নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ অকারণ

০৫ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:২২

টিপটিপ করে বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে না। শুধু একটু একটু ভিজিয়ে দিয়ে যেতে পারে। এই বৃষ্টিতে অসহ্য গরমটাও কমে না। তনুর যেমন এখনও গরম লাগছে। একটু পর পর নাকের উপরে জমে থাকা ঘাম মুছছে, হাতের গোলাপি রঙের টিস্যু দিয়ে। ঘামের উপর পড়ে, দু এক ফোঁটা টিপটিপ বৃষ্টি মিশে যাচ্ছে। পিঠের সাথে জামাটা ঘেমে লেপ্টে আছে। খুব অস্বস্তি লাগছে। ঘামে ভিজে থাকা পিঠের দিকে, রাস্তার পাশের ছেলেগুলো বার বার তাকাচ্ছে। বেশ বুঝতে পারছে তনু। রাস্তা ধরে ধীরে ধীরেই তবু হাঁটছে। রোকেয়া হলের সামনে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নীলক্ষেতের দিকে যাচ্ছে। তনু জানে রাফি ওখানেই আছে। রাফি সবকিছু নিয়ে মিথ্যা কথা বললেও, কোথায় আছে তা নিয়ে কখনও মিথ্যা বলে না। জানে তনু। একটু আগেই যখন ফোন দিয়ে তনু জিজ্ঞেস করল, কোথায় আছ এখন?

- নীলক্ষেত।

- কি করছ?

- পুরাতন বই দেখি। একটা রান্নার বই কিনব। একজনকে উপহার দেবার জন্য।

- কাকে দিবে উপহার?

- তুমি জানো, আমি কাকে উপহার দিব। যাতে বিয়ের পর নানা রকম সুস্বাদু খাবার রেঁধে রেঁধে আমাকে খাওয়াতে পারে।

- আচ্ছা, আমি নীলক্ষেত আসছি। তুমি থাক।

- তুমি এসে কি করবে?

- যা ইচ্ছা করব। তুমি থাক, ব্যাস।



বলে হুট করে তনু কল কেটে দিয়ে হাঁটতে শুরু করে। রাফি বই কিনছে, রান্নার বই। এ জন্য তনুর মন খারাপ। কেউ বই কিনলে কারও মন খারাপ হবার কথা না। তবুও তনুর হচ্ছে। কারণ বইটা অন্য কাউকে দেবার জন্য কিনছে। অবশ্যই তনুকে না। বইটা দিবে বৃষ্টি মিষ্টিকে কে। বৃষ্টি মিষ্টি কারও নাম হয় না। বৃষ্টি কারও নাম হতে পারে, মিষ্টি কারও নাম হতে পারে। তবে বৃষ্টি মিষ্টি একসাথে কারও নাম হয় না। তবুও রাফি সবসময় এই নামেই মেয়েটার গল্প করে তনুর সাথে। বৃষ্টি মিষ্টির আসল নাম জানে না তনু। বৃষ্টি মিষ্টিকে বই দিবে রান্নার। সেই বই দেখে দেখে রান্না শিখে, রান্না করে খাওয়াবে রাফিকে। এসব ভাবতেই রাগ লাগছে খুব। বৃষ্টি মিষ্টিকে ভালবাসে রাফি। আর তনু বাসে রাফিকে। বৃষ্টি মিষ্টির কথা আগে শুনে নি তনু। এতদিন লুকিয়ে লুকিয়ে রেখেছে, রাফি। ইদানীং শুনছে। যখন থেকে তনু বলছে রাফিকে ভাললাগার কথা, ভালবাসার কথা। রাফি অন্য কাউকে ভালবাসে, এটা মানতে পারে না তনু। তাই বার বার খুঁজে খুঁজে বের করে দেখা করতে চায় তনু। রাফিকে বললে, কখনই দেখা করতে আসবে না। সেদিন বিকেল বেলা, হাতে আখের সরবতের গ্লাস নিয়ে, তনুর কি মনে হল জানে না। বরফ দেয়া আখের সরবতের গ্লাস বেয়ে, বাহির দিয়ে পানি পড়ছে। আর সেদিকে এক মনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিছুক্ষণ তনু, রাফিকে বলে, তোমাকে একটা কথা বলব?

