নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আন্না কারেনিনা (Anna Karenina): \'সুখী পরিবার\' সংজ্ঞায় বিভ্রাট!

২৫ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১:১৯




বিখ্যাত রুশ লেখক ল্যেভ তল্‌স্তোয় (পুরো নাম: লিয়েফ়্ নিকলায়েভ়িচ্ তল্‌স্তোয় (২৮ আগস্ট ১৮২৮ – ২০ নভেম্বর ১৯১০) এর বিখ্যাত উপন্যাস আন্না কারেনিনা (Anna Karenina – 1878) নিয়ে আজকের আলোচনা। আমি পুরো উপন্যাস নিয়ে এই অনুচ্ছেদে লেখার দুঃসাহস করছি না। বরং এই উপন্যাসের একেবারে প্রথমে ব্যবহ্নত একটি বিশেষ উক্তি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করতে চাই।

“All happy families resemble one another; each unhappy family is unhappy in its own way.”

কেন সব সুখী পরিবার একইরকম? এবং কেন অসুখী পরিবারগুলো একে অপরের থেকে আলাদা? প্রশ্নটা আমার যেমন লিখতে সহজ লাগছে, আপনার পড়তেও কোনো অসুবিধা হচ্ছে না; আসলে বিষয়টি এত সহজ নয়। অথবা, সহজ করে দেখার ইচ্ছে করলেও সহজ করে কি দেখা যায়?

আচ্ছা, শুধু এটুকু বলুন তো, যে, সুখী পরিবার বলতে আপনি কি বোঝেন? সুখী পরিবারের সংজ্ঞা কি? অথবা, ঠিক কি কি বৈশিষ্ট্য থাকলে একটি পরিবারকে সুখী পরিবার হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে?

এখন মাথায় এটাও আসতে পারে, এই পৃথিবীতে সুখী পরিবার বলতে অদৌ কিছু আছে কি? কারণ, আমরা তো জানি সব পরিবার-ই ‘অপূর্ন/অসম্পূর্ণ’। তবে ল্যেভ তল্‌স্তোয় কীসের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছেন? বিখ্যাত প্রেমের এই রুশ উপন্যাসে হঠাৎ এ কেমন বিষয় উপস্থাপন করেছেন ঔপন্যাসিক! এত ভারি দর্শনের উপস্থিতি কেন? তাও একেবারে প্রথমেই!

আপাতদৃষ্টিতে বা উপরিতল থেকে দেখলে এই উক্তির অর্থ দাঁড়ায়, সুখী পরিবারগুলো এতই সম্ভব একইরকম যে, সেখানে মজাদার কিছুই নেই; সরলরৈখিক। সেখানে পর্যবেক্ষণ করার মত অন্তর্নিহিত বিশেষ কোন অর্থ নেই।

যে সমাজে রুশ ঔপন্যাসিক ল্যেভ তল্‌স্তোয় ‘সুখী পরিবার’ কে ‘সুখী পরিবার’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছেন সে পরিবারগুলো সফল এবং তাদের গল্পগুলো একই। শুধু তাই নয়, এই সমস্ত সুখী পরিবারগুলোর সফলতার গল্পও একই; মানে একঘেয়েমীপূর্ণ।

আর যে সমস্ত পরিবার এই মানদণ্ডে সুখী পরিবারে সংজ্ঞায়িত হতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের গল্প আলাদা আলাদা। হতে পারে তারা সফল নন কিন্তু তাদের এই ব্যর্থতার গল্পগুলো বেশ বৈচিত্র্যময়। এক নয় মানে বিচিত্র এবং মজার। আর যেহেতু অসুখী পরিবারগুলোর বিচিত্র তাই জটিলও বটে।

একটু খেয়াল করে দেখুন, উক্তিটি ব্যাখ্যা করা মাত্র-ই অর্থ রিভার্সে মানে উল্টাপথে বাঁক নিয়েছে। ঠিক তাই, এই প্রসঙ্গে ব্রিটিশ দার্শনিক ও সাংবাদিক জুলিয়ান ব্যাগিনি (Julian Baggini) বলছেন,

“…unhappy families are characterized by either conflict or tension, or an emotional sterility beneath a surface of calm. Often common to both types is an absence of love. Happy families however, come in many sorts.”

