somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নোবেল নিয়ে ফাউ বিতর্ককেন? - খোলা মনের কিছু ধারনা

১৩ ই অক্টোবর, ২০০৬ দুপুর ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে আমার অসম্ভব ভালোলাগার দিন ... কারন ড. ইউনুস নোবেল পেয়েছেন।

দুঃখের বিষয় কিছু অবুঝ বালক বালিকারা এর মধ্যেও নীচতা আর বিতর্কের গন্ধ খুজে পাচ্ছেন। বিতর্ক তারা তুলছেন মূলতঃ তিন বিষয়ে -

1. প্রথমত .. গ্রামীন ব্যাংকের আইডিয়া আর কার্যক্রম নিয়ে ( যেটা সবচেয়ে বেশী দুঃখ জনক ), বলছেন এটা নব্য পুজিবাদের নব্য শোষন ধারা। গরীবদেরকে আরো শোষনের ফাদে বেধে ফেলা

2. দ্্বিতীয়ত ... নোবেল প্রইজ নিয়ে... ( এখানে খানিকটা বিতর্কের আসলেই অবকাশ আছে ) কিভাবে এই প্রাইজ পুজিতন্ত্রের ধারক আর সুবিধাবাদি।

3. ত্রীতিয়ত .. . ( এইটা হাস্যকর ) উনাকে ইকোনমিক্সে না দিয়ে শান্তি তে কেন দেয়া হল?

এবার এগুলো খন্ডনে আমার কিছু ভাবনা .. একটু বড় হলে মাফ করবেন।

প্রথমত ... গ্রামীন ব্যাংকের সব তথ্য ওপেন, যে কেউ যেকোন ব্যাংকের মতোই এর সব স্টেটমেন্ট নেট থেকে নামিয়ে দেখতে পারেন। শুরু করার আগে.. আমার ব্যাকগ্রাউন্ড দিতে হবে। আমি ফিনানস গ্র্যাজুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আমাদের কোর্স কারিকুলামে একটা সাবজেক্ট ছিলো "ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স" সেটাতে "মাইক্রেফাইনানস" নিয়ে পড়তে হয়েছে.. যে ধারনাটাই উদ্ভাবন করেছেন প্রফেসর ইউনুস।

আরেকটা ব্যাকগ্রাউন্ড আমার গ্রামের বাড়ি। "চকঘোড়া পাখিয়া" .. রাজশাহীর চাপাইনবাবগনজের শীবগনজ উপজেলার একটা পিচ্চি গ্রাম। আমার বাড়ির পাশের টিনশেড বাড়িটিই হচ্ছে শীবগনজ গ্রামীন ব্যাংক। ছোট বেলা থেকে চাচা বলে ডেকেছি ওই ব্যাংকের ম্যানেজারকে। দেখেছি উঠোনে এর সাপ্তাহিক সভা।

গ্রামীনের কাজটা বেঝাই উদাহরণ দিয়ে .. . ধরুন করিমন বেওয়ার স্বামী ক্ষেত মজুর, কাচা একচালাতে বাস করেন দুই শতকের কম জমি আছে। বছরের অর্ধেকটায় কাজ পান.. অর্ধেকটায় বসে কাটান। মংগা মৌসুমে চড়া সুদে চাল ধার করেন গেরস্থের বাড়ি থেকে.. ( এই গেরস্থ কিন্তু রূপকথার শাইলক নন, প্রচলিত ধারাই মেনে চলেন.. গ্রামের ক্লাস স্ট্রাকচার)। পরের মৗসুম গতর খেটে যান দেনা শোধ করতে।

এখন.. আবু চাচা আসেন তাদের বাড়িতে .. করিমনের সাথে কথা বলতে চান। করিমন ঘোমটা দিয়ে উনার স্বামীর সাথে কথা বলতে বলেন। আবু চাচা বোঝান .. না না আমার আপনাকেই প্রয়োজন। অনিচ্ছা স্বত্বেও করিমন সায় দেন। পাশে স্বামী দাড়িয়ে থাকেন। আবু চাচা জানতে চান .. গতবার টাকার হিসাবে কত ধার নিয়েছেন। স্বামী হিসাব করে বলেন 500 টাকার মত। এখন আবু চাচা বলেন.. ধরেন আপনাকে আমরা 800 টাকা দিলাম ... লাব নিবো 25 ভাগ.. মানে ফেরত দিবেন কত? 1000 টাকা.. তাইনা। আগের দেনা শোধ করতে কয়দিন খাটেন?

