somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ড. ইউনুস নয় একটু অন্য বিষয়

১৩ ই অক্টোবর, ২০০৬ বিকাল ৫:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পত্রিকার কাজে এই এক জ্বালা। হঠাৎ করে আজ ফোনে একখানা বড় সড় অ্যাসাইনমেন্ট দিলো ঢাকা থেকে। সেই অ্যাসাইনমেন্টের ফিলড করেছি সারাদিন। ফিরে এসে অফিসে বসেছি। সেখান থেকে ফিরে রাত জেগে অ্যাসাইনমেন্টের কাজ করছি। সেই কাজেই ব্যস্ত ছিলাম। ভেবেছিলাম ব্লগে আর ফিরবো না। তবে জামাল ভাস্করের একখানা চমৎকার, অতি চমৎকার পোস্ট আর জামির সেই পোস্টের মন্তব্য পড়ে কোনোভাবেই বিছানায় যেতে পারলাম না। আসলে লেখা একটা বড় নেশা। লেখায় লেখা আনে। যেভাবে টাকা টাকা আনে। আধুনিক অর্থনীতির পঁজির পুঞ্জিভূত হওয়া আবার ছড়িয়ে পড়া, আবার পুঞ্জিভূত আবার ছড়ানো- এভাবেই টাকায় টাকা আনার সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সেই টাকায় টাকা আনার বিষয়টিও একটি নেশা। ধরুন, নোবেল কমিটি বলছে, বিশ্বে দারিদ্র্যের কারণেই অশান্তি। তাই নোবেলটা ড. ইউনুসের। মাশাল্লাহ, বিশ্ব যুদ্ধবাজ বুশ-ব্লেয়ারের দেশ বেশি দরিদ্র না আমরা? কে বেশি যুদ্ধংদেহী ওরা না আমরা? বিতর্ক উঠতেই পারে। কিন্তু আসলে পশ্চিমা বিশ্বে এখন দারিদ্র্য আর দারিদ্র্য নেই। ওরা চাহিদাকেই যে দারিদ্র্য বলে! তাই তেলের চাহিদা মেটাতে (ওদের মতে, দারিদ্র্য!) ওরা যুদ্ধ বাধায়। খেয়াল করে দেখুন, ওরা যেভাবে চাহিদা মেটানোর বিষয়টিকে দারিদ্র্যের খোলসে ভরে বাধ্যতামূলক করে তুলছে, আমাদের দেশেও কিন্তু একক উন্নয়নের ধারণা ততোটা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আসলে শুধু আমাদের দেশে নয়, আমাদের মতো দেশগুলোতে।
বিষয়টা আসলে কী? আমি ধনী হবো, তুমি ধনী হবা, সে ধনী হবে- প্রত্যেকে এককভাবে ধনী হবে তবেই কি পুরো দেশটা ধনী হয়ে যাবে এভাবে? নাকি এই ধনী হবার খেলায় শোষণ আছে< শাসনের বাধন আছে? উন্নয়ন কাঠামোটা আসলে কী? রাস্তাঘাট পাকা হলেই কি উন্নয়ন হয়? কাজীর গরু যদি কেতাবে থাকে আর তা যদি গোয়ালে না পাওয়া যায়, তাহলে কেতাব পড়ুয়ারা কাজীর অনেক গরু আছে বলবে, আর যারা সত্যিই গোয়াল দেখেছে তারা বলবে, গোয়াল তো কাজীর শূন্য!
