নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রেমোপাখ্যানঃ পিলসুজে বাতি জ্বলে মিটির মিটির

০৫ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৯


দরজাটা ভেজিয়ে সটান শুয়ে ছিলাম। পশ্চিমের জানালাটা অবশ্য খোলা! অনেকদিন পর সামান্য অবকাশ জুটল। নানান কথা ভেবে তাই সময়টাকে কাজে লাগানো! ভাবতে আমার বরাবরই ভালো লাগে। এমনিতে তো চিন্তা-ভাবনার সুযোগ কম। ব্যস্ততা আমায় দেয় না অবসর। কাজে-অকাজে কাটছে প্রহর!

এমন সময় সে আমার ঘরে এলো। কোথা থেকে এলো? আর কীভাবে এলো? সে তো আমার বসতি চেনে না! হাজারও প্রশ্ন উঁকি দিল মনে। কিন্তু কোনো প্রশ্ন করা হলো না। এসব প্রশ্ন অবান্তর। সে যে এসেছে এটাই বড়ো কথা! আর সব তুচ্ছ!

অন্ধকারে বাইরে তাকিয়ে আছি। বর্ষণ শুরু হয়েছে পুরোদমে, সাথে দমকা বাতাস। রাস্তাঘাটে পানি জমে গেছে। ছোটোখাটো খালের মতো! যদিও চোখে দেখা যায় না, অনুমান করছি। এ অঞ্চলটায় সামান্য বর্ষণেই বৃষ্টি জমে যায়। হাঁটু পর্যন্ত কাপড় তুলে পথ চলতে হয়। বড্ড বিচ্ছিরি কাণ্ড!

সে আমার শিয়রে এসে বসেছে, হাত দিয়েছে কপালে! আলো-আঁধারিতে বুঝলাম তার হাতটা সামান্য কেঁপে ওঠল। ঠোঁট কাঁপছে! এভাবেই বসে থাকবে? কিছু কি বলবে না? অবশ্য এগুলো আমার দেখা কিংবা বোঝার ভুল হতে পারে। ইদানীং চোখে কম দেখছি, অনেক ভুল ভাবছি। যা হওয়ার তা হয় না, যা না হওয়ার তাই হয়ে থাকে।

সেদিন ক্লাসে গিয়েছি। হঠাৎ এক মেয়ে বলে উঠল, “স্যার, আপনার পুষ্প এসেছে।” কয়েকদিন তাকে দেখছিলাম না। অনেককেই তার কথা জিগ্যেস করতাম। ব্যাপারটা বোধহয় মেয়েটার দৃষ্টি এড়ায়নি।

পুষ্প একটু লজ্জায় পড়ে গেল মনে হয়। তার হাসিমাখা মুখটা মুহুর্তেই মেঘলা আকাশের মতো কালো বর্ণ ধারণ করল। সে আমাকে বলল, “স্যার, আমাকে নাম ধরে ডাকবেন না। সবাই কী রকম ভাবে!”

আমি অনেকেরই খোঁজ-খবর নেই। কেন উপস্থিতি এত কম, কোনো সমস্যা হয়েছে কী না জানতে চাই। এগুলো আমার এখতিয়ারভুক্ত না অবশ্য, নিজের গরজেই করি। ভালো লাগে। আমার খোঁজ কেউ নেয় না; এই দুঃখবোধেই করি হয়তো। পুষ্প যেহেতু চাচ্ছে না ক্লাসে তার নাম করি, ব্যাপারটা আপাতত ইস্তফা দিলাম। বুঝতে পারি পুষ্প’র সাথে অনেকেই ঈর্ষা করছে। গন্ডগোল করছে এমন কাউকে যখন শাস্তি দিচ্ছি, কেউ কেউ বলছে, পুষ্পকে তো কিছু বলেন না, শুধু আমাদের দেখছেন। অথচ আমি সবাইকেই শাস্তি দিয়েছি। নাকি পুষ্প’র প্রতি সহানুভূতি একটু বেশি? সিনথিয়ার প্রতি সহানুভূতিও তো কম না। অথবা লিমা, ইয়াসমিন, কিংবা মানিকের প্রতি? কোথাও কি ভুল হচ্ছে আমার?

