somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইচ্ছে (ছোটগল্প)

১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গভীর রাত। একটি শীতল ও নরম হাতের
স্পর্শে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি
কাত হয়ে দেয়ালের দিকে ফিরে
ঘুমাচ্ছিলাম। চোঁখ খুলে পাশ ফিরে
তাকালাম। দেখলাম স্বর্গের গোলমান
দাড়িয়ে আছে আমার বেডের পাশে।
গোলমান হচ্ছে স্বর্গবাসী পুরুষদের
সঙ্গীনী। এরা ভয়াবহ সুন্দরী হয়।
গোলমানের রুপের আলোয় আলোকিত
হয়ে গেল আমার পুরো রুম। যে কেউ
তাকে প্রথম দেখাতেই প্রেমে পরে
যাবে। আমিও তার প্রেমে পরে
গেলাম। যখনই বলতে গেলাম'আই লাভ
ইউ' ঠিক তখনি এই রুপবতী রমনী আমার
চোঁখের সামনে তার রুপ বদলাতে
থাকল। সে এক অদ্ভুদ আকৃতি ধারন করল।
দেখতে হুবুহু দৈত্যের মত। যদিও আমি
কখনও সরাসরি দৈত্য দেখি নাই তারপরও
আমার মনে আঁকা দৈত্যের ছবির সাথে
এই ছবিটি মিলে গেল। মাথায়
একগোছা লম্বা চুল বেনী করে বুকের
উপর দিয়ে ঝোলানো। কপালে দুটি
শিং,দুই হাতে দশটা করে বিশটা
আঙ্গুল,আঙ্গুলের নখগুলো অনেক বড় বড়
এবং টকটকে লালা। মনে হয় মেহেদি
দেয়া। তবে দেখতে সুন্দর,একটা
মেয়েলি মেয়েলি ভাব। পুরো
শরীরের অস্তিত্ব নেই,দৈত্যটি শূন্যের
উপর ভেসে আছে। আমি খুব একটা ভয়
পেলাম না তবে অবাক হলাম। চোঁখের
সামনে একটা সুন্দরী মেয়ে কীভাবে
দৈত্য হয়ে যায় আমি নিজেকে
বিশ্বাস করাতে পারলাম না।
ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা বলে
আমি তাকে ইংরেজিতে জিঙ্গেস
করলাম 'হু আর ইউ?'। দৈত্যটি বলল 'আমি
বাংলা বুঝি,বাংলায় কথা বল'। এরপর
আমি তাকে বাংলায় জিঙ্গেস
করলাম,'আপনি কে?' সে বলল, আমি
আলাদিনের এনার্জি বাল্ব।
- আমিতো আলাদিনের চেরাগের নাম
শুনেছি কিন্তু বাল্বের নাম তো শুনি
নাই।
- যুগতো পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন আর
কুপি,চেরাগের যুগ নাই এখন হচ্ছে
এনার্জি বাল্বের যুগ। তুমি আমাকে
স্পর্শ কর দেখবে আমি বাল্বে পরিনত
হয়ে গেছি। আবার বাল্বে ঘষা দিলে
দেখবে দৈত্য হয়ে গেছি।
আমি তাকে স্পর্শ করতেই সাথে সাথে
এই বিশাল আকৃতির দৈত্য ২৫ ওয়াটের
একটা এনার্জি বাল্বে পরিনত হয়ে
গেল। আমি আবার বাল্বে ঘষা
দিলাম,সাথে সাথেই বাল্ব আবার
দৈত্যে পরিনত হল। সে আমাকে
বলল,'এবার আমাকে তোমার একটা
ইচ্ছার কথা বল আমি যেভাবেই হোক
পূরন করব।
- একটা ইচ্ছা কেন? আলাদিনের
দৈত্যতো তিনটা ইচ্ছা পূরন করে।
- এখনকার যুগতো শর্ট-কাটের যুগ তাই
ইচ্ছাও শর্ট-কাট।
আমি আনন্দে পাথর হয়ে গেলাম।
সারাদিন আমার মনে কত ইচ্ছাইতো
ঘুরঘুর করে। কোনটা রেখে কোনটা
বলি। একবার চিন্তা করলাম বলব আমার
একটা দামি ক্যামেরা চাই,আমার ছবি