জুলিয়ান ব্যাগিনি সরাসরি ল্যেভ তল্‌স্তোয়ের সাথে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। তিনি এই সংজ্ঞাকে আরো সরলীকরণ করে যেন বলছেন, একটি পরিবারের আকার বা উক্ত পরিবারের সদস্যদের সফলতা দ্বারা সুখী পরিবার নির্ধারণ করা উচিত নয়।

সুখী পরিবারগুলো নির্ধারণ করা যেতে পারে ‘ভালোবাসা’ দিয়ে এবং উক্ত পরিবারের সদস্যদের একে অপরের প্রতি যত্নের ওপর। একে অপরের ভুলত্রুটি গ্রহণ করার মানসিকতা এবং প্রত্যেকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে এমন পরিবারগুলো হচ্ছে সুখী পরিবার।

তিনি পরিবার কে শুধুমাত্র স্বামী, স্ত্রী, সন্তান বা কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যেও রাখতে একমত নন। পরিবারের দৈর্ঘ্য কেমন হবে সেটা আমরা নির্ধারণ করি না। এই সামষ্টিক বিচারে একাধিক মানুষের বিন্যাসে একটি পরিবার হতে পারে।

যেমন ধরুন, বর্তমানে বিভিন্ন সংস্থা, দল, গ্রুপ, কমিউনিটি ইত্যাদি থেকে বিশেষ কোনো সংবর্ধনা/শুভেচ্ছা দেবার ক্ষেত্রে তারা বলেন, “আমাদের ‘ক’ পরিবারের পক্ষ থেকে সব মুসলিমদের জন্য ঈদের শুভেচ্ছা রইলো।” এমনকি ঐ একই পরিবার থেকে কেউ মৃত্যুবরণ করলে বলেন, “আমাদের ‘ক’ পরিবার ‘খ’ ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত শোকাহত।”

অন্যদিকে যে পরিবারগুলো অসুখী সেসব পরিবারের বৈশিষ্ট এক বলে দাবী ব্রিটিশ দার্শনিক জুলিয়ান ব্যাগিনির। মানে যেসব পরিবারে দুঃশ্চিন্তা, দ্বন্দ্ব, মানসিকভাবে দূরত্ব, একে অন্যের স্বাধীনতা দিতে অক্ষম, একে অপরের প্রতি ভালোবাসা এবং যত্নের কমতি আছে সেসব পরিবারগুলো অসুখী বা দুঃখী পরিবার বলেছেন।

আরো ভালোভাবে দেখলে বুঝবেন এই সমস্ত বৈশিষ্ট সকল অসুখী পরিবারে বিদ্যমান। সরল ছন্দে এসব পরিবার চলতে পারে না। প্রায় প্রায় চলার পথে জটিলতায় ভুগে থাকেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই স্থিতাবস্থা (Status quo) নিয়ে!

তবে কি রুশ ঔপন্যাসিক ল্যেভ তল্‌স্তোয় ভুল লিখেছেন? অবশ্য সাহিত্যের ছাত্র হলে এ ধরণের বিপাকে দু-একবার না পড়লে চলে না। আমরা যদি ল্যেভ তল্‌স্তোয়ের আরো একটি মাস্টারপিস উপন্যাস ওয়ার এন্ড পিস (War and Peace - 1865) পড়ে থাকি তাহলে সেখানে দেখতে পাবো একটি ফ্রেঞ্চ প্রবাদ, “Happy people have no history.”

