নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])
কলেজের ঠিক সামনেই মহাসড়ক। ওখান থেকে পশ্চিম দিকে বেঁকে গেছে রাস্তাটা। কিছুদূর যাওয়ার পর একটা মোড়। কেউ বলে তিন রাস্তার মোড়, আবার কেউ বা বলে খালার মোড়। মোড়ে ভদ্র মহিলার (খালার) একচালা একটা দোকান আছে; সেখানে শিঙাড়া-সমুচা-পেঁয়াজি বিক্রি করা হয়।
বামপাশ দিয়ে এগিয়ে গেলেই সরকারি হাসপাতাল আর ডানদিক দিয়ে গেলে একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়। নামঃ ভান্ডাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে একটা নির্মাণাধীন ভবন। গৃহস্থের অর্থনৈতিক দৈন্যদশার দরুণ নির্মাণ কাজ আপাতত স্থগিত আছে। পরীক্ষামূলকভাবে এখানে একটা কোচিং সেন্টার খোলা হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণি থেকে পর্যায়ক্রমে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। এই কোচিংয়ের মূল উদ্যোক্তা নাজমা নামের এক মহিলা, যিনি স্থানীয় এক মহিলা কলেজে চাকরি করেন। কোচিংয়ে তার সহকারী ঐ কলেজেরই একজন পার্টটাইম টিচার লুৎফর এবং তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু মৃণাল। মাঝেমাঝে ইমন নামের স্থানীয় একজন গণিত করান।
কোচিং ভালোই চলছিল। লুৎফর গণিত পড়ায় আর মৃণাল পড়ায় ইংরেজি। পাশে আরও একটা কোচিং থাকা সত্ত্বেও এই কোচিংটা বেশ চালু হয়ে গেল। এলাকার ছেলেমেয়েরা পড়ালেখায় মনোনিবেশ করল।
মাস যেতে না যেতেই হঠাৎ করে কোচিংয়ে ছন্দপতন শুরু হলো। লুৎফর আসা কমিয়ে দিল। কারণ, হিসেবে জানাল; এখান থেকে বেশি টাকা-পয়সা আসবে না। বাস্তবিকই টাকা-পয়সা ঠিকমতো আসেনি। নাজমা ম্যাডাম যে আশার কথা শুনিয়েছিলেন, সে আশার গুড়ে বালি! প্রত্যন্ত গ্রাম তো, এখানে প্রাইভেট-কোচিংয়ের প্রচলন খুব কম। অভিভাবকগণ পড়ালেখার পেছনে টাকা-পয়সা খরচ করতে কৃপণতা করেন।
কোচিংটা চালানো বেশ কঠিন হয়ে গেল। বেশিরভাগ সময় সবগুলো ক্লাস একাই করাতে হতো মৃণালকে। ফলে ক্লাসে বিশৃঙ্খলা দেখা দিত। ইমন তো মাঝেমাঝে আসত।
লুৎফরকে ধরে-বেঁধে আবারও কোচিংয়ে নিয়ে আসা হলো। সপ্তাহে একদিন, দু’দিন আসে। এভাবেই কোনোমতে দিন চলছিল। এর মধ্যে লুৎফর আরেক কাহিনী শুরু করল। অষ্টম শ্রেণির জান্নাত নামের একজনকে শুধু মনোযোগ সহকারে পড়ায়, আর নবম শ্রেণির চম্পাকে। ওরা সম্পর্কে ফুফু-ভাতিজি। বাকিদের প্রতি তার কোনো নজর নেই। আর সব ছেলেমেয়ে এ নিয়ে কানাঘুষা শুরু করল। বহুবার লুৎফরকে সতর্ক করা হলো, অথচ সে দিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই।
সপ্তাহে ছয় দিন মৃণাল কোচিংয়ে আসে। বিকেল থেকে রাত্রি ন’টা-দশটা পর্যন্ত থাকে। ছেলেমেয়েদের একাই সামলায়। জান বেরিয়ে যায়, তবু কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ করেও কি কোনো লাভ আছে?
