নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রোফেসর আশরাফি এবং জলদানো!!

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:২০

ফারহান পেপার টা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল

-পড়ে দেখ !

-কি ?

-আরে দেখ না নিজের চোখেই !



এ কয় দিন সেমিস্টার ফাইনাল নিয়ে বেশ ব্যস্ত ছিলাম । বাইরের জগতে কি হয়েছে না হয়েছে কোন খিয়ালই ছিল না । পরীক্ষা ছিল বিধায় ফারহানও খুব বেশি যোগাযোগ করে নাই ।

গতকাল কে পরীক্ষা শেষ হয়েছে । সকালবেলাই ফারহান আমার বাসার সামনে হাজির ওর এফ জে ফাইভ নিয়ে । সোজা আমাকে নিয়ে মীরপুরের স্পেস গার্ডেনে ।

নাস্তা করে আসতে চাইলাম ফারহান বলল নাস্তা নাসিরউল্লাহর হাতেই হবে । খুব বেশি আপত্তি করলাম না । মা অবশ্য একটু আপত্তি করছিল । প্রোফেসর আশরাফির ওখানে যাচ্ছি শুনে কিছু বলল না ।

অনেক দিন প্রোফেসরের সাথে দেখা নেই আজকের সকালের নাস্তাটা তার সাথে করা যাবে এটা ভেবে আমার নিজেও ভাল লাগছিল ।

কিন্তু স্পেশ গার্ডেনে এসে খানিকটা হতাশ হতে হল । প্রোফেসর আশরাফি বাসায় নেই । ফারহানের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখ ভঙ্গির কোন পরিবর্তন হয় নি । তারমানে ও জানে যে প্রোফেসর বাসায় নেই । আমি কদিন ছিলাম না অর্থাত্‍ আমি কিছু জানি না ।



নাসিরউল্লাহ ততক্ষনে টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে ফেলেছে । নাস্তা খেতে থেকেই ফারহান বলল

-প্রোফেসর কে কদিন থেকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না ।

আমি সবে মাত্র ঘি এ ভাজা পরোটা দিয়ে ডিম পোচ টা মুখে নেওয়ার চেষ্টায় আছি তখনই ফারহান কথাটা বলল ।

-মানে কি ? কদিন থেকে ?

-এই দু সপ্তাহ ।

-তাই নাকি ?

ফারহান বলল

-তুই তো জানিসই প্রোফেসর দুমাস ধরে মহেশখালিতে ছিল । ছুটি কাটাতে গেছে । ওখানে একটা কটেজও ভাড়া নিয়েছিল ছয় মাসের জন্য । নিয়মিত যোগাযোগ হত প্রফেসরের সাথে । মাসে দু এক বার ঢাকাতেও আসতেন । কিন্তু গত দু সপ্তাহ ধরে তার কোন খোজ পাওয়া যাচ্ছে না ।

একটু চিন্তার বিষয় । যদিও প্রোফেসর আশরাফি নিজের আত্মরক্ষা নিজেই করতে পারে খুব ভাল ভাবেই । সব দিকে তার তীক্ষ নজর । তবুও খানিকটা চিন্তা তো হচ্ছেই ।

-কি করবি ? যাবি নাকি মহেশখালি ?

ফারহান আমার কথার জবাব না দিয়ে একটা পেপার আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । বলল

-পড়ে দেখ ।

পেপারের একটা শিরোনামের উপর গোল মার্ক করা রয়েছে । শিরোনামটা দেখেই খানিকটা অবাক লাগলো ।

আবারও জলদানো !

আমি কৌতুহল নিয়ে পড়তে শুরু করলাম ।

সপ্তাহ না ঘুরতে আবার দেখা মিলল আবার । লম্বায় বিশ ফুটের কাছাকাছি আর চওড়ায় আড়াই থেকে পাঁচ ফুটের মত কালো মিশমিশে এক প্রানীকে আবার দেখা গেলে মহেশখালী উপকুলে । গতরাতে চোরাই পথে মালেশিয়া যাওয়ার সময় ট্রলার কে ধাক্কা মারে এই অতিকায় জল দানোটি । জলদানোর সামনের দিকটি চোখা আর পিছনের দিকে মাছের মত লেজ বিশিষ্ট যা নিয়মিত নড়াচড়া করে । জল দানো টির পিঠের কাছে একটু উচু মত ...

