somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ব্যক্তিগত খোলা চিঠির জবাবে...

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ৩:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রদ্ধেয় ড. ইউনূস,
শুভেচ্ছা।
ব্যক্তিগত চিঠিটি পড়লাম।
মনে হলো, আপনাকে কিছু লিখবার আছে। তাই লিখছি। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নই। দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমার তুলনায় যে ম্লেচ্ছস্বরূপ এবং সে কারণেই নিজেকে অসম্ভব গুটিয়ে রেখে দুনিয়ার তাবত জঞ্জাল থেকে পাশ কাটিয়ে চলছি, নিজেকে অনেকটা নাক উঁচু ভেবে বসে আছি- বিষয়টি ঠিক সে রকম নয়। বিষয়টা হলো, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত হবার সুযোগ আমার হয়ে ওঠেনি পেশাগত কারণে। বিএনপি-আওয়ামী লীগসহ সমসত্দ রাজনৈতিক দলগুলোকে আমিও চরম গালিগালাজ করেছি। কিন্তু ভেবেছি এটাও, যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির নেতৃত্ব এই বিএনপি-আওয়ামী লীগ দিচ্ছে, সেই সংস্কৃতির একেকটা অংশ আমরা সবাই। আমাদের সবারই ণে ণে করা আচরণ মিলিয়েই এই সংস্কৃতি। লুটপাট, বিশৃংখলা আমরা চাই না। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির এটাও একটা বড় অংশ। কেন? আমরা তো এসব চাই না, তারপরেও এই সংস্কৃতির দায়ভার আমার? অবশ্যই। কারণ আপনি-আমি গোড়া থেকে সহ্য করেছি। এই সিস্টেমের আওতায় বসে থেকে তাতেই মানিয়ে নিতে চেয়েছি। এরশাদের আমলে লাভের ষোলোকলা খেয়েছি। খালেদার সময়ে মুনাফার সবটুকুই নিয়েছি। হাসিনার সময়ে আরো অনেক বেশি করে চেটেপুটে খেয়েছি। যারা খাইনি তারা নীরব থেকেছি। কাজেই এই রাজনৈতিক সংস্কৃতির দায় আমরা কেউই এড়াতে পারি না। ঠিক তেমন করেই ভবিষ্যতে যা হবে তার দায়ও আমরা কেউ এড়াতে পারবো না।
বাঙালি হিসেবে আপনার নোবেল পাওয়া নিয়ে আমি গর্বিত। কিন্তু আপনার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি না, আপনাকে নিয়ে যে মাতামাতি চলছে তার প্রয়োজন খুব বেশি। কিন্তু এখানেও আমরা আমাদের ষোলোআনা সাংস্কৃতিক পরিচয় বহাল রেখেছি। যে হারে মাতামাতি করছি, তাতেও যে বাসত্দবতার চেয়ে আবেগই বেশি থাকতে পারে তা এখনো মাথায় ঢোকে না। এ তো সেই আবেগই, যেই আবেগে অন্ধ হলে মানুষ চোখ বন্ধ করে সিল মারে। কাজেই আবেগের সংস্কৃতি কাজে তো লাগছে!
আপনাকে ত্রাণকর্তা হিসেবে রাজনীতিতে নামার জন্য কীভাবে বিপুল মানুষ অনুরোধ জানালেন, আমি পরিষ্কারভাবে তা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছি। বাংলাদেশের জনসংখ্যার অনুপাতে আপনাকে জানানো সেই অনুরোধওয়ালা মানুষ আসলে কয় জন? কিংবা যদি অন্যভাবে বলি, এই যে জোবরা গ্রাম থেকে উঠে আসা মানুষ আপনি, নোবেল পাবার পর থেকে দেশের রাজনৈতিক ডামাডোলের সময় জুড়ে কয়টি দিন বাংলাদেশের কয়টি প্রত্যনত্দ গ্রামের কতোজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন? প্রয়োজন হলে পাশাপাশি এটিও দেখতে পারেন, কতোদিন দেশের বাইরে