ছোটোখাটো একটা অভিমানের পালা ঘটে গেল। আমি ওদের ক্লাস করানো বাদ দিয়ে দিলাম, যদিও আমার কষ্ট হচ্ছিল খুব! তবুও ঠাট বজায় রাখছিলাম। ওরা হৈচৈ কাণ্ড বাঁধিয়ে ফেলল। আমি না এলে আর ক্লাসে আসবে না মর্মে হুমকিও দিল। পালা করে অনুরোধ পর্ব তো চললই। আমি সহজে ধরা দিচ্ছিলাম না। ভাবখানা লক্ষ্য করছিলাম। ইতিমধ্যে পুষ্পও একবার অনুরোধ করে গেল। আমি রণে ভঙ্গ দিলাম।

আমি যখন আবার ক্লাসে গেলাম সবার সে কী উল্লাস! আমার চোখে পানি এসে গেল! যদিওবা কেউ কেউ বলেছে এসব লোক দেখানো। কারও প্রতি ওদের দরদ নেই।

আজকের যাকে আপন বলছে, কালকেই তাকে ভুলে যায়। সত্যি বলতে কী, আমার আগমনে কেউ এত খুশি হতে পারে আমি ভাবতেই পারি নি। লোক দেখানো হোক আর বাস্তবিকই হোক। নিজেকে তো চিরদিনই মাকাল ফল মনে হয়েছে। যদিও ওরা বিভিন্ন সময়ে আমাকে বিরক্ত করেছে, কষ্ট দিয়েছে- আমি ভুলে গেলাম সব। আর আমি তো ওদের ছাড়া এক মুহুর্ত টিকতে পারি না। ওদের সাথে অভিমান করে কেন নিজে নিজেই কষ্ট পাব? যাদের ভালোবাসা যায় তাদের সাথে ছোটোখাটো মান-অভিমান করা চলে, রাগ করে থাকা যায় না। ওরা দুষ্ট হলেও আমাকে ভালোবাসে, আমিও ওদের ভালবাসি; এর বেশি বুঝতে চাই না। যারা আমাকে ওদের সম্পর্কে ভুল বুঝিয়েছে, আমি ধরে নিলাম ঈর্ষাপরায়ণ হয়েই এমনটা করেছে।

তার হাসিটা আমাকে বিমুগ্ধ করেছিল খুব সম্ভব প্রথম থেকেই। আমি অনুমান করতে পারি সে হাসিটা সারা জাহানকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তার জন্য সহস্র প্রাণ ঝরে যেতে পারে। জড়ানো কথামালা ঠিক কবিতার মতো! ইচ্ছে করে দিন-রাত শুনি। কিন্তু সে সুযোগ কই? সে-ও আমাকে এড়িয়ে চলল! অবশ্য এড়িয়ে চলাটাই স্বাভাবিক। তার আর আমার মাঝে যে যোজন যোজন ব্যবধান। আমি নির্লজ্জের মতো ব্যবধানটা ভাঙতে চেয়েছি। এটা তো অসম্ভব কিছু না! হতে তো পারেই! আমি ভুলে গেলেও সে ঠিকই ব্যবধানটা অনুধাবণ করেছে। তার ফেসবুক আইডি দেয়নি। মোবাইল নাম্বার চাওয়ার সাহসটা হয়নি অবশ্য। দ্বিধা ছিল, যদি না দেয়। মানুষের মন বড় বিচিত্র!

তার ছোটবোন প্রীতি পরীক্ষা দিচ্ছিল। হঠাৎ অফিস থেকে ডাক পড়ল তার। আমার কাছ থেকে অনুমতি করে সে অফিসে গেল, দেখলাম কোণার ঘর থেকে পুষ্পও গেল।
প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি ওদের। “কোন সমস্যা?” জিগ্যেস করলাম। প্রীতি বলল, “বাবা অনেক দেনায় পড়ে আছেন। আমাদের ভর্তিও করানো হয়নি।”
“তোমাদের সংসারে কে কে আছে?”
“আমি, আপু, বাবা, কাকা-কাকি, দাদা-দাদি।”
“তোমার মা?”
“সাথে থাকেন না।”
“দেখা হয় না?”
“দুই ভাইকে যখন স্কুলে নিয়ে আসেন, নিয়ে যান তখন দেখা হয়।”

প্রীতির কথাবার্তা বেশ পরিণত মনে হলো। সংসারের জটিলতা বুঝে গেছে এতটুকু মেয়েটা। পুষ্প কি ওর মতো এতটা পরিণত? তেমনটা মনে হয়নি। নাকি নিজেকে আড়াল করে রাখে?