আরো বিস্তারিত বর্ননা । আমি খানিকটা অবাক হলাম পুরো সংবাদ টি পড়ে ।

পনের বিশ ফুট লম্বা কোন জলপ্রানী বাংলাদেশের কোন নদীতে আছে বলে জানা নাই । অবশ্য প্রানীটি আসলে কতবড় এটা পরিস্কার বোঝা যায় নি । পানির উপর কেবল তার পিঠ আর সামনের দিকটাই কেবল ভেসে উঠেছে । তাও আবার অল্প সময়ের জন্য । সুতরাং ঠিক মত প্রানীটার আয়তন বোঝা সম্ভব না ।

কদিন থেকেই মহেশখালীতে আদম ব্যবসায়ীদের আনা গোনা বেড়ে গেছে । হঠাত্‍ তাদের ট্রলারে ধাক্কা কেন মারবে এই জলদানো ?

সন্দেহ জনক ।

আমি ফারহান কে আমার কথা গুলো বললাম । কিন্তু আমার সাথে ঐ একমত হল না ।

আমার নাস্তা খাওয়া শেষ । ফারহান কিছু খায় নি কেবল এক কাপ চা খেয়েছে । ডায়নিং টেবিল থেকে বসার ঘরের সোফায় বসতে বসতে ফারহান বলল

-তোর কি মনে হচ্ছে না ঐ জলদানো আর প্রোফেসর আশরাফির ভিতর কোন যোগসুত্র আছে ? জলদানো মহেশখালীর আসে পাশে দেখা গেছে । আর প্রফেসর আশরাফিও গত দু মাস ধরে মহেশখালীতে । কিছুতো একটা আছেই !

-আমারও তাই মনে হচ্ছে । প্রোফেসরে সাথে এই জলদানোর তো কিছু একটা যোগ সুত্র আছেই ।

-তো ! এখন কি করবি ?

আমার দিকে ফারহান তাকিয়ে রইলো । যদিও ও খুব ভাল করেই জানে আমার মনের ভিতর কি চলছে ।

কদিন আগে হলে হয়তো আমার পক্ষে যাওয়া হয়তো সম্ভব ছিল না কিন্তু এখন যাওয়া তো কোন সমস্যা নয় । তার উপর সেমিস্টার ফাইনাল শেষ কোথাও বেড়াতে তো যাওয়াই যায় ।

মহেশখালী এর আগে তো কোন দিন যাওয়া হয় নি এই ফাকে ঘুরে আসা হবে সাথে প্রোফেসর আশরাফির কি হল খোজ নিয়ে আসা যাবে । আর যদি ভাগ্য ভাল হয় তাহলে তো জলদানোর রহস্যও সমাধান করা যাবে ।

ঠিক হল দুদিন পরে আমরা কক্সবাজারের গাড়িতে উঠবো । তারপর সেখান থেকে চাইলে সড়ক পথে অথবা নদী পথে যেটা সুবিধা হয় সেটা বেছে নেওয়া হবে ।



পরের দিনটা জিনিস পত্র গোছগাছ করতে করতেই কেটে গেল । প্রয়োজনীয় জিনিস গুলোর একটা লিষ্ট তৈরি করে নিলাম । তারপর আস্তে আস্তে সব ব্যাগে ঢুকাতে শুরু করলাম ।

আত্মরক্ষার জন্য নিলাম স্প্রে গান । কয়েকমাস আগেই প্রোফেসর আশরাফিই আমাদের সবাইকে একটা স্প্রে গান দিয়েছে । আমাদের আত্মরক্ষার জন্য । স্প্রে গানটা দেখতে অনেকটা খেলনা পিস্তলের মত কিন্তু এর ট্রিগার চাপ দিলেই তীর বেগে একপ্রকার গ্যাস বেরিয়ে সামনের জনের গায়ে লাগবে । আর এই গ্যাস এতোই শক্তিশালী যে হাতিকে পর্যন্ত আধা বেলা বেহুশ করে ফেলতে পারে ।

সবকিছু তৈরি করে রাতে শুয়ে পড়লাম । আগামীকাল ভোরে আমাদের গাড়ি ।





বিশাল জল রাশির দিকে তাকিয়ে থাকলে যে কারো মন বিষন্ন হতে বাধ্য । আমারও মন খানিকটা বিষন্ন হয়ে রইলো ।

-এই শান্ত সাহেব !