এবার করিমন উত্তর দেয় ..."উনারে তো আর্ধেক সিজন গেরস্থের কাম করতে হয়.. খাওয়া উনারটা হেরা দেয়"। আবু চাচা জিগান .. " এমনি ক্ষেতে খাটলে কত দেয়?" । স্বামি উত্তর দেন .. " 30/40 ,.. ঠিক নাই " । আবু চাচা বলেন.. দুই মাস খাটলে তাইলে আপনি কত টাকার খাটতেসেন .. জানেন?" "2400 টাকা"

করিমন বলে ঠিক আছে.. 800 টাকা নিয়া নাহয় 600ই দিয়া দিলাম গেরস্থরে.. বাকি মৌসুম চলবো কেমনে? আবু চাচা বুঝান... 120 টাকায় চাইরটা ছোট মুরগী পাইবা .. পালবা.. আর 50 টাকা দিয়া লাউএর বিচি কিনবা.. না না .. রানিহাটি বাজারেই পাইবা .. 5 টাকার মত লাগবো। বাকি টুক রাইখা দাও... প্রতি সপ্তাহে টাকা ফেরক দিতে হইবো না ? .. প্রথম মাস ফেরত দিয়েন। আর উনি তো ক্ষেতে কাজ করবেনই। ছাড়া মওসুম আইতে আইতে মুরগী গুলা বড় হয়ে যাবে.. ডিম বেচবা রানি হাটিতে.. হালি যাইবো 10 টাকা কইরা। আর চালার লাউ হাটবারে বেচতে থাকবা। .. দেড় বছরে 1000 টাকা দিতে পারবা না?

" মুরগী কেমনে পালুম? কিছু তো জানিনা .. আর লাই গজামু কেমনে?"

"চিন্তা নাই.. একটা ছোট দলের লগে থাকবা .. এই পাড়ার আসমা, সালমা আর আরো দুই ভাবিও তোমার লগে থাকবো.. কোন সপ্তাহে কেউ এক জন টাকা দিতে না পারলে.. দলের সবাই মিলা পূরন কইরা দিবে। তুমি তাগো আবার দিয়া দিবা ।"

করিমন বেওয়া ঠিক 14 মাস পরই স্বাবলম্বী হয়ে যান।

এবার আসি যুক্তি খন্ডনে।...

- গ্রামীন ব্যাংক কোন জামানত রাখেনা। তাই কেউ টাকা ফেরত না দিলে গ্রামীন ব্যাংকের করার কিছু নাই। মামলা? যেই অ্যামাউন্টের টাকা দেয়া হয়.. মামলার প্রসিডিং খরচই তার চে বেশি। তার পরও কেন.. রিকভারি রেট 98% + ? কারন হল " সোশাল পিয়ার প্রেশার" সিধা কথায় .. ভাবিদের চোখে রাখা .. সাহায্য করা আর .. মান অপমান বোধ। .. উইনুসের আবিস্কার।

- গ্রামীন ব্যাংক 71,600 গ্রামে অপারেট করে.. 18000 এর উপর কমর্ী নিয়ে। 6.3 বিলিয়ন ডলার এপর্যন্ত লোন দিয়েছে.. 6.6 মিলিয়ন পরিবারকে। রিকভারি 98%+ আর প্রতিষ্ঠানটি পুরো স্বাধীন। মালিকানা ... 6% সরকারী .. 94% গ্রাহকরা।

- 25% রেট। দুনিয়ার কোথাও 13% এর উপর লোন ইন্টারেস্ট নেয়া হয়না। ... সত্য। এখন হিস্ব করেন.. 500 টাকা নিয়ে 2400 টাকা দেয়া.. কত পার্সেন্ট হয়? 300% এর কাছাকাছি না? 25% কি একটু কম লাগতেছে?

