নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: কথা দেয়া ব্যথারা

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

আমার নাম মামুন। গত চার দিন ধরে আমি মাথা ব্যথায় ভুগছি। প্রচন্ড মাথা ব্যথা। আমার এমন আজ নতুন হচ্ছে, তা না। কয়েকদিন পরই ব্যথা হয়, তা ঠিক করার জন্য আমার নিত্য নতুন কাজ করতে হয়। আমি আজ যে সুন্দরী ডাক্তারের কাছে এসেছি, তার কাছে মাথা ব্যথার ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা দিতে হবে। ডাক্তারের কাছে কোন কিছু লুকাতে নেই। কিন্তু এর কাছে আমি সবটা বলতেও পারব না। আমি মনে মনে ঠিক করে নিচ্ছি, কী কী বলব ধাপে ধাপে। প্রথমত আমার মাথা ব্যথার একখানা নাম দিতে হবে। যেমন মাইগ্রেন। পৃথিবীতে বহুবিধ মাথা ব্যথা আছে, তবে বেশিরভাগ মানুষ তার মাথা ব্যথাকে মাইগ্রেন বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আমিও আমার কমফোর্ট জোন থেকে বলব, আমার মাইগ্রেনের সমস্যা।

আমার এর আগে যে চারটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল। চার জনেরই ঘুরে ফিরে মাথা ব্যথা ছিল এবং চারজনই তাদের মাথা ব্যথাকে মাইগ্রেন বলে ডাকত।

আমার এক বান্ধবীর বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল ছেলেবেলায়। তখন আমি কোন ক্লাসে পড়ি, সিক্স কী সেভেনে। মিরা নামের সে বান্ধবীর বছরের মধ্যে দশমাস মাথা ব্যথার সমস্যা থাকত। মাথা চেপে ধরে হাউমাউ করে কাঁদত। দেয়ালে মাথা ঢুকত। মাথা ব্যথা কোনভাবেই যেত না। মিরার মা মাঝে মাঝে এসে বিরক্ত হয়ে বলে দিতেন, "মাথা কেটে ফেলে দে। মাথা না থাকলে, মাথা ব্যথাও থাকবে না।"
আমার সে কথায় প্রচন্ড মন খারাপ হত, মিরার মনে কী চলত আমি জানি না। কারও মনের খবর নেবার বয়স তখন ছিল না। একদিন মাথা ব্যথায় ছটফট করতে করতে মিরা এসে আমার হাতে একটা মাংস কাটার চাপাতি দিয়ে বলেছিল, "মামুন এক কোপ দিয়ে মাথাটা আলাদা করে দে তো। আর ভাল লাগে না।"
আমি কাঁপা কাঁপা হাতে চাপাতি নিয়ে মিরার অসহায় চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। মিরার জন্য আমার বড় মায়া লাগত। মিরা মেয়েটা বাঁচেনি, টুপ করে মাথা ব্যথা নিয়েই মরে গেল।
আমার খারাপ লাগত খুব, মন বিষণ্ণ হত, মিরা তা বুঝতে পারত না। মৃত মানুষ কি আর কারও মন বুঝতে পারে? খারাপ লাগা খুঁজতে পারে?

মিরা মারা যাবার পর থেকে আমার ভিতর অদ্ভুত এক সমস্যা দেখা গেল। আমি প্রায় রাতেই মিরাকে স্বপ্নে দেখি, একটা চাপাতি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে বলছে, কোপ দিয়ে ওর মাথাটা আলাদা করে দিতে।
ঘুম ভেঙেই আমি খেয়াল করি, আমার মাথা ভার, প্রচন্ড ব্যথা। সে মাথা ব্যথা কোনভাবেই যায় না। যতক্ষণ মাথা ব্যথা থাকে, মনে হয় আমার আশেপাশে মিরা আছে। হাতে চাপাতি নিয়ে ঘুর ঘুর করছে। আমাকে কিছু করতে বলছে, আমাকে তা করতে বাধ্য করছে। আমি তা করছিও। আমার মাথা ব্যথাটা সারাবার জন্য হলেও তা করছি অনায়াসে। মিরা আমাকে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করছে, ওর ইচ্ছা মত।

