নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হইচই, হট্টগোল এড়িয়ে চুপচাপ, নিরিবিলিতে লুকিয়ে থাকতে ভাল লাগে।

রিম সাবরিনা জাহান সরকার

যা-ই লিখি, কাঠবিড়ালীর মত এখানে জমিয়ে রাখি। https://rimsabrina.blogspot.com/

রিম সাবরিনা জাহান সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

পিংপং পইং ২

১২ ই আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৯

পর্ব ১ এখানে

৩.
মোটা মোটা কাঠ জুড়ে দিয়ে মাচা বাঁধা হয়েছে। তাতেই উঠে ছেলেবুড়ো উৎসুক কি যেন দেখছে। হাতের গেঁড়ো থেকে ছেলেটাও ফসকে গিয়ে তাদের দলে ভিড়লো। ছেলেমানুষি কৌতূহল দমাতে না পেরে আমিও পিছু নিলাম। লোকের ভারে মচমচিয়ে দুলে উঠল কাঠের মাচা। কিন্তু কই, তারকাটায় ঘেরা জায়গাটায় ঘন গাছের সারি ছাড়া কিছুই যে দেখছি না। যাকে দেখতে হাঁচড়ে পাঁচড়ে মাচায় ওঠা, সে দিব্যি ডালপালার আড়ালে গা ঢাকা দিয়ে রইল। হতাশ হয়ে নেমে পড়তে হল।

পাশ কাটিয়ে চলেই যাচ্ছি, অমনি ছেলেটা তারস্বরে চ্যাঁচাতে লাগলো, ‘ঐ যে, ঐ যে। মা, দেখো কত্ত বড় কুকুর’। তার দৃষ্টি অনুসরন করে ওয়েরউলফ সাইজের ইয়া বড় এক শিয়াল দেখতে পেলাম দূরে। আরামসে রোদ পোহাচ্ছে শুয়ে।

‘না, বাবা, ওটা শিয়াল মামা। দেখো না ওর লেজটা কত্ত ফুলো ফুলো। কুকুর তো দেখতে আরেক রকম’।

ছেলেকে বুঝ দিয়ে কুলিয়ে ওঠার আগেই গমগমে স্বর ভেসে আসলো, ‘মা-ছেলে মিলে খুব জ্বালাচ্ছো দেখছি। শান্তিতে বইটাও পড়তে দেবে না‘।

সজোরে মলাট বন্ধের শব্দে ইতি উতি চাইলাম। আর আচমকাই লোমশ শিয়ালটা অত বড় শরীর দুলিয়ে ঠিক সামনে এসে হাজির।

বেড়ার ওপাশ থেকে তিরিক্ষে মেজাজে সে অভিযোগ ঠুকে দিল, ‘শিয়াল মানেই মামা, আর তার ফুলো ফুলো লেজ? ব্যস্, আর বলার মত আর কিছু পেলে না। এই শিক্ষা দাও ছেলেপেলেকে? কেন, ‘শিয়াল পন্ডিত’ বললে কি হয় শুনি?’।

কড়া কথাগুলো শুনে একেবারে মিইয়ে গেলাম। এভাবে তো ভাবি নি।
‘দিন-রাত বই নিয়ে পড়ে থাকি, জানো সে কথা? আর তুমি ক’টা পড়েছো এ’মাসে বলো তো দেখি?’।

এ মাসে কি, এ বছরেই তো বই টই ওসব ছুঁই নি। পড়ার ভেতর পড়ি কেবল খটোমটো রিসার্চ পেপার। মিন মিন করে সে কথাই বলতে গিয়ে চোখ আটকে গেল পন্ডিত মশাইয়ের বিশাল থাবায়। এক তাড়া সবুজ পাতা জুড়ে দিয়ে গাছের বাকলের মলাটে বন্দী করা হয়েছে। বাহ্, বইয়ের কি নমুনা। অজান্তেই একটা শেয়াল মার্কা খ্যাক্ খ্যাক্ হাসি হেসে ফেললাম। ‘ওহ্, এই তোমার বই? এগুলোই চিবোয় সারাদিন শুয়ে বসে?’।