- হ্যাঁ বল।

- সোজা করেই বললাম। আমি অত ঘুরিয়ে কথা বলতে পারি না।

- হ্যাঁ বল।

- আমি বোধহয় তোমাকে ভালবাসি। বোধহয় না, সত্যি সত্যিই বাসি।



রাফি কাঁপা কাঁপা হাতে আখের সরবতের অর্ধেকটা ফেলে দেয়। মানে হাত কাঁপতে কাঁপতেই পড়ে যায়। একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে, মানে?

- মানে কিছু না। যা বললাম তাই। এখন তুমি কি রাজি? রাজি হবার জন্য তিন দিন সময়। এরপর আমাকে জানাবে।



এরপর তিন দিন এই বিষয় নিয়ে কোন কথা হয় না। তনু রাফির বন্ধু। শুধুই বন্ধু ছিল। বন্ধু হলে তুই বলে ডাকতে হয়। কিন্তু রাফি কাউকে তুই বলে ডাকতে পারে না। এ জন্য তুমিতে আটকে থাকে সম্পর্ক। এই বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্কটা ভালবাসার দিকে নিতে চাচ্ছে তনু। তিন দিন পর তনু কল করে বলে, তিন দিন হয়েছে। বল রাজি?

- না আসলে।

- কি রাজি না?

- আসলে আমি অন্য একজনকে ভালবাসি।

- মানে? কাকে? কবে থেকে? আগে তো বল নি?

- বৃষ্টি মিষ্টি কে।

- দুই জন কে ভালবাস একসাথে?

- না, বৃষ্টি মিষ্টি একজনের নামই। আমি ডাকি তাকে এই নামে।

- তোমাদের সম্পর্ক কত দিনের?

- আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমি তাকে ভালবাসি, সে আমাকে বাসে না।

- তাহলে? সে তো বাসে না তোমাকে। আমাকে তাহলে ভালবাসতে সমস্যা কোথায়?

- আমি বৃষ্টি মিষ্টি ছাড়া অন্য কাউকে ভালবাসতে পারব না।

- আচ্ছা ভাল। ঠিক আছে। আমি আর তোমাকে জ্বালাব না।



মুখে সেদিন এই কথা বললেও, তনুর একটু পর পরই রাফির কথা মনে পড়ে। ভালবাসার কথা বলে। রাফি বার বার তখন বৃষ্টি মিষ্টির কথা বলে। সেদিনের পর থেকে আর রাফি তনুর সাথে দেখা করে নি গত দুই মাস ধরে রাফি তনুর সাথে দেখা করে না। তনু অনেক করে চেয়েও পারে নি দেখা করতে। আজ করবেই। যেভাবে হোক। সামনা সামনি বলবে আজ ভালবাসার কথা। হয় আজ রাজি হবে, নয়ত আর কখনই বলবে না ভালবাসার কথা।



নীলক্ষেতের ব্যস্ত দোকানগুলো দেখা যাচ্ছে। টিপটিপ বৃষ্টিতে, পলিথিন দিয়ে ঢাকা ফুটপাথের দোকানগুলো। তবুও সেখানে ভিড়। এই ভিড়ের মাঝেই রাফিকে খুঁজছে। রান্নার বই গুলো ফুটপাথেই বিক্রি করে। এতো মানুষের মাঝে রাফিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। মোবাইলটা বের করে রাফিকে কল করল তনু, নীলক্ষেতে কোথায় তুমি?

- আমি এখন নীলক্ষেত না। ইডেন কলেজের সামনে।

- ওখানে কি?

- বৃষ্টি মিষ্টির বাসা এখানে। বৃষ্টি মিষ্টির সাথে দেখা করতে এসেছি।

- আচ্ছা দেখা কর। কিন্তু আমার তোমার সাথে অল্প কিছু কথা ছিল।

- বল।

- মোবাইলে না। আমি সামনা সামনি বলব। তুমি ওখানে থাক। আমি আসছি। এর মাঝে তোমার বৃষ্টি মিষ্টি চলে আসলে তো ভালই। দেখা হয়ে গেল। পরিচয় করিয়ে দিলে।

- বৃষ্টি মিষ্টি রাগ করে যদি তোমাকে দেখলে? আজ একটা রান্নার বই উপহার দিচ্ছি। রাজি হবার সম্ভাবনা আছে একটা।