আমার ডাক্তার এসে আমার সামনে বসল। মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল, "বেশী দেরী করে ফেললাম কি?"
"না, না। ঠিক আছে।"
ডাক্তার মেয়েটা রুমের চারপাশে তাকিয়ে, আমার দিকে দৃষ্টি স্থির করল।
শান্ত স্বরে বলল, "এসি ছেড়ে দিব?"
"না না, আমি একদম ঠিক আছি। অত গরম লাগছে না।"
আমার ডাক্তার আমার কথার তোয়াক্কা না করেই এসি ছেড়ে দিল। বাটন চেপে ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেন্ড তাপমাত্রায় দিয়ে দিল। আবার আমার দিকে মনযোগ নিয়ে তাকাল। আমার সাথে ডাক্তার মেয়েটার আলাপ হয়েছে আগে কয়েকবার। মেয়েটার নাম দীপা। আমার নামও সে জানে।
"মামুন সাহেব, আপনার সমস্যা গুলো আমাকে ধাপে ধাপে বলুন।"
"ম্যাডাম, আমার মাইগ্রেনের সমস্যা আছে।"
"আচ্ছা।"
ডাক্তার 'আচ্ছা' বলার পর, আমি আর কিছুই খুঁজে পেলাম না বলার মত। আমার এমন নতুন হচ্ছে না। আমি মানুষের সাথে কথা জমাতে পারি না এতো সহজে। সময় লাগে। সময় গুলো গড়ালে, সম্পর্ক গুলো সরল হলে,আমি কথার যে তুবড়ি ছুটাই, যা প্রথম আলাপে কেউ আন্দাজও করতে পারে না।

দীপা আমার দিকে একটু ঝুঁকে বলল, "মাইগ্রেনের ব্যথা হলে, আপনার মাঝে কি কোন অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়?"
"হ্যাঁ, যায় তো।"
"কী রকম?"
"খুব মাথা ব্যথা করে, মাথা ছিঁড়ে যায় ব্যথায়।"
"আর কিছু?"
"না, আর কিছুই না।"
দীপা একটা নিঃশ্বাস গোপন করল। মেয়েটা হয়ত ভেবেছিল, ওর কাছে আমি খুব জটিল কোন সমস্যা নিয়ে এসে হাজির হব। অনেক কিছু বলব। আমি তেমন কিছু বলছি না, এতে মেয়েটাকে খুব বিষণ্ণ হয়েছে বলে মনে হল। দীপা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।
"ডাক্তারের কাছে কিছু লুকাবার ইচ্ছা থাকলে, না আসাই ভালো।"
দীপার কথায় আমার মাঝে কোন ভাবান্তর হলো না। দীপা বলে যায়, "আপনি খোলাখুলি সব বললে বলেন, নয়ত চলে যান।"

ডাক্তাররা এতো সহজে, চট করে রেগে যায় না তাদের রুগীর উপর। দীপা রেগে যাচ্ছে, ধৈর্য হারা হচ্ছে। আমি খেয়াল করলাম, এসির মাঝেও দীপার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। আমি বেশ স্বাভাবিকভাবে বললাম, "ম্যাডাম, বসেন। মাথা ঠান্ডা করেন।"
দীপা বসে পড়ল। আমাকে উদ্দেশ্য করে বেশ কড়া ভাষায় বলল, "চিকিৎসা নিতে আসছেন, সব ঠিকঠাক উত্তর দিবেন। এতো কাহিনী করবেন না।"
"আচ্ছা।"
"গুড, ভেরি গুড। এবার বলেন, আপনার মাথা ব্যথা কবে থেকে?"
"অনেক বছর ধরেই। ঠিক কবে থেকে বলতে পারব না। তবে অনেক পুরাতন।"
দীপা একটু শান্ত হল, চোখে মুখে কিছুটা তৃপ্তির ছাপ দেখা গেল।
"এবার বলুন, মাথা ব্যথা হলে আপনার কী কী সমস্যা দেখা দেয়?"

