somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পবিত্র কুরআনে পরস্পর বিরোধী দুটি বাক্য, "আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত গাছের একটি পাতাও নড়ে না" এবং "মানুষের ভাগ্য তার ইচ্ছা ও কর্মের উপর নির্ভরশীল"- এর সঠিক ব্যাখ্যা

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



بسم الله الرحمن الرحيم
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর, যিনি আজ আমাকের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করার তৌফিক দান করেছেন। এবং লক্ষ কোটি দরুদ আমাদের প্রিয় নবী
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর।

প্রশ্নঃ আল্লাহ তাআলা কুরআনউল কারীম এ বলেছেন "আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত গাছের একটি পাতা পর্যন্তও নড়ে না।" অর্থাৎ পৃথিবীতে যা কিছু হয় সব আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়। তাহলে তো চোর চুরি করে আল্লাহর ইচ্ছাতেই, সকল খারাপ কাজও আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়।
অপরদিকে কুরআনে আরও বলা আছে, "মানুষের ভাগ্য তার ইচ্ছা ও কর্মের উপর নির্ভরশীল।" এখন প্রশ্ন হলো কথা দুটি কেমন জানি পরস্পর বিরোধী হয়ে গেল না? সব কাজই যদি আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয় তাহলে মানুষের ইচ্ছা বা কর্মের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে আর কোনো খারাপ কাজ করলেও মানুষের দোষই বা কোথায়? সব তো আল্লাহর ইচ্ছাতেই হচ্ছে। সেই দিক থেকে তো আমরা কেউই অপরাধী নয়।

উত্তরঃ প্রথম কথা হলো আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন কুরআনে কোনো পরস্পর বিরোধী কথা নেই। আমরা আপাতঃ দৃষ্টিতে কুরআনের যে কথাগুলোকে পরস্পর বিরোধী বলে ভেবে থাকি তা মোটেও পরস্পর বিরোধী নয়। আমাদের জানার অভাব ও জ্ঞানের স্বল্পতার কারণেই আমাদের এরকম মনে হয়ে থাকে। এই জন্য আল্লাহ তাআলা বারবার আমাদেরকে কুরআন নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে সঠিক তথ্য উদঘাটন করতে বলেছেন।
আসুন প্রথমে জেনে নেওয়া যাক ইচ্ছা কত প্রকার ও কি কি?
ইচ্ছা ২ প্রকার -
১। তাৎক্ষণিক ইচ্ছা এবং
২। অতাৎক্ষণিক ইচ্ছা।

তাৎক্ষণিক ইচ্ছা হলো সেইসব ইচ্ছা যেই ইচ্ছাগুলো আমরা তৎক্ষণাৎ প্রকাশ করে থাকি আর সেই অনুযায়ী কাজ করি। যেমন: এইমাত্র আপনার বই পড়ার ইচ্ছা হলো তাই আপনি বই পড়তে শুরু করলেন । এটা হলো আপনার তাৎক্ষণিক ইচ্ছা ও সে অনুযায়ী কর্ম।

এবার আসুন অতাৎক্ষণিক ইচ্ছায়,
আপনার বাসাতে যে টিভি আছে তার অবশ্যই একটা রিমোট আছে। আর এই রিমোট অবশ্যই একজন ইঞ্জিনিয়ার প্রোগ্রামের সাহায্য নিয়ে তার ইচ্ছা মতো তৈরি করেছেন। ধরুন তিনি প্রোগ্রামের মাধ্যমে তার ইচ্ছা অনুযায়ী সেট করে দিয়েছে রিমোটের সবুজ বোতামটি টিপলে টিভি চালু হবে এবং লাল বোতামটি টিপলে টিভি বন্ধ হয়ে যাবে। এখন আপনি রিমোটটি সহ টিভি কিনে বাসাতে এনেছেন । আপনি টিভি চালু করতে গিয়ে বারবার রিমোটের লাল বোতামটিতে চাপ দিচ্ছেন কিন্তু টিভি চালু হচ্ছে না। যেইমাত্র আপনি সবুজ বোতামে চাপ দিলেন সঙ্গে সঙ্গেই টিভি চালু হয়ে গেল। এখন বলুন তো টিভিটি কি শুধু আপনার নিজের ইচ্ছাতেই চালু হলো, নাকি ইঞ্জিনিয়ার তার ইচ্ছা অনুযায়ী যে বোতামটি টিভি চালু হওয়ার জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছিল সেই বোতামে চাপ দেওয়ার ফলে টিভি চালু হলো? ঠিক একই ভাবে আপনি যদি ওই বোতামটিতে চাপ না দিতেন তাহলে কিছুতেই টিভি চালু হতো না। অর্থাৎ আপনার তাৎক্ষণিক ইচ্ছা যখন ইঞ্জিনিয়ারের অতাৎক্ষণিক ইচ্ছার সঙ্গে মিলে গেছে তখনই টিভিটি চালু হয়েছে।

