নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরব্য উপন্যাসের সেই মরুচারী যে সত্যান্বেষণে জীবন উৎসর্গ করে। সেই উপন্যাসের চরিত্র নিজের ভিতরে লালন পালন ও প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে এই পথচলা।

মামুন রেজওয়ান

মামুন রেজওয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

"ভাল/মন্দ = ?"

০১ লা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:০০


চিত্রঃ-ভাল ও মন্দ? (গুগল হতে সংগৃহীত)

আলহামদুলিল্লাহ এটা গত বছর আগষ্টের ১৫ তারিখে লেখা একটি আর্টিকেল। বিশেষত একটা পাবলিকেশন কর্তৃক আয়োজিত প্রবন্ধ প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহনের নিমিত্তে লেখাটির জন্ম। আরও আলহামদুলিল্লাহ ইলমহাউজ কর্তৃক আয়োজিত সেই প্রতিযোগীতায় লেখাটি ৬ষ্ঠ স্থান দখল করেছিল।

ভাল-মন্দের বিচার আমরা কিভাবে করি? এটা একটা বড় প্রশ্ন। আমরা চুরি করাকে খারাপ কাজ কেন বলছি আর দান করাকে কেন ভাল কাজ বলছি? এই ভাল খারাপের সংগাটা আসলে কে ঠিক করে দিবে বা এটার স্ট্যান্ডার্ড আসলে কি হবে? অনেকে বলতে পারেন, যে কাজে কারও ক্ষতি হয় সেটাই খারাপ কাজ। যেমন চুরি করলে যার জিনিস চুরি করা হচ্ছে তার ক্ষতি হয়। দান করলে যাকে দান করা হচ্ছে সে লাভবান হয়। এই হিসাবে প্রথমটা মন্দ কাজ এবং পরেরটা ভাল কাজ।

এবার চলুন মুদ্রাটা উল্টিয়ে দেই। যিনি চুরি করছেন তিনি কিন্তু লাভবান হচ্ছেন। এই অর্থে কিন্তু এটা ভাল কাজ হওয়ার দাবী রাখে। ঠিক একইভাবে যিনি দান করছেন তার সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে বা কমে যাচ্ছে এই অর্থে দানকারী ব্যাক্তির কাজটি মন্দ কাজ। একটা কাজ একইসাথে কিভাবে ভাল এবং মন্দ হতে পারে? তাহলে ভাল-মন্দের সংগা কি নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজ নিজ সংগা অনুসারে ঠিক করা হবে? আরও সহজ একটা উদাহরনে যাওয়া যাক।

একজন বেকার ছেলে হন্যে হয়ে চাকরী খুঁজছে। ধরা যাক X এবং Y দুইটি কম্পানি আছে। একজন X ইন্ডাস্ট্রিতে জব করছে। তার কাছে তার ইন্ডাস্ট্রি ভাল নয়। কারন এখানে স্যালারী দেওয়া হচ্ছে ২০০০০ টাকা। তার কাছে Y ইন্ডাস্ট্রি খুব ভাল কারন সেখানে একই পজিশনে স্যালারি ৩০০০০ টাকা। তাই সে চেষ্টা করছে Y ফ্যাক্টরিতে যাওয়ার জন্য। এখন বেকার ছেলেটার কথা বিবেচনা করা যাক। বেকার ছেলেটা X ইন্ডাস্ট্রিতে জুনিয়র হিসাবে জয়েন করল। তার কাছে এটা ভাল ইন্ডাস্ট্রি মনে হয়েছে। কারন এখানে স্যালারি ধরা হয়েছে ১৫০০০ টাকা। এবং Y ইন্ডাস্ট্রিতে জুনিয়র পজিশনে স্যালারি ধরা হয় ১৩০০০ টাকা।

উপরের দুই ব্যাক্তি ভাল-মন্দ বিচার করলেন টাকার পরিমান দিয়ে। এবং এক্ষেত্রে তাদের ভাল-মন্দ বিচারের স্ট্যান্ডার্ড হল টাকা। অর্থাৎ একই ইন্ডাস্ট্রি একজনের কাছে ভাল আরেকজনের কাছে খারাপ। ভাল-মন্দ বিচারের মাপকাঠি কি এরকম কিছু হওয়া উচিৎ যেটা ব্যাক্তি বিশেষে পরিবর্তন হয়ে যায়? তাহলে ভাল-মন্দ বিচারের জন্য একটা স্ট্যান্ডার্ড দরকার তাই নয় কি? যারা বিশ্বাসী অর্থাৎ যারা বিশ্বাস করে তাকে সৃষ্টি করেছেন কোন এক সত্ত্বা তারা ভাল-মন্দের স্ট্যান্ডার্ড হিসাবে বেছে নিয়েছে তাদের সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ভাল-মন্দের সংগাকে। আর আল্লাহ তা’আলা কোনটা তাঁর বান্দার জন্য ভাল হবে এবং কোনটা তাঁর বান্দার জন্য মন্দ হবে তা নির্ধারন করেছেন মানুষের ন্যাচারের উপর ভিত্তি করে। কারন তিঁনি ছাড়া আর কে ভাল বলতে পারবে যে, তাঁর সৃষ্টির জন্য কোনটা ভাল হবে আর কোনটা মন্দ হবে? [1]

