গত কয়েকদিন বলতে গেলে নেটের সাথে কোন যোগাযোগ ছিলনা। আব্বু কখনো ওয়ার্কিং ডে তে শহর ছাড়া হয়না। কিন্তু আমার কারনে গত কয়েকদিন সে ঢাকায় ছিলো। আমার বাসার সমস্যা, আমার ডাক্তার দেখানো, আমার চাকরি আসলে কোন ভাবনাই আমার না। এগুলো যেহেতু আব্বুর ভাবনা তাই আব্বু ঢাকায় এসে সব সমস্যার মোটামুটি সমাধান করে বাড়ী ফিরে গেছে। যাইহোক, ঢাকায় আসলে আব্বুর একটা অন্যতম কাজ থাকে আজিজ মার্কেটে প্রথমায় ঢু মারা, বস্তাখানেক বই কেনা। নিউমার্কেটে ভো ভো করে ঘুরে আরো কয়েকবস্তা বই কেনা। কি কি বই সে অরোজিনালটা না পেয়ে জেরক্স কিনেছে কিন্তু বাজারে যদি অরিজিনালটা চলে আসে আর তার কেনা না হয় মান ইজ্জত সবই যে যাবে!
আমি প্রথমা তে যতবার গেছি আব্বুর সাথে। এবার গিয়ে আমি বাছাই করলাম হুমায়ূন আহমেদের একগাদা বই। ছোট থাকতে আমাদের বাসায় হুমায়ূন আহমেদের বই এসেছে মাত্র কয়েকটি। তাই হুমায়ূন আহমেদের অনেক নাটক সিনেমা দেখা হলেও বই বেশী পড়া হয়নি। যা পড়েছি হয়তো ধার করা বই।
যাহোক আমি এখন অনেক বড় যা ইচ্ছা পড়তে পারি।
কিন্তু তারপরও যখন এই বই গুলা যখন কাউন্টার এ দিলাম, আব্বু সবার সামনে বলে বসল এসব কি ছাগলমার্কা বই কিনছো?
আমি বললাম আমি এসবই পড়বো।
বললো ভালো বই কিনলে কেনো, এতগুলা ছাগলমার্কা বই কেনার কোন মানে হয়না !
তারেক মাসুদের বইটা কি তাহলে কিনবো?
সিনেমা নিয়ে এখন না পড়লেও হবে!
ভালো কথা।হুমায়ূন আজাদের কিশোরসমগ্র হাতে নিলাম। বললাম ঠিক আছে তোমার মন রাখতে এটা নিলাম।
আব্বু বললো ছাগলমার্কা বইগুলার সংখ্যা কমাও। আমি বললাম যে না এই কিশোরসমগ্র কে পলিব্যাগে জায়গা দিতে হলে হুমায়ূন আহমেদের সব বই ই আমি নিবো।
ঐদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ১১ টা ঢাকা শহরে অনেক ঘুরেছি। প্রচুর ক্লান্ত কিন্তু ঐ রাত থেকেই শুরু করলাম। আগুনের পরশমনি সিনেমাটা আগেই দেখা ছিল। উপন্যাস পড়লাম, এরপর ১৯৭১। এরপর এইসব দিনরাত্রি।
পড়তে বড় ভালো লাগছিলো এইসব দিনরাত্রি। কিন্তু শেষে টুনী মেয়েটার জন্য মন খারাপ হয়ে গেলো। কি হত টুনীকে না মেরে ফেললে?
রফিকের জন্য মন খারাপ লাগছিল। শারমীন মেয়েটার উপর রীতিমত বিরক্ত আমি। আর নীলু কারেক্টার টা উফফফফফফ!!!
হায়রে আমার কেনো ভাই নেই?
ভাই থাকলে আমার একটা ভাবী থাকতো, তবে এরকম ভাবী পেলে কখনো ঝগড়া হতোনা। কি মুশকিল!
