somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মধুমতি এবং আমি

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তখন আমি প্রাইমারীতে পড়ি.......

স্কুলে ছুটির ঘন্টা বাজছে... বই-খাতা বগলে চেপে দে দৌড় কে আগে যেতে পারে। কারন স্কুলের সামনেই একটি সাকো যা পার হতে হলে একজন একজন করে উঠতে হবে। আর যে আগে উঠবে সে আগে পার হবে। এটাই স্বাভাবিক। শুধু আগে পার হয়ে যাওয়াই মূল উদ্দেশ্য নয়। আগে পার হতে পারলে আগে আগে বাড়ী যেয়ে ওছা জাল(নেট মশারীতে তিন টা বাশের কাঠি দিয়ে বানানো) নিয়ে আগে মধূমতি নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া যাবে এটাই ছিল উদ্দেশ্য।

আজও মনে পড়ে সামনে ওছা জাল পিছনে আমি আমার কোমরের সাথে চিকন রশি দিয়ে বাঁধা সিলভারের হাড়ি চলছি স্রোতের বিপরীতে। কিছুদুর যাবার পর জাল তুলে দেখতাম চিংড়ি মাছ চড়াৎ চড়াৎ করে লাফাচ্ছে। সেই সাথে দু' একটা রয়না/ভ্যাদা/মেনি মাছ উঠত এমন কি কইড়া পুটি অর্থাৎ বড় পুটি মাছ ও উঠত। কচুরিপানার ভিতর খ্যাপ দিলে চেউয়া বাইলা, নুন্দীবাইলা, ডগরী বাইলা, সাদা বাইলা মাছ সাথে দু একটা কই মাছ, সিং মাছ ও উঠত। আধা ঘন্টা এক ঘন্টা মাছ ধরলেই হাড়ি ভরা ভরা হয়ে যেত।

মাছ ধরা শেষ এবার নদীর চর থেকে তিলের পাতা ছিড়ে মাথায় ঘষা এতে চুল পরিষ্কার হয়, মাথা ঠান্ডা থাকে। গোসল করতে নদীতে ঝাপ দিলাম। দুরে একটা কলা গাছ ভেসে আসছে দেখে সাতরিয়ে তিন জনে মিলে ওটা ধরলাম। এক কলা গাছ ৩ জনেই সাতার দিলাম নিয়ে নদীর ওপারে যাবো। নদীর ওপারে খিরাই, বাঙ্গী (ফুড), তরমুজের চাষ হয় চুরি :Dকরে খাবো। কিছু খাওয়া হলো কিছু সাথে করে নিয়ে এপার চলে আসলাম। এর মধ্যে দেখলাম ঢাকা থেকে দোতলা লঞ্চ আসছে। লঞ্চের ঢেউয়ে দোল খাবার জন্য আরো কিছুক্ষন থাকলাম পানিতে। বাড়িতে আসার পর মায়ের বকুনি কেন এত দেরী করলাম নদীতে। কিন্তু মাছ দেখে মায়ের মন ভরে যেত।


তখন আমি হাইস্কুলে পড়ি......

স্কুল ছুটি তাড়াতাড়ি বাড়িতে এসে কইয়া জাল (কই মাছ ধরার উপযোগি) পুইটা (পুটি মাছ ধরার) নিয়ে রওনা নদীতে। জালের এক মাথায় একটুকরা কলা গাছের সাথে আর এক মাথা আমার হাতে। চলছি এবার স্রোতের সাথে। ১০/১৫ মিনিট পর জাল টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলে দেখা যেত সাদা চাপিলা মাছ আর পুটি মাছে জাল সাদা হয় গেছে (গল্প না মোটেই, সত্যি কথা) হাড়ি ভরতে সময় লাগত না। সে মাছের স্বাধ এখনও জিহ্বে লেগে আছে। অনেকটা ইলিশ মাছের মত ঘ্রাণ।


তখন আমি কলেজে পড়ি........