আমি কিছু সময় চুপ করে থাকলাম। আমিও একটা নিঃশ্বাস ফেললাম। মিরার কথা দীপাকে বলা যাবে না। বাকি ঘটনা বললেও সমস্যা। সে সমস্যা আমি পরবর্তীতে কীভাবে সামাল দিব জানি না। হয়ত মিরা কোন পথ বাতলে দিবে। আমি বলা শুরু করি। ধাপে ধাপে সব। আমার মাথা ব্যথার ব্যাপারটা যখন প্রকট আকার ধারণ করল, তখন আমার সুমার সাথে প্রথম আলাপ হয়। সুমা আমার এলাকাতেই থাকত। আমার থেকে চার পাঁচ বাড়ি পরেই ওর বাসা। আমি মেয়েটাকে নিয়মিত দেখি। বিকাল করে বাসা থেকে বের হয়, রাত করে ফিরে আসে। আমি পিছু পিছু ঘুরে বেরাচ্ছি ব্যাপারটা ওর নজর এড়ায় না। সুমার বাসার গলির সামনে গিয়ে সুমা একদিন হুট করেই দাঁড়িয়ে যায়। আমার দিকে মুখ ঘুরিয়ে চলে আসে। সামনে এসে বলে, "কী সমস্যা আপনার?"
আমি আমতা আমতা করে বলি, "জ্বি, মাথা ব্যথা।"
সুমা চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বলে, "মাথা ব্যথা তো আমি কী করব? আমার পিছন পিছন ঘুরছেন কেন? আমি কি ডাক্তার?"
"না, ঠিক আছে। কিন্তু আপনাকে দেখলে আমার মাথা ব্যথা চলে যায়।"
সুমা চোখে মুখে রাগী ভাব ফুটাতে গিয়েও হেসে ফেলে। আবার একটু স্বাভাবিক হয়ে বলে, "এসব ভণ্ডামি বাদ দেন।"
আমি ভণ্ডামি বাদ দেই না। সুমার পিছন পিছন ঘুরে বেরাই। এক কথা দুই কথায় আমাদের বন্ধুত্ব হয়, বন্ধুত্ব ভালোবাসায় গড়ায়। আমার মাথা ব্যথা হাওয়া হয়ে যায়। সে মাথা ব্যথা গিয়ে ভর করে সুমার উপর। সুমা মাথা ব্যথায় চিৎকার করে, আমাকে বলে, "কিছু একটা করো। আমি কিছুই করতে পারি না। একটা সময় পর সুমা হারিয়ে যায়।"

আমার মাথা ব্যথা আবার যখন প্রকট হয়, তখন সম্পর্ক গড়ে উঠে রিনির সাথে। রিনি মেয়েটা বেশ শান্ত। মাত্র কলেজ পার হওয়া মেয়ের মধ্যে যে চঞ্চলতা থাকার কথা, রিনির মাঝে তা ছিল না। আমরা বিকাল করে রোদ বৃষ্টি ছাড়া দিনে, রিকশার হুড তুলে ঘুরে বেড়াতাম। হাতে হাত লুকিয়ে প্রেম করতাম। রিনিকে মাঝে মাঝেই আমার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করত। রিনি সায় দিত না। ওর সাফ কথা, বিয়ের আগে এসব কিছু চলবে না।
আমার সে কথায় অভিমান হত। আমি তা প্রকাশ করতাম না। কোনভাবেই না। রিনিও আমার জীবন থেকে নাই হয়ে গেল, কয়েক মাসের ব্যবধানে। রিনিও খুব করে বলত, ওর মাইগ্রেনের সমস্যা হচ্ছে, হারিয়ে যাবার আগে।

