নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানব মঙ্গল আমার একান্ত কাম্য

মহাজাগতিক চিন্তা

একদা সনেট কবি ছিলাম, ফরিদ আহমদ চৌধুরী ছিলাম, এখন সব হারিয়ে মহাচিন্তায় মহাজাগতিক চিন্তা হয়েছি। ভালবাসা চাই ব্লগারদের, দোয়া চাই মডুর।

মহাজাগতিক চিন্তা › বিস্তারিত পোস্টঃ

নবুয়ত ও রেসালাতের দায়িত্ব পালন ছাড়া খেলাফত কায়েম হয় না ও খেলাফত কায়েম হলেও টিকে থাকে না

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:০৩



সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমত; এর আগে তো এরা ছিল ঘোর বিভ্রান্তিতে।

সূরা: ৯ তাওবা, ১২২ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২২। আর মু’মিনদের এটাও উচিৎ নয় যে (জিহাদের জন্য) সবাই একত্রে বের হয়ে পড়বে। সুতরাং এমন কেন করা হয় না যে, তাদের প্রত্যেক বড় দল হতে এক একটি ছোট দল (জিহাদে) বের হয় যাতে অবশিষ্ট লোক ফিকাহ (দীনের গভীর জ্ঞান) অর্জন করতে থাকে। আর যাতে তারা নিজ কওমকে ভয় প্রদর্শন করে, যাতে তারা সাবধান হয়।

সহিহ আল বোখারী, ২৮৮৯ নং হাদিসের (জিহাদ অধ্যায়) অনুবাদ-
২৮৮৯। হযরত মুয়াবিয়া (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ যাকে কল্যাণ দানের ইচ্ছা করেন, তাঁকে তিনি দীন সম্পর্কে ফিকাহ (গভির জ্ঞান) দান করেন। আল্লাহ প্রদানকারী আর আমি বন্টনকারী। আমার এ উম্মত তাদের বিরোধীদের উপর চিরদিন বিজয়ী হবে। এ অবস্থায় আল্লাহর চূড়ান্ত সমাধান এসে যাবে।

* রাসূল (সা.) আল্লাহর ঘর মসজিদ কেন্দ্রীক কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দিতেন।কিতাব হলো ফিকাহ। এর দ্বারা কওমকে ভয় প্রদর্শন করা এবং এর দ্বারা কওমের সাবধান হওয়ার বিধান আল্লাহ সাব্যস্ত করেছেন। জিহাদীর থেকে আল্লাহ ফিকাহ শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশী থাকা কামনা করেছেন। ফিকাহ লাভকারী উম্মত তাদের বিরোধীদের উপর চিরদিন বিজয়ী হওয়ার কথা রাসূল (সা.) বলেছেন। কিন্তু ফিকাই যদি লাভ না করে তবে আর চির বিজয়ী কেমন করে হয়?

সূরাঃ ৮ আনফাল, ৬৫ ও ৬৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬৫। হে নবি! মু’মিন দিগকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ কর। তোমাদের মধ্যে কুড়িজন ধৈর্যশীল থাকলে তারা দুইশতজনের উপর বিজয়ী হবে।তোমাদের মধ্যে একশত জন থাকলে এক হাজার কাফিরের উপর জয়ী হবে।কারণ তারা বোধশক্তিহীন সম্প্রদায়।
৬৬। আল্লাহ এখন তোমাদের ভার লাঘব করলেন।তিনিতো অবগত আছেন যে তোমাদের মধ্যে দূর্বলতা আছে।সুতরাং তোমাদের মধ্যে একশত জন ধৈর্যশীল থাকলে তারা দুইশতজন উপর বিজয়ী হবে।তোমাদের মধ্যে এক হাজার থাকলে আল্লাহর অনুমতিক্রমে তারা দুই হাজারের উপর বিজয়ী হবে।আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।

সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের জন্য মহাশাস্তি রয়েছে।

সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৩। ঐসব রাসূলদের আমরা তাদের কোন জনের উপর কোন জনকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তাদের মধ্যে কোন জনের সঙ্গে আল্লাহ কথা বলেছেন।আর কোন জনকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। আর আমরা মরিয়ম পুত্র ঈসাকে প্রকাশ্য মুজেযা দান করেছি। আর তাকে পবিত্র আত্মা দ্বারা সাহায্য করেছি।আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে নবিগণের পরবর্তী লোকেরা পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হতো না। কিন্তু তারা পরস্পর ইখতিলাফ (মতভেদ) করেছিল।তাতে তাদের কিছু লোক মুমিন এবং কিছু লোক কাফের হয়ে গেল। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা পরস্পর যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হতো না। কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করে থাকেন।

সূরাঃ ৫ মায়িদা, ৬৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬৭। হে রাসূল! তোমার রবের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা’ প্রচার কর। যদি না কর তবে তো তুমি তাঁর রেসালাত প্রচার করলে না। আল্লাহ তোমাকে মানুষ হতে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।

* ফিকাহের প্রভাবে মানসম্পন্ন জিহাদী তৈরী হলে তারা তাদের দ্বিগুণ শত্রুর বিরুদ্ধে জয়ী হয়।ফিকাহ ঠিক না থাকলে নিজেদের মধ্যে মতভেদ তৈরী হয়। এমনকি পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হয়।রাসূলের (সা.)জন্য রেসালাতের দায়িত্ব কঠিন ছিল। সুতরাং ফিকাহের দায়িত্ব সাহাবায়ে কেরাম (রা.) পালন করতে পারতেন।রাসূলের (সা.) মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ফিকাহ থাকলেও কোন সাহাবার (রা.) মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ফিকাহ ছিল না। চব্বিশ ঘণ্টা তাঁরা রাসূলের (সা.) সাথে না থাকার কারণে তাঁদের সবার মধ্যেই কিছু না কিছু ফিকাহের ঘাটতি ছিল। রাসূলের (সা.) সহায়তায় তাঁরা পূর্ণাঙ্গ ফিকাহ সংকলন করলে তাঁদের ফিকাহ সংক্রান্ত ঘাটতি দূর হতো।অতীব জরুরী ফিকাহ সংকলনের কাজ না হওয়ায় সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রাসূলের (সা.) ইন্তেকালের সময় তাঁর ঘরেই পরস্পর মতভেদে লিপ্ত হন। পরে পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হওয়ার কারণে তাঁরা হাজারে হাজারে নিহত হন।

সূরাঃ ৬ আনআম, ১৫৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১৫৩। আর এপথই আমার সিরাতাম মুসতাকিম (সরল পথ)। সুতরাং তোমরা এর অনুসরন করবে, এবং বিভিন্ন পথ অনুসরন করবে না, করলে তা’ তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা সাবধান হও।

সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমাত; এর আগে তো এরা ছিল ঘোর বিভ্রান্তিতে।
৩। আর তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনো তাদের সহিত মিলিত হয়নি। আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।
৪। ওটা আল্লাহরই অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি ওটা দান করেন। আর আল্লাহ তো মহা অনুগ্রহশীল।

# সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ৩ নং আয়াতের তাফসির- তাফসিরে ইবনে কাছির
৩। এ আয়াতের তাফসিরে আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহর পার্শ্বে বসে ছিলাম, এমন সময় তাঁর উপর সূরা জুমুয়া অবতীর্ণ হয়। জনগণ জিজ্ঞাস করেন হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! ‘ওয়া আখারিনা মিনহুম লাম্মা ইয়ালহাকু বিহিম’ দ্বারা কাদেরকে বুঝানো হয়েছে? কিন্তু তিনি কোন উত্তর দিলেন না। তিন বার এ প্রশ্ন করা হয়। আমাদের মধ্যে সালমান ফারসীও (রা.) ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর হাতখানা সালমান ফারসীর (রা.) উপর রেখে বললেন, ঈমান যদি সারিয়্যা নক্ষত্রের নিকট থাকত তাহলেও এই লোকগুলোর মধ্যে এক কিংবা একাধিক ব্যক্তি এটা পেয়ে যেত।(ফাতহুলবারী ৮/৫১০, মুসলিম ৪/১৯৭২, তিরমিযী ৯/২০৯, ১০/৪৩৩, নাসাঈ ৫/৭৫, ৬/৪৯০, তাবারী ২৩/৩৭৫)।

