে আসলাম নিচ থেকে। GOT এর ৮ম এপিসোড রিলিজ হয়েছে। আজকেই দেখে ফেলতে হবে।

রুমে এসেই আগে আমার বর্তমান গার্লফ্রেন্ড সুমনার সাথে বেশ খানিক্ষন কথা বললাম। মেয়েটা খুব ধার্মিক। সব সময় বোরখা পরে। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পরে। এরপরে মোবাইল নিয়ে শুয়ে পড়লাম। GOT দেখা শুরু করলাম। রাত দুইটা বাজে। এখন ঘুমাতে হবে। এই যাহ! কালকেতো আবার শুক্রবার। এখন কি হবে? কালকেতো নামাযে যেতে হবে। এই ঠান্ডার রাতে গোসল করব কিভাবে? জুম্মার নামায না পড়লে মানুষ কি বলবে! আমি মুসলিম, জুম্মার নামায না পড়লে সমাজের মানুষ কি বলবে? আরেহ অতশত ভেবে লাভ নেই এই ঠান্ডার মধ্যে গোসল করা সম্ভব না। যথারিতী ঘুমাতে ঘুমাতে রাত ৩টা। আসলে ম্যাসেঞ্জারের ওপাশে নতুন মেয়েটাকে সময় দিতে হল। নিজের পার্ফরমেন্সে নিজেই মুগ্ধ আমি। কালকে রোহানকে এক হাত নেওয়া যাবে। মনে মনে ঠিক করে ফেললাম রোহানকে কি বলব। "দেখ শালা এক ঘন্টার মধ্যে মাছ ধরে ফেলেছি। " যাক বিরাট এক সাক্সেস অর্জন করলাম আজকে।

যথারিতি সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছি ৩টা দশ বা পনেরর দিকে। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল কোন কারন ছাড়া। এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি কেন ঘুম ভাঙল। বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে আসল। ধুর! আবার আজান? মনে হল এই কিছুক্ষন আগে মাত্র ঘুমালাম। কাঁচা ঘুমটা ভাঙল। আমার সৃষ্টিকর্তা, আমার মৃত্যু দাতা, ঘুমের ভিতর আমাকে সারারাত রক্ষা করেন যেঁই প্রভু তাঁর ডাকে সারা দিয়ে কি হবে? কেউ কোন বিষয়ে ডাকলে আমি যে সাড়া দেইনা ব্যাপারটা এরকম না। এই যেমন আমার এলাকার এক গন্যমান্য ব্যাক্তি গতকালকে বলল, " শাহীন আমি একটা পার্সেল অর্ডার করেছিলাম। তুমি কষ্ট করে পার্সেলটা কুরিয়ার থেকে নিয়ে এসোতো।" আমি মনে মনে একটু বিরক্ত হলাম কারন আমি ব্যাক্তিটির তেমন পরিচিত নই । লোকটি আমার পাশের বাসার বিশাল বড় একটা এপার্টমেন্টের মালিক। আমার চাকরী হচ্ছে না বেশ কিছুদিন হল। সেই জন্য উনার কাছে গত দুইদিন আগে একটা কম্পানিতে সুপারিশ করতে অনুরোধ করেছিলাম। সেই সুবাদে তিনি তার পার্সোনাল কাজ, আমাকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু বিরক্তিটা নিজের ভিতরে দমিয়ে রাখলাম কারন চাকরীটা আমার খুব দরকার। আমার কাছে আমার সৃষ্টিকর্তার সাহায্যের চেয়ে দুইদিন পরের এই চাকরিটার জন্য ব্যাক্তিটির নেক নজরে থাকা বেশী গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আমি বলার সময় একটু গলা উঁচিয়েই বলি রিজিক্বের মালিকতো আল্লাহ। বলার সময় গলা বারিয়ে বললেও এখন উনাকে চটানো যাবেনা। কারন আমি জানি অত্র প্রতিষ্ঠানের খুব বড় পদে উনি আছেন। যাইহোক বিরক্তিটা কিছুটা কমে আসল। কিন্তু কাঁচা ঘুম চটকে "চ" হয়ে গেছে। এপাশ ওপাশ করছি কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছেনা। এখনও দেঢ় ঘন্টা বাকী অফিসের। ধীরে ধীরে আকাশ ফর্সা হতে দেখছি চোখের সামনে। আবার শুরু হল আমার সকাল ৭ঃ১৫ এর যাত্রা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: ডায়েরী লিখেছেন।

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:৩০

মামুন রেজওয়ান বলেছেন: আমাদের অধিকাংশের কমন দৈনিক কার্যক্রম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.