কাটিয়েছেন? নাকি আপনি আপনার অসাধারণ শক্তিশালী বিচারবুদ্ধি দিয়ে টের পেয়েছেন, মানুষ আপনাকে রাজনীতিতে চায়? আমার তো মনে হয় না যে, দেশের বিপুল পরিমাণ আধা ন্যাংটো মানুষজন, যাদেরকে পুঁজি করে অনেকে অনেক রকমের ব্যবসা ফেঁদে রাখেন, তারা আপনার মোবাইল কিংবা ফোন নম্বর জানবে। অথবা আপনার কাছে চিঠি লিখার ঠিকানা জানবে। নাকি আপনার কাছে বিপুল মানুষ তারাই যাদের সঙ্গে আপনি সমপ্রতি বেশি সময় কাটিয়েছেন? কাজেই এই খোলা চিঠির শুরুতেই আপনার উচিত ছিলো বিষয়টি পরিষ্কার করা।
রাজনীতির আমূল বদলের কথা বলেছেন। আমাদের সবার মনের কথা। কিন্তু সেই বদলটা কীভাবে? কোনপথে? সেই আমূল বদলটা কে করবে? যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির কথা আপনি বললেন, সেই সংস্কৃতিতে যেহেতু আমরা সবাই বসবাস করি, কাজেই আমি মনে করি না, আপনি আজ যা বলছেন তাতে আপনাকে শতভাগ বিশ্বাস করার কোনো কারণ আছে। আপনাকে নিয়ে আমাদের গর্ব নোবেল পাওয়া হয়তো হতে পারে, কিন্তু প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি বুঝতে শিখিয়েছে, সব আশ্বাসই ফাঁকা বুলি হয়ে যায় একসময়। আর সব রাজনৈতিক পদেেপর পেছনেই কোনো একটি শক্তি থাকে। যে রাজনীতির আমূল বদলের কথা আপনি বলছেন, তা এভাবে যদি নাও বদলে ফেলা হতো, তবু বদলাতো। কারণ কোনো নেতা কিংবা হাতিয়ার নয়, মানুষই ইতিহাস বিনির্মাণ করে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষ নিজেরাই দ্রোহী হয়ে ওঠে। আর আপনার তো অজানা নয়, সেই দ্রোহই মুক্তির পথ করে দেয়। আমাদের আফসোস, স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশে কীভাবে জানি, মানুষের সেই দ্রোহ পুরোপুরি প্রকাশিত হবার আগেই 'উদ্ভূত' পরিস্থিতি বদলে ফেলা হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দেশে স্থিতাবস্থা বিরাজ করার সুবিধা অনেক- ব্যবসা করা যায়, টাকা খাটানো যায়, মুনাফা নেয়া যায়। কিন্তু মানুষ দ্রোহী থাকলে মুশকিল। কাজেই এভাবে পরিস্থিতি বদলে ফেলা অনেকের জন্য ভালো হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে একেকটি পরিস্থিতি বদল হয়েছে আর আমরা এক ঝাঁক নতুন নতুন বড়লোকদের পেয়েছি। সবাই হয়েছে আঙুল ফুলে কলাগাছ। কাজেই রাজনীতিতে নামুন কি না নামুন, আপনি ত্রাণকর্তা- এই বাংলা শব্দটি অথবা এ জাতীয় কোনো কিছু আপনার জন্য ভুলে যাওয়াই হবে ভালো। কারণ এসব চিনত্দা আপনাকে মানুষের কাছে নিয়ে যাবে না।
আমার মনে হয় না, আমাদের চিঠির ওপর ভিত্তি করে আপনি রাজনীতি করার সিদ্ধানত্দ নেবেন। আপনার সিদ্ধানত্দ অনেক আগেই নেয়া হয়ে গেছে। এখন শুধুমাত্র ওয়ার্ম আপ চলছে। তারপরেও আপনাকে বেশ কিছু বিষয় জানানোর ছিলো, লিখলাম। আপনার জন্য শুভকামনা। এই একটা বিষয় ছাড়া বাঙালির করার আর কিছু নেই। সবই অন্যেরা করে দেয়, চাপিয়ে দেয়। আমরা তাই এই একটি কাজই করতে পারি। আপনার েেত্র তাই করলাম।

ধন্যবাদসহ

শিবলী নোমান
রাজশাহী
12 ফেব্রুয়ারি 2007
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×