সহিহ বোখারী ৪৯৯ নং হাদিসের (সালাতের ওয়াক্ত সমূহ অধ্যায়) অনুবাদ-
৪৯৯। হযরত যুহুরী (র.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দামেশকে আনাস ইবনে মালেকের (রা.) নিকট গিয়ে দেখতে পেলাম, তিনি কাঁদছেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, আমি যা যা দেখেছি তার মধ্যে এ নামাযই আজ পর্যন্ত অবশিষ্ট ছিল। কিন্তু এখন নামাজও নষ্ট হতে চলেছে।

সহিহ আল বোখারী, ৬৫৭২ নং হাদিসের (কিতাবুল ফিতান)-
৬৫৭২। হযরত ওসামা ইবনে যায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবি করিম (সা.) মদীনার এক সুউচ্চ অট্টালিকার উপর আরোহন করে বললেন, আমি যা কিছু দেখছি, তোমরা কি তা’ দেখছ? তারা বলল, জী না। তিনি বললেন, আমি দেখছি যে, তোমাদের ঘরের ভিতরে বৃষ্টি পাতের ন্যায় ফিতনা পতিত হচ্ছে।

* অভিন্ন ফিকাহ সংকলিত হয়ে সকল মসজিদে সব নামাজের পর অভিন্ন ফিকাহ শিক্ষার ব্যবস্থা হয়ে এক তৃতীয়াংশ নাগরিক ইসলাম পালনকারী হলে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে ইসলাম রক্ষা পেত। সেটা না হওয়ায় খেলাফত বিলুপ্ত হয়ে বাদশাহী চলে আসে।বাদশাহীতে ইসলাম নষ্ট হয়ে ঈমান পৃথিবী ছেড়ে সারিয়্যা নক্ষত্রের নিকট চলে যায়। সেজন্য জান্নাতের যুব নেতা হযরত ইমাম হোসেন (রা.) কারবালায় তাঁর প্রতিপক্ষে কোন মুমিন খুঁজে পাননি।তারা ইমামের মাথা কেটে ইয়াজিদকে উপহার দেয়। মদীনাবাসী এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে ইয়াজিদ তাঁদেরকে লাঞ্চিত করে। তখন মদীনার ঘর সমূহের ভিতরে বৃষ্টি পাতের ন্যায় ফিতনা পতিত হয়। অবশেষে একশতবার আল্লাহর দিদার প্রাপ্ত পারসিক ইমাম আবু হানিফা (র.) অভিন্ন ফিকাহ সংকলন করে এর শিক্ষার ব্যবস্থা করলে ঈমান সারিয়্যা নক্ষত্রের নিকট থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসে।

সূরাঃ ৮ আনফাল, ৬০ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬০। তোমরা তাদের মোকাবেলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত রাখবে আল্লাহর শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে, এছাড়া অন্যদেরকে যাদের সম্পর্কে তোমরা জাননা, আল্লাহ জানেন।আল্লাহর পথে তোমরা যা ব্যয় করবে এর পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেওয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।

সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা (ইতায়াত) আনুগত্য কর আল্লাহর, আর (ইতায়াত) আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের মধ্যে আমির।কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে বিরোধ দেখাদিলে উহা উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও রাসুলের নিকট। ওটা উত্তম এবং পরিনামে ভাল।

সহিহ মুসলিম, ৪৫৭৬ নং হাদিসের (কিতাবুল ইমারাহ) অনুবাদ-
৪৫৭৬। হযরত জাবির ইবনে সামুরা (রা.)কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, বারজন খলিফা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত ইসলাম পরাক্রান্ত অবস্থায় চলতে থাকবে। তারপর তিনি যে কি বললেন, তা’ আমি বুঝতে পারিনি। তখন আমি আমার পিতার নিকট জিজ্ঞাস করলাম তিনি কি বলেছেন? তিনি বললেন নবি করিম (সা.) বলেছেন, তাঁদের সকলেই হবে কোরাইশ বংশোদ্ভুত।

