somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি নারী, আমাকে বলতে দিন!!!

০৭ ই জুন, ২০০৬ রাত ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নারী কাজ করবে কি করবে না, খাবে কি খাবে না, পাবে কি পাবে না এগুলো নিয়ে পুরুষদের বাকবিতান্ড যে হাস্যকর, এটা কি কেউ বুঝতে পারেন? নারীকে একবার জিজ্ঞাসা করে দেখুন না নারী কি চায়, নারী তো শিশু না। নিজের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আর 'ক্ষমতা' তার আছে! এই যে ভাইসাহেব আর আঙ্কেলগণ, আপনারা একটু সরেন, 'আমাকে' বলতে দিন।

ত্রিভুজের যেই পোস্ট নিয়ে এত কান্ড, সেখানে একটা মন্তব্য আমি করেছিলাম, সেটারই এক রকম সমপ্রসারণ করছি এখানে। কালপুরুষের পোস্টটা ভাল লেগেছে।

নিজেস্ব পরিমন্ডলে নারী পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্ক আর ব্যবহার দেখে বড় হয় মানুষ, পরবতর্ী জীবনে এই নিজেস্ব পরিমন্ডল থেকে হাতে কলমে শিখা জিনিসগুলোই মূল্যবোধ হিসেবে কাজ করে।

ছোটবেলা থেকেই আমার বাবা মা দু'জনের মধ্যে দেখেছি সহযোগিতা, পরম নির্ভরতা, ঘনিষ্ট সম্পর্ক, চেতনায় মিল আর সুন্দর একটা পরিবার গড়ে তোলার ব্যপারে দু'জনে যৌথ প্রচেষ্টা, সহযোগিতা। আসলে সুস্থ সামাজিক আর পারিবারিক পরিবেশ গড়ে তুলতে নারী পুরুষকে কতর্ৃত্ব খাটানোর প্রতিযোগিতার উধের্্ব উঠতে হবে।

মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি। বাবা মা দু'জনেই চাকুরিজীবি, জন্মের পর থেকেই তাই দেখে আসছি। বাবা ঢাবির অধ্যাপনা। মা একটা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষকতা করেন। আর ফুল টাইম মাতৃত্ব।

মা, উনিশ বছর বয়সে বিবাহিতা, বিয়ের এক বছরের মাথায় এক পুত্রের মা। মা আমার সুপার উইম্যান। সত্যিকার অর্থে। একই সাথে পড়াশোনা করেছেন, ক্যারিয়ারে যেই ডিগ্রী দরকার করে ফেলেছেন দ্বিধাহীন ভাবে, সন্তান বড় করেছেন এবং বিশ বছর থেকেই শিক্ষকতা করছেন। সব এক সাথে।
এখন মাকে দেখি আর মুগ্ধ হই। একজন মানুষ এত জীবনী শক্তি পায় কোথথেকে? সকাল নয়টা থেকে পাঁচটা স্কুল (হুম, অস্ট্রেলিয়াতে টিচিঙের জন্য প্রয়োজনীয় স্কীল আপগ্রেইডিঙের করে ফেলেছেন ঝটপট), তারপরেও বাসায় আনা স্কুলের কাজ, এরপরে রান্না বান্না, পরের দিন সবার লাঞ্চ রেডি করা, ঘর গোছানো, সামাজিকতা, বাগানের কাজ সব করে যান ঝট পট, ক্লান্তিহীনভাবে। বাবা মাকে ডাকে 'ম্যানেজার এন্ড এমপ্লয়ী'। একই সাথে দু'টোই। একটা কোম্পানীর ম্যানেজার কাজ করা ছাড়াই হাইলি পেইড হয় শুধু চিন্তা ধার দেয়ার জন্য। মা আমার বাথরুমের কল নষ্ট হলেও সেটা ঠিক করার ম্যানেজারি করে, আর ক্রমাগত শারিরীক শ্রম তো দেয়ই ক্লান্তিহীন ভাবে। একটা কিচ্ছু এদিক সেদিক হয় না। যে কোন দিন, যখনই মেহমান আসুক মাকে কখনও অপ্রস্তুত হতে দেখিনি। ঝটপট কিছু একটা রেঁধে ফেলেন। হঠাৎ এক সকালে উঠে লাউ পাতার ভর্তা জাউ খেতে ইচ্ছা করলেও তার উপায় হয়ে যায়। একবার বাবার সাথে অসহযোগিতা আন্দোলন করায় তো আমাদের অবস্থা সকরুণ। বাবা সকাল বিকাল রাত আমাদের ডাল আর আলু ভর্তা খাইয়ে প্রায় মেরে ফেলে আর কি... সামাজিকতাতেও বাবা গোল্লা পাবে।

বাবা মাকে সহযোগিতার সব রকম চেষ্টা করে। কিন্তু কর্মক্ষমতায় সত্যিই পেরে উঠে না। রান্নার সময় কিচেন হ্যান্ড হয়ে সব সময় পিঁয়াজ কাটা থেকে অন্যান্য কাজে সাহায্য করে, কিন্তু বুঝতে অসুবিধা হয় না, দ্যা রিয়েল ম্যানেজার ইজ মা।