কোনো কারণে একদিন কোচিংয়ে যেতে পারেনি মৃণাল। ওইদিন লুৎফর গিয়েছিল। পরদিন মৃণাল গিয়ে দেখল, পুরোনো অনেকেই আসেনি। কয়েকদিনের মধ্যে দেখা গেল, তারা কোচিংয়ে আসা একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে। এত কষ্ট করে দাঁড় করানো কোচিংয়ের এমন হাল হলো কেন বুঝতে পারল না মৃণাল ? পরে জানা গেল, চম্পারা ঠিক করেছে লুৎফরের কাছে প্রাইভেট পড়বে। এই কোচিংয়ে আর আসবে না।
পরিশিষ্টঃ চম্পারা পরে আর লুৎফরের কাছে প্রাইভেট পড়েনি। তারিখ দিতে থাকে আর পেছাতে থাকে। বান্ধবীরা মিলে একদিন পড়ে গিয়েছিল অবশ্য! পরে আর আসেনি। পড়ানোর জন্য লুৎফর আলাদা একটা ঘর ভাড়া নিয়েছিল। এবার সে ফাঁপড়ে পড়ে। ইতোমধ্যে মৃণালের সাথেও তার ব্যবচ্ছেদ ঘটে যায়।
তারপরও শেষ পর্যন্ত মৃণাল কোচিং চালিয়ে যায়। নাজমা ম্যাডামের সাথে তার একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চুক্তি ছিল। অন্যদের সাথেও চুক্তি ছিল। কিন্তু কেউ সে কথা মনে রাখেনি। শুধু মৃণাল রেখেছিল। নামকরা একটা স্কুলে চাকরি হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও পাশাপাশি কোচিং ধরে রেখেছিল সে।
সংসারে শুধু অর্থবিত্তেরই প্রয়োজন হয় না; মায়া, ভালোবাসা, বিশ্বাস ও দায়িত্ববোধেরও প্রয়োজন হয়। ক্ষণিক এ জীবনে কারও সাথে প্রতারণা করে কী লাভ? মানুষ আর ক’দিন বাঁচে?
মৃণাল কারও বিশ্বাস ভাঙতে চায় নি। কোচিং ধরে রাখার পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিকের দু’জন শিক্ষার্থীকে নামমাত্র টাকায় পড়িয়েছিল। যদিও নতুন স্কুলে ভালো টাকা-পয়সার সংস্থান হয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল, তবুও বিবেকের কাছে পরাজিত হতে চায়নি সে। তাছাড়া গ্রামের অবশিষ্ট দরিদ্র ছেলেমেয়েদের জন্য কিছু করতে চেষ্টা করতে পারায় তার মধ্যে এক প্রকার স্বর্গীয় প্রশান্তিও ছিল।
০১ লা মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:১৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: বিশ্বাস শব্দটাকে এখন যাদুঘরে পাঠানোর যোগাড়যন্ত্র চলছে। কারণ, বিশ্বাসীরা পদে পদে নিগৃহীত।
২| ০১ লা মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:২৮
আহমেদ জী এস বলেছেন: রূপক বিধৌত সাধু ,
সুন্দর একটি শিরোনামে গল্পের কথা বলা হলেও মনে হয় জীবন থেকে নেয়া ।
লেখায় মৃদুলের কথা পড়তে পড়তে একটা গানের কথা ( প্রয়াত আব্দুল জব্বারের গাওয়া ) বারবার মনে পড়ছিলো ---
"ভবের নাট্যশালায় , মানুষ চেনা দায়রে ... মানুষ চেনা দায় ...."
নীলপরির মন্তব্যের প্রথম লাইনটি চরম একটি সত্য ।
০১ লা মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৪০
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মানুষ আসলে আবেগ দিয়ে চলে, মোহের বশবর্তী হয়ে চলে। যদি বিবেক দিয়ে চলত, তাহলে পৃথিবীতে এত অনিয়ম, অবিশ্বাস, অনাচার থাকত না। মানুষ চেনা সত্যিই বড় দায়।
৩| ০১ লা মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৩৩
নীলপরি বলেছেন: বিশ্বাসীরা নিগৃহীত । মানছি ।কিন্তু বিশ্বাসীদের বিশ্বাসে অবিচল থাকতে হবে । মরার আগে কেনো মরবে ?