* সবচেয়ে পরাক্রান্ত আব্বাসীয় কুরাইশ খলিফা আমির হারুনুর রশিদ ইমাম আবু হানিফার (র.) ফিকাহ পরিশোধন করে অনুমোদন করলে ইসলামের স্বর্ণযুগ শুরু হয়। কিন্তু খেলাফত মঙ্গল সামরিক হিকমত থেকে পিছিয়ে পড়লে খেলাফত বিলুপ্ত হয়। যেখানে খেলাফত তাদের শত্রুকে সন্ত্রস্ত রাখবে সেখানে খেলাফত শত্রুভয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে ধ্বংস হয়। নিজের শত্রু, আল্লাহর শত্রু ও জীবাণু শত্রুকে সন্ত্রস্ত রাখার বিষয়ে আল্লাহর বিধান রয়েছে। মুসলিমদের এ বিধান অমাণ্য করা জনিত কারণে খেলাফতের পর তাদের সালতানাতও বিলুপ্ত হয়ে তারা অমুসলিমদের তাবেদারে পরিণত হয়েছে। এখন যারা খেলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছে তারা সকল মসজিদে সকল নামাজের পর অভিন্ন ফিকাহ শিক্ষার ব্যবস্থা করেনি। তারা যে রাষ্ট্রে খেলাফত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে সে রাষ্ট্রে এক তৃথীয়াংশ নাগরিক ইসলামী অনুশাসন পালনকারী নয়। সুতরাং তারা খেলাফত প্রতিষ্ঠার ধারে কাছেও যেতে পারছে না।যেহেতু নারীগণ মসজিদে নামাজ পড়েন না সেহেতু ফয়জরের জামায়াতে হালাল খোর ১৭% নাগরিক পাওয়াগেলে খেলাফত প্রতিষ্ঠার কিছুটা সম্ভাবনা দেখা যাবে।

সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি তোমাদের অন্তরে প্রীতি সঞ্চার করেছেন, ফলে তাঁর দয়ায় তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে।তোমরাতো অগ্নি কুন্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ উহা হতে তোমাদেরকে রক্ষা করেছেন। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ স্পষ্টভাবে বিবৃতকরেন যাতে তোমরা সৎপথ পেতে পার।

* যারা খেলাফত প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তাদের জন্য আল্লাহর অতীব জরুরী একটি শর্ত হলো তাদের ঐক্যে। এরজন্য তারা একটি বেসরকারী ইসলামী সংসদ তৈরী করতে পারে। এরজন্য তারা একটা বেসরকারী নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। তাদের নির্বাচনের ভোটার হবেন ইমাম-মুয়াজ্জিন। কারণ কোরআন ও হাদিসে তাঁদের প্রশংসা করা হয়েছে। নির্বচন কমিশন প্রত্যেক জেলায় একজন রিটারনিং অফিসার নিয়োগ দিবেন। জেলার আসন সমূহের মনোনয়ন পত্র তাঁদের কাছে দাখিল হবে। এরপর ইমাম-মোয়াজ্জিনগণের ভোটে ইসলামী সংসদের তিনশত জন ইসলামী এমপি হবেন। তাঁরা যাকে নেতা নির্বাচিত করবেন তিনি হবেন ইসশাম পন্থী গণের নেতা। আর ঐ তিনশ জন ইসলামী এমপি ইসলামের পক্ষে জাতীয় সংসদের ভোটে দাঁড়াবেন। তাহলে সারা দেশের সকল আসনে ইসলামপন্থীদের একজন মাত্র প্রার্থী থাকবে। তাতে করে ইসলাম পন্থীদের উপর থেকে জনগণের বিরক্তি কিছুটা কমবে। আমার কথা তাদের মনে না ধরলে তারা পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হয়ে মরুক। আল্লাহ তাদের সংঘাত থামাবেন না। এমতাবস্থায় তাদের কাংখিত খেলাফত কায়েম হবে না। কোন দল কষ্টে-মষ্টে খেলাফত কায়েম করতে পারলেও সেটা টিকে থাকবে না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:১৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