- রাগ করবে না। আমি বৃষ্টি মিষ্টির সামনে কিছু বলব না। তুমি ওখানেই থাক। আমি আসছি।



রান্নার বই হাতে, ইডেন কলেজের গেটের বিপরীত পাশে দাঁড়িয়ে আছে রাফি। হাতে বইটার নাম, ১০১ বাহারি রান্না। বইয়ে লেখকের নাম নেই কোন। বইয়ের উপরে মাছ মাংসের ছবি শুধু। অন্য সব রান্নার বইয়ে, শুধু শাক সবজীর ছবি। শাক সবজী পছন্দ না রাফির। এ জন্য মাছ মাংস সহ ছবিওয়ালা বই কিনেছে। এটা বৃষ্টি মিষ্টিকে দিবে। যদি খুশি হয়ে রাজি হয়ে যায়। আবার প্রচণ্ড রাগও করতে পারে। হয়ত ভাবতে পারে, রাফি ভাবছে, এই মেয়ে দুনিয়ার কোন রান্না পারে না। তাই অপমান করার জন্য এই রান্নার বই হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। সেটা পরের ব্যাপার, আগে দেখা হোক। বই নিক। এরপর। এর মধ্যে আবার ঝামেলা বাঁধাচ্ছে তনু। মেয়েটাকে এতো করে বলার পরও কেন পিছু ছাড়ছে না, বুঝতে পারে না রাফি। রাফিকে ভালবাসার কিছু নেই। রাফি জানে। প্রেমিক প্রতিযোগিতা নামক কোন প্রতিযোগিতা হলে, রাফিকে প্রথম পর্বের আগেই বাদ দিয়ে দিত। দারওয়ান ঢুকতে দিত না, প্রতিযোগিতায় যাবার জন্য। সে বলত, আপনার মধ্যে, প্রেমিক প্রেমিক কোন ভাব নেই। আপনাকে দেখতে দারওয়ানের মত লাগছে। আপনি আমার পোশাক পরে এখানে দাঁড়ান। আমি যাই প্রতিযোগিতায়। রাফির মাঝে মধ্যেই বৃষ্টি মিষ্টির সাথে কথা হয়। তখন বৃষ্টি মিষ্টি বলে, কি কি কারণে রাফিকে তার পছন্দ না। মাঝে মাঝে বলে, তুমি আর একটু লম্বা হলে ভাল হত। আমার পাশে তুমি দাঁড়ালে, তোমাকে আমার চেয়ে খাটো লাগে। আমি হিল পরে কখনও তোমার সাথে বের হতে পারব না।

কখনও বলে, তুমি এতো শুকনা কেন? তুমি আমি হাঁটলে লোকে বলবে, তুমি আমার ছোট ভাই। আমার তো লজ্জাই করে।

কখনও বলে, একটু স্মার্ট ভাবে চলতে পারো না? সেদিন দেখলাম তুমি পাঞ্জবির সাথে একটা কেডস পরে ঘুরছ। তুমি জানো যে পাঞ্জাবির সাথে কেডস মানায় না। তবুও তুমি তাই পরেছ। তুমি কেডস পরবে ভাল। তাহলে তোমার পাঞ্জাবি কেন পরতে হবে? একটা টি শার্ট পরলেই পারতে।

বৃষ্টি মিষ্টি মাঝে মাঝেই বলে, ছেলে মেয়ের বয়সে পার্থক্য থাকতে হয়। তুমি আমার সেম এজ। তুমি কবে পাস করবে? কবে তোমার চাকরি হবে? কবে আমাদের বিয়ে হবে? দেখা যাবে আমার বাবা মা ততদিনে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিছেন। তুমি বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে, তখন আমি দুই বাচ্চার মা। বড় ছেলে ক্লাস টু, আর ছোট মেয়ের স্কুলে ভর্তির সময় হয়েছে।

কথা সবগুলোই সত্যি। বৃষ্টি মিষ্টি যে কথা গুলো বলল, অভিযোগ করল, সবই সত্যি। তবুও ভালবাসে রাফি। ভালবাসা হয়ত এতো হিসেব করে হয় না। রাফি তবুও অপেক্ষায় আছে, বৃষ্টি মিষ্টি ভালবাসি বলবে একদিন।



দূর থেকে একটা মেয়েকে আসতে দেখা যাচ্ছে। হালকা হালকা বৃষ্টির মধ্য দিয়ে। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। তবুও রাফি জানে, এই মেয়েকে রাফি চিনে। বৃষ্টি মিষ্টি না তো?