কিন্তু যারা সেক্যুলারিজমে বিশ্বাসী তারা কিভাবে ঠিক করবে কোন কাজটা ভাল আর কোন কাজটা মন্দ? এক্ষেত্রে তাদের ভাল মন্দের মাপকাঠি বিবেচনা করার আগে সেক্যুলারিজমের উৎসটা আমাদের জানা দরকার। উইকিপিডিয়ার ভাষ্যমতে,
"Secular ethics is a branch of moral philosophy in which ethics is based solely on human faculties such as logic, empathy, reason or moral intuition, and not derived from supernatural revelation or guidance—the source of ethics in many religions. Secular ethics refers to any ethical system that does not draw on the supernatural, and includes humanism, secularism and freethinking" [2]
এখানে সেক্যুলারিজমের সংগামতে এটা স্পষ্ট যে, নৈতিকতার মাপকাঠি ব্যাক্তিকর্তৃক গৃহীত। এবং এই নৈতিকতার নীতিমালাগুলো গ্রহন করা হয়েছে বিভিন্ন ধর্ম থেকে। এখানে প্রশ্ন থেকে যায় যে, ধর্মের বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত নীতিমালাসমূহ কতটা বিশুদ্ধ? কারন প্রত্যেকটা ধর্মীয় উৎসে মানুষ কর্তৃক কিছু না কিছু রদবদল করা হয়েছে (ইসলাম ব্যতীত)। তাহলে আমরা এব্যাপারে নিশ্চিত বলতে পারি যে, যেহেতু তাদের (সেক্যুলার) নীতিমালার উৎস রদবদল হয়েছে তাই তাদের নীতিমালাসমূহেরও স্ট্যান্ডার্ড থেকে বিচ্যুতি ঘটেছে।

সেক্যুলারে বিশ্বাসী ব্যাক্তিবর্গ আরেকটা থিওরিকে নৈতিকতা বা ভাল-মন্দ নির্ণয়ের মাপকাঠি হিসাবে বিবেচনা করে। সেটা হল ব্যাক্তির স্বাধীন চিন্তা এবং সামষ্টিক মতামত। ব্যাক্তির স্বাধীন চিন্তা কখনও ভাল-মন্দ বিচারের মাপকাঠি হতে পারেনা এটা আগের দেওয়া X এবং Y ইন্ডাস্ট্রির উদাহরন খেয়াল করলে স্পষ্ট বুঝা যায়। যে ভাল-মন্দের সংগা ব্যাক্তিবিশেষে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে সেটা কখনও স্ট্যান্ডার্ড হতে পারে না। এছাড়াও এক্ষেত্রে আরেকটি চমৎকার উদাহরন দেওয়া যেতে পারে।
২০১৬ সালে এমেরিকার নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারনার বড় একটা অংশ ছিল অনলাইন মিডিয়া। ডোনাল্ড ট্রাম্প হিলারির কিছু ভিডিও নিয়ে একটা প্রচারনা চালান।
ভিডিওতে দেখা যায়, ২০০৪ এ হিলারি বলেছিল,” আমি বিশ্বাস করি বিয়ে হল (কেবল) নারী ও পুরুষের মধ্যে পবিত্র বন্ধন। “
৬ বছর পর ২০১০ এ, “ আমি সমলিঙ্গের মানুষের মধ্যে বিয়ে সমর্থন করিনি, তবে (তাদের মধ্যে) সিভিল পার্টনারশিপ এবং কন্ট্র্যাকচুয়াল রিলেশানসিপ সমর্থন করি।“
২০১৩ তে, “ আমি ব্যাক্তিগতভাবে এবং পলিসি হিসেবে গে এবং লেসবিয়ানদের বিয়ে সমর্থন করি।“
আর ২০১৫ তে এমেরিকার সুপ্রীম কোর্টে সমকামী বিয়েকে আইনী বৈধতা দেওয়ার পর হিলারি বলেছিল, “ প্রেম বিজয়ী হয়েছিল আমাদের সর্বোচ্চ আদালতে।“ [3]
এখানে খুব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, ধাপে ধাপে সামষ্টিক মতকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে কিভাবে বক্তব্যের পরিবর্তন ঘটে গেছে। এভাবে ব্যাক্তিবিশেষে মন্তব্যের পরিবর্তন কখনও কোন কিছুর স্ট্যান্ডার্ড হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা।

