আমি একজন মানুষ। পুরুষ বা নারী হিসেবে পৃথিবীর সমস্ত যে প্রাণীজাতের মাঝে যে দুই ভাগ রয়েছে তার মাঝে আমি হলাম নারীজাত, যে কিনা সন্তানের জন্ম দেয়।
জি নারী হলো সেই জাত যে সন্তান ধারন করে। নারীর কথা মনে আসলে এমনটিই আমাদের মাথায় আসে প্রথমে।
তবে মানুষ নাকি সৃষ্টির সেরা জীব। তাই মানুষের মাঝে আছে নানা বৈচিত্র। তাই মানুষের মাঝে যে নারীজাত সে শুধু সন্তান ধারন করেনা, পালন করেনা শুধুমাত্র জৈবিক দায়িত্ব, সে পালন করে আরো এমন অনেক দায়িত্ব যা সভ্যতা কে সামনের পথে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে এমনটাই নিশ্চয়ই স্বাভাবিক।
তবে মায়ের জাত হিসেবে নারী সারাজীবন পেয়ে আসছে অশেষ সম্মান, প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে উচুঁ আসনে এমন কথা টা বলার কোন সুযোগ নেই এ সমাজে।
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও কথাটি চরম সত্য।
বরং নারী একটি সাংসারের সকল কাজ হাসিমুখে করা, সন্তান জন্মদান এবং যত্ন, মমতা, স্নেহের সাথে পালন, ঘরের প্রতিটি সদস্যের খেয়াল রাখা এমনকি সংসারের প্রয়োজনে অর্থ উপার্জন, সন্তানের মুখে দুটো ভালো খাবার দিয়েও নারী যেন নিম্নশ্রেনীর।
ছেলে রেজাল্ট খারাপ করলেই মাকে দোষারোপ করা হয়। মায়ের অসচেতনাই ছেলের রেজাল্ট খারাপের যেন একমাত্র কারন!
যাই হোক নারী কোথায় কতভাবে অপমান করা হয় তা আর জেনারেলাইজড করে বলে ভূমিকা বাড়াতে চাই না।
ঠিক আজকের আমার সাথে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা। আর আমার দুঃসম্পর্কের এক আত্মীয়ের জীবনে ঘটে যাওয়া খুব কষ্টকর এক ঘটনা এই লেখাটার পেছনে অনেক বড় একটা কারন হিসেবে কাজ করছে।
আমার ঘটনা টা নাহয় শেষেই বলবো আমার সেই আত্মীয়ার ঘটনাটি দিয়ে শুরু করি
বিয়ে হয় গত বছর রোজার ঈদের পর। মেয়ের বাড়ী গ্রামে। তবে মেয়ের পরিবার শিক্ষিত। মেয়ে নিজেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে একটি কলেজে ইংরেজীতে অনার্স পড়ছে।
আর মেয়ের পরিবার গ্রামে হলেও সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবার। মেয়ের বাবা নেই। মেয়ের নামে বেশ কিছু জমি মারা যাবার আগেই বাবা দিয়ে গেছেন।
বিয়ের পর প্রথম কয়েকদিন সমস্যা হয়নি। তবে বিয়ের বেশ কিছুদিন পরই মেয়েটি বুঝতে পারে যে তার প্রতি তার স্বামীর কোন আগ্রহ নেই। স্বামী রাত্রে ফেরে অনেক দেরী করে। এবং প্রায় সময়ই তেমন কোন কথা না বলে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। কথা বলতে গেলেই খ্যাচ খ্যাচ করে।
মেয়েটি তার বাড়ীতে বিষয়টি জানালে বাড়ির লোকজন খুব একটা আমলে নেয়না। বলে এটা কোন বিষয় না। স্বামী যেমন তেমনই মেনে নিতে হবে!
দিন যায়, মাস যায় মেয়েটির মনে সুখ নেই। সেরকম কোন দাম্পত্য জীবন নেই মাঝে মাঝে জৈবিক সম্পর্ক ছাড়া।
এদিকে হঠাৎ আরেক যন্ত্রনা শুরু হলো। মেয়েটির ভাই গ্রাম থেকে ঢাকা শহরে যতবারই বোনটির সাথে দেখা করতে আসে, ভাই বাসা থেকে বাইরে পা ফেলামাত্র শাশুড়ী বলতে থাকে কি তোমার ভাই আসছিলো টাকা পয়সা দিয়ে গেলো নাকি?
টাকা পয়সা আমার কাছে দাও। তোমার বয়স কম, হারায়ে ফেলবা, তারচেয়ে আমার কাছে দাও।
মেয়েটি জানায় ভাই কোন টাকা দিয়ে যায়নি!