এরপরের সময়টায় আমি ছিলাম বিপদে। অরিন আর তাসমিয়া দুজনের সাথে একসাথে আমার সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়াটা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়াল। আমি একটা ঘোরের মধ্যে থাকতাম সবসময়। আমি অরিনকে মাঝে মধ্যে তাসমিয়া কিংবা তাসমিয়াকে অরিন বলে গুলিয়ে ফেলতাম। অরিন রাগ করত, তাসমিয়া অভিমান জমাতো। সে রাগ, সে অভিমান ভাঙানো আমার জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়ত। সবচেয়ে বড় বিপদে পড়লাম, যেদিনটাতে অরিন আমাকে ওর বাসায় ডাকল। বলল, একা আছে। আমার সাথে একান্ত কিছু সময় কাটাতে চায়। আমি ধুরুধুরু বুকে অরিনের বাসায় যাই, অরিনের সাথে সময় কাটাই। একদমই একান্ত সময়। অরিনের পিঠে আমি যখন ঠোঁট ছুঁইয়ে বলি, "ভালবাসি অরিন।"
অরিন হুট করেই শক্ত হয়ে যায়। আমার দিকে মুখ ঘুরিয়ে ছিটকে দূরে সরিয়ে দেয়। কাপড় ছাড়া শরীরে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলে, "তোকে কতবার বলছি ঐ খা**টার নাম আমার কাছে বলবি না।"
আমি বুঝতে পারি, আমি গুলিয়ে ফেলছি। আমি তাসমিয়াকে অরিন বলে ডাকছি। তাসমিয়ার মুখ দিয়ে অনবরত বাজে কথার তুবড়ি ছুটতে থাকে। মাথা চেপে বসে পড়ে ফ্লোরে। মাইগ্রেনের সমস্যা। আমি ছুটে যাই তাসমিয়ার কাছে। তাসমিয়ার আমাকে দরকার নেই। আমাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় বাসা থেকে। ঠিক সে রাতেই তাসমিয়াও হারিয়ে যায়।

তখন আমার জীবনে শুধুই অরিন আছে। অরিনের সাথে আমার সময় গুলো দুরন্ত কাটে। আমি আর তাসমিয়াকে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না দেখে, অরিনও বেশ স্বস্তি বোধ করে। কিন্তু ঝামেলা ঘটে গেল অন্য কোথাও, আমার সমস্যা ভরা মাথায় সব ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারি না। অরিন একদিন আমার হাতের মোবাইলে কন্টাক্ট লিস্টে আবিষ্কার করে আমি অরিনের নাম্বার, রিনি নামে সেভ করে রেখেছি। অরিনের মাথা গরম হয়ে যায় তা দেখে, আমার কাছে বারবার জানতে চায়, "রিনি কে?"

আমি যত বুঝাই, অরিনের নাম ভালবেসে রিনি নামে সেভ করেছি। অরিন তা বিশ্বাস করে না। মাথা ব্যথায় ছটফট করে বলে, আমাকে খুন করে ফেলবে ও।

আমাকে অরিনের খুন করা হয় না। অরিন নিজেই হারিয়ে যায়।

আমার মাথা ব্যথা আবার বাড়ে, কোনভাবে সারে না। তাই আমি ডাক্তারের কাছে এসেছি। ডাক্তারের নাম দীপা।
দীপাকে আমি সবটাই বলি। শুধু এড়িয়ে যাই এর মাঝে মিরার উপস্থিতিটা। দীপা কিছুটা অবাক হওয়া দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। খানিক পর প্রশ্ন করে, "আচ্ছা আপনি যে বললেন, সুমা, রিনি, তাসমিয়া, অরিন এরা হারিয়ে গেল। এরা কোথায় হারিয়ে গেল?"
আমি ঠোঁটের কোণায় একটা রহস্যের একটা হাসি হেসে বলি, "যেখানে আপনি হারিয়ে যাবেন।"
আমার সামনে আমি মিরাকে দেখতে পাচ্ছি, চাপাতি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। মাথা নেড়ে সায় দিচ্ছে, আমি ঠিক আছি। ঠিক কাজটাই করছি। আমাকে আমার কাজ চালিয়ে যেতে বলছে।
দীপা চমকে যায় আমার কথা শুনে। আমাকে জিজ্ঞেস করে, "মানে? কী বলছেন আপনি?"

আমি উঠে দাঁড়াই। প্যান্টের পকেট থেকে চারটা খাম বের করি। খামের মাঝে কিছু ছবি আছে। চারটা খামের উপর চারজনের নাম লেখা, সুমা, রিনি, তাসমিয়া, অরিন। দীপার হাতে খাম চারটা দিয়ে বলি, খুলে দেখেন, উত্তর পেয়ে যাবেন।

দীপা কাঁপা কাঁপা হাতে খাম গুলো নেয়। খাম খুলে হয়ত চমকে উঠবে। ভীষণ চমকে যাবে। দীপা কি বুঝতে পারবে, ঠিক কীভাবে অন্য সবার মত দীপাও হারিয়ে যাবে?