এবার দেখা যাক সামষ্টিক মতামত কি ভাল-মন্দের স্ট্যান্ডার্ড হওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতা রাখে? এখানে সামষ্টিক মতামত বলতে কোন একটা জাতি বা সম্প্রদায় বা সমাজ বা পরিবারের কয়েকজনের মতকে বুঝানো হচ্ছে। উদাহরন হিসাবে আমরা গ্রীক সভ্যতার প্রাচীন ইতিহাসের দিকে তাকাতে পারি। তৎকালিন সময়ে নারীকে পেত্নী, অশুভ ইত্যাদির প্রতীক হিসাবে চিহ্নায়িত করা হোত। [4]
বর্তমানে কিন্তু এই নারীকেই পুরুষের সমান ক্ষমতার অধিকারিনী বলে বিবেচনা করা হয়। এবং নারীর অধিকার নিয়ে সেই সভ্যতা এখন যথেষ্ট সোচ্চার, সেই মতবাদ এখন আর তাদের সভ্যতাই নেই। তাহলে সামষ্টিক বা একটা সম্প্রদায়ের সিদ্ধান্ত যে ভুল হতে পারে সেটা এই উদাহরনে স্পষ্ট। .
এবার মূল কথায় আসি । একটা মহল ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দের মাপকাঠি হিসাবে ব্যাক্তির স্বাধীন চিন্তা বা সামষ্টিক মতকে আদর্শ হিসাবে গ্রহন করেছে। উপরের উদাহরনগুলো দেখলেই বুঝতে পারছেন ব্যাক্তির স্বাধীন চিন্তা এবং সামষ্টিক সিদ্ধান্ত কখনও ভাল মন্দ বিচারে নিরপেক্ষ নয়। কারন এটা ব্যাক্তি কর্তৃক বা সভ্যতা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিন। যেখানে ব্যাক্তি তার নিজস্ব অবস্থান থেকে ভাল-মন্দের বিচার করছে সেটা সার্বজনীন ভাল-মন্দ হওয়ার ক্ষমতা রাখে না। তাহলে তারা কিভাবে বলছে চুরি করা খারাপ, ডাকাতি করা খারাপ, মিথ্যা বলা খারাপ?
কিন্তু ইসলামের ভাল-মন্দের মাপকাঠি ১৪শত বছর আছে যেমন ছিল এখনও ঠিক তেমন আছে। আর এটাই সর্বজন গৃহীত একমাত্র স্ট্যান্ডার্ড হওয়ার যোগ্যতা রাখে। কারন যিঁনি যাদের (মানুষ) জন্য এই স্ট্যান্ডার্ড তৈরী করেছেন, তাদের স্রষ্টাও তিঁনিই। আপনি যদি একটা গাড়ী তৈরী করেন তবে আপনার চেয়ে ভাল আর কে বলতে পারবে যে, এই গাড়ীটি কতটুকু চাপ সহ্য করতে পারবে, পানিতে ভিজলে কিরুপ আচরন করবে, কতটুকু উপর থেকে পড়লেও এটা অক্ষত থাকবে?
.
Resources:-
[1] Good and Evil (2): View of the Quran
[2] en.wikipedia.org/wiki/Secularism
[3] Hillary Clinton had the chance to make gay rights history. She refused. Washington post, August 29, 2016
[4] Vinci Code by Dan Brown

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো কিংবা মন্দ শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে বাস্তবতা এবং জ্ঞান উভয়ই জরুরী। তবে শিক্ষালব্ধ জ্ঞান অপেক্ষা বাস্তবতা থেকে লব্ধ জ্ঞান ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্বপূর্ণ অথবা অধিক ভূমিকা রাখতে পারে।
পুঁথিগত শিক্ষার থেকে মানুষ অনেক কিছুই জানতে পারে যার বাস্তবিক প্রতিফলন ঘটাতে পারে না। কিন্তু মানুষ যখন কোন বাস্তবতার শিকার হয় তখন সে বুঝতে পারে তার পরবর্তীতে কি করতে হবে বা কি করতে হবে না। কিংবা কোনটা তার জন্য ভালো হবে কিংবা কোনটা ভালো হবে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.