শাশুড়ীর কাছে জমা আছে গহনা, জমা আছে এস.এস.সি, ইন্টারমিডিয়েটের সার্টিফিকেট।
এদিকে টাকা টাকা করে শাশুড়ী মাঝে মাঝেই শোঁ শোঁ করে উঠছে, আর স্বামী ইদানিং শুরু করেছে দুর্বিসহ খারাপ ব্যবহার। মেয়েটির প্রায় মনে হয় তার স্বামীর অন্য কোথাও সম্পর্ক রয়েছে।
একদিন সে ভাবে অন্তত স্বামীর খারাপ ব্যবহার সে সহ্য করবেনা। সে জানতে চাইবে এতসব খারাপ ব্যবহারের মানে কি?
তাকে তেড়ে মারতে আসে স্বামী।
পরদিন মেয়েটি তার ভাইকে ডাকে ঢাকায়। কারন সে আর পারছে না। ভাই আসে, রাত ৯ টা পর্যন্ত মিটিং হয়।
ভাই যাওয়ার সময় বলে যায় সংসার কর, কি আর করবি?
রাত ১০ টার বাসে ভাই রওনা দিয়ে দেয়। কিন্তু রাত ১১.৩০ মিনিটে মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে ভাইয়ের কাছে ফোন করে, ভাই আমাকে তুই এখান থেকে নিয়ে যা!
ভাই ঐ রাতে রাস্তার মাঝখানে থামে। আবার ঢাকায় আসে। মেয়েটিকে রাত ৩ টায় বাসা থেকে তার ভাইয়ের সাথে বের করে দেয়া হয়।
এই বিয়ের ঘটক ছেলেপক্ষ থেকে ছিলো ছেলের নানা। ছেলের নানার বাড়ী মেয়ের বাড়ীর পাশের গ্রামে। ছেলের নানার বাড়ীতে প্রথমে ছেলেপক্ষ একা আসে সেখানে একটা মিটিং হয়। যে মিটিং এ ছেলের বাবা মেয়ের কি কি দোষ আছে সেটা এক বিশাল কাগজে লিস্ট করে এনেছিল!
যাওয়ার সময় ছেলে তার নানা কে বলে যায় ঐ মেয়েকে আমি আর নিবোনা। ১টা বছর খুব বিরক্তিকর গেছে আমার!
ছেলের মা যাওয়ার সময় বাড়ীর মহিলা সদস্যদের বলে যায় '' ও মেয়ে আমার ছাওয়ালের সুখ ঠিকমতো মেটাতে পারেনা''
নানা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। শখ করে নাতীর বিয়ে দিলেন কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো।
রোজার ঈদের পর ছেলেপক্ষ মেয়েপক্ষ একসাথে মিটিং বসে।
সবাই উপস্হিত মেয়ে, ছেলে, মেয়ের ভাই, মেয়ের ভাইয়ের শ্বশুর ( যেহেতু তাদের বাবা নেই তাই ইনি গার্জিয়ান হিসেবে ছিলেন), মেয়ের ভাবী, ছেলের মা, ছেলের বাবা, ছেলের ভাই, নানা।
ছেলের বাবা জানিয়ে দেয় মুচলেকা দিয়ে আমার বাড়ীতে ঐ মেয়ে ঢুকতে পারবে, মেয়েকে বলতে হবে সে যত ধরনের বেয়াদবী করেছে তা আর করতে পারবেনা।
কি বেয়াদবী সে করেছে?
আমরা প্রমান পেয়েছি মেয়ে আগে ছোল ফেলেছে!
!!
ছেলে বলে উঠলো ফালতু মেয়ে! কোন সেক্স নাই, আগে কয়টা মরদের সাথে শুইছে কে জানে! মরদদের সাথে শুয়ে শুয়ে আর কোন সেক্স নাই।
ডাক্তারের কাছে গেছিলাম ডাক্তার বলছে কয়টা ছোল ফেলছেন আগে?
মেয়ের ভাই গর্জে ওঠে। সহ্য করতে পারেনা আর।
মেয়ের শাশুড়ী তখন বলে ওঠে, ''হারামজাদা এতো চিল্লাস ক্যান?
তুই তোর পেটবান্দা বোনেক আমার বেটার উপর গছে দিসু!''
মেয়ের বাড়ীর সব লোক বের হয়ে আসে।
এই বিয়ের তালাক এখনও হয়নি, তবে সেটা আর ৪/৫ দিনের ব্যাপারমাত্র।
এতক্ষন পড়ে নিশ্চয়ই ভেবেছেন এসব গ্রাম্য লোকদের কারবার মাত্র । এসব কেনো ব্লগে লিখলাম?
বিশ্বাস করবেন কি ছেলের বাবা একজন সরকারী ইন্জিনিয়ার?
ছেলের বাবা সম্প্রতি জানিয়েছে তারা মেয়ের এস.এস.সি ইন্টারমিডিয়েটের সার্টিফিকেট ফেরত দিবে কিনা ভেবে দেখবে!