তোলার খুব শখ। কিন্তু সাথে সাথেই এই
চিন্তা বাদ দিলাম কারন দৈত্যের
কাছে এত ছোট ইচ্ছার কথা বলার কোন
মানে হয় না। এরপর ভাবলাম বলব আমি
একটি এয়ার কন্ডিশনার চাই,রাতে
গরমে ঘুমাতে পারি না। নাহ! এটাও
একটা ছোট ইচ্ছা। বড় কোন ইচ্ছা খুজতে
থাকলাম। হঠাৎ করে হেলিকপ্টারের
কথা মনে পরল। ভাবলাম বলব আমার
একটি প্রাইভেট হেলিকপ্টার চাই
কিন্তু সেটা আর বললাম না কারন আমি
হেলিকপ্টার চালাতে জানিনা।
হঠাৎ বিয়ের কথা মনে পরে গেল।
ভাবলাম বলব আমার একটি অতি-রুপবতী
বউ চাই। কিন্তু বললাম না কারন অতি-
রুপবতীরা শুধু প্রেমিকা হিসেবেই
ভাল হয় বউ হিসেবে নয়। এরপর ভাবলাম
বলব বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী হতে
চাই। কিন্তু বললাম না কারন
প্রধানমন্ত্রী হতে হলে জনগনকে
মনভুলানো মিথ্যা কথা বলতে হয়। আমার
সেই যোগ্যতা নেই তাই বললাম না।
ভাবলাম বলব,আমেরিকার অধিপতি
হতে চাই।যেন সারা বিশ্ব আমার
হাতের মুঠোয় থাকে। বললাম
না,আমেরিকার অধিপতি হলে সবসময়
যুদ্ধ-বিগ্রহের মধ্য থাকতে হবে। এসব
অশান্তি আমার ভাল লাগে না। তাই
বললাম না।আমি চিন্তা করে
যাচ্ছিতো যাচ্ছিই,এদিকে আমি কিছু
বলছি না দেখে দৈত্য আমাকে তাড়া
দিয়ে বলল,"আমার হাতে সময় মাত্র পাঁচ
মিনিট,এই পাঁচ মিনিটের মধ্য তোমার
যা ইচ্ছা বল। পাঁচ মিনিট পর বললে হবে
না।' আমার স্নায়ুগুলো উত্তেজিত হয়ে
গেল,কোনটা রেখে কোনটা বলি কত
ইচ্ছাইতো জাগে কিন্তু আমার সবচেয়ে
বড় ইচ্ছাটাই খুজে পাচ্ছি না। এদিকে
সময়ও পার হয়ে যাচ্ছে। আমার
ইচ্ছেগুলো এলেমেলো হয়ে যাচ্ছে।
কোন ইচ্ছাটার মধ্য পৃথিবীর সব সুখ
লুকায়িত এটাই বুঝতে পারছি না।
পাঁচমিনিট সময় পার হয়ে যাওয়ার পর
দৈত্যটা সাথে সাথেই বাল্বে পরিনত
হয়ে গেল। আমি বাল্বটা আবার ঘষতে
শুরু করলাম। কিন্তু বাল্বের কোন
পরিবর্তন হল না। বাল্ব থেকে কোন
দৈত্য বের হল না। তারপরও আমি
বাল্বটা ঘষতে থাকলাম। এবার সত্যি
সত্যি আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল এবং
সত্যিই দেখলাম আমার হাতে একটি ২৫
ওয়াটের এনার্জি বাল্ব। ও হ্য, মনে
পড়েছে। গত রাতে বাল্বটা ফিউজ হয়ে
গিয়েছিল,আমি বাল্বটা হোল্ডার
থেকে খুলে বেডের কোনায় রেখে
দিয়েছিলাম। তারপরও আমি পুরোপুরি
স্বাভাবিক হতে পারলাম না।আমি
হতাশ হয়ে গেলাম। জীবনের এতটা সময়
পার করার পরও আমি কোন ইচ্ছাটার মধ্য
সবচেয়ে বেশি সুখ পাব এটাই
জানিনা?..পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের
ক্ষেত্রেই কী এরকম নাকি শুধু আমার
ক্ষেত্রে!বুঝতে পারছি না! আমার মোহ
এখনও ভঙ্গ হয়নি। আমি এখনও আমার
সবচেয়ে সুখের ইচ্ছেটা খুজে
বেড়াই...........
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×