আমি প্রায়ই ভাবি যে আমি আর ব্লগে নতুন কোন পোস্ট দেবোনা। নারী ইস্যু নিয়ে একটি পোস্ট শুরু করেও নিজের সাথে যুদ্ধ করে আমি আর নতুন পোস্ট লেখাতে উৎসাহী হতে পারিনি। কারন আমি মনে করি আমার যে অভিরুচি, চিন্তা, চেতনা, আমার শিক্ষা, আমার দর্শন আমাকে যে ধরনের লেখা লিখতে অনুপ্রেরনা দেয় সেগুলো শুধু শুধু ব্লগে লিখে কি লাভ?
আমার মতামতের সাথে অনেকেরই মতামতের মিল হবেনা শুরু হবে কমেন্টে কমেন্টে যুদ্ধ ! কি দরকার?
আমিতো সামু কর্তৃপক্ষের বেতনভুক্ত কোন ব্যক্তি ও না, বা লেখালেখি করে আমি এখানে কোন টাকা পাইনা। অথবা সামুর ব্লগাররাও আমার লেখাগুলো পত্রিকা কেনার মত কিনে পড়ছে না, তাহলে শুধু শুধু কি লাভ এই যুক্তি তর্ক করে?
এরচেয়ে বরং আমি যদি একটি ভালো চাকরির জন্য প্রস্তুতিমূলক পড়াশোনা করি তাহলে বরং আমার বাস্তবজীবনে লাভ আছে।
ভারত এবং বাংলাদেশ মিলে ঘটে গেলো কিছু ভয়ঙ্কর ধর্ষনের ঘটনা।
ব্লগার অপূর্ন এবং আরো দুই একজনের পোস্টে কমেন্ট করা ছাড়া আমি মোটামুটি এ ব্যাপারে চুপই ছিলাম। কিন্তু প্রতিমুহূর্তে ব্লগে কিছু পোস্ট এবং বাস্তবজীবনেও এই ধর্ষন নিয়ে অনেক মানুষের অনেক রকম মন্তব্য থেকে আজকে আমার মনে হলো না আমি আমার কিছু মতামত আজকে লিখবোই এরপর যার যেমন ইচ্ছা যুক্তি, তর্ক করুক।
ব্লগাররা যেসব বিষয়ের অবতারনা এবং যুক্তি, তর্কে গেছেন সেগুলো হলো...
১।প্রথমত সবারই মতামত ধর্ষন অবশ্যই একটি খারাপ বিষয়, কেউই ধর্ষনের পক্ষে না।
২। কিন্তু ধর্ষন কেন হয় কি করে এটাকে ঠেকানো যায় এবং ধর্ষন পরবর্তী কি করা যায় এই বিষয়টা নিয়ে অনেকেই দ্বিধাবিভক্ত।
৩।ধর্ষন পৃথিবীর কোন এলাকায় কম হয়, কেন কম কেনো বেশী হয় এটা নিয়ে অনেকেই দ্বিধাবিভক্ত।
আমার কথাগুলো
ব্লগে আছি তিনবছর কাজেই আমি জানি যে ব্লগে কখন কি কিভাবে শুরু হয় কিভাবে শেষ হয়! গতকাল ধর্ষনের একটা ঘটনা ঘটেছে সুতরাং গনহারে এ বিষয়ে একটার পর একটা পোস্ট আসবে কিছুদিন তারপর এসব নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে কথা কমে যাবে।
কিন্তু মেজাজ টা খারাপ হলো আজকে ছুটি এবং হরতাল পালনশেষে অফিসে ঢোকামাত্র মহিলা অফিসারদের ধর্ষনবিষয়ক চিৎকার চেঁচামেচি এবং মতামত দেয়া দেখে। বলাই বাহুল্য আমি কোন মতামত দেইনাই শুনলাম শুধু।
অফিসে যা শুনলাম এবং ব্লগে যা দেখছি তাতে অনেকেই যে ধরনের মতামত গুলো দিয়েছেন যেমন..
১। ভারত একটা নারী নির্যাতনকারী দেশ। ভারত একটা অশ্লীল দেশ, ভারতে তো রেপ হবেই!
