রাস্তায় একায় দাড়িয়ে আছে রুদ্রাণী | আবছা কুয়াশায় ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না অরন্যকে |
# কখন থেকে দাড়ায় আছি আমি তোমার কেবল সময় হলো আসার |
= আমি তো এখানেই ছিলাম তোমায় দেখছিলাম |
# কি বলো একদম মিথ্যা বলবা না আমার সাথে |
= রুদ্রাণী তোমায় মিথ্যা বলতে আমার আশ্চর্যরকম ভালোলাগে |
# কি হয় বলো তো আমি তো তোমার সব মিথ্যা বুঝতে পারি ...
= হুম তুমি আমায় সহ্য কর তাই তোমায় ভালোবাসি এতো ....
# ঢং করবে না একদম ...
তারপর দুজনে হাটতে শুরু করলো | রুদ্রাণী রোজ ভোরে এখানে আসে অরন্যের সাথে শিউলী বনে যায় ...
এইসময় শিউলীবন শুভ্রফুলে ভরা থাকে | রুদ্রাণী ফুল কুড়িয়ে মালা গেথে অরন্যকে দেয় |
- রোজ একই মালা গাথো কেনো তুমি |
- তোমায় দিবো বলে |
- ভালোবাসো সেটা তো জানি কিন্তু এতো কেন?
- উওর নেই কখনো নিজে জানতে পেলে তোমায় বলবো ......
অন্তুনীল রোজ সকালে এই মেয়েটাকে শিউলীবনে দেখে | একা একা মেয়েটা কথা বলে মালা গাঁথে আর তারপর কি কারনে যেন মালাটা রেখে চলে যায় | অন্তুনীল ঠিক তারপর গিয়ে ফুলের মালাটা নিয়ে আসে |
মেয়েটাকে সে অনেক খুঁজেছেন কিন্তু পায় নি কারণ কুয়াশার মাঝে রোজ মেয়েটা কোথায় যেন উধাও হয়ে যায় ....
প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে | প্রকৃতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে তাই এখন কোনকিছুই ঠিক নেই তাই এই অবস্থা |
হাড়কাপানো শীতে হঠাৎ বৃষ্টি তাই রাস্তা পুরো ফাকা | অন্তুনীল তবু বের হয়েছে | প্রকৃতির বাধার জন্য তো আর জীবন থেমে থাকে না |
হঠাৎ দেখে লাল শাড়ি পরা একজন বৃষ্টিতে ভিজছে |
এতো ঠান্ডা আর উপর বৃষ্টি পানি এতো ঠান্ডা কিভাবে সম্ভব |
# রুদ্রাণী তোমার তো বৃষ্টি পছন্দ না আজ কেনো ভিজছো ?
= অরন্য শীতকালে বৃষ্টি আমায় ভালোলাগে |
# কখনো তো বলো নি ?
= কখনো শুনতে চেয়েছিলে |
অন্তুনীল দেখলো সেই শিউলি বনের মেয়েটা আজও একায় একায় কথা বলছে আর বৃষ্টিতে ভিজছে |
আজ কথা বলবোই বলবো অন্তুনীল মনে মনে ঠিক করে নিলো |
# এই যে ভিজছেন কেন এভাবে অসুস্থ হবেন তো |
= আপনার কোন সমস্যা তাতে |
বলে রুদ্রাণী হাটা শুরু করলো | অন্তুনীল আজ আর সহজে ওকে ছাড়লো না পিছু নিলো | মেয়েটা কথা বলেই যাচ্ছে অনর্গল কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই |
# ছেলেটা আমায় ওভাবে বললো তুমি কিছু বললা না কেনো?
= ঠিকই তো বলেছে |
# কি বললে অন্যকেউ আমায় কিছু বলবে আর তুমি তার হ্যা তে হ্যা মিলাবে | তোমার এই অভ্যাসের জন্য মাঝেমধ্য তোমায় খুন করতে ইচ্ছা করে |
= হা হা হা
# হাসবো না খবরদার | সবসময়ই একই কাহিনী | তুমি আর আমার সাথে আসবা না যাও ভাগো এখান থেকে |
= আচ্ছা
# আচ্ছা মানে কি?
= তুমি আমায় না রাখতে চাইলে আমি তো থাকতে পারবো না রুদ্রাণী |
# হু তা থাকবে কেনো | জানি তো সব |
= না তুমি কিচ্ছু জানো না আমি যে তোমার হেলুসিনেশন তা তুমি বিশ্বাস করতে চাও না |
# কি বলো এগুলো | হেলুসিনেশন কেন হবে এই তো তোমায় ছুঁতে পারছি তোমার সাথে কথা বলছি |
= সব তোমার কল্পনা রুদ্রাণী |
# কখনো না |
= সত্যি আমায় ভাবা বন্ধ করো দেখবে আমি আসবো না |
# না পারবো না |
= পারতে হবে তোমার নিজের জীবনের জন্য |
# দরকার না আমি ভাবতে চাই না |
মেয়েটা প্রচন্ড কাঁদছে | বৃষ্টি জলেও মেয়েটার চোখের জল স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে |
অন্তুনীল কি করবে বুঝতে পারছে না | হঠাৎ কি এমন হলো মেয়েটার এতো কাঁদছে কেনো |
কিছুক্ষণ পর মেয়েটা অন্তুনীল দেখলো মেয়েটা তারদিকে আসছে |
# এই যে শুনুন আপনি আর আমার আশেপাশে কখনো আসবেন না |
- কেনো?
# কারণ আমি অরন্যকে ভালোবাসি | আর সেই আমার ভবিষ্যৎ আপনি নন |
- ভালোবাসার কথা আমি কখনো বলছি আপনাকে?
# শিউলীমালা গুলো আপনার কাছে আপনি রোজ আমায় দেখতে শিউলীবনে আসেন সবসময়ই আমায় খোজেন এগুলো কি তাহলে |
- আপনি সব জানেন?
# আমি না অরন্য সব জানে | ও আমাকে সব বলেছে কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না ও ছাড়া কেউ আমায় ভালোবাসতে পারে না |
অন্তুনীল কি বলবে বুঝতে পারছে না |
# এবার তোমায় ভালোবাসতে কোন বাধা নাই তো অরন্য ....দেখো ওকে ফিরিয়ে দিয়েছি ...
= পুরো পাগলী তুমি রুদ্রাণী আমায় নিয়ে বৃথা মেতে আছো তুমি |
# জীবনের সবকিছুই স্বারথের জন্য করতে হয় না অরন্য .........
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০১