বৃষ্টি মিষ্টি না। তনু এসেছে। এসে রাফির সামনে দাঁড়াল।

- তোমার বৃষ্টি মিষ্টি কোথায়?

- আসে নি এখনও। বলল তো ৫ মিনিট। চলে আসবে এখনি।

- আচ্ছা, না এসে ভালই করেছে। তোমার সাথে আমার অল্প কিছু কথা আছে। বলে চলে যাব।

- আচ্ছা বল।

- আমি যা বলব, মন দিয়ে শুনবে। আর কিছু জিজ্ঞেস করলে সোজা সাপ্টা উত্তর দিবে।

- আচ্ছা।

- আমি সত্যি তোমাকে ভালবাসি রাফি। মেয়েরা এভাবে কখনও ভালবাসার কথা এতোবার বলে না। আমি অনেক বেহায়া একটা মেয়ে, তাই এতোবার বলছি। আমি তোমাকে অনেক মিস করি, সত্যি মিস করি অনেক। আমার কাছে তুমি বার বার জিজ্ঞেস করেছ, কেন ভালবাসি? ভালবাসায় এই প্রশ্নটা আসে না। এই প্রশ্ন করতে হয় না। ভালবাসার কারণ থাকে না। আমি তোমাকে ভালবাসি তাই ভালবাসি। তুমি আমাকে বাস না সেটাও জানি। তুমি বৃষ্টি মিষ্টিকে নিয়ে ব্যস্ত। তবুও শেষ বারের মত বলছি, রাফি তুমি আমার হবে?



রাফি নির্বিকার ভাবে তাকিয়ে আছে তনুর দিকে। তনুর গাল বেয়ে পানি পড়ছে। এই পানি চোখের জল না ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি বুঝতে পারছে না রাফি। রাফি অনেক কিছুই বুঝে না। কিংবা বুঝেও কখনও না বোঝার ভান করে। রাফি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, তনু তোমাকে জারিফ অনেক পছন্দ করে। জারিফ ভাল ছেলে। দেখতে শুনতেও ভাল। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা, তোমাকে ভালবাসে।

- আমি জারিফের কথা এখানে শুনতে চাচ্ছি না। আমি জারিফকে ভালবাসি না। আমি তোমাকে বাসি। আর আমি একটা প্রশ্ন করেছি , উত্তর দাও চলে যাই।

- তনু, পৃথিবীর মানুষগুলোর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য কি জানো? তাকে যে কষ্ট দিবে, অবহেলা করবে, তার জন্যই তার মন কাঁদবে। তাকেই কাছে পেতে চাইবে। আর যে তাকে দাম দিবে মূল্য দিবে, তার সাথেই সে ভাব নিবে। এই যে তোমাকে আমি তাড়িয়ে দিচ্ছি, তুমি আমাকেই তবুও ভালবাসছ। আবার জারিফ তোমার জন্য পাগল, ওকে তুমি ফিরিয়ে দিচ্ছ। আবার দেখো, আমি বৃষ্টি মিষ্টিকে কত ভালবাসি, ও আমাকে বাসেই না। মানুষ কখনও অবহেলা সহ্য করতে পারে না। কথাটা একদম ভুল। অবহেলা পেলে কারও কাছ থেকে, মানুষ ঘুরে ফিরে আরও তার কাছেই যায়। সহ্য করে, যে অবহেলা করে তাকেই বদলাতে চায়।

- রাফি, আমাকে এসব বলে লাভ নেই। আমি এসব শুনতে চাচ্ছি না। তুমি আমাকে অবহেলা করার আগেও ভালবাসতাম, এখনও বাসি। আমি উত্তর চাচ্ছি।

- আমি উত্তর দিয়েছি।

- তার মানে উত্তর হল, না?