আপনার পোস্টের কথাগুলো গভীর, চিন্তাশীল এবং দায়িত্ববোধপূর্ণ, এ ধরনের আলোচনাই জ্ঞানকে জীবন্ত রাখে।
ইসলামী চিন্তা, অর্থনীতি, দর্শন, ইতিহাস , রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে আপনার জ্ঞানগর্ব আলোচনাকে আল্লাহ
বরকতময় করুন।

অপনার আলোচনায় মন্তব্যের ঘরে বহুল চর্চিত ইংরেজী শব্দগুস্ছ Fallacy of Composition (কম্পোজিশনের
ভ্রান্তি) প্রসঙ্গ টেনে দু চারটি কথা বলা প্রাসঙ্গিক মনে করছি । Fallacy of Composition দর্শন, যুক্তিবিদ্যা ও
বিশেষ করে অর্থনীতিতে এবং রাজনীতি ও রাস্ট্র নীতিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত ধারণা।

Fallacy of Composition বলতে বোঝায় যা একটি অংশের (individual/part) ক্ষেত্রে সত্য, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে
পুরো ব্যবস্থার (whole/system) ক্ষেত্রেও সত্য এমনটা ধরে নেওয়া যুক্তিগত ভুল। বাংলায় সহজভাবে বলা যায়
ব্যক্তির জন্য যা ভালো, তা সমাজের জন্যও ভালো এই অনুমান সবসময় সঠিক নয়।

ইসলাম কখনো সমাজকে কেবল ব্যক্তির যোগফল হিসেবে দেখেনি। বরং উম্মাহ একটি নৈতিক সত্তা (moral entity)
হিসাবে দেখে । কুরআনের ভাষায় “وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا” (এভাবেই আমি তোমাদের একটি মধ্যপন্থী উম্মাহ বানিয়েছি)
সূরা আল বাকারা আয়াত ১৪৩। এখানে “উম্মাহ” ব্যক্তির যোগফল নয়, বরং একটি সমষ্টিগত দায়িত্বশীল সত্তা।
ব্যক্তিগত সঠিকতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমষ্টিগত কল্যাণ নয়।

ইসলামী অর্থনৈতিক চিন্তাতেও Fallacy of Composition কি প্রভাব রাখে তাও একটু দেয়া যাক)
প্রথমেই দেখা যাক সঞ্চয় (Saving) বনাম সম্পদের প্রবাহ ক্ষেত্রে এটা কেমন রূপ ধরে ।

ব্যক্তিগত স্তরে মিতব্যয়িতা (قناعة) প্রশংসনীয় আর অপচয় নিষিদ্ধ“وَلَا تُسْرِفُوا” (অপচয় করো না)
কিন্তু সমাজের স্তরে সবাই যদি সম্পদ আটকে রাখে তাহলে বাজারে লেনদেন কমে, ফলে দরিদ্র আরও দরিদ্র হয়
পরিনামে যাকাত সদকা বাধাগ্রস্ত হয় । এ কারণেই ইসলাম বলে সম্পদ যেন ‘দাওরান’ করে, জমাট না বাঁধে
“كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنكُمْ”(যাতে সম্পদ শুধু ধনীদের মধ্যেই ঘুরপাক না খায়) সূরা আল হাশর আয়াত ৭।
এখানে কুরআন সরাসরি Fallacy of Composition এড়ানোর নীতি দিয়েছে।

তাই দেখা যায় যাকাত কোন ব্যক্তিগত ইবাদত নয় বরং রাষ্ট্রীয়-সমষ্টিগত অর্থনীতি ।যাকাত যদিও ব্যক্তি আদায়
করে কিন্তু কাঠামো সমষ্টিগত, কোরান বলে “خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً”(তুমি তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করো)
সূরা আত-তাওবা আয়াত ১০৩। এখানে রাষ্ট্রপ্রধানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ব্যক্তিকে নয়।কারণ সবাই যদি
নিজের মতো করে “ভালো নিয়তে” যাকাত দেয়, তাতেই সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে সেক্ষেত্রে এই ধারণা
পরিনামে একটি Fallacy of Composition।

