somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিংপং পইং-১

২৬ শে জুলাই, ২০২১ ভোর ৪:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১.
প্রিং করে লাফিয়ে খাঁচার কাছে চলে এলাম। তুলার বলের মত প্রাণীগুলো কি চমৎকার দেখতে। পুরু পশমে চোখ ঢেকে গেছে তাদের। বহু কষ্টে ছোট ছোট হাতে পশম সরিয়ে ঘাস খেতে ব্যস্ত। আমিও ব্যস্ত সমস্ত হয়ে সাদা-কালো-বাদামীতে ছোপানো গিনিপিগগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখছি।

‘এদিকে একটু শুনে যাও তো।‘

চমকে তাকালাম। ডানে বামে ভিড় নেই তেমন। তাহলে কে বললো কথাটা? নাহ্ ভুল শুনেছি।

‘এ্যাই, কানে খাটো নাকি? নাকি না শোনার ভান করছো?’।

এবার ভ্রান্তিতে পড়ে গেলাম। হচ্ছেটা কি? এদিকে নধর সাইজের একটা গিনিপিগ খাঁচা আঁকড়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। কৌতূহলী হয়ে সেদিকে এগোলাম।

‘হ্যাঁ, আমিই ডাকছি। দু’টো কচি ঘাস ছিড়ে এনে দিতে পারো? এদের দেয়া অখাদ্য খেয়ে অরুচি ধরে গেছে। পশুখাদ্য না ছাই, ধুর্..।‘

কথা ফুরোবার আগেই দেখি বাচ্চা একটা ছেলে এক মুঠ তাজা ঘাস এনে খাঁচার ফোঁকর গলে ঢুকিয়ে দিয়েছে।

‘দেখলে, কি রকম চটপটে ছেলে। তোমার মত আলসের ডিপো নয়’। বলেই সে ঘাস চিবোতে মগ্ন হয়ে গেল।

বিস্ফোরিত চোখে বলেই ফেললাম, ‘তুমি কথা বলছো কিভাবে? আমিই বা বুঝছি কি করে?’।
ভীষন অনিচ্ছায় লেজহীন ছয় ইঞ্চি প্রানীটা জবাব ছুড়লো, ‘সবার সাথে বলি না। তোমাকে দেখে মনে হল, হয়তো বুঝতে পারবে। তাই বলেছি। এখন দেখছি তুমি আস্ত বোকার হদ্দ। যাও, যাও, সক্কাল সক্কাল আর সময় নষ্ট করো না‘।

ভাল রকমের ভ্যাবাচেকা খেয়ে সরে পড়লাম সেখান থেকে। কোথাও গড়মিল হচ্ছে। খুব ভোরে উঠেছি। ঘুম কম হলে লোকে ভুলভাল শোনে। তেমন কিছু একটা হবেও বা।
দূরে বাপ-ছেলে হেলে দুলে এগিয়ে গিয়েছে অনেকটা। কথা বলা গিনিপিগ আর তার ঘাস- কাহিনী মাথা থেকে ঝেড়ে দু’জনের দলটাকে ধরতে পা চালালাম।

মিউনিখ ছাড়িয়ে সামান্য দূরেই এই বিশাল পইং পার্ক। আর পইং নামটাও এক্কেবারে যুতসই। পার্ক জুড়ে নানা বয়সী শিশুরা পিং পং বলের মত লম্ফ-ঝম্ফে কাঁপিয়ে রেখেছে। মাঠের পর মাঠ সবুজের মাঝে ছেড়ে রাখা পশুপাখি দেখতে এসেছে সবাই। নামে ওয়াইল্ড পার্ক হলেও কোন বুনো প্রানী নজরে আসছে না। আর তড়তড়িয়ে যে এগোবো, তিড়িং বিড়িং শিশুর পাল ঠেলে হাঁটা-চলাই মুশকিল।