- হুম, আমি বৃষ্টি মিষ্টিকে ভালবাসি। জারিফ ভাল ছেলে, সেদিনও এসে আমার কাছে তোমার কথা বলছিল। তুমি রাজি হয়ে যাও।

- আমার কথা তোমার ভাবতে হবে না। থাকো, সুখে থাক। তোমার বৃষ্টি মিষ্টিকে নিয়ে। দোয়া করি রান্নার বই পেয়ে তোমার বৃষ্টি মিষ্টি রাজি হয়ে যাক। শেষ বারের মত বলছি, আর কখনও আসব না তোমার কাছে রাফি। ভালবাসি।



তনু মাথা নিচু করে হাঁটতে শুরু করল। হাঁটতে হাঁটতে চলে যাচ্ছে দূরে। অনেক দূরে। রাফি ১০১ বাহারি রান্না বইটা খুলে মাঝখান দিয়ে একটা পৃষ্ঠা পড়তে শুরু করল, খাবারের নাম একটু অদ্ভুত। এই নামে খাবার কোনদিন খায় নি রাফি। তবে পুরোটা পড়ে বিষয়টা পরিষ্কার। বইয়ে লেখাঃ

" ডাক-বান

উপকরণ: ক. বনরুটি মাঝখানে কেটে নেওয়া, হাঁসের মাংস ১ কাপ (ছোট টুকরা), আলু সেদ্ধ আধা কাপ (চৌক করে কাটা), গাজর সেদ্ধ আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা আধা কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, পনির কুচি ২ টেবিল-চামচ, টমেটো সস ২ টেবিল-চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল বা মাখন প্রয়োজনমতো।

খ. সাদা সস তৈরি করতে দরকার: মাখন ১ টেবিল-চামচ, ময়দা ২ টেবিল-চামচ, দুধ আধা কাপ, কাঁচা মরিচ কুচি ১ চা-চামচ, ধনেপাতা কুচি ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, ফ্রেশ ক্রিম ৪ টেবিল-চামচ। সব উপকরণ জ্বাল দিয়ে একটি সস তৈরি করতে হবে। ক-এ উল্লিখিত উপকরণ দিয়ে রান্না করা হাঁসের মাংসের সঙ্গে সাদা সস মিশিয়ে দিয়ে বনরুটির মধ্যে পরিবেশন করা যায় মজাদার ডাক-বান। "



হঠাৎ ঝিরিঝিরি , টুপটাপ বৃষ্টি ঝুম বৃষ্টি হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি ডাক-বান রান্না করার পদ্ধতি পড়া বাদ দিয়ে, বই বন্ধ করে ফেলল রাফি। বৃষ্টি মিষ্টি এখনও আসে নি। রাফি দাড়িয়েই আছে। বৃষ্টির মধ্যে।



তনু বৃষ্টির মধ্যেই হাঁটছে। ঝুম বৃষ্টির মধ্যে। এখন পুরো শরীর ভিজে গেছে। কিন্তু এতো বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় কেউ নেই। তনুর দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য। যে যার মত দৌড়ে বৃষ্টি থেকে শরীর বাঁচাবার চেষ্টা করছে। রাস্তার পাশের কাঠ গোলাপ গাছের সাদা ফুল গুলো থেকে, বৃষ্টির মধ্যেও মিষ্টি একটা সুবাস আসছে। দেখতেও অনেক স্নিগ্ধ লাগছে। এই স্নিগ্ধতা তনুকে ছুঁয়ে যাচ্ছে না। তনু অঝোরে কাঁদছে, বৃষ্টির মত। বৃষ্টির মধ্যে। কিছু হারিয়ে কাঁদছে। চিরতরে হারিয়ে।



হঠাৎ পিছন থেকে কারও ডাক শুনল। রিকশা হুড তোলা। তার ভিতর থেকে বলল, বৃষ্টিতে ভিজছ কেন? উঠে আসো রিকশায়।

তনু ভেজা শরীর নিয়ে উঠে বসল রিকশায়। কিছুই বলল না। বসাটা ঠিক হয় নি। অন্তত এই ছেলের পাশে না। তনু কেঁদে কেঁদে সর্দি লাগিয়ে ফেলেছে। নাক টানতেই পাশ থেকে বলল, তোমার ঠাণ্ডা লেগেছে তনু? বৃষ্টিতে ভেজার কি দরকার ছিল?