আমি পিছন ফিরে দেখি তানিয়া তাবাসসুম এগিয়ে আসছে । আমি ঝুল বারান্দায় আছি । তানিয়াও এসে আমার পাশে বসলো ।

এখন বেশ রাত । ফারহান আর সাংবাদিক মোস্তাক ঘুমাচ্ছে । গত কাল প্রায় সারাদিনই রাস্তায় রাস্তায় কেটেছে । রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিল । শরীর বেশ ক্লান্ত । আজ সারাদিনও প্রায় সবাই ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই কেটেছে ।

সন্ধ্যার দিকে সবাই ঘুম থেকে উঠে খাওয়া দাওয়া করে আবার ঘুমিয়েছে । আমিও ঘুমিয়েই ছিলাম । হঠাত্‍ করে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় এখানে বারান্দায় বসে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছি ।

-কি এতো রাতে জেগে আছো যে ?

আমি হেসে বললাম

-জেগে নেই । ঘুম ভেঙ্গে গেল তাই এখানে এসে বসলাম । আপনারও কি একই অবস্থা ।

তানিয়া মাথা নাড়ল ।

-আর কত ঘুমানো যায় বল ? শরীরটা এখন বেশ ভাল লাগছে । আর তার উপর এই সমুদ্রের বাতাস ! আহ !

তানিয়া তাবাসসুম চোখ বন্ধ করে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিল ।



তানিয়া তাবাসসুম আর সাংবাদিক মোস্তাকের আমাদের সাথে আসার কথা ছিল না । আমি নিজেও কিছু জানতাম না । সকালবেলা বাসস্টপে এসে দেখি ফারহান আমার আগেই এসে বসে আছে । ফারহানের পাশে তানিয়া তাবাসুস চায়ের কাপ হাতে বসে । আমাকে দেখে মিষ্টি করে হাসলো । সাংবাদিক মোস্তাক তখনও এসে পৌছায় নি ।

আসলে একভাবে বলতে গেলে তানিয়া আর মোস্তাক আহমেদ সঙ্গে এসে ভালই করেছেন । বিশেষ করে সাংবাদিক মোস্তাক । আমি আর ফারহানের কেউই প্রোফেসর আশরাফির সঠিক ঠিকানাটা জানতাম না । অর্থাত্‍ প্রোফেসর মহেশখালীর ঠিক কোথায় উঠেছে এটা আমাদের জানা ছিল না । সাংবাদিক মোস্তাক প্রোফেসরের সঠিক ঠিকানাটা জানতেন । আসলে প্রোফসরকে থাকার জন্য সাংবাদিক মোস্তাকই এই বাড়িটা ঠিক করে দিয়েছিলেন । মোস্তাকের পরিচিত এক আত্মীয়ের বাড়ি নাকি এটা ।

তাই ফারহান যখন ঠিকানার খোজে সাংবাদিক মোস্তাকের কাছে গিয়েছিল তিনি নিজেও আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন । প্রোফেসরের এই ভাবে গায়েব হয়ে যাওয়াতে উনি নিজেও খানিকটা চিন্তিত । আমরা সবাই যখন যাচ্ছি তখন আর তানিয়া তাবাসসুম বাদ থাকবে কেন ।

মহেশখালী যাচ্ছি শুনে তানিয়া তো এক পায়ে খাড়া যাওয়ার জন্য ।



আমরা তো ভেবেছিলাম প্রোফেসরের বাসা হয়তো মহেশখালীতেই হবে । কিন্তু এখানে এসে দেখা গেল বাড়িটা মহেশখালী প্রধান শহর থেকেও বেশ খানিকটা ভিতরে । মুলত মহেলখালী উপজেলাটা তিনটা আলাদা আলাদা দ্বীপ নিয়ে গঠিত । তার ভিতর ধলাঘাটা উনিয়নটা সবার দক্ষিনে । বলতে গেলে একেবারে সমুদ্রের ভিতর । ট্রলারে করে আসতে হয় । প্রোফেসরের ভাড়া বাড়ি টাও এই ইউনিয়নে ।

গ্রাম ছাড়িয়ে একেবারে সমুদ্রের কাছে । বাড়িটা তৈরি কাঠ দিয়ে পাহারের কোল ঘেসে । দুইতলা কাঠের তৈরি বাড়ি । বেশ মজবুত করে তৈরি করা ।