২।ভারত যেসব আইটেম সং থেকে শুরু করে সিনেমা বানায় সেগুলো দেখে মানুষ রেপ করবেই।
৩।ভারতের মেয়েটি স্লিভলেস ব্লাউজ পরেছিল এবং নিশ্চয়ই বয়ফ্রেন্ডের সাথে যৌন আচরন মূলক কিছু করছিলো যা দেখে রেপিস্টস গেট লস্ট দেয়ার মাইন্ড!! ওদেরও তখন কিছু করতে ইচ্ছা হয়েছে।
৪।পোশাকের কারনে মেয়েরা রেপ হয়।
৫। বাংলাদেশের গরীব মেয়েরা যারা ধর্ষিত হচ্ছে তারা তো খারাপ পোশাক পড়ে না তাহলে তারা কেনো ধর্ষিত হলো?
অনেকের কাছে এটা নিয়ে উত্তর পেয়েছি যে এটা নাকি ভিন্ন বিষয়!!!!!!
৬।ইউরোপ আমেরিকাতেও রেপ হয়। এটা বলে আসলে ব্লগাররা কি প্রমান করে দিতে চায় আজও আমার বোধগম্য নয়!!
৭। বোরখা পড়লে রেপ হবেনা এমন বক্তব্য অনেকের।
রেপ কেনো হয় এবং আমার মতামত
আমার পড়াশোনার বিষয় সোশিওলোজি বা সোশ্যালওয়ার্ক ছিলোনা। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়েছি তবে সেইটুকু পড়া থেকে কতটুকু কি জানা যায়?
আমি আমার যে মতামত দিচ্ছি সম্পূর্ণ একটা সাধারন মানুষ হিসেবে সেগুলো দিচ্ছি।
প্রথমত, যৌন লালসা চরিতার্থ করাটাই বুঝিবা রেপের প্রথম এবং প্রধান উদ্দেশ্য, তবে সেটা অবশ্যই বিকৃত যৌনলালসা!
দ্বিতীয়ত, অনেকসময় শত্রুতামূলকভাবেও রেপ করা হয়
তৃতীয়ত, রেপের সবচেয়ে ভয়াব হ দিক হচ্ছে রেপ করার পর রোমহর্ষকভাবে যে হত্যা করা হয় সেটা।
**** আমার কাছে রেপ করার পিছনে সারাজীবনই চিন্হিত হয়ে আসবে নিম্ন এবং বিকৃত রুচি, এবং অশিক্ষা, কুশিক্ষা এবং হীন পারিবারিক শিক্ষা।
**** কিছু রেপিস্ট আছে উচ্চশিক্ষিত কাপুরুষ এবং মানসিকভাবে বিকৃত এবং অবশ্যই বাড়ীতে সুন্দরী বউ বা গার্লফ্রেন্ড থাকা স্বত্বেও এরা রেপ করে শুধুমাত্র মানসিকভাবে অসুস্হ তাই।
এদের চিকিৎসা করা ছাড়া অন্য কোন সমাধান নেই।
এরা প্রায়ই ভদ্রবেশী রুপ ধরে ধর্ষন স হ আরো অনেক রকম কুরুচিপূর্ণ কাজ করে থাকে।
**** পুরানা ধর্ষকদের ফাঁসি দিলেও নতুন নতুন ধর্ষকের আবিভার্ব হতেই থাকবে শুধু তাই নয় খুন, রাহাজানী, ডাকাতি স হ কোনকিছুই থামবে না আমাদের দেশে সুশিক্ষার প্রসার এবং অর্থনৈতিক প্রশান্তি যদি না আসে।
একটা মানুষ ভালো মন্দের পার্থক্য এবং উন্নত রুচি অর্জন করে সুশিক্ষার মাধ্যমে এবং একটা মানুষ কখনোই ভালো থাকতে পারে না যদি তার একটা অর্থনৈতিক স্হিতাবস্হা না থাকে। অর্থনৈতিক অশান্তি থাকলে মানুষ যেকোন সময় যেকোন নোংরা কাজ করতে পারে।
এবং একটি মেয়েও যখন শিক্ষিত হয় অনেকরকম সাবধানতা নিজে থেকে অর্জন করতে পারে।
তবে আমাদের দেশের আইন শৃংখলা পরিস্হিতির যে অবস্হা তাতে যেকোন সাবধানতা কে যেকোন মুহূর্তে হার মানিয়ে দেয়।
এবার আসি আমার উপরে দেয়া একেকটা পয়েন্ট নিয়ে সামান্য কিছু কথায় আমার মতামত টুকু জানাই।
## ধর্ষন ভারতেই হোক আর বাংলাদেশেই হোক আপনারা ঠিক কি কারনে ভারত এবং বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিটা ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত হোন?