এখন ভেবে দেখুন তো কাজটি তো আপনিই করলেন কিন্তু পরোক্ষ ভাবে কাজটি হয়েছে ইঞ্জিনিয়ারের ইচ্ছায়। এখানে ইঞ্জিনিয়ার তার ইচ্ছা মতো আপনার জন্য দুটি অপশনই সেট করে রেখেছিল একটি ছিল টিভি চালু হওয়ার সঠিক বোতাম আর অন্যটি ছিল চালু হওয়ার জন্য ভুল বোতাম।

ঠিক আল্লাহর ইচ্ছায় সকল কাজ হওয়ার ব্যাপারটিও ইঞ্জিনিয়ারের ইচ্ছা অনুযায়ী রিমোটটি কাজ করার মতোই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সৃষ্টি করার আগেই নিজের ইচ্ছামত সকল নিয়ম কানুন তৈরী করে রেখেছেন। কোন কোন কাজ গুলো করলে আমরা সফল হবো অর্থাৎ জান্নাতে যেতে পারবো আর কোন কাজ গুলো করলে আমরা বিফল হবো অর্থাৎ জাহান্নামে যাবো তা আল্লাহ পূর্বেই নির্ধারণ করে রেখেছেন। আপনার সামনে আল্লাহর ইচ্ছায় তৈরি করা সঠিক পথ এবং ভুল পথ দুইটায় খোলা আছে। এখন আপনি যদি সঠিক কর্মের দ্বারা সঠিক পথে চলেন তাহলে আপনি জান্নাতে যেতে পারবেন অর্থাৎ সঠিক পথ সংক্রান্ত আল্লাহর অতাৎক্ষণিক ইচ্ছার সঙ্গে যদি আপনার তাৎক্ষণিক ইচ্ছা ও কর্ম মিলে যায় তবেই আপনি জান্নাতে যাবেন। একই ভাবে ভুল পথ সংক্রান্ত আল্লাহর অতাৎক্ষণিক ইচ্ছার সঙ্গে আপনার তাৎক্ষণিক ইচ্ছা মিলে গেলে আপনার ঠিকানা হবে জাহান্নামে।

এখান থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় আপনার সফলতা আপনার কাজের উপরেই নির্ভরশীল। আপনি আপনার সাধ্য মতো কাজ করার পর আল্লাহর কাছে দোআ করুন , "হে আল্লাহ আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি, সকল ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে তুমি আমাকে সফল করো।" আল্লাহ অবশ্যই আপনার মনের নেক ইচ্ছা পূরণ করবেন। কিন্তু আমরা যদি কোনো কর্ম না করেই শুধু ভাগ্যের উপর নির্ভর করি আল্লাহ কখনই আমাদের সফল করবেন না।

প্রকৃতি যে নিয়মে চলে সবি আল্লাহর অতাৎক্ষণিক ইচ্ছার ফল। আগুনের ধর্ম পোড়ানো, পানির ধর্ম শীতল করা, তাপের ধর্ম গরম করা এসবকিছু তিনি পূর্বেই নির্ধারন করে দিয়েছেন । আমরা নিজের ভাগ্যকে নিজের মতো করে গড়তে পারবো কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম পাল্টানো সাধ্য আমাদের নেই । এই ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। যেমন ইব্রাহিম (আ: ) কে যখন অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হয়েছিল তখন আগুন শীতল হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ সেই মুহূর্তে আল্লাহর অতাৎক্ষণিক ইচ্ছা তার তাৎক্ষণিক ইচ্ছার দ্বারা পরিবর্তিত হয়েছিল।

সারকথাঃ আমরা ভালো, মন্দ যা কিছু করি সবই আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়, কিন্তু তা হলো আল্লাহর অতাৎক্ষণিক ইচ্ছা। সুতরাং আমাদের সফলতা আমাদের কর্মের উপরই নির্ভরশীল। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়েত করেন এই বিষয়টিও ঠিক একই রকম। আমাদের চেষ্টা করতে হবে আর আল্লাহ সেই চেষ্টার ফল দেবেন।

আমি আপনাদের বিষয়টি কতটুকু ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি জানি না। তবুও আশা করি, এই আলোচনাটি সামান্যটুকু হলেও আমাদের সকলের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবে।
আল্লাহ সবাইকে সঠিক ভাবে বুঝে সে অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন। "আমিন"

লেখাটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছে আমার নিজস্ব ইসলামিক ব্লগে
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০৯
৭টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×