মোস্তাক আহমেদ বললেন তার এক বড়লোক আত্মীয় নাকি এই বাড়িটা বানিয়েছে মাঝে মাঝে এখানে এসে হাওয়া খাওয়ার জন্য । বাকিটা সময় ট্যুরিষ্ট দের কাছে ভাড়া দিয়ে রাখে ।

কবছর যাবত্‍ এখানে নাকি বিদেশী পর্যটকের আনাগোনা বেড়ে গেছে । লোক মুখে শোনা যায় এই মহেশ খালী তে আগে নাকি জলদস্যুদের আবাস ছিল । অনেক গুপ্তধন লুকানো আছে নাকি এখানে ।



বাড়ি থেকে একটা সিড়ি নেমে গেছে একেবারে পানি পর্যন্ত । এমন চমত্‍কার বাড়ি যে এ দেশে আছে আমার জানাই ছিল না ।

এই বাড়িতেই প্রোফেসর ছিলেন গত দুমাস ধরে । প্রোফেসরের ঘরটা আমরা খুজে দেখেছি । বিশেষ কিছু নাই । তার ব্যবহারের কয়েকটা জামা কাপড় আর কিছু যন্ত্রপাতি । যে জিনিস যেভাবে ছিল সেই ভাবেই রেখে দিলাম ।

বাড়ির কেয়ারটেকার কে জিজ্ঞেস করেও কিছু জানা গেল না ।





আমি আর তানিয়ে বেশ কিছুক্ষন ঝুল বারান্দায় পা ছড়িয়া বসে রইলাম । আকাশে বেশ বড় চাঁদ । সমুদ্রের পানির ঢেউয়ের উপর চাঁদের আলো কেমন একটা অপার্থিব সৌন্দর্য নিয়ে খেলা করছে ।

আমরা দুজন কেবল মুগদ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলাম সেদিকে । বারবার মনে হচ্ছে এই দৃশ্য যেন এই জগতের না । অন্য কোন জগতের ।

-ঐটা কি ?

আমি তন্ময় হয়ে পানির দিকে তাকিয়ে ছিলাম ঠিক তখনই তানিয়া তাবাসসুমের চিত্‍কার ! তানিয়ে আমার থেকে দুই হাত দুরে বসে আছে আর তাকিয়ে আছে বাঁ দিকে ।

আমিও তার চোখ ইশারা করে সেদিকে তাকালাম । প্রথম কিছু চোখে আসলেও একটু পরে জিনিসটা চোখে পড়লো । চাঁদের আলোতে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে ।

মৃদু ঢেউ কেটে জিনিসটা এগিয়ে আসছে ধীরে । লম্বায় কম করে হলেও ফুট বিশেক । চাওয়াটা ঠিক মত বোঝা যাচ্ছে না । সব টুকুই প্রায় পানির নিচে । কেবল পিঠ টা দেখা যাচ্ছে । পিছের মাঝ বরাবর একটু উচু মত জায়গা । লেজের দিকটা আসলেই নড়ছে । মাছ যে ভাবে চলাচল করে ঠিক সেভাবে ।

চাঁদের আলোতেও বুঝতে কষ্ট হল না ওটার গায়ের রং মিশমিশে কালো । আমি আর তানিয়ে একভাবে তাকিয়ে রয়েছি জলদানোটির দিকে । চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছি ।

জলদানোটি প্রথমে একবার চক্কর মারল । তারপয় আস্তে আস্তে এগিয়ে এল বাড়িটির দিকে । আস্তে ওটার চেহারা আরো স্পষ্ট হতে শুরু করলো । প্রথমে যেটা ভেবেছিলাম আসলে জিনিসটা তার থেকেও বড় । তিরিশ ফুটের কাছাকাছি তো হবে । আসতে করে বাড়ির ঘাটে এসে জলদানো টি থেমে গেল । আরো একটু ভেসে উঠল জলের উপরে । চাঁদের আলোতে জলদানোর মসৃন দেহটি ফুটে উঠেছে । ছোট খাটো একটা তিমি মনে হচ্ছে ।

কিন্তু জলদানোটা এখানে এসে থামলো কেন ?