এবার আধুনিক রাস্ট্র ব্যবস্থায় বহুল ব্যাবহৃত একটি বিষয় সুদ (রিবা) যা দিয়ে ব্যক্তি লাভবান হয় কিন্তু সমাজ
হয় ধ্বংস। কারণ একজনের জন্য সুদে টাকা খাটানো মানে নিশ্চিত লাভ কিন্তু সমাজের জন্য এটা হয়ে দাঁড়ায় ,
সম্পদের কেন্দ্রীকরণ, আর সুদের কারণে ঋণ-দাসত্ব এর ফাদে পড়ে পরিনামে বাড়ে অর্থনৈতিক শোষণ ।
তাই কুরআন বলেছে “يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ” (আল্লাহ সুদ ধ্বংস করেন, সদকা বৃদ্ধি করেন) সুরা বাকারা
আয়াত ২৭৬।ব্যক্তিগত যুক্তি এখানে সমষ্টিগত বিপর্যয় ডেকে আনে।

তাই আধুনিক যুগে রাস্ট্র পরিচালন ব্যবস্থায় সমষ্টিগত দায়িত্ব বনাম ব্যক্তিগত আমল সাংঘর্ষিক হয়ে উঠতে পারে ।
যথা ফরজে কিফায়া Fallacy of Composition-এর বিপরীত শিক্ষা। যেমন জানাজা,জিহাদ,ইলম অর্জন, বিচারব্যবস্থা
যদি সবাই বলে ‍” আমি এগুলি করায় একজন ভালো মানুষ, তাই অন্য সকলেই তাই করবে”
তাহলে সমাজে বিবিধ ধরনের বিপত্তি দেখা দিতে পারে । তাই এ সম্পর্কে কুরআন বলে:
“وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ”
(তোমাদের মধ্য থেকে একটি দল থাকা চাই…)সুরা ইমরান আয়াত ১০৪।

অন্য আরেক দিকে বলা যায় যদি একজন ব্যক্তি যিনি নামাজ পড়েন.রোজা রাখেন,সদকা দেন
কিন্তু যদি বাজারে জুলুম চলে, শ্রমিক শোষিত হয়.বিচারব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত হয় তাহলে যাবতীয় সকল ধর্মীয়
বিধিবিধান মেনে ব্যক্তিগত নেক আমল সমাজকে রক্ষা করতে পারে না।
এটাই Fallacy of Composition-এর দৃস্টিকোন হতে অসময়ে ইসলামী খেলাফতের সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ।

কল্যাণরাষ্ট্র বলে সকলের জন্যর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য এটা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ইসলামও বলে যাকাত,বায়তুল মাল হিসবা
ব্যবস্থা এর মুল লক্ষ্য ব্যক্তিগত সদিচ্ছা নয় বরং কাঠামোগত ন্যায় প্রতিষ্টাই প্রয়োজন সর্বাজ্ঞে ।
যে নীতি ব্যক্তিকে “শক্ত” করে কিন্তু দুর্বলকে ফেলে দেয় তা ইসলামি দৃষ্টিতে ব্যর্থ রাষ্ট্র।

তাই Fallacy of Composition ধারণাটি আমাদের শেখায়; তাকওয়া ব্যক্তি থেকে শুরু হয়, কিন্তু ইনসাফ
প্রতিষ্ঠিত হয় কাঠামোর মাধ্যমে। ইসলামের ভাষায় সালেহ ব্যক্তি দরকার, কিন্তু সালেহ নিযাম (نظام) ছাড়া
উম্মাহ টিকে না। ইমাম আল গাজ্জালী বলেছেন অন্যায় ব্যবস্থা থাকলে ব্যক্তির নেক আমল সমাজকে বাঁচাতে
পারে না।

আমাদের রাসুল (স.)এর মদিনা রাস্ট্রে প্রয়োজনীয় ন্যয় ব্যবস্থা পুর্বাহ্নেই প্রতিস্ঠিত হওয়ায় ইসলামী খিলাফত
দীর্ঘস্থায়ীত্বতা পেয়েছিল ।

আপনার পোস্টের কল্যনে প্রাসঙ্গিক একটি বিষয়ে আলোচনার সুযোগ সৃস্টির জন্য ধন্যবাদ ।

শুভেচ্ছা রইল

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:০১

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: আমার পোষ্টের সাথে আপনার মন্তব্য আমার পোষ্টকে সমৃদ্ধ করেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.