বাবা মা দু'জনেই কাজ করলে সন্তানদের প্রতি মনযোগ দিতে পারেন কম, এটা সত্য হত যদি মায়ের এত অফুরন্ত জীবনী শক্তি না থাকত। বাসায় কতগুলো বাধা নিয়ম আছে, যার জন্য হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের বাঁধন ঢিলা হয় না, একাকিত্ব কুঁড়ে খায় না যেমন:
1. বাসায় থাকলে, বিশেষত ডিনার আর উইকেন্ডে একসাথে খাওয়া দাওয়া, খাবার টেবিলে (অন্যথা হলে অবস্থা বারোটা বেজে যায়)।
2. সপ্তাহে একদিন, এক ঘন্টার জন্য নিয়ম বেঁধে বাসার সবার 'মিটিঙে' বসা
3. সুযোগেই এদিক সেদিক বেড়িয়ে পড়া, একসাথে ঘুরতে যাওয়া।

এর প্রতিটাই নিয়ম করে হয় সেটা মা-ই দেখেন। এ গ্রেইট ম্যানেজার শি ইজ!

মাকে এত উদ্যোমে সব করতে দেখে আমার কিন্তু ভয় লাগে, মনে হয়, উহু আমি কখনও এত গুলো ফুল টাইম কাজ এক সাথে করতে পারব না, পারব না! এজন্যই দাবী জানাই, কতগুলো। একজন নারী হিসেবে, যেই নারীর হয়ে সমাজ সব সময় সিদ্ধান্ত নিয়ে দেয় আর নারীর সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় যে কোন কাজে:

1. লেট মি ডিসাইট হোয়াট টু ডু! নারী অবলা এই চিন্তা আউট করেন, আমি চাইলে আমি বাইরে কাজ করব, চাইলে চাকরি ছেড়ে দিব। এই স্বাধীনতাটুকু চাই!!!

2. আমার বায়োলজিক্যাল নিডকে সামনে রাখবে এমন একটা সুস্থ সুন্দর কর্মক্ষেত্র। এখানেই মায়ের স্কুলে এক গর্ভবতী মহিলা খুব অসুস্থ থাকায় প্রায়েই ছুটি নিচ্ছেন বলে তাকে স্কুল বেতনহীন ছুটি নিতে বাধ্য করছেন। যেই পরিবারে নারীই প্রধান আয় করেন, সেই পরিবারের নারীর প্রতি কত বড় অবিচার হবে এই অবস্থায় কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়া! বাংলাদেশে, আমার ছোট বোন হওয়ার সময় ছুটি না পাওয়ায় মা চাকরিই ছেড়ে দিয়েছিল মনে আছে।

3. চাকরীক্ষেত্রে যোগ্যতা অনুযায়ী সম্মান! যারা পাশ্চাত্যের মোহে ছুটেন, তাদের বলি, পাশ্চাত্যে চাকরী ক্ষেত্রে 'গ্লাস সিলিং' বলে একটা টার্ম প্রচলিত আছে। একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের পরে মেয়েরা আর উপরে উঠতে পারে না। একটা অদৃশ্য কাচের সিলিং তাদের গতিরোধ করে। পাশেই পুুরুষ সহকমর্ীরা তরতরিয়ে উপরে উঠে যায়, মুক্ত আকাশে। এমনকি, অনেক চাকরিতে একই কাজ করার পরেও নারীদের বেতন পুরুষদের চেয়ে কম। হুম, এটা সত্যি।

4. যৌথ পরিবারের প্রত্যাবর্তন!
ইংল্যান্ডে চাকরীর সময় মা নিজের চাকরী ক্ষেত্রের চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে আমাদের রাখতেন, তাই অত অযত্ন হয় নি। বাংলাদেশে আমাদের ফুপাত বোন বা খালা সাথে থাকত, এবং আমি মনে করি পরিবারের মানুষের স্নেহ ছায়ায় বড় হওয়ার বিকল্প কিছুই নেই। এখন থেকে লাইন দিয়ে রেখেছি, আমার লাইফ পার্টনারের মা বা আমার মা একজনকে আমার সাথে থাকতেই হবে । আসলে যৌথ পরিবারের উষ্ণতা আমি পাই নি, যেটা থেকে কারও বঞ্চিত থাকা উচিৎ না।

পরিবার সমাজের ক্ষুদ্রতম কিন্তু সবচেয়ে পাওয়ারফুল ইউনিট। এই পরিবারের প্রয়োজনে নারী পুুরুষকে সহযোগিতা করতে হবে পরস্পরের সাথে। পরিবারের প্রয়োজনকে সামনে রেখে ইনডিভিজুয়্যাল নারী পুরুষকে সিদ্ধান্ত নিতে দিন কি করবে!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০০৬ রাত ১:২৭
৪৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×