দেখতে দেখতে লেজ নাড়ানোও বন্ধ হয়ে গেল । একটু পরেই একটা মৃদু ঘড়ড়ড় আওয়াজ শুনতে পেলাম । তার পরপরই পিঠের উচু মত স্থানটা খুলে গেল । সেখান থেকে একটা মানুষের মাথা দেখা গেল ।

সাবমেরিন !!

আমাদের দুজনের মুখ থেকেই এক সাথে কথাটা বের হয়ে এল । যেটা সবাই জলদানো ভেবেছে আসলে সেটা একটা সাবমেরিন ! তাই তো বলি জলদানো কোথা থেকে আসবে ?

মানুষটি সাবমেরিন থেকে বের হয়ে সিড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করেছে । আর একটু কাছে আসতেই আমাদের পরিচিত প্রোফেসর কে দেখতে পেলাম । বারান্দায় উঠে এসে তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল

-কি তাতা ? ঘুম আসছে না নাকি ?

এমন একটা ভাব যেন কিছুই হয় নি । উনি যেন জানতেনই আমরা এখানেই থাকবো । আমি বললাম

-আপনি কোথা থেকে ?

প্রোফেসর হাসতে হাসতে বলল

-আমি তো এখানেই থাকি । তোমরা এতো দেরি করলে কেন ? আমি তো ভেবেছিলাম তোমরা আরো আগে আসবে ?



প্রোফেসরের গলা পেয়ে ভিতর থেকে সাংবাদিক মোস্তাক আর ফারহানও এসে হাজির । আমাদের মত তারাও বেশ অবাক হয়েছে । আমরা বারান্ডাতেই চেয়ার পেতে বসলাম । প্রোফেসর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল

হাতে আর ঘন্টা খানেকের মত সময় আছে । এর ভিতর যা বলার বলি । নিশ্চই খুব কৌতুহল হচ্ছে ।

তা আর বলতে !!

প্রোফেশর কিছুটা সময় চুপ করে কি যেন চিন্তা করলো । তারপর বলল

-আজকে একটা একটা কাজ রয়েছে । সারাদিন সেই কাজে ব্যস্ত ছিলাম । ভাবলাম যাওয়ার আগে তোমাদের সাথে একবার দেখা করে যাই ।

সাংবাদিক মোস্তাক বলল

-তুমি কিভাবে জানো যে আমরা এখানে এসেছি ।

প্রোফেসর মুচকি হেসে বলল

-জানি জানি । তোমরা আমার ঘরে এসে ঘুমাবে আর আমি জানবো না তা তো হয় না । আচ্ছা শোন । আমি এখানে মুলত এসেছি গুপ্তধনের খোজে !

-গুপ্তদন ?

আমরা তিনজনই একসাথে চিত্‍কার করে উঠলাম ।

-হুম । তোমাদের নিশ্চই জানা আছে আরাকানরা যখন চট্টগ্রাম শাসন করার সময় এই মহেশখালী তাদের আন্ডারে ছিল না । মুল ভুখন্ড থেকে বিছিন্ন থাকার কারনে কোন শাসকই এটাকে নিজ আয়ত্তে আনতে পারে নি । এখানে একটা সঙ্গবদ্ধ জলদস্যুর আস্তানা ছিল । আব্দুল ইয়াজিজ নামের একজন জলদস্যু এই দ্বীপটা শাসন করতো । কথিত আছে মারা আগে আব্দুল ইয়াজিজ অন্তত একশটার উপরে জাহাজ লুট করেছে । কিন্তু তার মারার পরে সেই পরিমানে ধনসম্পত্তি উদ্ধার করা যায় নি । তার মানে পরিস্কার । আসেপাশেই আসে কোথাও এই গুপ্তধন ।

-তারমানে গুপ্তধনের খোজে এখানে এসেছো ?

সাংবাদিক মোস্তাকের চোখে খানিকটা অবিশ্বাসের চোখে প্রোফেসরের দিকে তাকিয়ে আছে । প্রোফেসর খানিকটা সময় ঐ দিকে তাকিয়ে থেকে বলল

-আরে অনেকটা সময় তো বিজ্ঞানের পেছনেই ব্যয় করলাম । এবার না হয় একটু অন্য কিছুর পেছনে কাটাই । তবে মোস্তাক তোমার ধারনা ঠিক । ঐটা আমার আসল উদ্দেশ্য না । আসল উদ্দেশ্য এই মিনি সাবমেরিনটা টেষ্ট করা ! আর কিছুটা সময় সময় এই নির্জনতায় কাটানো । কিন্তু দেখো এখানে এসেও কাজ করতে হচ্ছে হচ্ছে ।

-কি কাজ ?