- আপনি যান যে কোন একটা ব্যাংকে.. ( বাংলাদেশে 54 টা ব্যাংক আছে .. শাখা... হাজার কয়েক হবে) । গিয়া বলেন.. আপনি 1000 টাকা ধার নিবেন.. জামানত কিছু দিতে পারবেননা। একটা ব্যাংক যদি আপনাকে একটা টাকা দেয়.. তাহলে আমি 6 বছর ঢাকা ভার্সিটি তে কিছ শিখি নাই। গ্রামীন ব্যাংকের ফাইনাল স্টেটমেন্ট ডাউনলোড করে পড়েন।.. যে ব্যাংকের বাৎসরিক হিসাব হয় শত কোটি টাকায়.. তার কয় টাকা জমানত পাওয়া সম্পত্তি আছে.. দেখেন।

- গ্রামীন ব্যাংক তার ঋণের বাধনে বেধে ফেলে.. ঋণ ছাড়া কেউ চলতে পারেনা। এই ফলতু আগর্ুমেন্ট টা এসেছে ওই স্ট্যাটিসটিকস থেকে.. যেখানে দেখা যায়.. মহিলাররা বার বার ঋণ নিচ্ছেন।.. খুজে দেখেন তো.. তাদের আয় বাড়ছে কিনা ?

- বাংলাদেশে কেন? সারা বিশ্বের ঋণ গ্রহীতাদের লিস্ট বাইর করেন । কত ভাগ নারী? বাংলাদেশে 1% এরও নিচে.. গ্রামীন ব্যাংক 1989 সালে 50/50 সমতা নিশ্চিত করেছে।.. এখন সিংহভাগ ঋণ গ্রহিতা নারী।

*** দ্্বিতীয় পয়েন্ট ... "নোবেল প্রাইজ" ।

কথা সত্য .. এইটা কোন বিতর্কের উর্ধে না। গত দশকেই সুবিধা অসুবিধায় বহুত লোক প্রাইজ পাইসে। কিন্তু প্রাইজ লিস্ট নিয়া বসেন। কয়েকটা ফালতু চয়েসের কারনে গত শতাব্দীর শুরু থেকে প্রতিবছর দেয়া এই প্রাইজের গুরূত্ব তাতে পুরোপুরি অমলিন হবে না।

**** তৃতীয় পয়েন্ট .. " অর্থনীতি তে কেন না? শান্তিতে কেন?"

এক, শান্তিতে পুরসকার অনেক অনেক বেশী সম্মানের। ম্যান্ডেলা, আরাফাত, পেরেজ, সু চি, তেরেসা এদর কাতারে একটা নাম... ইউনুস। ইউনুস সন্দেহাতিত ভাবে দুনিয়ার একমাত্র অর্থনীতিবিদ যিনি একটা থিওরি আগে প্র্যাকটিকালি করে দেখিয়েছেন.. এর পরে থিওরি সংহত করেছেন.. আজ শীবগনজ কলেজ .. কি ঢাকা ভার্সিটি কি হাভার্ড বিজনেস স্কুল.. মাইক্রো ফাইনানস সবার অবশ্য পাঠ। এইটা এচিভ করতে ইউনুস সাহেবের নোবেল লাগে নাই। অমতর্্য সেনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি.. গ্রামীন ব্যাংক একটা অর্থনীতির থিওরী না.. এইটা একটা সামাজিক আন্দেলন.. দারিদ্রতার বিরুদ্ধে।

দুই, সামাজিক আন্দোলন হিসাবেই একে পুরস্কার দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে গ্রামীন ব্যাংকের 56% এর বেশী গ্রাহক প্রতি বছর দারিদ্র সীমাকে অতিক্রম করছেন। দুনিয়ার 16 মিলিয়ন পরিবার আজকে মাইক্রোফিনানেসর আওতায়। এমনকি আমেরিকার আরকানসাস আর লুইসিয়ানাতেও।

তাই ... খুবই ব্যাথিত হৃদয়ে বলি... যেখানে সমালোচনা করা দরকার.. কারন নিয়ে .. বিশ্বাস নিয়ে .. তথ্য নিয়ে করুন। ওইটা বস্তুনিষ্ঠ হবে। নাতো খালি এক পেরার ঝাড়ি দিয়ে চলে যাবেন না।

সরি .. আনেক গরম কথা লিখে ফেললাম.. কিন্তু একটা গর্বের দিনে এরকম কষ্ট কম পেয়েছি তো তাই হয়তোবা। এই লেখাটা আপনাদের কাজে এল খুশি হব। তথ্যের জন্য.. সমালোচনার জন্য কিংবা আপনাদের ঝাড়ির জন্যও আমার মেল ব্যাগ আর এখানের কমেন্ট খোলা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০০৬ বিকাল ৪:০৯
২৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×