ব্যাপারটা কি তাহলে আরো ঘনীভূত হচ্ছে কি? ল্যেভ তল্‌স্তোয় যদি ভুল লিখতেন তবে সেটা একবার ঘটতো। কিন্তু তিনি একই ধরণের কথা দুটো বিখ্যাত উপন্যাসে উল্লেখ করেছেন। ভুল বা ঠিক এবং সহমত বা দ্বিমত এসবের বাইরে গিয়ে তাই পূর্বে ল্যেভ তল্‌স্তোয় কে বুঝতে হবে। জার্মান দার্শনিক ফ্রেডরিক নীটশের (Friedrich Nietzsche) একটি বিখ্যাত উক্তি আছে। উক্তিটি হলো,

“Man, the bravest animal and most prone to suffer, does not deny suffering as such: he wills it, he even seeks it out, provided he is shown a meaning for it, a purpose of suffering.”
- On the Genealogy of Morals (1887)

ধ্বংসবাদের প্রবক্তা ফ্রেডরিক নীটশে কে ‘না’ করার অনেক কারণ আপনার কাছে থাকতে পারে। কিন্তু বেঁচে থাকাটাকে যদি আমি দুর্ভোগ হিসেবে দেখাতে পারি তবে উক্ত উক্তি খুব সহজেই প্রতিষ্ঠিত করা যায়। এটা তো হলো ‘এক’ কিস্তির হিসেব।

তল্‌স্তোয় অস্তিত্ববাদ (Existentialism) এর এই অংশ নিয়ে কথা বলেছেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। কিন্তু তিনি জীবন নিয়ে কথা বলেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি উপন্যাসটি লিখেছেন ব্যক্তি অভিজ্ঞতা থেকে। জীবনকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন, জেনেছেন। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ‘আন্না কারেনিনা’ কে করেছেন একই সাথে সরল থেকে জটিল, বিচিত্র এবং করুণরসাত্মক।

আর এখানেই আছে এসব প্রশ্নের উত্তর আছে। পুরো উপন্যাস জুড়ে তিনি অসুখী এবং ভালোবাসা বঞ্চিত চরিত্রদের নিয়ে কাজ করেছেন। সফল বা সুখী পরিবার বিবেচনায় নিয়ে কাজ করেছেন মাত্র একটি!

হ্যাঁ, কিটি (Kitty) এবং কোস্ট্যা (Kostya) শুধু বেঁচে গেলেন শুধুমাত্র ভালোবাসার উপস্থিতি ছিলো বলে। আর বাকিরা পারলেন না, পরিপূর্ণ জীবন পেলেন না শুধুমাত্র এই ভালোবাসার অভাবের জন্য। আর এজন্যই এই উপন্যাস কে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেমের উপন্যাস বিবেচনায় আজও নেওয়া হয়।

একজন মানুষ কতভাবে? কার সাথে? বা কখন? প্রেমে পড়তে পারেন তার অনেক গভীরে গিয়ে লেখক কথা বলেছেন। এবং ভালোবাসা ছাড়া জীবন কতটা অপূর্ণ এবং বিয়োগান্তক হতে পারে তার সচিত্র দৃশ্য লেখক কিন্তু আঁকতে সক্ষম হয়েছেন।

মদ্দকথা হচ্ছে, ভালোবাসা একটি সুখী পরিবারকে তৈরি করে এবং সেটা পুর্ণতায় ভরপুর যদিও সেখানে নানাবিধ দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। আর যেখানে ভালোবাসা নেই সেই পরিবার আর যাইহোক সুখী পরিবার হতে পারে না।

যদিও সেখানে জীবনের অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি থাকলে থাকতেও পারে; এতে কিচ্ছু যায় বা আসে না। সেটা হতে পারে উক্ত সময়ের রাশিয়ান অফিশিয়াল যারা ছিলেন তাদের ক্ষেত্রেও। এই হলো দ্বিতীয় কিস্তির হিসেব।

আরো একটি বিষয় হচ্ছে, ‘Misquotation’: এই উক্তিকে বারবার ভুলভাবে তুলে ধরে ব্যাখ্যায় ঝামেলায় ফেলে দেওয়া হতে পারে,

ভুল উক্তি: All happy families are alike, but every unhappy family is unhappy in its own way.
সঠিক উক্তি: “All happy families resemble one another; each unhappy family is unhappy in its own way.”