দীপা খাম গুলো খুলে চোখ বড় বড় করে তাকাল আমার দিকে। আমি তাকালাম চাপাতি হাতে দাঁড়ানো, মিরার দিকে। দীপা সব গুলো খামে, আমার সাথে নিজের ছবি দেখবে। ভেবে পাবে না, দীপার সাথে আমার ছবি আসল কোথা থেকে!

আমি বের হয়ে চলে আসি দীপার ওখান থেকে। দীপা আমার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর চমকে যাওয়ার রেষ কাটছে না। হয়ত একটু পরেই ওর মাথা ব্যথা শুরু হবে, মাইগ্রেনের ব্যথা। দীপা কি বুঝতে পারবে, সুমা, রিনি, তাসমিয়া, অরিন, দীপা সবাই একই মানুষ? দীপা একেকবার নিজেকে একেকজন ভাবছে? মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে ভুগে নানা চরিত্রে রূপান্তর ঘটছে? আগের চরিত্র হারিয়ে গিয়ে, নতুন কোন চরিত্রে ফিরে আসছে?

আমার মাথা ব্যথা কমছে না। আমার পাশে মিরা হাঁটছে চাপাতি হাতে। আমাকে বলছে, দীপার পাশে থাকতে। দীপা মেয়েটার আমাকে দরকার। আমি জানি দীপার মস্তিষ্কের কোথাও না কোথাও, আমি আছি। তাই বারবার আমার সাথে সম্পর্কে জড়াচ্ছে। খুব অসহায় সময়টায় ঠিক আমাকে খুঁজে বেরাচ্ছে। আর মিরা বারবার আমাকে সে সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করছে। মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে মুক্তি দিচ্ছে।

১৮-০৩-২০১৯

রিয়াদুল রিয়াদ

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:৪৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


ডাক্তারের নাম কী?

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:৪৮

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ডাক্তারের নাম দীপা।

২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:৫০

বিজন রয় বলেছেন: এটা কি সত্যি ঘটনা?

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:৫৪

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: না গল্প এটা।

৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:৫৫

নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: গল্পের একটা নাম দিতেন...
ভালো লাগলো পড়ে গল্পটা...

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:০০

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: যখন লিখেছিলাম কোনো নাম দেই নি গল্পের। ব্লগে পোস্ট দেয়ার আগে "কথা দেয়া ব্যথারা" নামটা জুড়ে দিয়েছি।

৪| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:৫৮

বিজন রয় বলেছেন: আপনার গল্প লেখার হাত আছে।
লিখতে থাকুন।

তবে আরো গভীর বোধের ভিতরে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

শুভকামনা।

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:০১

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ।

সে তো অবশ্যই, মোটামুটি সব ধরণের লেখাই লেখার চেষ্টা করি। আমার পাতা ঘুরে আসবেন সময় হলে।

৫| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: মীরার মৃত্যুটা আসলেই দুঃখজনক।
মাথা ব্যথা কমাতে হলে সমাজ বা দেশের জন্য ভালো ভালো কাজ করতে হবে।

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:২৪

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ। সময় সুযোগ হলে মামুনকে বিষয়টা জানিয়ে দিব। অন্ততপক্ষে মাথা ব্যথার একটা সমাধান তো তবে হবে।

৬| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৬

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: গল্প প্যারা-নরমাল বা অসাধারন হয়েছে এবং সময়ের সাথে সাথে গল্পের মোচড় বা বাঁকও এগিয়ে গিয়েছে সাবলীলভাবে।

চাপাতি হাতে আমার পাশে মিরাকে দেখবার :P মুনচায় ভাইজান-------------

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:২৫

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ।

চাপাতি হাতে মিরা কিন্তু খুব একটা ভালো অভিজ্ঞতা হবার কথা না, সাথে তো মাথা ব্যথা ফ্রি আবার।

৭| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৮

আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: খুব সুন্দর একটা গল্প পড়লাম। ২০২৪ মনে হচ্ছে ভালো যাবে সামুতে।
আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর লেখনী উপহার দেবার জন্যে।

নতুন বছরের শুভেচ্ছা নেবেন।

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:২৭

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: আপনাকেও নতুন বছরের শুভেচ্ছা। নতুন বছরে ঠিক করেছি নিয়মিত লিখব, প্রচুর লিখব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.