প্রোফেসর বলল

-আসলে এখানে আসার পর থেকেই একটা কিছু আচ করতে পেরেছিলাম যে এখানে কিছু একটা হচ্ছে । পরে ব্রিগেডিয়ার এমদাদের সাথে কথা বলে ব্যপারটা আরো পরিস্কার হয় । আদম পাচারের একটা চক্র এখানে বহুদিন থেকে সক্রিয় । পুলিশও কিছু করতে পারছিল না । পুলিশ ফোর্স নিয়ে আসতে গেলেই কিভাবে জানি তারা টের পেয়ে যেত । কিছুতেই কিছু করা যাচ্ছিল না । তাই শেষে দায়িত্ব আর্মীর উপর এসে পরে । ওরাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল । আমি এখানে আছি জেনে এমদাদ আমার কাছেও সাহায্য চায় । আমি দেখলাম এমনই তো ঘুরে বেড়াচ্ছি । দেখা যাক কিছু করা যায় নাকি ।

আমরা চুপচাপ শুনেই যাচ্ছি প্রোফেসরের কথা । প্রোফেসর তার চিরায়িত স্বভাবে কথা বলে চলেছেন ।

-দুইদিন ওদের দুইটা আদম পাচারের চালানকে আটকিয়েছি । আজকে আরও একটা আটকাতে পারবো বলে আশা করছি । এমদাদ জানলো আজকে তিনটার দিকে একটা বড় চালান যাবে । যে করেই হোক ওটাকে আটকাতে হবে ।

প্রোফেসর আর দাড়ালো না । আমাদের এখানেই থাকতে বলে আস্তে আস্তে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল ।

তারপর কালো জলদানোটার ভিতর ঢুকে পড়লো টুপ করে । তার কিছুক্ষনের ভিতরেই অদৃশ্য হয়ে গেল পানির নিচে । আমরা চিন্তিত মুখে প্রোফেসরের চলে যাওয়া দেখলাম । তিনটে বাজতে খুব বেশি বাকি নেই ।

আমরা সবাই ই ঝুল বারান্দায় বসে দুর সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রইলাম । যদিও কিছু দেখা যাচ্ছে না তবুও দেখা যাবে এই আশা নিয়ে বসে রইলাম ।

প্রায় আধা ঘন্টা পরে হঠাত্‍ করেই গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পেলাম । তারপরেই খুব ক্ষীন কন্ঠে মানুষের চিত্‍কার ! মনে হচ্ছিল যেন কাছেই কোথাও হচ্ছে কিন্তু আসলে বেশ খানিকটা দুরেই ঘটনা ঘটছে । রাতের নিস্তব্ধার জন্য এতো দুর থেকেও সব কিছু শোনা যাচ্ছা । গোলাগুলি চলল খানিক্ষন ।

তারপর হঠাত্‍ সব কিছু থেমে গেল । তবে অল্প কয়েক মিনিট পরেই কাপ্টারের পাখার আওয়াজ রাতের নিস্তবদ্ধতাকে একেবারে খান খান করে দিল ।

তাতা আর না থাকতে পেরে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল । যদি কিছু দেখা যায় । আমি আর ফারহান ঐ জায়গায়ই বসে রইলাম ।

কিন্তু সাংবাদিক মোস্তাক কে দেখলাম বেশ নিশ্চিন্ত । আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল

-আর চিন্তা নেই । আর্মী চলে এসেছে । এই বলে তিনি ঘরে চলে গেলেন । আমরা তবুও বারান্দাতেই বসে রইলাম চিন্তিত মুখ নিয়ে ।





-আসলে আমার প্রথম কাজই ছিল সাগরের মাঝখানে ওদের ট্রলার গুলো ওকেজো করে দেওয়া । যাতে ওরা পালাতে না পারে ।

কথা হচ্ছিল পরদিন বিকেল বেলা । ধোয়া ওয়া চা আর বিশেষ ভাবে বানানো ঝালমুড়ি সামনে রেখে আড্ডা চলছিল । ব্রিগেডিয়ার এমদাদও আমাদের সাথে ছিলেন ।