তল্‌স্তোয় এখানে ‘resemble’ ব্যবহার করেছেন ‘alike’ নয়। কারণ এই পৃথিবীতে দুটো পরিবার কোনোভাবেই একই রকম হতে পারে না। বরং একে অপরকে বড়জোর রিপ্রেজেন্ট করতে পারে। তল্‌স্তোয়ও সেটাই বলেছেন। ফলতঃ ভুল উদ্ধৃতির জন্য এই ব্যাখ্যা ভুল দিকে বাহিত হতে পারে।

সবমিলিয়ে পক্ষে ৩টি কিস্তি এবং বিপক্ষে ১টি কিস্তি হাজির করতে এই পর্যন্ত সক্ষম। তবে পাঠক হিসেবে তল্‌স্তোয়ের বিচারকে উচ্চ বিচার হিসেবে নেবো আমি। তিনি ব্যাপারটাকে জেনেরালাইজড করেছেন বলে মনে হয় না।

উক্ত গল্পের আদলে এই উক্তির চেয়ে সুন্দর কি উক্তি লেখা যেতে পারতো তা আমার জানা নেই!

ধন্যবাদ

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২২ ভোর ৪:০০

কামাল৮০ বলেছেন: এই উপন্যাস গুলির একটা প্রধান দিক হলো সুধু চরিত্র গুলোই জানা যায় না ,সাথে সাথে সমাজের একটা বাস্তব চিত্র জানা যায়।একটা সার্থক উপন্যাসের যেটা প্রধান দিক।
অনেক আগে পড়েছিলাম,তার পরও ভাসা ভাসা মনে আছে।নতুন করে পড়ার মতো ধর্য্য আর নাই।মানুষ বুড়ো হলে বই নিয়ে থাকে,আমার হয়েছে বিপরীত।

২৬ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ৯:০৪

মি. বিকেল বলেছেন: সুন্দর বলেছেন। সার্থক উপন্যাস।

২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২২ ভোর ৬:৫০

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: আবার মনে করিয়ে দিলেন - পড়ার কত বাকি।

২৬ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ৯:০৫

মি. বিকেল বলেছেন: একবার শুরু করেই দেখুন না?

৩| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ৭:৩০

শ্রাবণধারা বলেছেন: আমার কাছে কিন্তু ঠিকই মনে হয়েছিল সুখী পরিবার গুলো একটা আরেকটার কাছাকাছি -এই কথাটা। তারপর তলস্তয় ঐ পরিবারের অসুখের বর্ননা দিয়েছেন - গভর্নরের সাথে বাড়ির কর্তার প্রেমের ঘটনাটা।

অনেকদিন আগে পরা বইয়ের ঘটনা অনেকটা ভুলে গেছি। আপনার লেখা পড়ে অনকেটা মনে পড়লো। কিটি আর কস্টা বা লেভিন এর কথা মনে পড়লো। লেভিন খুব সম্ভব তলস্তয়ের নিজেরই চরিত্র।

২৬ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ৯:০৭

মি. বিকেল বলেছেন: লেভিন খুব সম্ভব তলস্তয়ের নিজেরই চরিত্র। - হতে পারে, নিশ্চিত নই। আমি এই উক্তি নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়েছিলাম। আপনাকে ধন্যবাদ।

৪| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ৮:৫০

শেরজা তপন বলেছেন: পড়লাম- একটু ভাবনা চিন্তা করে প্রতিউত্তর দেয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু সেটুকু সময় নেই।
লাইক দিলাম- পরিচ্ছন্ন লেখা। ভাল লেগেছে।

২৬ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ৯:০৮

মি. বিকেল বলেছেন: মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.