আর কি কি ভাবতে পারেন বা ভাবা উচিৎ নয়। বা কি করা উচিৎ কি করা উচিৎ নয় আমি আজ কিছু বলবো না পাঠক। আমি কোন ভাষার ঝড় আজ তুলতে চাইনা। লিখতে চাইনা কোন জ্ঞানগর্ভ সমালোচনা।
আজ সবকিছু আপনারা বলবেন, তবে বলার আগে নিজের ছোট বোন কে এই মেয়েটির জায়গায় আর নিজেকে ঐ অসহায় ভাইটির জায়গায় বসিয়ে নিন।
আজ সকালের আমার সাথে ঘটা ঘটনাটা
সকাল ১০ টায় দাঁড়িয়ে আছি রাস্তায়। একটু পর ইন্টারভিউ আমার। না আছে কোন সিনএনজি, না আসছে কোন বাস। যা দু একটা আসছে ওঠার মত পরিস্হিতি নাই।
খুব টেনশন হচ্ছে আমার। ঘামছি দরদর করে।
এক ছেলে আমাকে জিগ্গেস করলো কই যাবেন বললাম গুলশান ১।
ছেলেটি বললো এই এতো সিনজি যাবেনা?
আমি বললাম যে ওরা কেউ যাবেনা, সবাইকে জিগ্গেস করেছি।
ছেলেটি কিছুক্ষন পর সেখানে আনে এক সাদা প্রাইভেট কার, আমাকে বলে ওঠেন!
আমি বললাম না আমি উঠবো না।
নতুন বাজারের যে বাসটা আসে সেটাতে উঠি, খেয়াল করি ছেলেটাও ঐ বাসে উঠলো। আমি নতুন বাজারে নামলাম, ছেলেটাও নামলো। আমি রিকশা নিতেই ছেলেটা লাফিয়ে সে রিকশায় উঠলো!
আমার জীবন যেন আর নেই!
ছেলেটার আচরনে এত ভীত হয়ে উঠি আমি চিৎকারও করতে পারিনা। ছেলেটা তার এক রাজনৈতিক পরিচয় দেয়। আমার মনে হচ্ছিল ওর কাছে অস্ত্র আছে। খুব কান্না পাচ্ছে আমার। কিন্তু কিছু করতে পারছিনা!
কিন্তু ভাবি ওকে খেপানো ঠিক হবেনা, ও যা বলে হা হা করে সুযোগমতো আমাকে নামতে হবে। আর ভাগ্যিস এটা দিন।
আমার সাথে আজ দুপুরে লাঞ্চ করবা, হুকুম দেয় সে। আমি বলি হা।
আরো বিভিন্ন কথা বলতে বলতে আমার গায়ে হাত দেয়া শুরু করে!!!
আমি ওর সাহসে হতভম্ব!
মোবাইল নম্বর দাও মোবাইল নম্বর এখুনি প্লিজ!
উফফফ! আমি যেনো আর সহ্য করতে পারছিলাম না। মিথ্যা করে বলি এই যে আমার বাসা, কারন আমি জানতাম আমার বাসার গন্তব্যস্হল পেয়েছে জানলে সে খুশি হয়ে আমাকে নামতে দেবে।
আমি নামলাম এবং আশেপাশের পুরুষমানুষদের সাথে কথা বলতে শুরু করলাম। সে টের পেয়েছে আমি তার আয়ত্বের বাইরে এবার। ঠিক তখনি একটা রিকশা খালি দেখে তাতে উঠে বসি।
রিকশাওয়ালাকে বলি মামা চালান, রিকশাওয়ালা বলে ভাড়াই তো ঠিক করেননি?
আমি বলি যা নিবেন তাই চলেন মামা!
আমার মনের উপর ঐ সময়টুকু কি গেছে তা উপলব্ধি করতে পারবেন শুধুমাত্র আমার মত মেয়েরা।
আমার মনে হয় হয়ত আমি ভাগ্যগুনে বেঁচে গেছি।
মুহূর্তে একটা কার চলে আসলো কোথা থেকে?
আমাকে কয় টুকরা লাশ বানাতে চেয়েছিল সে ভাবতে থাকি?
ভাবতে থাকি এদেশে জন্মের পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুধু নারীদের কেই দেখে আসছি সেই দেশ আমাকে দিতে পারেনি ইভটিজিং মুক্ত পরিবেশ, সেই দেশ দিতে পারেনি নারীদের নিরাপত্তা, সেই দেশ দিতে পারেনি নারী অবমাননাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি।
কোথায় যাবো আমরা?
নাহ আজ আমি কোন ভাষার ঝড় তুলতে চাইনা, আজ আমি কোন জটিল জটিল কথা বলতে চাইনা। আমি যে বড় শক্তিহীন, আমি সত্যি দানব এবং পশুদের যন্ত্রনায় অসহায়।
যা বলার আপনারাই বলুন!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