এবার একটু আসল কথা বলার চেষ্টা করি। মাইক্রোক্রেডিট যে সাকসেসফুল হচ্ছে, তা আমাদের মতো ভদ্রলোকেরা অধিকাংশ কোত্থেকে জানতে পারি? মিডিয়া থেকে তো! এবার বলুন তো, আমরা যে বিশাল করে ছাপি অমুক গ্রামে এই উন্নয়ন তমুক গ্রামে সেই উন্নয়ন- এইগুলা আসলে ক্যান ছাপি? আচ্ছা, আরেকটা বিষয় বলেন তো, ডোনারদের মাতব্বর বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দল আসলে ড. ইউনুস কী কারণে বারবার একটি গ্রামই ঘুরে দেখাতে নিয়ে যান? গবেষণাগারে গবেষক যখন পরীক্ষা করেন, তখন দু'ধরণের পরিবেশ ব্যবহার করেন- একটা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ, আরেকটা অনিয়ন্ত্রিত। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে তাই হয় যা কেতাবে থাকে। আর অনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে গবেষণার বস্তুটি অস্বাভাবিক ভূমিকায় নামতে পারে। তাহলে বোঝা গেলো কোনো বিষয়ের প্রকৃত চিত্রটা পেতে হলে অবশ্যই অনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে দেখতে হবে।
এবার শুনুন। আপনারা মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে হ্যান করেছে, ত্যান করেছে বলে পত্রিকায় যে রিপোর্টগুলো পড়েন, সেগুলোর কাহিনী বলি। এইসব রিপোর্টের অধিকাংশই সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলো সাংবাদিকবদের স্পটে নিয়ে গিয়ে করিয়ে নেয়। করিয়ে নেয় বললাম এই অর্থে যে, এটাই এখন চল হয়ে গেছে। কিন্তু কখনো কি দেখেছেন খুব বেশি মিডিয়া এর পেছনের কাহিনী ছাপতে আগ্রহী হয়েছে? ভাই, একটা বিষয়ের তো দু'টি দিকই থাকে। কিন্তু মিডিয়া শুধু এর সাফল্যগাথা গাইছে আর অন্ধকার দিকের বিষয়ে মিন মিন করে আওয়াজ করছে, তখনই বুঝতে হয় ডাল মে কুচ কালা হ্যায়! সামবডি ইজ ভুখা হ্যায়!
আমি সেদিন পদ্মার পাড়ে চরে গিয়েছিলাম। এক এনজিও নিয়ে গিয়েছিলো। তারাও ক্ষুদ্র ঋণের কাজ করে। আশ্চর্য হয়ে গেলাম চরে গিয়ে। নদীর ভাঙনে ধুঁকতে থাকা পাণ্ডববর্জিত ওই গ্রামের মাত্রকয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই ভারত। এনজিও ক্ষুদ্র ঋণ দিচ্ছে, ব্যাংক ঋণ দিয়ে সৌর বিদু্যতের ব্যবস্থা করছে, অথচ তাদের জীবনযাত্রার মান যা ছিলো তাই আছে। তারা এখনও জমিজমা হারিয়ে চোরাচালানের ব্যবসা করে। তিনটি ক্ষুদ্রঋণদাতা এনজিওর কাছ থেকে চক্রাকারে টাকা নিতে নিতে যখন নিঃস্ব হয়ে যায় তখন এলাকা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায়। স্যানিটেশন নেই, পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি নেই। তো, আপনারা কী মনে করেন, ক্ষুদ্র ঋণের চেয়ে জীবনযাত্রার মান বাড়ানো কি জরুরি নয়? যদি কোথাও উলেটাটা হয়, তাহলে কি বুঝবো না, সেবা নয়, পুঁজির স্বাভাবিক ধর্ম, স্বাভাবিক বিকাশই এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। কাউকে আকাশে তোলার কিছু নেই। এ নার্সের সেবা। যে সেবার বিনিময়ে টাকা আয় হয়। একটু কষ্ট করে পেছন দিকে গিয়ে কেএস মান্নার ব্লগটা খুলুন। দেখবেন, এক শতবর্ষী বৃদ্ধা বসে আছে, হতাশ। বয়স্কভাতা পায় না। সেই চরাঞ্চলেরই। চেয়ে খেতে হয়। এনজিওগুলো তাদের নিয়ে কিছু করে না। যে এলাকাগুলোতে আমরা গিয়েছিলাম সেগুলো হলো চরখিদিরপুর ও চরমাঝারদিয়ার। কেতাবি অ্যানালিস্টদের সবিনয় অনুরোধ, একটু সময় করে ঘুরে আসুন না।