লক্ষ্য করেছি প্রীতিও ঠিকমত স্কুলে আসে না। দু’বোনই পড়ালেখায় পিছিয়ে। এবার সবকিছু পরিষ্কার হলো। আমি কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করলাম। আমার সহমর্মিতা কি ওরা মেনে নেবে? প্রত্যাক্ষানের একটা আশঙ্কা উঁকি দিল মনে।

দিন থেমে থাকল না, চলতেই থাকল। আর আমি অনেক কথা ভাবতে থাকলাম। এর মধ্যে পুষ্প’র বান্ধবী মিমকে বললাম পুষ্প সম্পর্কে আরও কিছু জানতে চাই। সে বলল, বিস্তারিত জানাবে।

“তোমার নাচটা কিন্তু আমার ভালো লেগেছিল। কী দারুণ নাচো তুমি?” বাইরে তাকিয়েই কথাটা বললাম। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার কথা পাড়লাম, সে উপলক্ষ্যে সে নাচার প্রস্তুতি নিয়েছিল।

“কোন কথা বলছ না যে?” বলে ও যেখানে বসেছিল সেখানে তাকালাম। কোথাও কেউ নেই। পুরো ঘরে সুনসান নীরবতা। পিলসুজে বাতি জ্বলছে মিটির মিটির। আমি এতক্ষণ কার সাথে কথা বললাম তাহলে? সবই কি আমার মনের ভুল? হঠাৎ খেয়াল হলো শরীরে ঘাম জমে গেছে। আজ সকালে বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিলাম। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছিল। জ্বরের ঘোরে এতক্ষণ অলিক কল্পনা করলাম?

১৯ বৈশাখ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ
গাজীপুর।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৯

নায়লা রহমান বলেছেন: এবার চট্টগ্রামে বাসে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা!

০৬ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:৩১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: দুঃখজনক ব্যাপার!

২| ০৫ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩১

শামচুল হক বলেছেন: ভালো লাগল।

০৬ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:৩১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কৃতজ্ঞতা।

৩| ০৫ ই মে, ২০১৮ রাত ৮:২৩

মৌরি হক দোলা বলেছেন: অলিক কল্পনা! এসব অলিক কল্পনাই........

অনেক অনেক ভালোলাগা আর শুভেচ্ছা রইল......

০৬ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:৩৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমার করার কিছুই ছিল না!

৪| ০৫ ই মে, ২০১৮ রাত ৯:৪৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: কল্প প্রেমোপাখ্যানে মুগ্ধতা :)

ভাল লাগল সাধূ দা’

+++

০৬ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:৩৪

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: গহন দ্বারে বারেবারে কান পেতে রই!

৫| ০৫ ই মে, ২০১৮ রাত ১১:০১

শায়মা বলেছেন: মধুর মধুর অলিক

০৬ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:৩৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কিছু তার জানি আবার কিছু পাই অনুমানে।

৬| ০৬ ই মে, ২০১৮ রাত ২:০৯

সুমন কর বলেছেন: অলিক কল্পনার গল্প ভালো লাগল।

০৬ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: জেনে ভালো লাগলো!

৭| ০৬ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:২২

রাজীব নুর বলেছেন: ভাই আগেই বলে দিচ্ছি কিছু মনে করবেন না, অন্য ভাষায় মন্তব্য করলাম।

泰國東北部的烏隆他尼府,有一座紅蓮湖,被美國有線電視新聞網評選為世界十大奇湖之一。每年的11月份至3月份,湖中幾千英畝、數以萬計的紅蓮競相綻放,形成一大片紅蓮花海,讓人盡情欣賞「接天蓮葉無窮碧,映日荷花別樣紅」的無限美景。

০৬ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: চমৎকার মন্তব্যে আমি অভিভূত।

৮| ০৬ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:৩৬

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।।

০৬ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা অফুরান। ভালো থাকুন।

৯| ১৪ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:৪৪

নীলপরি বলেছেন: মায়াময় কল্পনায় অনেক ভালো লাগলো । +++++++

১৯ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা, নীলপরি! ভালো থাকুন।

১০| ১৯ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: কল্পনা অলীক হলেও বেশ বিশ্বাসযোগ্য করেই বলে যাচ্ছিলেন। ভাবনার কোমলতা স্পর্শ করে গেল।
গল্পে ভাল লাগা + +

১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৬:১৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কল্পনাই সই! মনবিনিময় করা আর সম্ভবপর হয় নি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.