পটকা ভাই তার বাবার ধমকানিতে গরুকে আর সুপার ষ্টার বানতে পারলেন না। সেই ক্যাচালে মিলিও পটকা ভাইকে এক পাহাড় (দুইটাও হতে পারে) সমান ছ্যাকা দিয়ে চলে গেল। কিন্তু পটকা ভাইতো পটকা ভাই। “সাগর শুকিয়ে যায় (আই মিন শীত আসলে ঠান্ডা হয়ে যায়) আগুন জ্বলতে জ্বলতে নিভে যায় (ফায়ার সার্ভিসের পানিতে) কিন্তু পটকা ভাইর প্রেম করার আকাঙ্খা, আসত্তি যোগ্যতা, চেষ্টা কনোটাই কমে না। পটকা ভাইয়ের এবারের টার্গেট বিলকিস।
বিলকিসের সব কিছুতেই সেরা। বিলকিস আসলে সেরাদের সেরা। কি চেহারা,কি গায়ের রং দুধে আলতার চেয়ে বেশী। এক গ্লাশ দুধের মধ্যে আধা গ্লাস অফহোয়াইট কালার ঢাললে যে রং দাড়ায় ঠিক সেটাই হল বিলকিসের গায়ের রং। কি অদ্ভুত। ফিগারের কথা বললেই পটকা ভাইর মন খারাপ হয়ে যায়। শরীরে অন্যান্য অুনষঙ্গের ভাল খারাপের সাথে মন খারাপরে সম্পর্ক আবুল আর গর্তের মত। জিরো না কি একটা ফিগারের সাইজ আছে না। বিলকিসের তা না। জিরোতো পাট কাঠি। শরীরে যদি মাংশই না থাকে তবে কিসে কি? গরীবের ফিগার হল জিরো। যারা দুবেলা দুমুঠো খেতে পায় না। বিলকিস মাশাল্লাহ ভালই খায়। বিলকিসের ফিগার আড়াই থেকে পৌনে তিন এর মত হবে। এই বিলকসের প্রেমে পড়েছে পটকা ভাই। বিলকিস সম্পর্কে পটকা ভাইয়ের খালাত বোন। বয়স দুজনের কাছাকাছি। কিন্তু বিলকিসের সামনে ভালবাসার কথা বলার মত সাহস তার নাই। বিলকিসের আড়াই সাইজের ফিগার থেকে প্রমাণ সাইজের মুখখানা বেশী ভয়ানক। মুখে কিচ্ছু আটকায় না। ছেলেদের মত রীতিমত গালাগাল দেয়। বিয়ের পর দেখা যাবে যদি কোন কিছু ঠিকমত না করতে পারে তবে শালার পুত বলে গালি দিবে। নিজের অন্ধকার ভবিষত চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন পটকা ভাই। কিন্তু কিছুই করার নেই। ভালবাসা অন্ধকার মনে না, মানে না গালাগালি।
বিলকিস বেড়াতে এসেছে পটকা ভাইয়ের বাসায়। সুযোগ বুঝে বিলকিসের আশে পাশে থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সে বোধহয় পটকা ভাইয়ের ধান্দা বুঝে গেছে। সখি তুমি যাহা কর না ক্যান তোমার পাশেই আমি আছি। পটকা ভাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, অনেক মেয়ে ছেড়েছেন বিলকিসকে নো ছাড়াছাড়ি। বিলকিসের সাথেই হবে আমার “স্বপ্নের বাসর” এই দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে পটকা ভাই কাজ শুরু করে দিয়েছেন। টিভি দেখছিল বিলকিস। পটকা ভাই গিয়ে বিলিকিসের পাশের সোফায় বসলেন “কিরে বিলু কি করিস? বিলকিস পটকা ভাইয়ের কথা শুনে এমন ভাবে তাকালেন মনে হল বিলকিসের ধ্যান ভেঙ্গে গেছে। ষ্টার প্লাসের ধুপ ধুপ ধুপ করে উঠা চাহনী বিলকিস পটকা ভাইকে দিল। পটকা ভাই নিজেই বলল “ ওহো সিরিয়াল দেখছিস ,দেখ দেখ ফ্রি হইলে বলিস তোর সাথে কিছু কথা বলবো” বিলকিস ফিরেও তাকালনা।