দশাসই শিয়ালটা এবার আহত গলায় বললো, ‘গাছের পাতায় ইতিহাস লেখা থাকে জানো? বরফ যুগ থেকে পাথুরে যুগ, কত কাহিনী। এই পৃথিবীর সব রহস্য লেখা পাতায় পাতায় আর তার শিরায়, উপশিরায়। তোমাদের কাগুজে বইয়ে যেমনটা লেখা থাকে। ইদানীং নিজেরাও সেগুলো আর পড়ো না। আর কাউকে পড়তে দেখলেও জ্বলুনি। আর বিরক্ত না করে কেটে পড়ো তো মানে মানে’।

আমাদেরকে আর এক রত্তি পাত্তা দিল না শিয়াল পন্ডিত। ভালো একটা খোড়ল খুঁজে নিয়ে তাতে কুন্ডুলী পাকিয়ে শুয়ে পড়লো। তারপর খুব মনোযোগ দিয়ে পাতা ওল্টাতে লাগলো।

৪.
রেইনট্রির মত আকাশছোঁয়া গাছে ছেয়ে আছে পইং পার্ক। তাদের ফুল-ফল-শিকড়-বাকড়ের বিবরন খুব যত্ন করে লেখা আছে কাঠের ফলকে। তার মানে, পইং একই সাথে একটা বোটানিকাল গার্ডেনও বটে। আর গাছগাছালি মানেই পাখপাখালির আশ্রম। কিচিরমিচির কোলাহলে চারপাশটা ভীষণ রকমের জীবন্ত। সবুজের ফাঁকে ঝিরিঝিরি দখিনা হাওয়া উড়ে ঘুরে মন মাতিয়ে রাখছে। এই সুযোগে পা’দুটো জিরিয়ে নিই খানিকটা। আর দেরি না করে পথের ধারের বেঞ্চিটা দখল করে নিলাম।

তারকাটার ওধারে বনবিড়ালের পরিবার গাদাগাদি করে ঘুমাচ্ছে। দিনে দুপুরের এ অবধি আর কোনো প্রানীকে অমন ঘুমাতে দেখি নি। বাবা-মা-ছানাপোনা সব এক সাথে মোয়া বেঁধেছে। ঘড়ঘড় নাক ডাকার শব্দও মিলছে। তবে ঝোলানো সাইনবোর্ডটা কেমন সন্দেহ হল। তাতে বড় বড় হরফ লেখা, ‘বনমোরগ’। অথচ উঁকিঝুঁকি মেরেও বনমোরগের ঝুঁটি মিললো না। বনবিড়ালের দল আবার মোরগ-পোলাও দিয়ে লাঞ্চ সেরে ভাত ঘুমটা দেয় নি তো?

যাক গে, প্রানীজগতের খাদ্যচক্র নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সাথের থলে থেকে চিপ্স্-বিস্কুট-কফি বের করে ছোটখাট পিকনিকের আয়োজনে লেগে গেলাম।

‘মাফ করবেন, একটু আস্তে কথা বলা যায় কি? আমার মিসেস ঘুমাচ্ছে কিনা। বেচারার মাইগ্রেনের সমস্যা। ঘুমটা হলে ভাল হত‘। কথাগুলো খুব সহবতের সাথে বললেন বিড়াল পরিবারের বিনয়ী কর্তাবাবু।

কচর মচর শব্দে বিস্কুট কামড়ানোতে আলাব্বু দিতে হল। এত করে যখন বলছেন ভদ্রলোক। নিঃশব্দে কোল্ড কফি গিলে নিয়ে দ্রুত পাততাড়ি গোটালাম। মিস্টার ম্যাঁও ততক্ষনে বাকিদের পাশে ফিরে গিয়ে নাক ডাকা জুড়ে দিয়েছেন। এদের সবার ভরপেট এক দিকে গড়িয়ে পড়েছে। মাইগ্রেন না কচু। পেটের ভেতর বন মোরগগুলো ঘচ্ঘচ্ করেছে নির্ঘাৎ। (চলবে)




মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই আগস্ট, ২০২১ ভোর ৫:০৬

সোহানী বলেছেন: চমৎকার জু ভ্রমণ পর্ব। আগের পর্ব পড়া হয়নি, গেলাম পড়তে।

১৪ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১:১৫

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আপু, গুনী মানুষ আমার লেখা পড়লে গলে যাই। অনেক ভাল থাকবেন।

২| ১৩ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৫:০০

ঢাবিয়ান বলেছেন: পইং শন্দটার , মানে কি?

১৪ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১:১৬

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ভাইয়া, এটা তো খুব ভাল প্রশ্ন। অর্থটা তো জানতে হবে। আমি খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.