বলাই বাহুল্য সব কথা বলছিল প্রোফেসর আশরাফিই ।

-আসলে আমার সাবমেরিনটার বডিটা খুবই মজবুত । প্রথমেই ধাক্কা মেরে ওদের ট্রলার তিনতে অকেজো করে দেই । মাঝ সমুদ্র অচল ট্রলার নিয়ে ওরা আটকা পড়ে যায় । আমার সাব মেরিনটা জলদানো মনে করে ওটা লক্ষ্য করে গুলিও চালায় । কিন্তু কোন কাজ হয় নি ।

সাংবাদিক মোস্তাক বললেন

-তা তো বুঝলাম । কিন্তু তুমি হঠাত্‍ করে গায়েব হলে কেন ?

এই প্রশ্নের উত্তরটা ব্রিগেডিয়ার এমদাদ দিল ।

-আসলে ওদের খানিকটা সন্দেহ হয়ে গেছিল । ওরা ভেবেছিল প্রোফেসর হয়তো পুলিশের লোক । ওনাকে মারার জন্য লোক পাঠিয়েছিল । আমার চর আমাকে আগেই ব্যাপারটা জানায় বিধায় আমি প্রোফেসর কে সাবধান করে দেই ।

সাংবাদিন বলল

-তা তোমার আব্দুল ইয়াজিজের গুপ্তধনের খবর কি ?

প্রোফেসর এক মুঠ মুড়ি মুখে নিতে নিতে বলল

-খোজ চলবে । তা কে কে যেতে চাও আমার সাথে ?

সবার আগে তানিয়া তাবাসসুম হাত তুলল ।

আমি ! আমি !



সবাই হেসে ফেলল । আমরা সবাই ই যেতে চাই ।









আমার কথাঃ প্রোসেফর আশরাফি ! প্রিয় ইমন জুবায়ের ভাইয়ের সৃষ্ট এক অনবদ্য সৃষ্টি । এই চরিত্রটা নিয়ে লেখার প্রধান উদ্দেশ্যই হল ইমন ভাইকে মনে করা চেষ্টা । প্রোফেসর আশরাফির নাম আসলেই ইমন ভাইয়ের নাম । সামু ব্লগে একজন্য অনন্য ব্লগার ছিল তার নাম আসবে । কেবল এইটুকুই এই গল্প লেখার পেছনে কারন ।

প্রিয় ইমন ভাই যেখানে থাকুন সব সময় ভাল থাকুন । এই টুকু সব সময় জেনে রাখবেন আপনাকে কোন দিন ভুলবো না । আর আমি অন্তত যতদিন এই ব্লগে আছি কাউকে আপনার নাম মুছে যেতে দিবো না ।



প্রিয় ইমন ভাই ! ঈদ মোবারক !







আর দয়া করে ইমন ভাইয়ের লেখার সাথে এই লেখার তুলনা করবেন না । তারমত লেখার ক্ষমতা আমার নেই । প্রোফেসর আশরাফিকে নিয়ে অন্যান্য লেখাঃ



Click This Link

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৪৮

শায়মা বলেছেন: ইমনভাইয়াকে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা!

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৫২

অপু তানভীর বলেছেন: ঈদ মোবারক আপু!!!! :):)

২| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৪:৩৪

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: ঈদ মোবারক! চমৎকার মানুষ টির জন্য লিখা চমত্কার গল্প! তার আত্বা শান্তিতে থাকুক!

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৫২

অপু তানভীর বলেছেন: ঈদ মোবারক অভি!

ইমন ভাই শান্তিতে থাকুক সব সময়!

৩| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৪৮

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ইমন ভাইয়ের মৃত্যুর পরদিন ছিল শুক্রবার সেই দিনের কথা খুব মনে পরছে। :)

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৫৪

অপু তানভীর বলেছেন: সব সময়ই ইমন ভাইকে মনে পড়ে!
তিনি শান্তিতে থাকুক!

ঈদ মোবারক!

৪| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৪৪

রহস্যময়ী কন্যা বলেছেন: সুন্দর গল্প
ঈদ মুবারাক ভাইয়া :)

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৫৫

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ আপু!!

আপনাকেও ঈদ মোবারক!! :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.