অনেক্ষন পর বিলকিস পটকা ভাইকে জিজ্ঞেস করল “ কিরে কি বলবি জানি”
-তেমন কিছুই না, এইতো। ভাল্লাগেনারে।
-ক্যান? পকেটে টাকা নাই? ওহো তুইতো আবার বেকার মানুষ।
টিপ্পনী গায়ে না লাগিয়ে পটকা ভাই বলা শুরু করল “ না রে পোলাপাইন রাতে জাইগা কথা বলে,ওলো ওলো কথা বলে, আর আমি বেচারা রাতে খালি ঘুমাই”
-হি হি হি তোর নাম পটকা আর তুই কথা বলার আবদার করস। পটকা নামের কারো সাথে কে কথা বলবে? তোর নামে শুনলেইতো মনে হয় তুই ধান্দাবাজ। আর তুইতো কথা বলতেই পারস না। তুই ফোনে কথা বললে ও পাশ থেকে মনে হয় কোন এমপি সংসদে বলছে “মাননীয় ষ্টিকার...........
রাগে, ক্ষোভে অপমানে পটকা ভাইর মরে যেতে ইচ্ছা হচ্ছে। আল্লাহ এত সুন্দর একটা মেয়ের মুখ এত খারাপ কিভাবে দিতে পারলেন? জগতের সব সুন্দরীর কি তাহলে মুখ খারাপ। ঐশ্বরিয়ার মুখও কি খারাপ? সে রাতে পটকা ভাই ঘুমাতে পারলেন না। একটানে ৭ টা কবিতা লিখলেন। মনে উসখুস করতে লাগলেন যে কোন মূল্যে এ কবিতাগুলো বিলকিসরে দেখানো লাগবে। তাহলে মন হয়ত কিছুটা গলবে। সে উদ্দেশ্য সফল করার জন্য সকাল বেলা কবিতাগুলো এমন এক জায়গা রাখলেন যেখানে বিলকিস অবশ্যই যাবে। নিরাপদে কবিতা রেখে পটকা বাইরে চলে গেল।
দুরুদুর মনে জায়গাটা পরিদর্শন করে এলেন। গিয়ে দেখলেন কবিতাগুলো নেই। নিশ্চয় বিলকিস পড়ে রেখে দিয়েছে। আহারে জীবনে এর থেকে বড় শান্তি আর কি। রুমে ঢুকে পটকা ভাই পটাপট কাগজ কলম নিয়ে বসলেন। লাইন আসছে। বিদ্যূৎ না থাকায় দরদর করে ঘামছেন। কিন্তু কোন গরমের সাধ্য আছে পটকা ভাইকে থামায়, কোন মন্ত্রীর সাধ্য আছে পটকা ভাইর কবিতা লেখা থেকে বিরত রাখে। না কেউ পারেনি। বিলকিসের খুশীতে পটকা ভাই টানা তিনখানা কবিতা লিখে ফেললেন। পটকা ভাইর শেষে কবিতাটি রীতিমত সংসার ভাবনা নিয়ে। কবিতার শেষের কিছু লাইন এরকম-
বিলকিস
আমার মা তোমার শ্বাশুড়ী নয়
নয় খালাম্মা।
আম্মা।
তোমার মা আমার শ্বাশুড়ী নয়
নয় খালাম্মা
আম্মা।
কোন কিছু সৃষ্টি করার পর ভীষন আনন্দ হয়। আনন্দে পটকা ভাই ড্রয়িং রুমে গেলেন। বিলকিস সেখানে টিভি দেখছিল। বিলকিসকে দেখে পটকা ভাই জিজ্ঞেস করলেন “ কেমন হইছে”
-বেশ ভাল।
পটকা ভাই খুশী ধরে রাখতে পারলেন না। মনে হয় এখনই কেঁধে দিবেন। আবেগ ধরে রেখে আবার জিজ্ঞেস করলেন “ সত্যিই ভাল লাগছে?