২.
দু’টো আধুলি ফেলে অটোমেট মেশিনের বোতাম এন্তার টেপাটিপি করেও কাজ হলো না। টপ করে পয়সা গিলে নিয়ে নিশ্চুপ হয়ে রইলো দাঁড়িয়ে রইলো সেটা। হরিনের খাবার না কিনেই ফিরে এলাম। ছয় বছরের তাফসু মিয়া কিছুটা হতাশ হলেও পর মুহূর্তেই হরিনের বাগিয়ে দেয়া গলায় হাত বুলাতে মজে গেল। তার জন্যেই আজকের আসা।

চিত্তির বিত্তির রঙের হরিনগুলো কোন ফাঁকে বড়দের মনও রাঙিয়ে ফেলেছে। তেপান্তর সাইজের সুবিশাল মাঠের এখানে সেখানে জটলা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে হরিনের ছোট ছোট দল। তাদের ভেতর হরিন ছানাদের কেউ কেউ আবার বেড়াতে আসা শিশুদের কাছ থেকে খাবার খাচ্ছে চেটেপুটে। হাতে সুড়সুড়ি লেগে শিশুরা খিলখিল হেসে উঠছে। প্রানি শিশু আর মানব শিশুতে এক দারুন মেলবন্ধন।

‘ফিসস্...!‘। হঠাৎ কেউ পিছু ডাকলো যেন।

‘কি, খিদে পেয়েছে?’। তাফসু মিয়াকে শুধালাম। সে মাথা নেড়ে আপত্তি জানিয়ে বয়সে বুড়ো এক হরিনের কান ধরে ঝুলতে লাগলো।

‘কি হলো, ডাকলে সাড়া দিচ্ছো না যে। আমার কান দুটো খুলে নিচ্ছে তো তোমার পাজি ছেলেটা। এভাবে মলে দিচ্ছে, বাবা গো। ওকে সরাও বলছি, উফ্’।

এখন আমার চোয়াল ঝুলে পড়ার পালা। রাগী চেহারার পালের গোদা টাইপ হরিনটা কথা বলছে নাকি? হতভম্ব ভঙ্গিতেই ছেলেকে ছুটিয়ে আনলাম।

‘বাঁচালে মা, বুড়ো বয়সে কান গেলে কি বিপদ, তাই না। তুমি বরং ওকে আমার শিং ধরে দাঁড়াতে বলো। দারুন একটা ছবি হবে‘।

‘নাহ্ মানে…’। কি যেন একটা বলতে মুখ খুলে আবার বেমালুম ভুলে গেলাম। ওদিকে, আপনা থেকেই আংগুলের টোকায় পটাপট ছবি উঠে গেল মুঠো ফোনে।

‘মা, তুমি আমার সাথেও একটা ছবি তোলো। বহুদিন এমন কাউকে পাই না। আমাদের সাথে যোগাযোগ কত সহজ। অথচ কেউ পাত্তা দেয় না। বিশ্বাসই করে না ব্যাপারটা‘।

প্রবল বেগে গাল চুলকাবো না এখান থেকে পালিয়ে যাবো, স্থির করতে না পেরে ছেলের বাবাকে আলপটকা বলে বসলাম, ‘ওনার সাথে একটা ছবি তুলে দেয়া যায়? মুরুব্বী যখন বলছেন এত করে’।

কথাগুলো মজা করে বলা ভেবে সানন্দে সে ক্লিক ক্লিক ছবি তুলে নিল।
বুড়ো হরিণ বাবাজীকে বিদায় জানিয়ে কেটে পড়লাম অবশেষে। বুড়োটা আবার বলে কি না, ফেরার পথে তার সাথে আড্ডা মেরে যেতে। দু’কদম সামনের অটোমেটটা নাকি কাজ করে ঠিকঠাক। সাথে করে যেন কিছু খাবার কিনে আসি।

কিন্তু আমার তো খেয়ে কাজ নেই। তাছাড়া, সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। অথচ কাউকে বলতেও পারছি না। নির্ঘাৎ পাগল ঠাউরে বসবে তাহলে।
(চলবে)






সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×