প্লাস্টিক মানুষের সংখ্যা বেশী । তবে , অল্প হলেও সত্যি মানুষ এখনো আছে ।
০১ লা মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৫২
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: তা তো অবশ্যই।
জীবনকে থামায় সাধ্য কার? যারা বিবেকবান তারা অবশ্য কোন প্রতিকূলতাকেই ভয় পায় না, শুধু বিশ্বস্ত সহচরের অভাবে ভোগে এই আর কী।
৪| ০২ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:০৮
করুণাধারা বলেছেন: সততা আর বিশ্বাসের গল্প; ভাল লাগল।
০২ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:১২
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানবেন।
৫| ০২ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:১৯
ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
আমার ক্লাস ৪ থেকে এইচ.এস.এসি. পর্যন্ত হাউস টিউটরের নাম ছিল মৃদুল।
স্যারের কথা মনে পড়ে গেল ||
০২ রা মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:৩৮
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ও আচ্ছা। শুভেচ্ছা জানবেন।
৬| ০২ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৩৪
ওমেরা বলেছেন: বিস্বাস ও দায়িত্ববোধ সবার থাকে না তবে আছে এখনো সবার মাঝ থেকে বিলিন হয়ে যায়নি।
০২ রা মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:৪০
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: সময়টাই খারাপ আসলে। সত্যের পথে থাকলে পদে পদে প্রতিবন্ধকতা!
তবুও কিছু কিছু মানুষ সবকিছু সয়ে যায় নীরবে।
৭| ০২ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ১:০৪
সোহানী বলেছেন: এরকম কিছু মৃদুল আছে বলেই দেশ এখনো টিকে আছে, পুরোপুরি তলিয়ে যায়নি।
ভালো লাগলআ ++++
০২ রা মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:৪৫
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অল্প হলেও কিছু মানুষ সত্যিই আছে, যারা অন্ধকারে দীপশিখা হয়ে মানবতাকে টিকিয়ে রাখেন।
৮| ০২ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ২:৫৫
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: বিশ্বাস, দায়িত্ববোধ বা বিবেকবান মানুষ আজকাল খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য। আর এই গুণাবলিগুলো নিয়ে বেঁচে থাকাও কঠিন।
০২ রা মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:৪৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: যথার্থই বলেছেন। এ সময়ে এসব গুণাবলি নিয়ে বেঁচে থাকা খুব কঠিন। তারপরও কিছু কিছু মানুষ সব শঙ্কাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেঁচে থাকে মনের জোরে।
৯| ০২ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ২:৫৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
শক্ত মানুষ আছে আমাদের ভেতরে, ওরা সকিছুকে ধরে রাখে, ওরাই সবার ভরসা
০২ রা মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:৫১
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: সবার ভরসা কি না জানি না! কারণ, সময়টাই এখন ধূর্ত, প্রতারকদের। এরা মূলত ভরসা অসহায়দের।
১০| ০২ রা মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৪৪
শায়মা বলেছেন: মৃদুলের জন্য শুভকামনা!
০২ রা মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৫৪
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। এক আকাশ ভালোবাসা জানবেন।
১১| ০২ রা মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:২০
বিলিয়ার রহমান বলেছেন: কবি বুঝি এবার গল্পাকার হয়ে যাচ্ছেন!!
এ যাত্রা চলুক!
০২ রা মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:১৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কবিতায় কি আর সব ফুটিয়ে তোলা যায়? তাই গল্পই সই!
শুভেচ্ছা।
১২| ০২ রা মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:০৭
সুমন কর বলেছেন: সবার বিবেক জাগ্রত হোক......গল্প ভালো লেগেছে।
০২ রা মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৩০
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিরন্তর! ভালো থাকুন।
১৩| ০২ রা মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:৩০
রাজীব নুর বলেছেন: শিরোনাম ভুল আছে। নীল না শাল হবে।
০২ রা মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:০৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ঠিক করে নিয়েছি। ধন্যবাদ আপনাকে।
১৪| ০৮ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:১৪
নীলপরি বলেছেন: এই শিরোনামটা ভালো লাগছে।
০৮ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:০৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শিরোনাম এটাই রাখব অনেক আগেই ভেবেছিলাম। লেখা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেটা মনে ছিল না। হঠাৎ মনে পড়ায় বদলে দিলাম।
শুভেচ্ছা, নীলপরি!
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:০০
নীলপরি বলেছেন: বিশ্বাস - এই শব্দটাই জীবনের ভিত্তি ।
কম হলেও মৃদুলরা আছে বলেই পৃথিবী টিকে আছে ।
বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন ।
এটা থেকে দারুণ একটা শর্ট ফিল্মের স্ক্রিপ্ট হতে পারে । ইদানিং দু-একটা শর্ট ফিল্ম দেখলাম । তাই মাথায় আসলো ।
শুভকামনা ।