তনুর চোখ লাল হয়ে আছে। বৃষ্টিতে ভেজা আর, কান্নার কারণে। সেই লাল চোখ নিয়েই রাগী রাগী চোখে তাকাল।

- তনু তুমি ডাক বান রান্না করতে পারো?

- ডাক বান কি?

- এই নাও, বইয়ে লেখা আছে। এখান থেকে শিখে আমাকে রান্না করে খাওয়াবে আচ্ছা?



রিকশায় পাশে বসা রাফি তনুর হাতে, ১০১ বাহারি রান্না বইটা ধরিয়ে দিল।

তনু বই না ধরেই বলল, কেন? তোমার বৃষ্টি মিষ্টি বই নেয় নি? আর তুমি আমার সাথে রিকশায় বসেছ কেন? তোমার বৃষ্টি মিষ্টির কাছে যাও।

রাফি একটু হেসে বলল, বৃষ্টি মিষ্টিকেই দিচ্ছি। নাও।

- আমি তনু। বৃষ্টি মিষ্টি না।

- আসলে ভেবে দেখলাম, শুধু শুধু একটা মানুষকে কষ্ট দেবার কি দরকার? এতে আমিও কষ্ট পাব। এর চেয়ে তুমিই আমার বৃষ্টি মিষ্টি হও। সেই বেশ।

- মানে কি? সোজা করে বল।

- মানে, বৃষ্টি মিষ্টি বলতে কেউ নেই। বৃষ্টি মিষ্টি আমার কল্পনার একটা মানুষ। যার সাথে নিয়মিত কথা বলি, কল্পনায়। যাকে আমি ভালবাসি, কিন্তু সে আমার অনেক গুলো খুঁত বের করে আমাকে ফিরিয়ে দেয় বার বার। আমি বৃষ্টি মিষ্টির জায়গায় মাঝে মাঝেই একটা মানুষকে বসাই। সেই মানুষটা তুমি। কিন্তু বার বারই তুমি সেই বৃষ্টি মিষ্টির জায়গায় বসে, আমার খুঁত গুলো বের কর। তখন নিজেকে খুব ছোট লাগে। মনে হয় আমি তোমার ভালবাসা পাবার যোগ্য না। এ জন্য তোমাকে বার বার ফিরিয়ে দেই তনু।



তনু নিশ্চুপ হয়ে, স্থির চোখে তাকিয়ে আছে রাফির দিকে।

- সত্যি বৃষ্টি মিষ্টি বলতে কেউ নেই?

- আছে। তুমি।

- আমি বৃষ্টি মিষ্টি না। আমি তনু। বৃষ্টি মিষ্টি তোমাকে ভালবাসে না। আমি বাসি।

- বৃষ্টি মিষ্টি কি বলে জানো? আমি বৃষ্টি মিষ্টির পাশে হাঁটলে, ও যদি হিল পরে আমি ওর চেয়ে খাটো হয়ে যাব। আরও বলে......

- চুপ, আমি কিছু শুনতে চাই না। আমি বৃষ্টি মিষ্টি না। আমার কোন অভিযোগ নেই। আমি ভালবাসি। ভালবাসায় অভিযোগ থাকে না। হুডটা নামিয়ে দাও তো।

- বৃষ্টি যে খুব।

- থাকুক। ভিজব।



রাফি হুড নামিয়ে দিল। বৃষ্টি হচ্ছে, প্রচণ্ড বৃষ্টি। রাফি ভিজছে, পাশে বসে তনু ভিজছে। ঠোঁট কামড়ে বসে আছে, রাফি। রাফির দিকে তাকিয়ে দেখছে তনু। ভেজা শরীর দুটোর, ছোঁয়া লাগছে পাশাপাশি বসে। তনু আস্তে করে হাত বাড়িয়ে দিল রাফির দিকে। বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আমার হবে?

রাফি কিছু না বলে, আলতো করে ধরল হাতটা। হয়ত এই ধরে নেয়াই অনেক কথার প্রকাশ। মুখে বলে যা বুঝাতে হয় না। রাফির অনেক জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে তনুকে। কেমন যেন ভালবাসতে ইচ্ছা করছে। কল্পনার বৃষ্টি মিষ্টিকে যেমন বাসে। রাফি হাত ধরে বলল, ডাক বান খাওয়াবে তো?



