somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্পর্শবিজ্ঞান

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তোমাদের যেখানে মন চায় চলে যাও, আজ আমি কোথাও যাবো না। আজকের দিন হোক কেবলই আমার নিজেকে নিয়ে। আমি নিজের ভেতরে খুঁড়ে দেখবো কতোটুকু তোমরা ছুঁতেও পারো নি। আমি এতোদিন আগলে রাখতে পেরেছি! এতো এতো সংগ্রাম অর্থবোধক ভীষণ, আমি কাউকে ছুঁতেও দিবো না সেই কয়েকটুকরো হৃদয়ের জমিন।

কাউকে স্পর্শ করার কামনা কতোটা তীব্র হতে পারে? এই প্রশ্নটা নিয়ে আমি কখনই ভাবি নি। আর ভাবি নি বলেই আমার জানা নেই স্পর্শ করার আকুতিতে মনের ভেতর পুড়ে ছাই হয়ে যেতে বেশিক্ষণ লাগে না। বেশি না। শুধু হাতের আঙুলের আলতো ছোঁয়ার ইচ্ছার শক্তি এতোটাই! আমার বুকের 'পরে পাথরের মতো চেপে বসতে পারে। মনে হতে থাকে চারপাশে কোথাও কোনো বাতাস নেই। আদিগন্ত ভ্যাকুয়াম। জ্যাজ!

তাই সেদিন থেকে আমি জানার চেষ্টা করি স্পর্শকামনা কেমন। ঠিক কতোটা বিচিত্রভাবে কাউকে স্পর্শ করা যায়! আমি কি শুধু হাসি দিয়ে কাউকে ছুঁয়ে দেয়ার দুরূহ কাজটা করতে পারবো? মুখের হাসি, চোখের হাসি, এগুলো শুনেছি প্রবল সংক্রামক। এক চিলতে হাসি অনেক সময় তলোয়ারের মতো ঝিকিয়ে উঠতে পারে। এই সত্য সম্ভাবনা, কারণ আমি এমন অসংখ্য হাসির কোপে কাটা পড়েছি অনেকবার। বহুবার! তারপর, অবাক হয়ে দেখেছি আমার ভেতরে বিন্দু বিন্দু মুক্তোর কণার মতো ক্ল্যামেন্টাইনের হাসিমুখ। অথবা সুনয়নার, অথবা রাত্রির, হয়তো তোমার!

আমিও হয়তো ওর মতো, ওদের মতো হাসিতে স্পর্শ করতে পারবো যেমন আঙুল দিয়ে স্পর্শ করে! তাই সেদিন থেকে আমার দিন রাত অবিরাম হাসিহুল্লোড়ে ভরে উঠলো। খলখল-ট্রেনে চেপে বসলো হাসির অমেয়কণিকা আমার... আমি বিস্ময়ে দেখি তারা কী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে। তুমি দেখো না? তোমরা দেখো না? আমি আজ ঘরের ভেতরে গুটিশুঁটি খুব হাসছি অবিকল সেই শিশুটির মতো।

শিশুদের কথা আর না বলি? শিশুরা মোটেই ভালো নয়, তারা আমাকে ভুলে যাবে আর কিছু দিন পরেই। আমি জানি। সবাই তাদের বড়ো হয়ে ওঠার গল্প করবে আর এক ফাঁকে টুপ করে ঝরে পড়বে আমার একলা ঘরে বসে থাকার গল্পটা। ধুলোয় মিশে মিশে ওটার চেহারা আর চেনাই যাবে না। তারপরে একদিন জমাদারের ঠেলাগাড়িতে করে আমি হারিয়েই যাবো নির্ঘাত! উহ!

ওই ক্লিষ্ট খিন্ন মুখের দল। হা করে না থেকে আমার কথা শোনো। কান পেতে শোনো আমি হাসছি গ্রামারবিহীন। তোমরা বিরক্ত না হয়ে খেয়াল করলেই দেখবে আমার হাসির শব্দ আর গমক তোমাদের কোষে কোষে ঢুকে গেছে। অমল শিশুগুলো হাসছে, তাদের ওপরে আমার ব্যক্তিগত কোনো ক্ষোভ নেই কিন্তু!

কিন্তু আমি আদতে চাইছিলাম কাউকে স্পর্শ করতে, এমনভাবে ছুঁয়ে দিতে যেন সে একটুকরো রুমালের মতো আমার ছোঁয়াটুকু নিয়ে চলে যেতে পারে। সে আমাকে ভুলে গেলেও তার ভেতরে, বাইরে আমার দেয়া আঙুলের ছাপ থাকবে। ছাপ মুছে গেলে উত্তাপ থাকবে। উত্তাপও যেদিন চলে যাবে সেদিন হয়তো আমিই থাকবো না, তাই না?


কলমে আর পেন্সিলে লিখছিলাম। কাগজ আর শীষের শীর্ষের কত গভীর ছিনিমিনি প্রেম। আঠারো আর একুশের প্রেম যেমন! ষোলো আর বিশের প্রেম যেমন। চকিত আর ক্ষণিকেই বুকে গেঁথে ফেলে একশ' গোলাপ। সুবাসটুক বুক পকেটে নিয়ে অযথাই একুশ আর বিশ ঘুরে বেড়ায়। আঠারো আর ষোলোর কামিজপ্রান্তে তাদের গুমখুনের খবর কেউ জানতে পারবে না। কোথাও কোনো মামলা দায়ের হবে না। খালি বাদী-বিবাদীরা নিরন্তর ক্ষয়াটে এই গ্লোবে আরেকটু সবুজ হয়ে উঠবে। আরেকটু নীল করে তুলবে আমাদের আকাশ। কলম-পেন্সিল আরও কতো কী করে কাগজের বুকে। আমার অক্ষমতা যে আমি তা পুরো বুঝে উঠতে পারি না কখনোই!...
৩৮টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×