বইটা যতক্ষন পড়েছি মনে হয়েছে আমাদের সবার জীবনই এরকম। আর আমাদের স হজ সাধারন জীবন কেই হুমায়ূন আহমেদ সবসময় তুলে আনতেন।
উপন্যাসের বিষয়বস্তু জটিল হতে হবে এমন কোন কথা কিন্তু সাহিত্যে বলা নেই। উপন্যাস প্রায়ই তুলে ধরে একটি সমাজের চালচিত্র। উপন্যাস কোন কাব্য বা মহাকাব্য নয়।
এইসব দিনরাত্রি পড়লাম বলেই কিন্তু আমি আজ থেকে ২০/২৫ বছর আগের ঢাকার অবস্হা সেসময় কি ছিল জানতে পারলাম। তুলনা করার সুযোগ পেলাম তখনকার নারী আর এখনকার নারী জীবনের কতটুকু পার্থক্য ঘটেছে।
এবং আমাকে অবশ্যই বলতে হবে নারীর জীবনযাপন পদ্ধতি নিয়ে যতই সামগ্রিক একটা বদ্ধ অবস্হান থাকুক, অনেক জায়গাতে ঠিকই অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
উপন্যাসে এক জায়গায় লেখা একা মেয়ে কেউ কখনো বাসা ভাড়া দিবেনা। এ শহর কেনো পৃথিবীর কোন শহর ই দেবেনা।
কিন্তু ঢাকা শহরে আজ পড়াশোনা করতে আসা অনেক অনেক মেয়ে বাসা ভাড়া করে থাকছে। এমনকি আজি নিজেও থাকছি। একটা কেনো এ পর্যন্ত দুটো বাড়ী ভাড়া নিয়েছি।
অফিসের প্রয়োজনে আমার আত্মীয়স্বজন অনেক মেয়েই কোন কোন দিন জরূরী মিটিং সেরে দেরী করে বাসায় ফিরলেও বাসার কেউ এটাকে বাঁকা চোখে দেখছেনা ( সকল ফ্যামিলির ক্ষেত্রে আজও অবশ্য খাটেনা!) শ্বশুর শাশুড়ী গর্ব করে বলছেন আমার ছেলের বউতো উমুক বড় কোম্পানীতে এত বড় পোস্টে আছে। আগে ১০০ তে ১ টা ফ্যামিলিও এমন ধারনা পোষন করতে হয়ত পারতোনা। আমার এক বান্ধবী বিবিএ করে বাড়ী বসে ছিল বিয়ে হয়ে গেছে পড়বে না আর তাই। ওর হাজবেন্ড গালাগালি করে এমবিএ তে ভর্তি করে দিয়েছে। ইশশশ! সবমেয়ে এমন ভালো, হেল্পফুল হাজবেন্ড পায় যেনো।
আমি প্রায়ই ভাবি ছাগলামি করার স্বভাব আমাদের স্বভাব আছে, তারপরও হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো পড়লেও সবাই খুব রাগ করে!
অথচ আমার চারপাশের মানুষগুলোর আচরন প্রায়ই তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলোর সাথে মিলে যেতে দেখি।
আম্মু প্রায়ই খুব খুবই তুচ্ছ এবং অমূলক বিষয় নিয়ে গোটা মাথা বাড়ী তুলে ফেলে যেটা খুবই বিরক্তিকর। আম্মু আর এইসব দিনরাত্রির মনোয়ারার চরিত্র তো দেখি একইরকম
গতপরশু আমার ৮৮ বছরের দাদার সাথে ফোনে কথা হচ্ছিল। কথা শেষে উনি বললেন আমার একটা কথা আছে। বলবো?
আমি বললাম বলেন।
উনি আমাকে যা বললেন তা হলো একটা ছেলে দেখে বিয়ে করো!
আমি বললাম আমি কি দেখে বিয়ে করবো?দেখা যাক সময় হলে সবাই মিলে ভাবা যাবে।
কেউ কিছু জানেনা! তারচেয়ে তুমি নিজেই পছন্দ করে কাউকে নিজে নিজে বিয়ে করো!
ইয়া মাবুদ! দাদুর কি শেষ বয়সে মাথা টা গেলো
আমার এক বান্ধবী শুনে বললো, না না তোর দাদার মাথা ঠিকই আছে, ঠিকই তোর যদি কাউকে পছন্দ হয় ধরে বিয়ে করে ফেলবি বরং এ ব্যাপারে তোর বাপ মায়েরই চেয়ে তোর দাদাই ঠিক বলেছে!
হায় হায়! আমার দাদা আমার বান্ধবী ও দেখি হুমায়ূন আহমেদের চরিত্র গুলোর মত হয়ে গেছে!
আমার এখনও অনেক বই পড়া বাকি।
জালে মাকড়শার মত বসে না থেকে হঠাৎ বই ভালো লাগছে...............
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