তনু ঠোঁটের কোণায় মিষ্টি একটু হাসি এনে বলল, হ্যাঁ খাওয়াব। কিন্তু তোমার বই আমাদের সাথে বৃষ্টি ভিজে শেষ।

রাফির এখন তনুর হাতটা ছেড়ে বইটা বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাতে ইচ্ছ করছে না। এখন শুধুই ভালবাসতে ইচ্ছা করছে। তনুরও করছে। কাঠ গোলাপের মিষ্টি সুবাসটা এখন তনু পাচ্ছে। যদিও আশেপাশে কোন কাঠ গোলাপ নেই। রাফির হাতটা আরও একটু শক্ত করে ধরল তনু। রাফির বুকের ভিতর কেমন যেন করছে। তনু ভালবাসে, কিছু না বুঝেই ভালবাসে। ভালবাসা হয়ত না বুঝেই হয়। অকারণেই হয়। বৃষ্টি মিষ্টির মত এতো কিছু দেখে হয় না। তবুও তনুর কিছু অভিযোগ আছে, সেসব মানা যায়। বদলে নেয়া যায়।

তনু বলে, নখ এতো বড় কেন?

- কেউ তো কাটতে বলে নি তাই।

- আজ গিয়েই কাটবে, আচ্ছা?

- ঠিক আছে।

- জামার উপরের বুতাম কই?

- ছিঁড়ে গেছে।

- লাগাও কি কেন?

- কেউ তো বলে নি তাই?

- আজ গিয়েই লাগাবে, আচ্ছা?

- ঠিক আছে।



এই অভিযোগ অনুযোগে ভালবাসা আছে। মেঘলা আকাশ অকারণেই বৃষ্টি ঝরায়, অকারণেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঝুম বৃষ্টি হয়। অকারণেই মেঘ সরিয়ে রোদ উঠে। অকারণেই সন্ধ্যা নামে। অকারণেই চাঁদের জ্যোৎস্না ভাল লাগে। অকারণেই মন খারাপ। তেমনি অকারণেই কেউ ভালবাসে। কিন্তু অকারণ ভালবাসাগুলো এতো সহজে , অকারণে হারিয়ে যায় না। বরং কারণ খোঁজা ভালবাসাগুলো ফোঁটা ফোঁটা শিশিরের মত, একসময় রোদের ছোঁয়ায় হারিয়ে যায়। অনেক চেষ্টায়ও তা ধরে রাখা যায় না। সবাই কারণ খুঁজে ভালবাসে। কিন্তু ভালবাসা হয়ে যায়, অকারণেই হয়। হুট করে মন থেকেই বলে, ভালবাসি তোমাকে। অকারণে ভালবাসি।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:১২

মামুন রশিদ বলেছেন: বৃষ্টি মিষ্টি প্রেমের গল্প ।

০৫ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৩১

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: :) ধন্যবাদ ভাইয়া।

২| ০৫ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০০

এম হাবিব আহসান বলেছেন: এক টুকরো মিষ্টি অনুভুতি। ++++++

০৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:২৩

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ, :)

৩| ০৫ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০০

এম হাবিব আহসান বলেছেন: এক টুকরো মিষ্টি অনুভুতি। ++++++

৪| ০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:৪৮

শুঁটকি মাছ বলেছেন: এই অভিযোগ অনুযোগে ভালবাসা আছে। মেঘলা আকাশ অকারণেই বৃষ্টি ঝরায়, অকারণেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঝুম বৃষ্টি হয়। অকারণেই মেঘ সরিয়ে রোদ উঠে। অকারণেই সন্ধ্যা নামে। অকারণেই চাঁদের জ্যোৎস্না ভাল লাগে। অকারণেই মন খারাপ। তেমনি অকারণেই কেউ ভালবাসে।
দারুন। ক্যারি অন ম্যান।

০৭ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৯

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: :) ধন্যবাদ। :)

৫| ১৮ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:১৮

নিঃসঙ্গ গাংচিল বলেছেন: এমন একটা সময়ের জন্য অপেক্ষায়____

সুন্দর, খুবই ভাল লাগলো।

১৮ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: অপেক্ষা মধুর হোক।

ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.