আপনাদের কি একটুও লজ্জা বোধ করে না? লজ্জার কি সামান্যতম চামড়া আপনাদের নাই??
ভারতে কেনো কিভাবে অবশ্যই ধর্ষন হতে পারে যখন যুক্তি দেন তখন আপনার যুক্তির সুযোগ নিয়ে আপনার বাড়ির পাশের মেয়েটি যখন নির্যাতিত হয় তখন কি তার খবর রাখেন?
তখন কি আপনি এগিয়ে যান?
## দেশটি ভারতই হোক আর বাংলাদেশই হোক আর মধ্যপ্রাচ্য হোক কিংবা হোক পাকিস্হান বা ইউরোপ আমি লজ্জায় কুঁকড়ে যাই এটা ভেবে যে আপনারা কি রকম বিশ্রী একটা তর্কে লিপ্ত হোন।
দেশ যেটাই হোক নির্যাতিত তো আমাদেরই কারো মেয়ে বা বোন হয়েছে তাইনা?
##আজকে যদি আপনার ছোটবোনের লাশ আপনার কাঁধে তুলতে হতো পারতেন বা পারবেন নানা রকমের যুক্তি তর্ক নিয়ে লিপ্ত হতে কোন দ্বন্দ্বে?
##আজকে যদি আপনার বোরকা পরিহিতা বোনকেও নেকাব খুলে ধর্ষন করা হয় পারবেন আর একটা কথা বলতে?
##মনে রাখুন একজন ধর্ষকের কাছে নারী শরীরটাই মূখ্য, সে শরীর কালো না সাদা নাকি আইটেম সং গার্লের মত নদীর মত আঁকাবাঁকা শরীর সেটা মূখ্য বিষয় থাকে না।
বোরকা পরিহিতা হলেও ওটি যে মেয়ে সেটা তো ধর্ষক রা বুঝে!!
## ধর্ষক এত অমানুষ যে তারা ৩/৪/৫ বছর বয়সী একটি বাচ্চাকেও ধর্ষন করে অনায়াসে। ধর্ষকের প্রয়োজন ধর্ষন সেক্ষেত্রে একটি বাচ্চা হলেও তাদের কিছু যায় আসেনা!
আর শুধুমাত্র বীর্যপাত করতে পারলেই তো ধর্ষকের শান্তি! কারন ধর্ষন এমন একটি যৌন প্রক্রিয়া নয় যে সেখানে খুব সফিসটিকেটেড শারীরিক প্রশান্তি পাওয়ার বিষয়টি কাজ করবে!!
নাহ আমি এ কথা বলছি না যে গায়ের কাপড় খুলে রাস্তায় ঘুরুন! অবশ্যই শালীনভাবে চলাটাই সবার কাম্য, শালীনতা নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই এবং শালীনতা জিনিসটা শুধু কাপড়ে থাকে না শালীনতা জিনিসটা প্রকাশ পায় মানুষের ব্যবহারেও।
কিছু কিছু ছেলে আছে যাদের চোখ মেয়েদের মুখে না যায় বুকে! কিন্তু তাই বলে কি সবাই সেরকম? নাহ কখনোই না।
আর শারীরিক ব্যাপারটি কি শুধু ছেলেদের মাঝে কাজ করে শারীরিক ব্যাপারটি মেয়েদের মাঝে কাজ করে না?
আমি এ পর্যন্ত নেট বা বিভিন্ন বইয়ে শারীরিক চাহিদার ব্যাপারে যতটুকু পড়েছি সবজায়গায় এরকমই ম্যাসেজ পেয়েছি যে শারীরিক চাহিদার ব্যাপারে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের চাহিদা অনেক বেশী তীব্র এবং দীর্ঘায়িত।
তাহলে একজন মেয়ে হিসেবে কি আমি রাস্তাঘাটে ছেলেদের ধরে বলবো আসুন আমার শারিরীক চাহিদা মিটিয়ে যান?