বিলকিস টিভি থেকে মুখ না সরিয়ে বলল “ সত্যিই অনেক ভাল”
পটকা ভাইর গলা এবার ধরে এলো। কাঁপানো গলায় বললেন “ কোনটা সবচেয়ে ভাল হইছে”
বিলকিস আগের মতই বলল “ ছুরি শুটকি দিয়ে বেগুন, অসাধারণ। বড় ভাবীর রান্নাতো চমৎকার”
এবার পটকা ভাইর চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এলো। তিনি তার নিজের ঘরে গিয়ে চোখ মুছে আসলেন।
-আচ্ছা ওভেনের উপর আমি কিছু কাগজ রাখছিলাম,ওগুলো দেখছস নাকি কোথায়?
-হুমম
-কেথায়?
এবার বিলকিস মাথা ঘুরাল। পটকা ভাইর বুকটা ছ্যাৎ করে উঠল। বিলকিস বলা শুরু করল “ আমি ভাবী টিভি দেখছিলাম। নিহাল (পটকা ভাইর ৭ মাস বয়সী ভাতিজা) টয়লেট করল। ভাবী ফ্লোর পরিস্কার করার টিস্যু বা নেকড়া আনতে বলল আমি সামনে কাগজগুলা পেলাম নিয়ে ভাবীকে দিলাম। কেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু?
পটকা ভাই কি করবেন বুঝতে পারলেন না। এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন। একটা সিগারেট ধরালেন। কাগজ কলম নিয়ে বসে গেলেন এবং দুইটা কবিতা লিখে ফেললেন। দ্বিতীয়টা বেশী আবেগী এবং খুব অভিমানী।
তুমি বিলকিস, তুমি পাষানী
তুমি আমাকে বুঝেও বুঝনি
তুমি বিলকিস তুমি ধ্বংস
তুমি পারলেনা হতে আমার অংশ।
তুই বিলকিস তুই অযথা
তোকে নিয়ে আর নো কবিতা।
বিলকিস তুই কেবলই একজন বিলকিস
এর বেশী কিছু না।
সেদিন থেকে বিলকিসের পিছনে পটকা ভাই আর ঘোরেনা। কবিতা লিখবেন না বললেও পটকা ভাই প্রতিরাতে বিলকিসকে নিয়ে কবিতা রচনা করেন। এরমধ্যে একটা বিলকিসের আড়াই থেকে তিন ফিগার নিয়ে। তিনদিন পর হঠাৎ শুনলেন বিলকিস বাসায় চলে যাবে। নিয়ে যাওয়ার দায়ীত্ব পড়েছে পটকা ভাইয়ের উপরে। পটকা ভাই রাজী হয়ে গেলেন। যাওয়ার পথে সিএনজিতে বিলকিস পটকা ভাইকে বলল “পটকা কিছুদিন পর আমার বিয়ে, তাই তোদের বাসায় কিছুদিন থেকে গেলাম, তোকে কিন্তু আমার বিয়েতে তিনদিন আগে আসতে হবে। আমি ঠিক করেছি আমার ষ্টেইজের দায়ীত্ব তোকে দিব। তুই কবিতা লেখস ক্রিয়েটিভ মানুষ তুই বুঝবি ভাল”
পটকা ভাইয়ের চোখে আবার পানি চলে আসল। বিলকিস তাকে কত ভালবাসত যে ষ্টেইজের দায়ীত্ব তাকে দিয়েছে। পটকা ভাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন তিনদিন আগে না, পাঁচদিন আগে যাবেন।ষ্টেইজ করলেতো হবে না কোন জায়গায় হবে,ক্যামনে হবে মাপ জোকের ব্যাপার আছে না। ভালবাসার মানুষের বিয়ে বলে কথা
পটকা ভাই সিরিজের আগের পোষ্টগুলো
নরকের প্রথম স্তর।
নরকের ২য় স্তর।
সুপার ষ্টার কাউ
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ২:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