বছরে দুইবার ছুটিতে বাড়ি আসি ঈদের সময়। এবার এসে বন্ধুদের বল্লাম দোস্ত রাতে নদীতে মাছ ধরতে যাব। রাতে ঝাঁকি জাল নিয়ে ৪ বন্ধু চল্লাম আমি, আলিম, নূর ইসলাম আর একলাস মিয়া। শেষ রাতে পূর্ণিমা লাগবে ভরা জোছনা। বোরো ধান কেটে নিছে হয়ত ১ সপ্তাহ হবে। জোয়ার এসে ধানের গোড়া গুলো তলিয়ে গেছে। ও সকল ধানের গোড়ায় জাল ফেলে টানার সময় সে যে কি আনন্দ বড় বড় গলদা চিংড়ির লম্বা লম্বা পা আর দাড়ি জালে বেধে উপরের দিকে উঠে আসে। সাথে একটা কাপড়ের ব্যাগ ভাটা আসার আগেই ভরে গেল। আজও মনে পড়লে হাসি পায় আলিম নিজের লুঙ্গী খুলে :P(সর্টপ‌্যান্ট পরা ছিল) একমাথা গিট্ঠু দিয়ে তার ভিতরে মাছ নিয়ে এসেছিল। কারন ওর ব্যাগটা ছিল ছোট আর ও মাছ পাইছিলো বেশি।

মধুমতিতে বাৎসরিক নৌকা বাইচ হতো। নদীর চরে মেলা বসত যে মেলায় কেনা কাটা করার জন্য ছোট বেলায় মাটির ব্যাংকে টাকা জমাইতাম। ঠিক মেলার আগের দিন ব্যাঙ্ক ভেঙ্গে কয়েনগুলো পাশের দোকানে দিয়ে ১ টাকা ৫ টাকার নোট নিতাম।



এখন আমি প্রবাসে থাকি.......

দেশে যাবো করে কিছু কেনা কাটা করলাম তার মধ্য আমার জন্য কিনলাম মাছ ধরার বড়শি, ছিপ, হুইল, কিছু মশলা যা দিয়ে মাছের আদার তৈরি করা হয়। বাংলাদেশি টাকার ১২/১৩ হাজার টাকা আমার খরচ। তবু মনে আনন্দ দেশে যেয়ে বিকাল বেলা মধুমতি নদীতে বড়শি ফেলব, দেশি রুই, বোয়াল বা আইড় মাছ যদি একটা পাই তাহলে ই স্বার্থক।


প্রতিবার আমি ঢাকা থেকে ফেরার সময় টুঙ্গীপাড়া নেমে সোজা খেয়া ঘাটে এসে নৌকায় উঠে আগে মধুমতির পানি দিয়া হাত মুখ ধুইয়া কখনও কখন ও দু একঢোক পান করে সকল ক্লান্তি দূর করতাম।

কিন্তু এবার বাড়ীতে আসলাম রাতের বাসে নদী পার হলাম ফেরীতে নদীর পানি টেস্ট করা হলো না ভালো করে রাতের অন্ধকারে আমার মধুমতি কে দেখা ও হলো না। পরদিন দুপুরের খাবার খেয়ে আমার শখের বড়শি নিয়ে নদীতে গেলাম।

একি! কোথায় আমার মধুমতি? কোথায় সেই স্রোত? কোথায় সেই কুল ভাঙ্গা ডেউ? নদীতে গর্জন নেই কেন? না খাওয়া রুগ্ন বস্তির ছেলেটির মত সুকিয়ে আমার মধুমতি চিকন একটা খালে পরিনত হয়েছে। দেখে মন খারাপ হয়ে গেল.... আমার কান্না পেতে লাগল। হয়ত আমার নাতি-নাতনী বা তাদের ছেলেমেয়েরা কোন একদিন বলবে এইখানে মধুমতি নামের একটি নদী ছিল



ছবি গুলো গুগল থেকে নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:২৮
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×