অথবা আমি কি বাসে বা পার্কে প্রেমিক প্রেমিকার আলিঙ্গন বা চুম্বন দেখে প্রেমিক পুরুষটিকে বলবো যে তোর প্রেমিকার সাথে যা করছিস আমার সাথেও এখন তাই কর। বিকজ আই হ্যাভ লস্ট মাই মাইন্ড!!!!
সবার শেষে কযে বিষয়টি বলবো সেটা হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে নারী পুরুষ যেমনভাবে তৈরী তাতে হয়ত ৯৮/৯৯ ভাগ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হোন কিন্তু পুরুষরাও যে যৌন অত্যাচারের শিকার হোন এটা আমরা বাঙালীরা প্রায়ই ভূলে যাই।
অনেক অনেক ছেলে এমনকি আমাদের দেশের ছেলে খুব অল্প বয়সে, ছেলেটি হয়ত বেশ বা অনেক সুন্দর এমন ছেলে কে অনেকসময় অনেক মহিলা বিকৃতভাবে ব্যব হার করেন এটা কি আপনারা স্বীকার করেন বা মানেন বা জানেন?
এ ধরনের ঘটনা গুলো প্রায়ই অন্তরাল থেকে যায়।
এবং আরেকটা ঘটনা দুনিয়া জুড়ে ঘটে সেটা হলো উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত কোন পুরুষকে বিপদে ফেলার জন্য অনেক সময় পাতা হয় ফাঁদ।
এ বিষয়টি দীর্ঘ করলাম না আশা করি আপনারা এটা জানেন।
এটাও কি নির্যাতন নয়?
তাহলে কি আমরা মানুষ হিসেবে কেউ বিপদমুক্ত? আগামীকাল আপনার সাথে এরকম ঘটনা ঘটলে তখন আপনি কি বলবেন?
আমি জানি আপনি কিছুই বলতে পারবেন না!
আর আরেকটা বিষয় যেটা বাদ দেবো না সেটি হলো যে কোন দেশে ধর্ষনের হার কতো সেটার দেখি চার্ট অনেক ব্লগার পকেটে করে নিয়ে ঘুরছে। পোস্টে পোস্টে গিয়ে কমেন্টে আটকিয়ে দিচ্ছে!!
ব্যাপারটা যেন এরকম আরে ধর্ষন তো ইউরোপ আমেরিকতেও হয় তাহলে এখানে ধর্ষন হয়েছে সেটা আর কি?
আপনাদের উদ্দেশ্যে আমার বাস্তবজীবন থেকে একটা উদাহরন দেই, আমার ছোটবোনকে কোন একটা বিষয় কখনো মানা করলে সে তার নিজের দোষ ঢাকার জন্য অমুকেও এটা করেছে, তমুকেও এটা করেছে বলে যুক্তি দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টায় থাকে!
একদিন কিছু একটা আমি মানা করেছি আমাকে সে উল্টা বললো আমিও নাকি কোনদিন কি একটা ভূল কাজ করেছিলাম।
ওর এই শাক দিয়ে মাছ ঢাকাটটা নিয়মিত হয়ে গিয়েছিলো, রাগও হলো ঐদিন চরম। ঠাস করে একটা চড় লাগালাম তারপর বললাম কে কি অপরাধ করেছিলো বা ভুল করেছিলো তা বলে তুই কি প্রমান করতে চাস যে তোর ভুলটা লাইসেন্সড হয়ে গেছে? তোকে তো আমি তোর ভালোর জন্যই বলছি তাহলে কথা শুনছিস না কেনো?
লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট, ধর্ষন কে কেন্দ্র করে কিছু কিছু মানুষ এমন কথা বলছে যাতে মনে হচ্ছে সকল বাঙালী নারী প্রতিমুহূর্তে ধর্ষন হচ্ছে এবং সেহেতু সেই সাথে আমিও হচ্ছি।
আপনারা প্লিজ থামুন!!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:০৯