অথবা আপনারা যেতে পারেন চারঘাট উপজেলার ঋষিপাড়ায়। আমি গিয়েছিলাম 2005 সালে। দুই এনজিওর ঋণের চাপে জর্জরিত হয়ে ওই গ্রামের 26 টি ঘর বসতি গুটিয়ে চলে গেছে। আমি যেদিন যাই সেদিন ব্র্যাক ঘরের টিন খুলতে এসেছে একজনের। কারণ? নিয়েছিলো সামান্য কিছু টাকা। সেই টাকা মূল নেয়া টাকার ওপর সুদ কষতে কষতে অংকটা এমনি দাঁড়িয়েছে যে তা আর শোধ দিতে পারছে না। নাট্যাভিনেতা শামস সুমনের ছোট ভাই রাশেদ রিপন সেখানে গিয়েিিছলেন এ বছর। ফিরে বললেন, সেই গ্রামে ঋণে জর্জরিত হয়ে এখন অবশিষ্ট রয়েছে আর মাত্র 6 টি পরিবার। এলাকাটি চারঘাট স্লুইচ গেটের পাশেই। ঘুরে আসুন না।
অথবা দুর্গাপুরের আলমের সঙ্গে একটু কথা বলুন। সে বাজার থেকে বিষ কিনে এনেছিলো ঋণদাতাদের চাপে। কারণ? গ্রামীণ ব্যাংক ও আশা থেকে ঋণ নিয়েছিলো সে। সমিতির প্রধান হবার সুবাদে তার ওপরই দায়িত্ব ছিলো পেমেন্ট চালানোর। কিন্তু কোনো একজনের কারণে সে ঝামেলায় পড়ে যায়। কোনো ছাড় নেই। হুমকি, গরু ছাগল বাড়ির টিন সব নিয়ে যাবে টাকা না দিলে। শেষমেশ বউ বাচ্চাসহ বিষ খেয়ে মরতে প্রস্তুতি নেয়। রাতের বেলা বিষয়টি এক প্রতিবেশী টের পেয়ে উদ্ধার করে। পরে কুমিল্লার এক দানবীর ব্যবসায়ী তার ঋণের 40 হাজার টাকা শোধ করে তাকে বাঁচায়। সেখান থেকেও ঘুরে আসতে পারেন।
আর সাকসেস স্টোরি? ওতো আপনাকে বহু দিতে পারবো। আসেন না একবার। এনজিওগুলো নাচতে নাচতে রাজী হয়ে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে আপনাকে চিত্র দেখাতে নিয়ে যাবে। অনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কোনোভাবেই যাওয়া যাবে না। তাই কাজীর গরু কেতাবেই থেকে যায়।
আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করি বাসায় লাইন নিয়ে প্রতিমাসে হাজার টাকা খরচ করে। আর এই হাজার টাকা দিয়ে অনেকের সংসার চলে। তাই তাদের আর ইন্টারনেটে বসা হয় না। তারা জানতেও পারেন না, জানাতেও পারেন না কিছু। মিডিয়াগুলোতেও ওইসব প্রান্তিক মানুষের সব কথা আসে না। কান্নাগুলো প্রকাশিত হয় না। যতোটা প্রকাশিত হয় হাস মুরগীর খামারের সামনে বিগলিত হাসি উপহার দেয়া ছবি। তাই মাইক্রোক্রেডিট তাদের জন্যই বিশেষভাবে তৈরি করা চমৎকার একটি ফমর্ুলা! আর বিশ্বের দিকে তাকান, একইভাবে এই ফমর্ুলা ওইরকম প্রান্তিক মানুষদের প্রান্তিক দেশের জন্যই তৈরি করা, যাদের আওয়াজ খুব বেশি দূর যায় না!

পরিশেষে একটা কথা না বলেই পারছি না। আচ্ছা, ড. ইউনুস কীভাবে এতো নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছেন, তিনি নোবেল পাবার পর দু'দলের সংলাপ গতি পাবে? আচ্ছা আপনারা কি দয়া করে সিপিডির নির্বাচন ভাবনা নিয়ে যে পুস্তিকাটি বের হয়েছে সেখানে ড. ইউনুসের লেখাটা একবার পড়বেন?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×